বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

স্বাধীনতা আমি

                         স্বাধীনতা আমি

                         সংহিতা ঘোষাল


দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে জন্ম হল আমার। আমি হলাম স্বাধীনতা। আমার জন্মের পূর্বে বহু মানুষ নিপীড়িত, শোষিত হয়ে আমাকে প্রার্থনা করেছে।১৯৪৭সালের ১৫ই আগস্ট মাহেন্দ্রক্ষণে আমি ভূমিষ্ঠ হলাম। আমার জন্মের সাথে বিশ্ব পেল পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্রিক, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র। জন্ম গ্রহণের পর দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে যাওয়া দেশকে দেখে বড়ই কষ্ট হতো আমার। তবে আমার দেহে থাকা শত সহস্র কোষরূপী জনগণ আমাকে শক্তি প্রদান করেছে প্রথম থেকেই। তবু বড় হতে গেলে কিছু নিয়মের মধ্যে দিয়ে বড় হতে হয়। আমিও এর ব্যতিক্রম ন‌ই। আমার বড় হ‌ওয়ার জন্য তৈরী হল সংবিধান, আরোপিত হল নতুন নিয়ম।বড় হ‌ওয়ার সময় আমরা যেমন এক একটি পর্যায় অনেক করি ঠিক তেমনি আমি বড় হয়েছি। শিক্ষায় সমানাধিকার, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান আমায় মানসিক দিক দিয়ে অনেক পরিণত হতে সাহায্য করেছে। দেশের প্রতিটি জনগণের জন্য খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করার মধ্যে দিয়ে যেন আমার প্রতিটি দেহকোষে পুষ্টি দ্রবণ সিঞ্চিত করা হয়েছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা আমাকে স্বাবলম্বী করেছে। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে আমি ক্রমশ বড় হয়েছি। যৌবনে মানবজীবন যেমন বিভিন্ন দিকে পল্লবিত হয় ঠিক তেমন‌ই আমি পল্লবিত হয়েছি শিক্ষা, কৃষি, গবেষণা, চিকিৎসা, প্রযুক্তি বিদ্যায়।

         আজ চুয়াত্তরতম জন্মদিনে আমি নিজেকে মাঝে মাঝে বড় অসহায় মনে করি। চুপিসাড়ে হানা দেওয়া রাজরোগের(ক্যান্সার)মত আমার দেহে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন সামাজিক রোগ। বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশে যখন স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা, ধর্ম নিরপেক্ষতার পরিবর্তে ধর্ম পক্ষপাতিত্বের ভিসুভিয়াস লাভা উদগীরণ করে তখন বারবার আমি ক্ষত-বিক্ষত হ‌ই। প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা নারীদের ক্রন্দন ধ্বনি আমাকে বিচলিত করে এবং ভাবতে বাধ্য করায় সত্যি কি আমি পরিণত? নাকি পরিণতির দিকে অগ্রসর হচ্ছি? ধর্মের নামে রক্ত ঝরলে আজ প্রশ্ন জাগে মনে এটাই আমার নাম, স্বাধীনতা?বৃদ্ধাবাসে ভীড় করা মানুষেরা, ফুটপাথে শ্রমদান করা শিশু শ্রমিক অথবা অকালে ঝরে পড়া কন্যা ভ্রূণ চুপিসাড়ে বলে যায় স্বাধীনতা তুমি বড়‌ই আত্মকেন্দ্রিক,হারিয়েছ মানবিকতা। সত্যি আমি তো তা ন‌ই। আমি মানবিক গুণের রসে সিক্ত পক্ষপাতহীন একটি সত্ত্বা যা প্রতিষ্ঠা করবে সাম্যবাদের,দূর করবে মনে গহীন অন্ধকার, সৃষ্টি করবে উন্নততর পথ।

      আজ দীর্ঘ পথ চলার পর‌ও জটিল প্রশ্নগুলোর ঘূর্ণাবর্তে বারবার খুঁজে বেড়াই আমার সত্বাকে।তাই আজ মনে হয় যেদিন প্রতিটি শিশুর হাতে থাকবে কলম, সাথে থাকবে ব‌ই, নারী-পুরুষ বিভেদের পরিবর্তে মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে আপামর জনগণ, বার্ধক্যে পুত্র-কন্যার সাথে দ্বিতীয় শৈশবে ঘটবে পদার্পণ, অর্ধাহারের হাহাকার হবে বিলীন সেদিন আমার জন্মের সার্থকতা, আমার নামের সার্থকতা। স্বাধীনতা নামে সেদিন আমি হব প্রকৃত স্বাধীন।




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু