ঝুল বারান্দা
যাবতীয় পা ফেলারা স্তব্ধ হয় এখানে।
নববধূর ব্রীড়া জড়ানো আলতা পায়ে
অপেক্ষার উঁকিঝুঁকি।
অভিমানী ছদ্মরাগ দুমদাম শব্দে
কাঁপন তুলে আশ্রয় নেয় আঁচল ঢেকে।
কখনও জোৎস্না লেখে রূপকথা,
ভীরু বৃষ্টির ছাঁট, দামাল হাওয়া
আর বসন্তের মনখারাপি দুপুর
একলা পেলেই সই পাতিয়ে যায়।
কখনও বিষন্নতা একটা ঘুঘুপাখির পালকের মত
না চাইতেই খসে পড়ে,
তারার আলোয় আবছায়া গল্পেরা
ফিসফিস কথা বোনে সঙ্গোপনে।
রেলিংএ চিরবসন্তের বাহারি লতা,
কখনও অনিমেষ এক সারি স্থবির রড।
মেঝেতে চৌখুপ্পি, এক্কা দোক্কা,
নয়ত লাল লাল শান্তি পারাবার।
দু'দন্ড আরাম পেতে বসে পড়লেই
স্বপ্নে দেখা দেয় নাটোরের সেন অথবা
দীঘল চোখের সপ্তপদী নারী এক।
এবাড়ি ওবাড়ির রুবী শিখা অথবা তুলতুলির
মত কারুর-কেউ-না এক মেয়ে,
অনায়াসে ভীড়ে মিশে যায় যারা,
ষোলো ছাব্বিশ থেকে ষাট ছুঁয়ে
কখনও রোমিও খোঁজা চোখ রাখে,
কখনও খোকার তেলমালিশ নয়ত
গয়না বড়ির সুনিপুন উত্তরাধিকার।
বনেদী তিনমহলায় সে গরবিনী।
কোথাও বৌঠানের লুটানো আঁচলের চাবি
কোথাও একলা কান্নার ধূপদানীটি।
নায়েব মনিবের শলা পরামর্শের
বাঁধানো খাতায় দীর্ঘশ্বাস,
জ্বর গায়ে আট বছরের ধূ ধূ একাকীত্বে
সুর মেলায় ঠুনঠুন বরফ,
বাসনওয়ালীর উদাসী কন্ঠ আর ডানা মেলা চিল।
বনেদীয়ানায় মরচে ধরলে পায়রা ডাকে সকালে,
এক ঝলক রোদ্দুরে মাকড়সার জাল রামধনু,
তখন বন্ধ শার্সির ভিতরে
নেই নেই শব্দের অহংকারী উপস্থিতি।
স্কোয়ার ফিটের কঠিন নিগড়ে
ঝুল বারান্দা অদৃশ্য এক রাখাল বালক।
লোহার ব্যাপারীর বিদুষী কন্যার স্বপ্নে
কিম্বা ব্যস্তসমস্ত পাঁচলাখি জি এম
সাপ্তাহিক উড়ানে জানলার সীট পেলে
দু'মিনিটের নীরবতা পালন ঝুল বারান্দার নামে!
তারপর ধূসর চড়াইএর ছোট্ট ছোট্ট ডানা
পেটকাটি চাঁদিয়াল ঘুড়ির লাট খাওয়া দেখতে দেখতে
ঝুপ করে নেমে পড়ে ধূলিধূসরিত
প্লাটফর্মের ভাঙাচোরা পিলারটার 'পরে।
ওদিকে নিয়ন আলোয় চিকমিকি সাজে
একটা দুটো বেভুল ইমারতের দরদাম চলে,
ফাটা দেওয়ালে বটের শিকড় নিয়ে
পাঁচ চার তিনের উল্টো গুনতিতে
নিজেকে টিকিয়ে রাখার ছবি আঁকে ঝুল বারান্দা।
*****