বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

লকডাউন

ঘুম থেকে উঠতে বেলা দশটা। কোন কাজ নেই। আজ চার বছর ধরে নেই। এখন তো করো না করো না লেগেই আছে। বেরিও না, হেঁটো না, বাজার করো না, ব্যংকে যেও না, দোকান যেতে  হবে না, তোমার বয়স ষাঠের ওপরে। মেয়ে আর মায়ের পদে পদে আমার সিনিয়র সিটিজেনশিপের দিনে তিন চার বার রিনিউয়াল। সত্যি বটে। কিন্তু একটা লোক, যার বন্ধু নেই, যার কোন গ্রুপ নেই, যার কোন ইজম টিজমের চুলকুনি নেই, যার কোন গুরু বা আশ্রম নেই, যার কোন এ্যা কা এ্যা নেই, যার কোন বিশেষ হবি নেই, যে গাইতে বাজাতে বা নাচতে জানে না সে দশটায় ঘুম থেকে উঠে কি করবে বলুন দেখি। ২০১২ থেকে লেখালেখির একটু আধটু ধানাই পানাই করছিলুম বটে, সে তেমন কিছু নয়। বিশেষ পাঠক নেই, মনের থেকে লিখলে কে পড়ে বল দেকিনি। মনের সাথে মনের মিলতে হবে তো। তো সে মিলই তো হল না- ঘর, আত্মীয়, প্রতিবেশি, বন্ধু স্থানীয় যারা একদা ছিল, এমন কি নতুন হওয়া লেখক পরিচিতরাও। কারো মনের তল পেলুম নি। করোনা নামক ভাইরাস এই অবস্থা এবং আমার নিজের অবস্থানটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিলে। দেশের অবস্থা নিয়ে উচাটন হই, এক কন্যা অন্য গোলার্ধের শেষ সীমায় থাকে, তাকে নিয়ে রাতে দুঃ স্বপ্ন দেখি, যেসব আত্মীয়দের সাথে এঁটুলির মত এখনও টিকে আছি, তাদের সাথে মাঝে মাঝে মুঠোফোনে কথা চালাবার চেষ্টা করি।কিন্তু আচমণেই ভোজন শেষ হয়ে যায়। বাড়িতে তিনটি অ্যাডাল্ট প্রাণী। একজন প্রবীন, যাকে এখানে বলা হয় বডিল, একজন পঞ্চাশোর্ধা, অন্য জন ছোট কন্যা। কি কপাল, এই সময়ে সে তার বাপ- মায়ের কাছে একই ফ্রেমে কোলাজ হয়ে পড়েছে। যাবার জন্য সব রেডি হয়েও যাওয়া হল না- করোনা, যা ইউ এনের কাজেও ভিসা ইস্যু করতে দিল না। যে যার নিজের লোকজন নিয়েই ল্যাজে গোবরে, এইসময় একটা লোকও এসে অন্য দেশে ঢুকুক, কেউ চায় না। আমাদের জন্য খুব সুখের সময় এটা, দুই মেয়েই দূরে থাকলে, নিজেদের চলা ফেরা আরোও লিমিটেড এডিশন হয়ে যেত। কিন্তু সারা দিনে কেউ কারো সাথে বসে আড্ডা দিই না আমরা। আমাদের মোবাইল আছে।আমাদের ঘুম আছে, আমাদের টিভি আছে। কাজের লোকেরা সেই রিহার্সাল এক দিনের কার্ফ্যু থেকে আসে না। সোসাইটির নির্দেশ। দু একজন ঝামেলি করেছিল বটে, তবে সে নিজে নিজেই সলভ হয়ে গেছে।

সেদিন গিন্নী বললে মুখে মাস্ক পড়ে থাক। আমি বলি, আমি কোথায় যাচ্ছি?  আমি তো ঘরেই আছি। সে আরোও জোরে নির্দেশ দিলে, সে জন্যেই  তো বলছি। ও মুখ দেখে দেখে বোর হয়ে গেছি। কবে যে লকডাউন শেষ হবে,হে ভগবান। না, না এটা সত্যি ঘটেনি, তবে ঘটিতেও পারে। তাই ছ- ফুটের দূরত্ব মেপেই চলাফেরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী করোনা ভাইরাসে মেয়েদের থেকে ছেলেরা বেশি আক্রান্ত। এটা পরিসংখ্যান। ভয় দেখানোর জন্য নয়। জানুয়ারির ৩১ তারিখে ভারতে প্রথম করোনা ধরা পড়ে। আমরা লকডাউনে যাই মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহে। কোন কোন ডাক্তার মত প্রকাশ করেছেন, এপ্রিলের শেষে ভারতে পিক অবস্থা দেখা যাবে। জানি না, সত্যি কি'না! আই সি এম আর এর অফিসিয়াল ঘোষণা এখন পর্যন্ত ৩৫০০০ টেস্ট হয়েছে সব মিলিয়ে।১৩৫ কোটির দেশ, পারসেন্টেজ হিসেবে কি দাঁড়ালো? যাক, এসব নিজের ইচ্ছেয় নয়, এমনি খবর, ভিডিও, আলোচনা এসবের মধ্যে থেকে মাঝে মাঝেই ছিটকে সামনে আসছে। এর সাথে জাত-পাত, ভুল প্রচার আর আর্থিক চূড়ান্ত অবনতি রোজকার সঙ্গী। সত্যিই বলুন তো সকাল দশটার আগে উঠে কি করবো?  বাজারে গিয়ে দরদাম নেই, বাইরে বেরিয়ে পোষ্যটাকে পর্যন্ত মিলিটারী কায়দায় কুইক মার্চ করিয়ে আনতে হয়। চা খেয়ে শেয়ার বাজার দেখার একটা রিসেন্ট অভ্যাসের জন্ম দিয়েছি, এইমাত্র ক'দিন হল। গুরুজনেরা বলেন, সেখানে নাকি সাড়ে নয় থেকে পৌণে দশের মধ্যে সেঁধোতে হয়। আমি তো যখন রেডি হই, সব সেরে, তখন প্রায় সাড়ে এগারোটা। আর এতে এখনও সব কিছু শুষ্কং কাষ্ঠং এ বচ। তাই রসের সন্ধানে ঘুরতে থাকি। দিন গড়িয়ে যায়। মধ্যাহ্নের আহার এখন উপ অপরাহ্নে হচ্ছে। যে ট্রেন লেট চলে, সে লেটই করে আগেও। এই ভাবে কখন টুক করে দিনের আলো নিভে যায়। রাত আসে, গভীরে নিয়ে যায়, আবার ঘুমের প্রলেপ দিতে। পরদিন ১০টায় আবার ওঠা।

রোজ রাতে ঘুমোতে যাচ্ছি, আবার পরদিন উঠছিও, এই সময়ে, এই মহামারির দিনে-রাতে এর থেকে বড় সুখকর কিছু হয় না। যদি এই রুটিনের হঠাৎ করে বদল ঘটে যায়, যারা থেকে যাবে, তাদের জন্য বড়ই কষ্টকর হবে সেটা। করোনা মুছে যাবার প্রতীক্ষার চেয়ে, আর কোন বড় কাজ এখন হাতে নেই। আর তাই কিছু না করে ঘরে থাকাটাই সব চেয়ে বড় টাস্ক। আসুন চেষ্টা তো করি। পাশ করতেই যে হবে। হেক্সাক্লোরোকুইন হোক বা গোমূত্র - মানুষ হিসেবে পরিশুদ্ধ হবার এটাই সঠিক সময়।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু