বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

কোজাগরী পূর্ণিমা

কোজাগরী পূর্ণিমা

                     -পারমিতা কর


দূর্গা পূজোর রেশ কাটতে না কাটতেই চলে আসে লক্ষ্মীপূজো। সেই কোন ছোটবেলা থেকে মায়ের সঙ্গে পূজোর জোগাড় করা, পূজোর আবহে মনটা মেতে থাকত এই বিশেষ পূর্ণিমার দিনটায়। বাবা, মা, ভাই আর তিন্নি একটা ছোট্ট পরিবার। 

ছোটবেলায় মা বলতেন, ঠাকুরের জোগাড় উপোস থেকেই করতে হয়। আলপনার কারুকাজ তিন্নির ভীষণ ভালো লাগত। সেই কারণেই উপোস করতে পিছপা হয়নি সে। অদ্ভুত ভাবে খুব ভোরেই ঘুম ভেঙ্গে যেত,  শিউলি ফুল কুড়িয়ে আনা থেকে মালা গাঁথা, সন্ধ্যার আগেই ঘরময় চালবাটা দিয়ে আলপনা। বসার ঘরের আলপনাটা সবথেকে ভালো হতো। অনেক বড় জায়গা ছিল ওখানে।

আজ তিন্নির বিয়ের দীর্ঘ পনেরো বছর পরে তিন্নির মা ওর কাছে এই বিশেষ দিনে, অনেক পুরনো স্মৃতি আজ উঁকি দিচ্ছে মনের আনাচে কানাচে। 

বিয়ের পরে  রজতের জীবিকা সূত্রে মুম্বাইতে চলে আসা। উওরবঙ্গের অপূর্ব প্রকৃতির হাতছানি থেকে অনেক দূর।  রজতের মা বলেছিলেন, নিজের একার সংসারে আলাদা করে লক্ষ্মীর আসন করতে না, কারণ, শ্বশুর বাড়িতে দেবী বিরাজিত আছেই। কিন্তু কোজাগরী পূর্ণিমায় লক্ষ্মী পূজো যে তিন্নির ভীষণ প্রিয়। 

অবশেষে  শাশুড়ি মাকে রাজী করিয়ে মা লক্ষ্মীকে তিন্নির ছোট্ট ঠাকুরের আসনে স্থাপিত করেছিল। 

বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শ্বশুর, শাশুড়ি আর মা সবাই তিন্নির কাছে ঘুরতে এসে আটকা পড়ে গেছেন। 

ফ্ল্যাটের বারান্দায় পূর্ণ চাঁদের আলোয় রজতের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ভাবছিল তিন্নি, হয়ত এত বছর বাদে আবার পরিবারের সবার সঙ্গে আজকের দিনটা কাটাতে পারল এই মহামারীর জন্যই। 

রজতকে বলল তিন্নি, সব কিছুই কেমন  বদলে যায়, এক সময় আমি মায়ের সঙ্গ দিতাম পূজোর জোগাড় করতে, আর এখন মা আমাকে সঙ্গ দিচ্ছে, মানুষ দুজন একই আছি শুধু নিজেদের জায়গা পরিবর্তন হয়ে গেছে!  সত্যিই অন্যরকম সব কিছু। সবাই চাইছি খুব তাড়াতাড়ি পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠুক, কিন্তু এই নতুন স্বাভাবিকত্বটাও মন্দ লাগছে না। পরিবারের সবাই এক ছাদের নিচে। ঠাকুরের কাছে আজ একটাই প্রার্থনা, সকলের দুঃখ দূর করে দিও মা, আধাঁর ঘুচিয়ে আলো নিয়ে এস।


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু