বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অনুকরণ

অনুকরণ

*************

দু'সপ্তাহ ধরে রজতের রাতের ঘুম উড়েছে। বিভা(রজতের একমাত্র স্ত্রী)র নতুন আবদার গাড়ি কিনতে হবে। এখনও  ফ্ল্যাটের ঋণ শোধ হয়নি। অফিসে ওভার টাইম করেও সামাল দিতে পারছে না। 

বিভার জেদের জন্যই বিহান(ছেলে)কে বেসরকারি স্কুলে প্রচুর ডোনেশন দিয়ে ভর্তি করতে হয়েছিল। বিয়ের আগে বিভার এমন জেদের কিছু নিদর্শন পেয়েছিল, কিন্তু তখন প্রেমের আগুনে ওসব পাত্তাই দেয় নি। 

যৌথ পরিবারে বিভা থাকবে না, বিয়ের আগেই এই দু'কামরার ফ্ল্যাটটা কিনেছিল রজত। ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ঘর সাজাতে হয়েছিল বিভাকে খুশি করতে। 

শ্বশুড়, শাশুড়ির এই ফ্ল্যাটে এসে থাকা বিভা পছন্দ করে না। দিনরাত বিভা, ওর এক বন্ধু দীপা, যার বরের বিশাল আমদানী রপ্তানীর ব্যবসা তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়। 

বিভার মা-বাবাও অনেক বুঝিয়েছিল, আয়ের মধ্যেই ব্যায় করতে, কিন্তু কিছু মানুষ থাকে যারা কোনো অবস্থাতেই খুশি থাকতে পারে না। আরও আরও চাই… চাওয়ার শেষ নেই তাদের কাছে।

রজত বারান্দায় ইজিচেয়ারে বসে নিজের মনেই ভাবছিল, ভালোবাসাকে অন্ধ হয়তো এই কারণেই বলে। বিভাকে এতই ভালোবেসেছিল যে ওর অন্যায় দাবিগুলো আবদার ভেবে মেনে নিয়েছিল। এখন ভালোবাসার আবদার গুলো যেন গলা টিপতে আসছে অহর্নিশ।

গতমাসে দীপার ছেলের জন্মদিনে নিজেদের গাড়ি করে বাচ্চাদের 'কিডজানিয়া'তে নিয়ে গিয়েছিল। বাড়ি ফিরতেই বিহানের থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব জিগ্যেস করেছিল বিভা। তাই এখন ওর গাড়ি চাই। এরপর ছেলের জন্মদিনে সেও সব বাচ্চাদের নিয়ে বাইরে যাবে।

বিহানটা এখন বড় হচ্ছে ওর মনে এসবের কি প্রতিক্রিয়া হয় তার খবর আর কে রাখে?? অফিসে ওভার টাইম করে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায় রোজই। ছেলেটা তখন নিজের ঘরে পড়াশোনা করে। আর সারাদিন খাটুনির পর কিছুই ইচ্ছে করে না, মনেহয় শরীরটা ফেলে দি বিছানায়। সকালে আবার ছেলে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরী হয়, আর নিজের অফিস। কতদিন ছেলেটার সঙ্গে সময় কাটানো হয়নি। হঠাৎ ভাবনার জগতে একটা ডাক….

বাবা... "তুমি ঘুমাও নি?" 

"ঘুম আসছিল না বাবু। তুই এখনও জেগে যে? পড়াশোনা করছিলি?"

"হ্যাঁ, বাবা এখন উঁচু ক্লাশ তাই রাত জাগতে হয় কখনও কখনও।

বাবা, আজ তুমি আমার সঙ্গে শোবে?"

রজত হেসে ছেলের সঙ্গে গেল, মনে মনে ভাবতে ভাবতে,  বিহানটা শুধু শরীরেই বেড়েছে। এখনও একা শুতে ভয় পায় মনেহয়!!

রজত, বিহানের পাশে শুয়েছিল। একটু চোখ লেগেছে….

কিছুক্ষণ বাদে, "বাবা তুমি ঘুমিয়ে পড়েছো?

কেন বাবু, কিছু বলবি?

না বলছিলাম, ঠাম্মির শরীর ভালো নেই। বড় কাকা বলছিল তোমার কথা খুব বলে ঠাম্মি, তাই তোমাকে একবার গিয়ে দেখা করতে।"

রজত হকচকিয়ে উঠে বসল, বলল, "বাবু তুই কি করে জানলি? আমি তো গত মাসেই দেখা করে এলাম, সব তো ঠিক ছিল তখন! কিন্তু তুই…!!"

"আসলে, আমার ক্লাশের একটা ছেলে ওইদিকে থাকে, হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষার আগে কিছু নোটস্ নিতে গিয়েছিলাম ওর বাড়ি, তখন, বড় কাকার সঙ্গে দেখা আর তারপর থেকে আমি ওদিকে গেলে যাই। ওই বাড়িতে বলেছিলাম, তোমাদের জানাতে না। মা তো রাগ করবে জানতে পারলে জানি, ভেবেছিলাম তুমিও রাগ করবে.. তাই!"

"ধুর বোকা, আমি কেন রাগ করব? কাল তো রবিবার, যাবি নাকি আমার সঙ্গে?"

বিহান হেসে সম্মতি দিল ঠিকই কিন্তু একটা অনিশ্চয়তা থেকে গেল সেই সম্মতির মধ্যে। রজত বুঝে গিয়েছিল, তাই বলল, "চিন্তা করিস না, তোর মাকে বোঝানোর দায়িত্ব আমার।"

সকালে বাবা-ছেলেকে একসঙ্গে শুতে দেখে বিভা একটু অবাক হয়েছিল, কিন্তু বিহান বলল যখন ঘুম আসছিল না বলে বাবাকে ডেকে ছিল তখন আর কিছু ভাবল না।

সকালে রজত একটা ফোন করল, দীর্ঘদিন বাদে বাল্য কালের বন্ধু অজিতকে। অজিতের একটা গ্যারেজ আছে। যদি অজিত কোনও গাড়ির সন্ধ্যান দিতে পারে। বিতান দূরে দাঁড়িয়ে সব শুনছিল। ফোন রাখতেই বাবাকে বলল, "তুমি এখন গাড়ি কিনবে না বাবা। আমাদের গাড়ির কোনও দরকার নেই। মাকে বোঝাতে হবে।" রজত অবাক হল, ছেলের কথায়। কিছুদিন আগেই এই ছেলে মায়ের কথায় ওঠ বোস করত আর এখন বিদ্রোহ করতে উদ্যত হয়ে পড়েছে! বলল, "তোর ব্যাপারটা কি বলত, কোন মেয়ে-টেয়ের চক্করে পড়েছিস নাকি, দেখ বাপু ওসব কিন্তু আমি সামাল দিতে পাড়বো না এই বলে দিচ্ছি।" 

"ধূর বাবা, কি যে বল না!!" 

বিভা রান্নার ফাঁকে এসে বলল, "দু'জনে কি ঘোট পাকাচ্ছো বল তো... গাড়ির কথা বলেছ কারো সঙ্গে?" 

বিহান বলল, "মা এবার থেকে আমার জন্মদিন আমি করব না। ক্লাশ টেনে উঠব, এখন আর ওসব আমার কোনও বন্ধু করবে না।" 

বিভা অবাক হল, "বিহানের মুখে এইসব কথা শুনে। বিহান আগে কখনো ওদের মাঝে কথা বলেনি। বলল, তোর জন্মদিন করব কিনা সেটা তুই বলবি তারপর হবে নাকি? আমি এদিকে সবাইকে কথা দিয়ে দিয়েছি। তার কি হবে?"

রজত বলল, "বলছি, ও যখন চাইছে না, তখন না হয় বাদ দাও না। তার চেয়ে বরং তোমার জন্মদিন করি। ওটা তো আর তোমার বন্ধুরা করেনি সমারোহ করে। এবার থেকে তোমার জন্মদিন করব আমরা।"

বিভার প্রস্তাবটা মন্দ লাগেনি, কিন্তু ছদ্ম রাগ দেখিয়ে বলল, "এই বয়সে এখন আমার জন্মদিন। পারোও বটে!" 

বিহানও বলল, "এটা দারুণ হবে।" 

বিভা এবার লজ্জা পেয়ে হেসে বলল, "তোমাদের মাথা গেছে।"

নিজের জন্মদিনের উৎসাহে গাড়ির কথা ভুলে গেল নিমেষেই। ভাবনায় তখন, এবার বন্ধুদের তাক লাগিয়ে দেবে। 

বিভাকে খুশি করে রজত চলল নিজের মাকে দেখতে স্বপরিবারে।  


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু