বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

একটা বন্ধের দিন

সায়ক, তনুজা ওদের দশ বছরের ছেলে রিজুকে নিয়ে পৌত্রিক বাড়ি এসেছে তিন সপ্তাহের জন্য। ওরা চাকরিসূত্রে দিল্লি প্রবাসী। উত্তরবঙ্গের একটা ছোট্ট জনপদে সায়কের পৌত্রিক বাড়ি। তনুজার বাপের বাড়ি শ্বশুড় বাড়ির কাছেই। এদিকে এলে ওরা মোটামুটি তিন সপ্তাহের জন্য আসে। নয়তো দুই বাড়ি তারপর আত্মীয় স্বজন সব করে ওঠা যায় না। এদিকে এসে একবার যে ঝামেলাটা নিজেদের উপর দিয়ে গিয়েছিল সেটা ভাবলে এখনও ওরা শিউরে ওঠে। বিকালে চা খেতে বসে কিছু স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। ওরা বলছিল সেবক হয়ে তিনচূলাতে ঘুরতে যাওয়ার জন্য। তাই প্ল্যান করল ওরা ঘুরতে যাওয়ার, সায়কের বোনের পরিবারের সঙ্গে। 

পরের দিন সকালে রাস্তায় হঠাৎই সেই জায়গাটায় চোখ চলে গেল তনুজার। সায়ক এক নিমেষে বুঝে গিয়েছিল। চোখের ইশারায় তনুজাকে অভয় দিল। তবুও তনুজা রিজুকে চেপে ধরলো। একটু বাদেই রিজু্র চিৎকার, মাম্মা আমাকে ছাড়ো আমার লাগছে। সায়ক এবার তনুজার কাঁধে হাত রেখে বলল, চিন্তা করো না। ওমন আর হবে না। তবুও তনুজা ভুলতে পারে না সেই দিনটা।


সেবার এদিকে কিছু দিন ধরে পাহাড়ে চা বাগানের আদিবাসী ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা মিলে মাঝে মধ্যে গন্ডগোল বাঁধাচ্ছিল। সায়ক আর তনুজার বড় হয়ে ওঠা এই অঞ্চলেই। উত্তরবঙ্গ এমনিতে শান্ত বড়। লোকজনও সহজ সরল। 

আর তিন দিন বাদে ফেরার টিকিট। শেষ আত্মীয় সায়কের ছোটমামার বাড়ি। ছোটমামার বাড়ি এয়ারপোর্টের কাছেই। ফেরার আগে ওখানেই এসেছে সায়করা। কখনও কখনও ওরা একবারেই বেড়িয়ে যায় বাড়ি থেকে। ছোটমামাদের সঙ্গে দু'দিন কাটিয়ে বাগডোগরা থেকে দিল্লি। সেবার কি মনে হয়েছিল, দু'জন ভেবেছিল মাঝে মামার কাছে ঘুরে এসে বাড়ি থেকেই এয়ারপোর্ট যাবে একেবারে। 

মামার ওখানে ভালোমতো সবার সঙ্গে কাটিয়ে বাড়ি ফেরার আগের দিন রাতে খবরে জানতে পেরেছিল , আদিবাসী ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা মিলে বন্ধ ডেকেছে পরের দিন। এরমধ্যে সায়কের বড় কাকা ফোন করে একই  কথা জানায় ওদের। এদিকে পরের দিন না ফিরলেই নয়! তারপরের দিন খুব সকালেই যে প্লেনের টিকিট কাটা ছিল। বড় কাকু জানালেন একটাই উপায় আছে, ওনার চেনা এক ড্রাইভার আছে যে হসপিটালের অ্যাম্বুল্যান্স চালায়। সে পরের দিন রুগী নিয়ে শিলিগুড়ি যাবে খুব সকালে তখন ফেরার পথে সেই অ্যাম্বুল্যান্সে সায়করা ফিরতে পারে, কারণ অ্যাম্বুল্যান্স বাঁধা পাচ্ছে না। শুধু কোনো নার্সিংহোমের ডাক্তারের থেকে একটা রিলিজ পেপার নিতে হবে। 

সেই ড্রাইভারের সঙ্গে রাতেই সব কথা বলে রেখেছিল সায়ক। উনি যে নার্সিং হোমে রুগী দিতে যাবেন সেখান থেকেই রিজুর নামে একটা রিলিজ পেপার সাইন করে নিতে হবে। কিছু টাকা দিলেই হয়ে যাবে কাজ। রিজুকে শুইয়ে নিয়ে যেতে হবে উত্তপ্ত এলাকা পার করার সময়। 

প্ল্যান মাফিক সব করে ওরা বেরিয়ে পরল অ্যাম্বুল্যান্সে করে। জীবনে প্রথম অ্যাম্বুল্যান্স চড়া। এমনিতেই অ্যাম্বুল্যান্স দেখলেই একটা দুশ্চিন্তা হয়। তারমধ্যে নিজেরা বসেছে। দু'জনের মনে চিন্তার শেষ নেই। ড্রাইভার কিছু কিছু কথা বুঝিয়ে দিয়েছিল। অনেকটা রাস্তা শান্তিপূর্ণ কাটল। হঠাৎ দেখে বাড়ির কাছাকাছি একটা জায়গায় একদল আদিবাসী পুরুষ তির ধনুক নিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিল। এখানে এই রাস্তা ছাড়া উপায় নেই অন্য রাস্তা নেওয়ার। কাজেই ওদের সামনে এসে গাড়ি থামাতেই হলো। 

ওদের জেরার মুখে পড়তে হবে ভেবেই তনুজা আর সায়কের ঘাম ছুটে যাচ্ছে। ড্রাইভার বলল, "চিন্তা করবেন না, মাথা ঠাণ্ডা রাখবেন। যা প্রশ্ন করবে ভালোভাবে উত্তর দেবেন।" 

প্রথমে ড্রাইভারকে নামতে হয়েছিল ওদের সঙ্গে কথা বলতে। তার একটু বাদে নার্সিং হোমের রিলিজ দেখতে চায় ওরা। রিলিজ পেপার দেখা হলে আবার বলে বাচ্চাকে দেখবে। অ্যাম্বুল্যান্সের দরজা খুলে দিতে। ড্রাইভার এসে যখন সায়কদের দরজা খুলে দিল, তখন তনুজা মুখ এমনিতেই কাঁদো কাঁদো হয়েই গেছিল। সায়কও উত্তেজনায় ঘামছিল। রিজু ঘুমিয়ে ছিল। ও বেচারা তখন খুবই ছোট। 

ওরা দুজন লোককে পাঠিয়েছিল পেশেন্ট পার্টি ঠিক ঠাক কথা বলছে কিনা দেখতে।  সব দেখে শুনে ওরা ফিরে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ বাদে ড্রাইভারও ফিরে এসেছিল।

ওই জায়গাটা এক নিমেষে পেড়িয়ে ড্রাইভার বলেছিল এবার চা বাগানের ভেতর দিয়ে যেতে হবে। মেইন রোডে আরও দু জায়গায় এমন অবরোধ আছে। তারপরের রাস্তা ড্রাইভারের কথা মতো ওরা নির্বিঘ্নেই এসেছিল। বাড়িতে সেই যাত্রায় সুরক্ষিত ভাবে ফিরেছিল। একদিনের বন্ধ ছিল, তাই পরের দিন শান্তি মতো দিল্লির প্লেনে উঠতে পেরেছিল। 

সায়কের বোন বিদিশার ডাকে বাস্তবে ফেরে তনুজা। দেখে একটা ছোট্ট ধাবার সামনে ওদের গাড়ি দাঁড়িয়ে গেছে। বিদিশা বলল, "বৌদি এখানে লাচ্ছা পরোটা আর ঘুগনি ভীষণ ভালো বানায়। চল আমরা খেয়ে নিয়ে বাকি রাস্তা যাব।" রিজু ততক্ষণে পিসতুতো বোনের সঙ্গে ধাবাতে ঢুকে গেছে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু