বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

বর্ষ বরণের উপহার



রবিবার দিন সকাল বেলা, আমি বসে বিবিধ ভারতীর অনুষ্ঠানটা শুনছি। আমার পতিদেব এসে বসলেন পত্রিকাটি নিয়ে। উনি পত্রিকা পড়ছেন, আমি রেডিও শুনছি। আমি শুনছি উনি পড়ছেন।
হঠাৎ বিকট চিৎকার। চমকে গেছি বাপু ওনার এমন অকস্মাৎ চিৎকারে। পড়িমরি করে জিজ্ঞেস করলাম, "আরে হলো'টা কি?" উনি বললেন, ''আরে ও গিন্নি! গয়নার মেকিং চার্জ বলছে জিরো! দেখতে হয় তাহলে লক্ষ্মণজী জুয়েলার্সে গিয়ে'', আমি বলে উঠলাম ''ও মা তাই? দেখি দেখি..."
আমিও পত্রিকার বিজ্ঞাপনটি দেখতে দেখতে বললাম ''অনেক দিনের শখ গো হীরের কানের দুল আর আংটি কেনার, চলোই না দেখে আসি''। উনি বললেন,''হুমম...তা যাওয়াই যায়, আরে আরে আরে.. দেখ দেখ, এই পাতায় আবার শ্যামা মা জুয়েলার্সের বিজ্ঞাপন। এখানে আবার প্রত্যেক কেনা কাটায় নিশ্চিত উপহারও আছে...''
আমি বললাম ''দুটো দোকানেই যাবো, যেখানে পছন্দ হবে সেখান থেকেই নেবো।''
উনি বললেন ''তা তুমি মন্দ বলোনি গিন্নি। যেতেই পারি। গিয়ে দেখাই যাক। তো এক কাজ করি, জলখাবার খেতে রওনা হই লক্ষ্মণজী আর শ্যামা মা জুয়েলার্সের উদ্দেশ্যে, কি বল?"
আমি পরম আনন্দে রেডিও ফেলে ছুটলাম জলখাবার তৈরিতে। খেয়ে দেয়ে দেবা-দেবী মিলে উপস্থিত আমরা লক্ষ্মণজী জুয়েলার্সে। লক্ষ্য করলাম পতিদেব গভীর মনোযোগ দিয়ে কানের দুল দেখছেন। আমি তো নিশ্চিত এইবার কানের দুল আর আংটি আমি পাচ্ছি নতুন বছরের উপহার হিসেবে। কিন্তু এ কি! এ কি কান্ড... গয়নার ডিজাইন যে পছন্দ হচ্ছে না আমার। মুখ কাঁচুমাচু মাচু করে বললাম ''না গো। মন মতন হচ্ছে না... শ্যামা মা'তেই যাই চলো''। 
এবার শ্যামা মা'তে গিয়ে অনেক দেখাদেখির পর এক জোড়া হীরের কানের দুল আর আংটি পছন্দ করলাম। হাসি মুখে আমার উনি গেলেন ক্যাশ কাউন্টারে পেমেন্ট করতে, কিন্তু উনি পেমেন্ট করছেন না তো! মাথা চুলকোচ্ছেন শুধু...
আমি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম ''হ্যাঁ গো, কি ব্যাপার?''
উনি সুবোধ বালকের ন্যায় মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন ''ক্যাশ তো এত নেই আর ডেবিট কার্ডটা ভুলে বাড়িতে রেখে এসেছি, তোমার কার্ডটি দাও গিন্নি।'' আমি কপাল চাপড়াচ্ছি ততক্ষনে আর বলছি "আঃ মরণ! আমি আজকে পার্স নিয়ে আসিনি গো..." আমাদের একে অপরকে মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে দেখে দোকানি শুধোয়,"অনলাইন ট্রান্সফার করেদিন না হয় টাকাটা..."
পতিদেব আমতা আমতা করে বললেন," আজ্ঞে মশাই স্মার্ট ফোন তো আমার নেই..." 
রাগে আমার গা-পিত্তির জ্বলছে মাইরি। কেমন ধারা আনস্মার্ট লোকের গলায় মালা দিয়েছিলাম প্রভু। দোকানি একটু রুষ্ট কণ্ঠে বললো, ''আপনারা টাকাটা নিয়ে আসুন। আমরা তখন ডেলিভারি দিয়ে দেবো.."
কী আর করা! ভাঙ্গা হৃদয়ে বাড়ি ফিরলাম। আহা রে! কেনো যে আর কী মনে করে যে আজ পার্সটা নিয়ে বের হইনি। ওনারও বলিহারি। ডেবিট কার্ডটাই ভুলে গেলেন। আর স্মার্টফোন না থাকার দুঃখটা। ইস্ এত কষ্ট নিয়ে বেঁচে থাকা যায় বলুন?
যাইহোক বাড়ি এসে উনি বললেন ''তুমি বাড়িতেই থাকো গিন্নি, আমি বরং নিজে গিয়ে নিয়ে আসি, কি বলো?''
আমি যেন ধরে প্রাণ পেলাম। সউৎসাহে বললাম ''হ্যাঁ তাই যাও। আমার আবার কলিরকৃষ্ণ সিরিয়ালের রিপিট টেলিকাস্টটাও দেখা বাকি। তুমিই যাও, আমার আর অটো-টোটো চেপে যেতে মন চাইছে না। কোমরটা সোজা করি একটু এখন..."
উনি টাকা নিয়ে বেড়িয়ে গেলেন আর আমি কলিরকৃষ্ণ দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বলতেই পারি না! স্বপ্ন দেখছিলাম যে ''হিরের কানের দুল আর আংটি পরিয়ে দিচ্ছেন আমাকে আমার পতি পরমশ্বের।''
কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভাঙলো আমার। ধপ করে উঠে বসলাম। উনি এসে গেছেন হয়তো! দৌড়ালাম দরজা খুলতে। খুলেই দেখলাম ওনার হাতে প্যাকেট। ইসু... কী খুশি আমি! তর সইছে না যেন! কিন্তু প্যাকেটটা খুলে যা দেখলাম তা দেখে চোখ ছানাবড়া।
ও মা গো! এ কি! কানের দুল, আংটির ডিজাইন তো পুরো চেঞ্জ, আমি যেগুলো পছন্দ করেছিলাম সেগুলো তো নয়! এখানে কানের দুল তো পমফ্রেট মাছের মত দেখতে লাগছে আর আংটিটা তো লাগছে চিংড়ি মাছের মত। এত্তবড় ধোঁকা...আমার সাথেই, তাও আবার নতুন বছরের শুরুতেই! আমি হা হয়ে আছি আর পতিদেব হলদে রঙের বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেঁসে বলছেন "তা গিন্নি, কেমন লাগলো নতুন বছরের উপহার?"
                     ___*___

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু