বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

সেকেন্ড ইনিংস

"সেকেন্ড ইনিংস"

✍️উজ্জ্বল সামন্ত


অনেক কে দেখে বোঝা যায় না মানুষটা কেমন। আমরা ততটুকুই বুঝতে পারি , যতটুকু একজন মানুষ নিজেকে প্রকাশ করে বাহ্যিকভাবে। বাইরের হাসিখুশি  মানুষটা হয়তো ভেতরে খুব দুঃখী। কিন্তু কাকে বলবে তার দুঃখের কথা বিশ্বাস করে। কেউ সুযোগ নেবে কেউবা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করবে। আবার কেউ মিথ্যা সহানুভূতি দেখিয়ে বলবেঃ চিন্তা করোনা আমরা তো আছি। না সবাইকে সবকিছু বলা যায়না। বোঝানোয় যায়না।


সদ্য বিবাহিত মেয়েটা শ্বশুর বাড়িতে নিজেকে মানিয়ে নিতে ব্যস্ত। মানানোর চেষ্টা চলছে প্রথম দিন থেকে। একান্নবর্তী সংসার। শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ, দেওর সবাই খুব ভালোবাসে। উষসী গৃহকর্মে অতটা পারদর্শী নয়। রান্নাবান্না ভালো জানে না। পড়াশোনা, নাচ গান এইসবই শিখেছে ছোট থেকে। ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় অনির্বাণ কে ভালোবেসে বিবাহ করে বাড়ির অমতে। উষসীর বাবা চেয়েছিলেন' ওর বন্ধু পুত্র মৈনাক এর সঙ্গে উষসীর বিয়ে দেবেন। মৈনাক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। নিয়তি: কেন: বধ্যতে! মানুষ যা ভাবে সব সময় তো তা হয়না। বাড়ির একমাত্র মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে অন্য একটা ছেলেকে বিয়ে করবে এটা দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি তারক বাবু।  ছেলে ব্যবসাদার । কত আর রোজগার করবে?


মেয়ের সঙ্গে  কোনো যোগাযোগ রাখেননি। ওরা হানিমুনে গেছে।  হঠাৎ অনির্বাণের অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়ে দৌড়ে যান তারক বাবু। আইসি ই ইউ তে অনির্বাণের শেষ নিঃশ্বাস ফেলার আগে, একবার শ্বশুরমশাইয়ের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এই কথা শুনে তারকবাবু  আর অভিমান করে থাকতে পারেননি। হসপিটালে পৌঁছে দেখেন উষসী খুব কান্নাকাটি করছে। ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছেন। আই সিই ইউ তে ঢুকে অনির্বাণের বেডের দিকে এগিয়ে যান। অনির্বাণ কে ডাকলে কোনরকমে চোখ খুলে খুব ক্ষীণ গলায়, তারক বাবু কে বলেন, বাবা আমায় ক্ষমা করবেন। আপনার মেয়ের আবার বিয়ে দেবেন । এই কথাগুলো বলে একটা জোরে নিঃশ্বাস ফেলে। ডাক্তারবাবু এসেছে পরীক্ষা করে জানান অনির্বাণ আর নেই।  সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে। শ্মশানে মুখাগ্নি করেন অনির্বাণের ভাই সৌরভ।


না উষসী বাপের বাড়িতে ফিরে যায় নি। উষসী শশুর বাড়িতে একসাথে থাকে। বৈধব্যের তকমা সাদা শাড়ি পরতে দেননি শ্বশুর বাড়ির লোক। উষসী আপত্তি জানালেও । উষসী চাকরির পরীক্ষায় বসে সম্মানে উত্তীর্ণ হয়। শিক্ষিকার চাকরিও জুটে যায়। রঙিন শাড়ি পরে স্কুলে যায়-আসে। স্কুল টা অনেক দূরে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। অনেকের অনেক সমালোচনা। বিধবা যুবতী নারী। একা একা বাড়ি ফেরে। উষসী তাতে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। কেউ কিছু বললে উষসী হাসিমুখে উত্তর দেয়।

ওর মিশুকে, স্বভাব হাসিখুশি।  দেখে বোঝার উপায় নেই ওর ভিতরের যন্ত্রনা ,দুঃখ, কষ্ট।


শ্বশুর-শাশুড়ি একটাই দুঃখ নাতি নাতনীর মুখ দেখতে পেল না বড় ছেলের। ছোট ছেলেও বিয়ে করছে না। বংশের কি হবে,  এই চিন্তা তাঁকে দিন রাত কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। বড় ছেলের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ওর বন্ধু  মৈনাক উপস্থিত। উনি বাইরে রাজ্য থেকে ফিরেছেন। অনির্বাণ ওর বাল্যবন্ধু ছিল। বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে দেখা করতে আসে। ডাইনিং এ বসে কথা বলছে। উষসী চা নিয়ে আসে, পরিচয় হয়। কিছুক্ষন গল্প করে মৈনাক চলে যায়।

একদিন বৈকালে আবার মৈনাক উপস্থিত। অনির্বাণের বাবার সঙ্গে কিছু জরুরী কথা বলতে চায়। অরুণ বাবু সব শুনে মনে মনে খুশি হন কিন্তু উষশীর অনুমতি না নিয়ে কিছু বলতে চান না। এই সময় উষসী ফেরে। মৈনাককে দেখে কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করে হাসি মুখে। আপনি একটু অপেক্ষা করুন, আমি আসছি। কিছু স্নাক্স এবং মিষ্টি সঙ্গে কফি নিয়ে ফেরে কিছুক্ষণ পর। তারকনাথ বাবু উপস্থিত। হঠাৎ বাবাকে দেখে উষসী মনে প্রশ্ন চিহ্ন দেখা দেয়। ‌ মৈনাক উপস্থিত বাবা উপস্থিত, শ্বশুরবাড়িতে কেন? কৌতূহল মেটাতে সরাসরি প্রশ্ন করে ? বাবা তুমি খবর না দিয়ে হঠাৎ এলে? মৈনাক বাবু এখানে রয়েছেন? কি কারন?


তারকনাথ বাবু মেয়ে কে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত দিয়ে প্রতিশ্রুতি নেন। উষসী যেন নতুন করে জীবন শুরু করে এই তার শেষ ইচ্ছা। অরুণ বাবুও সম্মতি দেন। বাবা ও শশুর মশাই এসব কি বলছেন?

মৈনাক তখন উত্তর দেয় , যদি আপনার আপত্তি না থাকে আমি আপনার জীবনসঙ্গী হতে ইচ্ছুক। উষসী তখন বলে করুণা করছেন আমাকে? না‌।

মৈনাক উত্তর দেন আপনার পানি গ্রহণ করলে আমি কৃতার্থ হবো। এরপর অনেক অজুহাতেও কাজ হয়নি। এক গোধূলি সন্ধ্যায় উষসী এবং মৈনাকের শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়। অষ্টমঙ্গলা পেরতেই তারকনাথ বাবু জামাইকে উপহারস্বরূপ সুইজারল্যান্ডের দুটি এয়ার টিকিট দেন ।  হানিমুন প্যাকেজ সমেত।

মৈনাক আপত্তি জানালেও কোনো কাজ হয়নি। একদিন ভোরে ফ্লাইটে ওরা দুই জন এয়ারপোর্টে  পৌঁছে যায়।  উষসীর সেকেন্ড হানিমুন, জীবনে দ্বিতীয় ইনিংসের পথে...

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু