বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

মুরগী

ভোর হলেই গোটা পাড়া জেগে ওঠে কোঁকর কোঁ, কঁক্ কঁক্ কোঁর শব্দে।


মোট ছ জনের পরিবার। কত্তা, গিন্নি আর চারটি ছানা। কত্তাটি প্রায় সাড়ে তিন কিলো ওজনের। লাল টকটকে ঝুঁটি। ঝালর দেয়া লেজ। দেখলেই মনে বেশ একটা সমীহ জাগে। গিন্নিটিও কম নন, প্রায় আড়াই কিলো তো হবেই। ছানাগুলো ঐ এক কেজির আশেপাশে।

কত্তা মশাই তার পরিবারটিকে নিয়ে সারা পাড়া, বাজার ঘুরে বেড়ান। খাবার জোগাড় করেন। সদ্য যুবক মোরগদের রোমিও দৃষ্টি থেকে কন্যা এবং গিন্নিকে বাঁচান। অন্য মোরগদের হাত থেকে নিজের এলাকা রক্ষা করেন আর রাত হলে সপরিবারে নিজের ডেরায় ফিরে যান। গিন্নি নিয়মমাফিক ডিম পাড়েন। কিন্তু লেখাপড়া না জানার কারনে ডিমের হিসেব খালি গুলিয়ে ফেলেন।


ভোরবেলার কোঁকর কোঁ আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। এসির শিরশিরে হাওয়া থেকে বাঁচতে চাদরটা ভালো করে গায়ে টেনে বরের বুকে মুখ গুঁজে দেন রায় গিন্নি। রায় বাবুর হাত ঢুকে আসে নাইটির ভেতর।

রায় গিন্নি ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করেন, "হ্যাঁ গো, চারিদিকে এত মুরগী ডাকে, চরে বেড়ায়! তবে যে ফ্ল্যাট নেওয়ার সময় প্রোমোটার বলেছিল, এ মহল্লায় ওদের বাস নেই? খুব নিরাপদ জায়গা। রাত এগারোটাতেও একা বাড়ি ফিরতে পারব? তাহলে এত মুরগী কেন?"

রায় গিন্নির উপর উঠে আসতে আসতে রায় বাবু বলে ওঠেন, "হুঁ, তাই তো বলেছিল। ঠিক আছে, জিজ্ঞেস করব ব্যাটাকে। মেয়েটাও তো বড় হচ্ছে।"

বাজার করতে গিয়ে রায় গিন্নি দেখতে পান মোরগ দম্পতিকে ছানাপোনা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে।

"ওরা যে এভাবে ঘুরে বেড়ায়, হারিয়ে যায় না?"

"না, না বৌদি। চারিদিক ঘুরে ফিরে সন্ধ্যা হলে ঠিক নিজেদের ডেরায় ফিরে যাবে", আলু ওজন করতে করতে জবাব দেয় দোকানিটি।

সন্ধ্যা বেলায় অফিস থেকে ফেরার পথে রায় বাবু ঝা জীকে বলেন, "কিতনা মুরগী হ্যায় ইধার দেখিয়ে!"

"হাঁ। বাত করনা হোগা।"

সোসাইটির মিটিঙে হাঁ হাঁ করে ওঠেন প্রোমোটার বাবু।

"আরে, সত্যিই এখানে ওরা নেই। এই অঞ্চলে কোথাও নেই। লাখ টাকা বেশি দিলেও আমরা ওদের ফ্ল্যাট বেচি না। এটাই আমাদের ইউ এস পি। ওদের সাথে থাকা যায় নাকি! এই দাদাকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন না।"

সকলের চোখ ঘুরে গেল নবাগতর দিকে।

"আর বলবেন না, আমাদের তিন পুরুষের বাস তুলে এখানে চলে আসতে হচ্ছে ওদের উৎপাতে। আরবে গিয়ে গাদাগাদা টাকা কামিয়ে নিয়ে আসছে আর সেই টাকা দিয়ে সব জমি কিনে নিচ্ছে। আর আমরাও হয়েছি তেমনি। দুটো বেশি টাকার লোভে ভিটেবাড়ি ওদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আমরা চারটি পরিবার এখনো লড়াই দিয়ে যাচ্ছিলাম, বুঝলেন। কিন্তু আর পারলাম না। চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে ওরা। চারিদিকে দাড়ি, টুপি। সরাসরি মুখে কিছু বলে না ঠিকই, কিন্তু কী রকম একটা ঠান্ডা চোখে তাকায়। বৌ, মেয়েকে মাপে। শাঁখ বাজাতেও ভয় হয়, জানেন। এখন তো আবার শুনছি ওরা নাকি কসাইখানাও খুলবে। তাই ঠিক করেছি, আর না।"

"আরে দাদা, আপনি নিশ্চিন্তে এখানে চলে আসুন। এই তো সেদিন আমার নতুন প্রোজেক্টে ফ্ল্যাট নেবে বলে একটা পার্টি এসেছিল। হাজবেন্ড, ওয়াইফ আর একটা বাচ্চা। প্রফেসর। বাচ্চার স্কুল এখান থেকে কাছে হবে বলে এখানে ফ্ল্যাট খুঁজছে। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু যেই নামটা শুনেছি, অমনি বলে দিয়েছি এখানে খালি নেই। সব বুক হয়ে গেছে। আরে ভাই, আমার ফ্ল্যাট আমি কাকে বেচব সে স্বাধীনতা তো আমার আছে নাকি!"


মোরগ কত্তা এসব কথা কিছু জানেন না। উনি স্বাধীনভাবে ডাক ছাড়েন। পরিবার নিয়ে স্বাধীনভাবে ঘুরতে যান, পরিবারকে আপদ বিপদ থেকে রক্ষা করেন। স্বাধীনভাবে খাবার জোগাড় করেন। স্বাধীনভাবে গিন্নির সাথে সঙ্গম করেন। সূর্য ডুবলে সপরিবারে স্বাধীনভাবে নিজেদের খাঁচায় ফিরে আসেন।

গিন্নিও স্বাধীনভাবে ডিম পাড়েন। ডিমের হিসেব শুধু গুলিয়ে যায়, এই যা।


সেদিন ভোরে রায় বাবু গিন্নির বুক হাল্টাতে হাল্টাতে বললেন, "বুঝলে, ওই বড়টাই বুক করে এসেছি। সাড়ে তিন কিলো ওজনের দেশী মুরগী। পুরো জমে যাবে। প্রেশার কুকারে রান্না করতে বলেছে।"

"কাদের মুরগী গো?"

"ওই তো, ওই হলুদ বাড়িটার। নামটা ঠিক জানি না। পদবি -


সরকার।।।"

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু