বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

বন্ধুত্বের বলয়

বিনয় বাবুর স্ত্রী গত হয়েছেন সবে একবছর হল। বড্ড মনে পড়ে তাঁর শ্রীলেখার মায়া ভরা মুখটা। মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর সংসারের আয়ু ছিল স্ত্রী শ্রীলেখার সঙ্গে তাঁর। শ্রীলেখা দেবীর বয়সটা বিনয় বাবুর থেকে অনেকটা কম হলেও, দুজনের মানসিক টানটা কিন্তু কখনই কম ছিল না। বড্ড ভালোবাসতেন যে শ্রীলেখাকে।তাইতো স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রতিটা মুহূর্ত তিনি একাকীত্বে ভোগেন।


ওনাদের একমাত্র ছেলে সায়ন ও বউমা পল্লবী, বিয়ের পর থেকেই কলকাতার বাইরে বাইরেই থেকেছে। সায়ন আর পল্লবী বিয়ের পনেরো দিনের মাথাতেই ফিরে যায় নিজেদের জায়গায়। না, শ্রীলেখা দেবী কোনো আপত্তি করেননি পল্লবীর এখনই সায়নের সাথে চলে যাওয়ার ব্যাপারটাতে। তিনি বুঝতেন বিয়ের পর নতুন সম্পর্ককে পরস্পরের চিনতে দেওয়ার, বুঝতে দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হয়। বিয়ের আগের সম্পর্ক আর পরের সম্পর্কের যে বিস্তর পার্থক্য থাকে, সেটা তিনি জানতেন। বিয়ের পর যখন দুটি মানুষের নিজ চরিত্রের অজানা দিকগুলো উন্মোচিত হতে থাকে, তখন পরস্পরকে মানিয়ে নেওয়ার সময় দিতে হয়। সেখানে এই মুহূর্তে অন্য কারোর উপস্থিতি নিষ্প্রয়োজন বলেই তিনি মনে করতেন। আর তাছাড়া এখনই নতুন মানুষের উপর দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে জোর করে আটকে রাখার পক্ষপাতিত্বে শ্রীলেখা দেবী বিশ্বস্ত ছিলেন না।


সায়ন আর পল্লবীর কলেজেই পরিচয়। সায়ন কর্মক্ষেত্রে কলকাতার বাইরে থাকলেও নিজেদের সম্পর্কে কখনও ভাঁটা পড়তে দেয়নি। সায়ন মাকেই বলে রেখেছিল পল্লবীর কথা। শ্রীলেখা দেবী আর বেশী দেরি করেননি, বাপ মরা মেয়েটাকে বাড়ির বউ করে আনতে। সেই সুন্দর মনের মানুষটার হঠাৎ মৃত্যু যেন বাবা আর ছেলে দুজনকেই বিষন্নতার সাগরে ডুবিয়ে দেয়। মায়ের সাথেই বরাবর বেশি বন্ধুত্ব ছিল সায়নের। মা ছিল সায়নের অনুপ্রেরণা, শক্তি। বিনয়বাবুর সাথে ছেলের স্বাভাবিক বন্ধুত্বটুকুও গড়ে ওঠেনি কোনোদিনও। শুধুই ছিল পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। বিনয় বাবুর শান্ত ও চাপা স্বভাব এবং ছেলে মানুষ করার সব দায়িত্ব স্ত্রীর উপর দিয়ে নিজে নির্বিকার হয়ে থাকার জন্যই হয়তো পিতা-পুত্রের সম্পর্কের বিভিন্ন দিকগুলো একটা অদৃশ্য আবরণে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল।


বিনয় বাবুর সংসার জীবনের একমাত্র আকর্ষণ ছিল স্ত্রী শ্রীলেখা। ছেলেও ছিল মা-অন্ত প্রাণ। এরজন্য কখনও কখনও শ্রীলেখা দেবী ভিতরে ভিতরে অপরাধবোধে ভুগতেন। "ছেলেটা বড্ড মা মা করে। আমি আর পারিনা বাপু। তুমি তো একটু ওর সাথে কথা বলতে পারো"।


"বেশ তো, করুক না মা মা। আমার তো ভালোই লাগে দেখতে। তোমরা দুটিতে মিলে কেমন গল্প করো বেশ লাগে আমার"।


শ্রীলেখা দেবী বিনয়বাবুর কথা শুনে মনে মনে বলতেন, "হে ঈশ্বর আমার কিছু হয়ে গেলে এই সহজ সরল মানুষটাকে তুমি দেখো। এতো চাপা স্বভাবের মানুষ, কেউই যে আপন করে নিতে পারেনা মানুষটাকে। সত্যিই তাই, খুব কম মানুষ ছিল, যারা তাঁকে পছন্দ করতেন, বুঝতেন। এমনকি নিজের ছেলের সাথেও স্বাভাবিক বন্ধনটুকু গড়ে ওঠেনি। হয়ে ওঠেনি কোনো রবিবারের দুপুরে খেতে বসে ছেলের কলেজের, বন্ধুদের গল্প শোনা। হয়নি কোনো রাজনৈতিক দলকে কেন্দ্র করে দুজনের তর্ক -বিতর্কে জড়িয়ে পড়া। হয়নি ফুটবল-ক্রিকেটের বিশ্বকাপ নিয়ে দুজনের উত্তেজনা একসাথে ভাগ করে নেওয়া। এরকম কতো কিছুই তো ছিল বাবা আর ছেলের মধ্যে অজানা।


মায়ের মৃত্যুর পর সায়ন পল্লবীকে নিয়ে ফিরে আসে কলকাতায়। অবশ্য সেটা বাবার প্রতি টানে না কতর্ব্যের খাতিরে সেটা গোপনই রেখেছিল সায়ন। কলকাতায় নতুনভাবে চাকরিতে জয়েন করে সায়ন। এতো বড়ো ঘরে বাবা আর ছেলের জীবন কাটছিলো দুটি অন্য জগত নিয়ে। একজনের বই নিয়ে আর অন্যজনের কাজের ব্যস্ততা নিয়ে, পল্লবীকে নিয়ে। তবে হ্যাঁ দুজনেরই একটা ভালো লাগার জায়গা ছিল। বিনয়বাবু রোজ বিকেলে পাশের পার্কটাতে হাঁটতে যেতেন। বিকেলে হাঁটতে পারলে বেশ আরাম বোধ করতেন মনেও আর শরীরেও। সায়ন কাজের শেষে পুরোনো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেশ ভালোবাসতো। কফিশপে হোক কী পাড়ার ক্লাবে হোক।


আর পল্লবীর সময় কাটতো নিজের মতো করেই। এখানে এসে কয়েকটা স্কুলে চাকরির জন্য অ্যাপ্লাইও করেছে, কিন্তু এখনও কোনো রিপ্লাই  আসেনি। শাশুড়িমাকে বেশী দিন দেখার বা চেনার সুযোগ হয়নি পল্লবীর, কিন্তু যতটুকু দেখেছে বা যত্ন পেয়েছে, সেটুকুও যে তার কাছে অনেক। তাই এখানে এসে খুব যত্ন করেই রেখেছে শাশুড়ি মায়ের স্মৃতিগুলোকে, তার এতো দিনের সাজানো সংসারটাকে। যার হাতের ছোঁয়া লেগে জীবন্ত হয়ে রয়েছে ঘরের প্রতিটি কোণা, প্রতিটি জিনিস, সেই ছোঁয়া সরিয়ে পল্লবী নিজের ছোঁয়ার অধিকার ফলায়নি। এ যেন শাশুড়ি মায়ের বউমাকে স্নেহ করার, যত্ন করার প্রতিদান দেওয়া পল্লবীর।শ্রীলেখার একমাত্র স্মৃতি সায়নকে তো সে আগলে রেখেইছে, কিন্তু যে মানুষটা শুধু একজনেরই স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে আছে, তাকে কে আগলে রাখবে? সেই কোন ছোটোবেলায় নিজের বাবাকে হারিয়েছে পল্লবী। তারপর থেকে সেই জায়গাটা ফাঁকাই রয়ে গেছে। এতোদিন পর আবার বাবার মতো একজনকে পেয়েও পল্লবী বুঝতে পারেনা কেন এই দূরত্ব সে কমাতে পারছেনা। পল্লবী চেষ্টা করেছিল একা একা বেঁচে থাকা মানুষটার দিকে বন্ধুত্বের হাতটা বাড়িয়ে দিতে। শাশুড়ি মায়ের আরেকজন অতি প্রিয় মানুষটা, যে সবার আড়ালেই থেকে গেলো সারাজীবন, তাকে আপন করে নিতে চেয়েছিল পল্লবী। কিন্তু বিনয়বাবুই নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন সম্পর্কের এই মায়াজাল থেকে। একবার তো মায়ায় পরে অনুভব করেছেন কষ্টটা। তাই ভয় পান কখন আবার এই সম্পর্কের মায়াজাল ছিঁড়ে যাবে, আর তিনি আবার মুখ থুবড়ে পড়বেন। তিনি জানতেন যে, ছেলে আর ছেলের বউ কিছুদিনের জন্যই এখানে এসেছে। হয়তো এক বছর পর আবার ফিরে যাবে। তাই শুধু শুধু মায়া বাড়িয়ে কোনো লাভ নেই। দুজন দুজনের মতো আছে থাকুক। আজকালকার ছেলেমেয়ে ওরা। বাড়তি এই মানুষটাকে নিয়ে হয়তো টানাপোড়েন চলছে নিজেদের মধ্যে। তার থেকে বরং এই ভালো, নিজের ইচ্ছেয় এসেছে, আবার নিজের ইচ্ছেতেই ফিরে যাবে। ছেলে বা বউমা কারোর সাথেই মুখোমুখি হলে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়তেন নিজেকে লুকোতে। যেন অপ্রস্তুতে ফেলে দিলেন নিজের ছেলে আর বউমাকে।


বেশ কিছুদিন ধরে বিনয়বাবুর পার্ক থেকে আসতে একটু দেরিই হচ্ছিলো। পল্লবী অনেক বার জিজ্ঞেস করেছিলো এ ব্যাপারে, কিন্তু বিনয়বাবু কিছু বলেননি।


"বাবা যদি কিছু সমস্যা হয়ে থাকে, অসুবিধা হয়ে থাকে বলুন না আমায়, আমি তো আপনার মেয়ের মতোই। আপনার ছেলেকে না বলতে চাইলে আমাকে বলুন অন্তত। আপনার তো এতো দেরি হয়না, আজকাল খুব দেরি করে বাড়ি ফিরছেন, অনেকটা সন্ধ্যে হয়ে যায়। শীতকাল, পার্কেও খুব একটা লোকজন থাকেনা।আমার চিন্তা হয় বাবা"।


বিনয়বাবু কিছুটা অপ্রস্তুতে পড়ে গেলেন। কী বলবেন তিনি? সুমনার কথা বললে যদি ছেলে আর বউমার কাছে অপমানিত হতে হয়? যদি সুমনার সাথে সম্পর্কটা না রাখতে দেয় এরা? না না, অনেক দিন পর পেয়েছি সুমনাকে, হারাতে চাইনা ওকে। কীসব ভাবছিলেন তিনি।


পল্লবীর কথায় হুঁশ ফেরে বিনয়বাবুর, "না বউমা কোনো অসুবিধা নেই। আমাকে নিয়ে তোমাদের চিন্তা করতে হবেনা"।


কথাগুলো একটু কড়া সুরেই বললেন। নিজের স্বভাববিরুদ্ধ সুরে কথাগুলো বলতে গিয়ে গলাটা একটু কেঁপে গেলো বিনয়বাবুর। সারারাত ভালো করে শুতে পারলেননা তিনি। সত্যিই তো মেয়েটা আমার কথা ভাবে, আমার যত্ন করে। তাও মেয়েটাকে আমি কষ্ট দিলাম। কিন্তু সুমনার কথা বললে আমি যে সুমনাকে হারাতাম। ওরা তো চলেই যাবে আজ না হয় কাল। কিন্তু সুমনা তো এখন থেকে এখানেই থাকবে। তবে কেন শুধু শুধু এসবের মধ্যে ওদের জড়াবো? না না।


পরের দিন রবিবার বিকেলে... "পল্লবী আমি আসছি। আচ্ছা শোনো না, নিশা বার বার বলে তোমাকে নিয়ে একবার কফিশপে আসতে। তুমি তো যেতে পারো একবার"।


"আচ্ছা যাবো একদিন না হয়। সায়ন তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল বাবাকে নিয়ে"।


সায়ন অবাক চোখে পল্লবীর দিকে তাকায়। "বাবাকে নিয়ে? ও বুঝেছি। নিশ্চয়ই হাঁটুর ব্যথাটা বেড়েছে? আচ্ছা রাতে ফিরে কথা বলছি। নিজের মুখে কিছু বলবেননা, আমাদেরকেই মনের ভিতরে ঢুকে কথা বের করতে হবে। আশ্চর্য মানুষ একটা"।


"কিন্তু বাবা..."।


"বললাম তো পরে শুনছি। যাও দেখো তোমার ফোনে রিং হয়ে যাচ্ছে। দেখো কে ফোন করলো, তোমার মা হবেন হয়তো, আমি আসছি"।


পল্লবী কী করবে ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে ফোনটা ধরলো। কখন যে অনুতপ্ত মানুষটা তার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছেন, পল্লবী বুঝতে পারেনি।


কিছুক্ষণ পর...


"পল্লবী এদিকে একবার শোনো"।


সায়ন রাগে চিৎকার করতে করতে ঘরে ঢুকলো।


"কী হয়েছে চিৎকার করছো কেন এভাবে? আর তুমি তো ক্লাবে গিয়েছিলে, চলে এলে যে"?


"চিৎকার করবোনা বলছো? বাবার জন্য সমাজে আর মুখ দেখাতে পারবোনা বুঝলে"?


পল্লবী বুঝতে পারলো আরেকটা মানুষও অপরাধীর মতো পর্দার আড়ালে অপেক্ষা করছে নিজের শাস্তিটা শোনার জন্য।


"কেন, বাবা আবার কী করলেন"? পল্লবীর কথায় দৃঢ়তা স্পষ্ট।


"তুমি জানো, বাবা রোজ বিকেলে পার্কে গিয়ে কী করেন? ঘন্টার পর ঘন্টা এক মহিলার সাথে প্রেম করেন! ছিঃ, মায়ের অবর্তমানে বাবা এসব..আমার ভাবতেই কেমন লাগছে"।


বিনয়বাবু আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেননা। লজ্জায়-অপমানে মাটিতে মিশে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু তাও দাঁড়িয়েই রইলেন সেখানে। এক পাও নড়তে পারলেন না।সব বিষবাক্য একসাথেই পান করবেন তিনি। দেখবেন কি শাস্তি বরাদ্দ হয় তার জন্য।


"তুমি নিশার সাথে কফিশপে প্রেম করতে যাও"? সেই একই দৃঢ়তার সাথে প্রশ্ন করলো পল্লবী।


"কী বলছো তুমি? তুমি জানো না নিশা আমার সেই ছোটোবেলার বন্ধু হয়। ওর সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছাড়া আর কোনো সম্পর্কই নেই"।


"ঠিক তাই। সুমনা মাসিও বাবার ছোটোবেলার একমাত্র খেলার সাথী, স্কুলের সহপাঠিনী। কিছু মাস আগে সুমনা মাসি বরকে নিয়ে কলকাতায় এসেছেন। এখন থেকে এখানেই থাকবেন। সুমনা মাসিও বিকেলে পার্কে যান। চিনতে ভুল করেননি দুজন দুজনকে। পরস্পরের দিকে বাড়িয়ে দেন বহু বছর আগে পিছনে ফেলে আসা নিষ্পাপ বন্ধুত্বের হাতদুটো। এই বিকেলটুকুই তাদের নিজেদের ছোটোবেলার নানান স্মৃতি, সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয়ার সময়। তোমার আর নিশার মতো বাবা আর সুমনা মাসিও শুধু বন্ধুই, ছেলেবেলার বন্ধু, যাকে অনেকদিন পর আবার খুঁজে পেয়েছেন"।


"একটু আগে ক্লাবে যাওয়ার সময় এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমায় রাস্তায় দাঁড় করিয়ে অভিযোগ করলেন যে, তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে নাকি আমাদের বাবার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে"।


"তাই তুমি হন্তদন্ত হয়ে ফিরে এলে বাবার কাছে কৈফিয়ত চাইতে? তুমি জানো, তোমার বন্ধু নিশার বরও একটু আগে আমায় ফোন করে তোমার নামে নালিশ করলো। তুমি নাকি নিশার সাথে প্রেম করছো? কই আমি তো বিশ্বাস করিনি। কৈফিয়তও চাইনি তোমার কাছে"।


"আরে ওই লোকটা তো একটা সন্দেহবাতিক লোক। নিশাকে সবসময় সন্দেহ করে, যার সাথেই কথা বলুক না কেন"?


"সুমনা মাসির বরও সন্দেহবাতিক। মানসিক রোগ আছে ওনার। কোথাও বেরোতে দেননা স্ত্রীকে। কারোর সাথে মিশতে দেননা। তাও সুমনা মাসি ছোটোবেলার বন্ধুকে পেয়ে জোর করে পার্কে আসেন বাবার সাথে কথা বলে মন হালকা করতে"।


"কিন্তু পল্লবী সমাজ তো সেটা বুঝবেনা। বাবার কী উচিৎ এই বয়সে এসে..."


পল্লবী সায়নের মুখ থেকে কথা কটা কাড়িয়ে নিয়ে উত্তর দিল.."পার্থক্যটা বয়সের না সায়ন, পার্থক্যটা দৃষ্টিভঙ্গীর। ওটা পাল্টাও, দেখবে সমাজও পাল্টে গেছে। তুমি চেনো না তোমার বাবাকে? না কোনোদিন চেষ্টাই করোনি মানুষটাকে বুঝতে? তিনি মাকে ঠকাবেন বলে মনে হয় তোমার? মা আমাদের সবার কাছে মৃত হলেও একজনের চোখে আজও কিন্তু জীবিত। সেটা ভুলে যাও কী করে? যাও বাবার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও"।


"তুমি এসব কী করে জানলে পল্লবী"?


"বাবাই বলেছেন, আর আমি বিশ্বাসও করি ওনাকে। এবার যাও তো এখান থেকে, আমার অনেক কাজ আছে"।


"বাবা আপনার পার্কে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো তো। সাবধানে যাবেন। শালটা ভালো করে জড়িয়ে নেবেন গায়ে। নাহলে ঠাণ্ডা লেগে যাবে। আর হ্যাঁ সুমনা মাসিকে কাল একবার আমাদের বাড়ি আসতে বলবেন তো। আগামীকাল যে মায়ের জন্মতিথি। একটু খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে তো। পারলে ওনার বরকেও আসতে বলবেন। তোমার নিশাকেও ডেকো কিন্তু। সবাই মিলে একটু আনন্দ করা যাবে"।


সায়ন বাবার কাছে ক্ষমা চাইতে গেলে বিনয়বাবু নিজের হাতটা বাড়িয়ে মাতৃহীন ছেলেটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। সায়নের মা না থাকার কষ্টটা একটু হলেও কম  অনুভব হলো বাবার এই স্নেহের বাহু বন্ধনে। বিনয়বাবুর সজল চোখ দুটো তখন আরেকজনের বাড়ানো হাত দুটো খুঁজছিলো। যে এই নতুন বন্ধুত্বের বলয়টা কতো অনায়াসে নিজেদের মধ্যে সৃষ্টি করে দিলো কিছুক্ষণ আগেই।


পল্লবী তখন শ্বশুর মশাইয়ের শাল আনতে ব্যস্ত। "এই যে বাবা আপনার শালটা, ভালো করে জড়িয়ে নিন দেখি। কী বলেছি মনে আছে তো"? 


"হ্যাঁরে মা। যা যা বলেছিস, সব মনে থাকবে। আসি এবার"?


"হ্যাঁ আসুন। দুগ্গা...দুগ্গা"।


                                                                               সমাপ্ত






পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু