বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

মায়ার টানে

মায়ার টানে

স্বস্তিক দাস


রাত একটা। হোটেলের সব বাসন মেজে সবে রান্নাঘরের এককোণে ছেঁড়া চাদরটা বিছিয়ে শুয়েছে অমল। এমন সময় কমলিদির ডাক,

-"অমু,অ‍্যাই অমু,বলি কোথায় মরলি রে হতভাগা।"

-"যাই-।"বিরক্তিমেশানো কন্ঠে কমলিদির জবাব দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল অমল। তারপর পাশের ঘরে,যেখানে কমলিদি আর হোটেলের বাকি ঝি-চাকরেরা থাকে,সে ঘরে ঢুকল অমল।

-"বলো।"

-"ভাতের হাঁড়ি থেকে মাছের মুড়োখান কে সরালো?"

-"আমি জানিনা গো দিদি।"

-"চোপ,বল,বল কোথায় রেখেছিস মুড়োটা?"

-"ছিঃ ছিঃ,আমি তোমায় না বলে মাছের মুড়ো সরাব,এ তুমি ভাবলে কী করে?আর তাছাড়া ওই অত বড়ো কাতলার মুড়ো কী আমি খেতে পারি গো?"

-"তুমি চুপ করো দেখি। তোমার ওই সরু পেটে যে গরু ধরে,তা আমরা সবাই জানি। কীরে হারু,তাই না?"

হারু আর মদন কমলিদিকে সায় দিল। অমল বলল,বিশ্বাস করো দিদি,আমি মুড়ো নিইনি। 

-"মিথ‍্যেবাদী,ঠগবাজ,জোচ্চোর। দাঁড়া,কাল সকালেই মালিককে বলে তোমায় এখান থেকে বিদেয় করবার ব‍্যওস্থা করছি।"

-"তোমার পায়ে পড়ি দিদি,এমনটা কোরোনা গো। এই অনাথ ছেলেটা যে তবে অনাহারে মরবে,আমি যে তোমাদের ভাইয়েরই মতো। আমার উপর এত রাগ কেন তোমাদের?"

কমলিদি এবার নরম স্বরে বললেন,"থাক,আর আদিখ‍্যেতা করতে হবেনা। ওঠো দিকিনি। আমরা একটু মজা করছিলেম। মুড়োটা যে আমিই খেয়েছি।"বলেই ফিক করে হেসে দিলেন কমলিদি। সবার আড়াল থেকে তাপস দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,ব‍্যাটা অমল এবার দীনুর পর কমলিকেও হাত করে নিলে। এবার তিনটেকে একসাথে হোটেল থেকে উৎখাত করতে হবে। 

                     

                    আগামী সপ্তাহে


-"মালিক,দু'চারদিনের জন‍্যি ইকটু দেশের ঘর যাবো?বাপটার বড় অসুখ করচে। বোধহয় আর বাঁচবে না। শেষবারের মতো একটু দেকে আসি না হয়?আর-কিছু টাকা-।"কাঁদো কাঁদো মুখে বললে কমলি। হিসেবের খাতা দেখতে দেখতে পান চিবোচ্ছিলেন 'মা অন্নপূর্ণা ভাতের হোটেল'-এর মালিক যতীন সাহা। বললেন,"দেখ কমলি,প্রতি মাসে তোর এই নাটক আর ভাল্লাগছেনা। আজ বাপের শরীর খারাপ তো কাল মায়ের। এক কাজ কর,তুই বরং নতুন কাজ দেখ। আমার হোটেলে থাকতে গেলে এত ছুটি নেওয়া যাবেনা আর আগাম টাকাও চাওয়া যাবেনা। পষ্ট কথা।"কমলির চোখ জলে ভিজে গেল। বলল,ঠিকাছে মালিক। চাইনা ছুটি,চাইনা টাকা। যাবোনা দেশের ঘর। মালিকের ঘর থেকে বেড়িয়ে এল কমলিদি। আড়াল থেকে সবটা শুনছিল

অমল। কমলিদির দেশের বাড়ী সেই বনগাঁয়।  কমলিদি বাইরে বেরোতেই অমল ওকে টানতে টানতে হোটেলের বাইরে নিয়ে গেল। তারপর পকেট থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বার করে কমলিদির হাতে গুঁজে দিল অমল। 

-"যাও। ঘুরে আসো ও'বাড়ি থেকে। এদিকটা আমি  সামলে নেবো। তাড়াতাড়ি যাও। আর দেরী কোরোনা।"

-"এই টাকা আমি নিতে পারব না অমু। কত অত‍্যাচার করেছি তোর উপর,আর তুই-।"হাউহাউ করে কেঁদে ফেললেন কমলিদি। 

-"ধুর,তুমি এখন কান্না করতে বসবে নাকি?জলদি যাও,ওদিকে আবার মেলা কাজ পড়ে আছে।"

কমলিদি তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে গত রাত্রে গুছিয়ে রাখা ব‍্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়ল।


দুপুর দুটো। হোটেলে এখন লোকজন গিজগিজ করছে। অমল মাঝখানে একবার উধাও হয়ে গিয়েছিল। এইমাত্র ফিরল। নাঃ,চাকরি অবিশ‍্যি ওরও যায়নি,আর কমলিদি'রও যায়নি। মালিক জিজ্ঞেস করেছিল বটে। ও-ও দিয়েছে দারুণ উত্তর।

-"কীরে অমল,কোথায় গিয়েছিলি তুই?আর কমলিই বা কোথায়?"

-"হাসপাতালে। কমলিদি যে নিজের ঘরে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল,তা কী কারোর চোখে পড়েচে?ওকে হাসপাতালে ভর্তি করে এলেম।"

-"টাকা কোথায় পেলি?"

-"টাকা আর থাকবে কেন?ভাগ‍্যে বীরু বদ‍্যি ছিলে। বিল উনিই ভরে দিলেন।"

-"কেন?বীরু বদ‍্যি বিল ভল্লেন কেন?"

-"বা রে,উনি যে কমলিদিকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন।"

-"বটে?ঠিকাছে,এবার কাজে যা দিকি।"

অমল হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। একটা মিথ‍্যে চাপতে গিয়ে অজস্র মিথ‍্যা বলতে হয়। এ'কথাটা যে খাঁটি সত‍্যি,তার প্রমাণ আজ পেল অমল। যতীন সাহা যেন আজ ব‍্যোমকেশ হয়ে গিয়েছিলে। 


-"তোমার বাবা ঠিকাছে,কমলিদি?"

-"না রে। অবস্থা আরো খারাপ।"

-"তা এত জলদি এলে কেন?"

-"তুই আর কতদিন পরিস্থিতি সামাল দিবি?"

-"চলো,হোটেলে চলো।"

-"নারে,ও কাজ আমি আর করবো না। তুই যা,আমি একটু বাদে আসছি।"

-"বেশ।"অমল উঠে চলে যাচ্ছিল। এমন সময় কে যেন বলে উঠল,"শুনেছিস?আজ সকালে বনগাঁ থেকে যে গাড়ীটা আসছিল,সেটার অ‍্যাক্সিডেন্ট করেছে। ড্রাইভার তো মরেই গেছে এমনকী কোন যাত্রীও বেঁচে নেই।"

                        ______


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু