বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

সুখের ঠিকানা

 

সব কাজ শেষ হয়ে গেছে একটু আগেই।মিনুর মা ঘর পরিষ্কার করতে করতেই একবার বলে গেছে

-- উঠে বাইরে যাও মা।আমি হাত ধুয়ে চা বানাবো সবার জন্য।তোমাকে একটু চিড়ে ভাজা করে দেবো মা !

উত্তর না পেয়ে চলে গেছে কখন যেন।

জানলা পেরিয়ে ওই বাগানের গাছে গাছে রাত নেমেছে নিজের মতো করে।রোজই তো আসে কিন্তু আজ কেমন যেন আলাদা।আজ এ রাত যেন চেঁচিয়ে বলে উঠছে বারবার

-- তোর জীবনে এই রাতের সকাল আর কোনদিন হবে না।

চমকে পেছন ফিরে তাকালেন পরমা।

,কিছুদিন আগেই অখিলেশ চলে গেছে এই বাড়ি, এই ঘর ,পাঁচিল দিয়ে উঁচু করে ঘেরা তার সাধের বাগান আর পরমাকে রেখে।

কোন রোগ ভোগ কিচ্ছুটি ছিল না তার।সে কবে কখনও পায়ে ব্যথা,বুকে ব্যথা ওমন তো বয়েস হতে হতে লেগেই থাকে।কিন্তু এ মানুষটা কোনদিন কিছু বলে নি।না নিজে ভুগেছে না কাউকে ভুগিয়েছে।

মাঝরাতে কোনদিন কদাচিৎ দেখেছেন হয়তো পায়চারি করতে ,

-- শরীর ঠিক আছে তো তোমার !

চিন্তিত পরমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছেন

-- তুমি ঘুমিয়ে পড়ো ,একটা কবিতা মাথায় ঘুরছে সেই সকাল থেকে ,না লিখে ঘুম আসবে না যে।

শুয়ে পড়েছেন পরমা কারণ এ অভ্যাসটা তো আছে তার জানেন সেই শুরু থেকেই।

ধীরে ধীরে সংসার বড় হয়েছে ,যমজ ছেলে হবার চার বছর পরে আবার মেয়ের মা হয়েছেন।

নিঃশ্বাস ফেলার সময় তো কোনদিন পান নি তিনি।আর চাননিও হয়তো।

শ্বশুর শাশুড়ি দেওর ননদ সামলে সংসারের খুঁটিনাটি দেখতে দেখতে কবে যেন ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে নিজের মতো।

একান্নবর্তী পরিবারের এই এক সুবিধে।ছোট্ট পরিবার থেকে আসা পরমা মাঝে মাঝে হাঁফিয়ে উঠতেন আর সেই ক্ষণেই ননদ আর ছোট জা এসে জড়িয়ে ধরতো

-- আজ বুঝি বিকেলে সাজবে না !

আটপৌরে শাড়ী পরা পরমা জানতেন অখিলেশ অফিস থেকে ফিরেই খুঁজবে তাকে আর সবার আড়ালে বলে উঠবেন

-- এই অধম সারাদিন এই মুখটা দেখার আশায় বসে থাকে তা মহারাণী এই এভাবেই দর্শন দেবে কি !

তাই বেশী কিছু না আবার অনেক কিছু ,জা ননদ সবাই জানে। ঠিক ঘড়ির কাঁটা ধরে পরমা আলতো তুলির ছোঁয়া বুলিয়ে নিতো নিজের ওপরে।

হালকা রঙের শাড়ি ,হালকা লিপস্টিক আর ছোট একটা টিপ .. ব্যস এটুকুই।

এতেই অখিলেশ মুগ্ধ সারা জীবন !

আঁচল দিয়ে চোখে অজান্তে আসা জল মুছে দরজার দিকে তাকালেন।

অহনা দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টে মা কে দেখছে

-- কিছু বলবি!

-- আমি না মা অরিন্দম কিছু বলতে চায় !

অখিলেশ হাসপাতালে ভর্তির খবর কে জানে কে দিয়েছিল এদের।আজ পাঁচ বছর নিজে বিয়ে করার অপরাধে কোন সম্পর্ক তো রাখতে দেননি ওর বাবা।তবু কি করে খবর পেয়ে এই কুড়ি দিন সবটুকু সামলেছে দুজন মিলে।

দুই ছেলেও এসে পৌঁছেছিল নিজেদের বৌ ছেলে মেয়ে নিয়ে।আর এসেই হাসপাতালে যাবার আগে দুজনেই এসে দাঁড়িয়েছিল পরমার একেবারে সামনে

-- এই যে বাবা এত অসুস্থ হয়ে পড়লো সব শুনে তো মনে হচ্ছে আর ফিরবে না তা তুমি বাবার টাকা পয়সা কোথায় কি আছে সব জেনে নিয়েছিলে তো !

সমুদ্র আর পনেরো মিনিটের ছোট সৌভিক ,ওদেশে গিয়ে কেমন যেন হয়ে গেছে।ছোটবেলায় মার আঁচল ধরে শুতো আর মাঝরাতে উঠে কেমন চেঁচাতো ভূতের স্বপ্ন দেখে

সব কত তাড়াতাড়ি বড় হয়ে গেলো যেন।দিন রাত আর রাত দিনের আবর্তে ঘুরতে ঘুরতে কি করে যেন বেলা কেটে গেল পরমার জীবনে।

হ্যাঁ ভুল সেও করেছে বৈ কি !

মেয়ে যখন নিজের মতে বিয়ে করার কথা জানিয়েছিল সেদিন অখিলেশের প্রচন্ড চিৎকার চেঁচামেচির সামনে সেও তো চুপ করে গেছিলো।কই তখন তো একবারও মেয়ের হয়ে বলে নি সে একটাও কথা।বরং অরিন্দম নিজের মা

কে নিয়ে এসেছিল একদিন ওদের বাড়িতে কথা বলার জন্য।

কত খারাপ ব্যবহার করেছিলেন অখিলেশ।অহনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়েছিল অরিন্দমের মায়ের পাশে।

কেমন যেন বুকে জ্বালা জ্বালা করছিল পরমার ,শুধু মনে হচ্ছিলো মেয়েটা পর হয়ে গেলো তার।ফ্রিজে কত মিষ্টি কত কিছু তো রাখা ছিল কিন্তু মিনুর মা দু'কাপ চা আর ক'টা বিস্কুট সাজিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল পরমাকে

-- ও মা আগে জল মিষ্টি দিই !

বড় চোখ দেখে কিছু না বলে চা বিস্কুট ঘরের টেবিলে রেখে বেরিয়ে এসেছিল সে।

রান্নাঘরে তার বিড়বিড় আওয়াজ কানে এসেছিল পরমার

-- কেন বাপু তারা বাড়ি বয়ে এসেছে তো একটু জল মিষ্টি কি দেওয়া যেতো না।ছেলেরা নিজে দেখে বৌ এনেছে আর তাদের কি দেমাক !ওই অহনা দিদিমণি বড্ড ভালো তাই এমন চুপ করে থাকলো।দুই ছেলে এমন করলে বুঝিয়ে দিতো ভালো করে।

এক কাপড়ে চলে গেছিলো মেয়েটা।ছোট দেওর জা এসে অনেক বুঝিয়েছিল কিন্তু শোনে নি তখন ছেলেদের গরবে গর্বিত বাবা মা।

ধীরে ধীরে বদলাতে লাগলো সব।বিয়ের পর পরই দুই ছেলেই সোজা একেবারে এদেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিলো।

খোঁজ খবর নিতো বৈ কি..ওই বাবা তোমার রিটায়ারমেন্টের পরে যা টাকা পাবে সব কিন্তু বুঝে সুঝে ফিক্স করে দিও।অহনার বর শুনেছি খুব একটা উপার্জন করে না।স্নেহের বশে তাকে যেন আবার সব দিয়ে দিও না।আমরা নামেই অনেক টাকা কামাই ,এদেশে থাকাটাই তো একটা বিরাট খরচ সাপেক্ষ।

হাসতো অখিলেশ ,আর চোখের জল মুছতো পরমা।

সেই বুকে জ্বালা করতো আবার ওই শান্ত মেয়েটার জন্য। কত গুলো বছর কেটে গেছে একটাও খোঁজও নেন নি তারা।

কে যেন হাতের ওপর হাত রাখলো।চমকে তাকালো পরমা

-- মা ,মাগো ,অরিন্দম যে অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে , কিছু বলবে তোমাকে

উঠে দাঁড়াতে গিয়ে কেমন যেন মাথাটা ঘুরে গেলো পরমার।

অরিন্দম হাত ধরে নিয়ে বসালো ঘরের এক পাশে রাখা সোফায়।

--বলো বাবা কি বলবে!

বলতে গিয়ে কেমন গলাটা কেঁপে গেল পরমার।

বড্ড কষ্ট হলো যেন।মনে হলো খুব জোরে চেঁচিয়ে কেঁদে ওঠেন..সেই অনেক দিনের বুক জ্বালাটা আবার যেন সজীব হয়ে উঠলো।

-- আগে কিছু ভেবেছেন মা !

আগে কোন্ আগে আর কি ভাববেন তিনি !

ভাবার তো কিছু নেই।

অখিলেশ মারা যাওয়ার প্রায় দু তিন মাস আগে থেকে ব্যাংকের টাকা ,গাড়ি ,দেশের জমি সব তো হয়ে গেছে দু'ছেলের নামে।

কি করে যেন বেঁচে গেছে এই গাছ গাছালি দিয়ে ঘেরা ছোট্ট বাড়িটা যেটা একটু একটু করে তৈরী করেছিলেন বুড়ো বয়েসে থাকবেন বলে।নিজের বাবার ওই বিশাল বাড়ি ছোট ভাইকে দিয়ে এখানেই তো চলে এসেছিলেন একটু শান্তির খোঁজে।

এগারো দিনের কাজের আগে ছেলেরা বৌদের নিয়ে এসে অনেক ভালো ভালো কথা বলেছিল পরমার সাথে। আর শেষ মেশ বলেই ফেলেছিল

-- এই বাড়িটা তুমি আমাদের ছেলেদের দিয়ে দিও মা ,ওরাও গর্ব করে বলবে আমাদের ঠাম্মি আমাদের কত সুন্দর উপহার দিয়েছে !

হেসেছিল পরমা অনেক দিন পরে খুব ফিকে হাসি আর বলেছিল

-- জানিস ভারী গর্ব ছিল আমার আর তোদের বাবার তোদের দুজনের ওপরে।ছেলে ছেলে করে খুব পাগল ছিলাম আমরা।তোরা যা বলেছিস যখন বলেছিস তা পূর্ণ করেছি আমরা।

--একবারও খোঁজ নিস নি ওদেশে গিয়ে আমরা কেমন আছি।আজ এটা নেই কাল ওটা নেই করে বারবার তোর বুড়ো বাপটাকে বিরক্ত করেছিস।আর কি বলেছিস ,তোমার সব পয়সা পাই পাই করে চুকিয়ে দেবো।

-- আজ অবধি একটা সুতো পাঠিয়ে বলিস নি যা পেরেছি তাই দিলাম বাবা !

--আশ্চর্য্য হই এই ভেবে একই বাড়িতে একই থালায় ভাত ডাল মেখে তিন ভাই বোনকে খাইয়েছি।একই স্কুলে পড়েছিস তোরা।অথচ এত আলাদা তোরা কি করে হলি!

--এতদিন পরে জানলাম তোর কাকা এসে প্রতিমাসে ওষুধ ফল আর খুঁটিনাটি কত কি দিয়ে যেতো হাজার বারণ করার পরেও সে তোর ছোট বোন পাঠাতো নিজের দিব্যি দিয়ে !

আজ হেরে গিয়েও জানিস বড় শান্তি হচ্ছে এই ভেবে অন্ততঃ আমার গর্ভের একজন সন্তান আমাকে জিতিয়ে দিলো বলে।আমি ভালো মা হতে পারিনি হয়তো কিন্তু ও পেরেছে ভালো মেয়ে হতে।

একটু পরেই চলে যাবে সবাই একে একে।

নিজের ভাবনার জাল থেকে বাইরে বেরোলেন পরমা।

তাকালেন অরিন্দমের দিকে।

এগিয়ে এলো ছেলেটা ..

-- আমাদের বাড়িটা বড্ড ছোট আমি জানি।তুমি বরাবর এমন খোলা মেলা জায়গায় থাকতে অভ্যস্ত তবু কিছু যদি মনে না করো একটা কথা বলি ,একা একা কি করে থাকবে মা তুমি এখানে!

পেছন থেকে ফিসফাস গলার আওয়াজ কানে এলো পরমার

-- বলেছিলাম না এত বছর পরে বাড়ির লোভেই এসেছে।কাকার হাত দিয়ে কি কি পাঠাতো কে দেখতে গেছে।আর সময়ে অসময়ে তোমাদের একটু আধটু টাকা পাঠিয়েছে আজ সেটা বলা খুব দরকার ছিল ওই মেয়ে জামাইকে বড় করবে বলে।

তোমরাও যেমন ওই অত টাকা খরচ করে শুধু শুধু এলে এদেশে !দুই বৌ থামলো এবার।

অরিন্দম আবার বলে উঠলো

-- তাই মা তোমাকে না বলেই তোমার জামা কাপড় আমরা গুছিয়ে নিয়েছি।এবার আমাদের কাছে গিয়ে থাকবে মা !

অখিলেশ বাবু যাবার পরেও কাঁদে নি পরমা।

কারণ বুঝে ওঠার আগেই চলে গেছিলো মানুষটা , মনে হচ্ছিলো সারাক্ষণ এই বুঝি সামনে এসে দাঁড়াবে আর বলে উঠবে

-- জানো অনেক দিন ধরে একটা কথা বলবো বলবো ভাবছি !

সে কথা আর শোনা হয় নি পরমার।তার আগেই বাগানের ওই লাল সুরকি ঢালা রাস্তা দিয়ে ফুল চন্দনে সেজে চলে গেছেন তিনি পরমাকে না বলা কথার একটা বন্ধ খামের সামনে দাঁড় করিয়ে।

সব ভুলে হাতটা চেপে ধরলেন অরিন্দমের

-- যাবো বাবা নিশ্চয় যাবো কিন্তু আরো কটা দিন পর। কিছু কাজ বাকি থেকে গেছে যে।তার পরে যাবো তোমার মার কাছে ক্ষমা চাইতে আর একবার ভালো করে তাকে দেখতে।এমন শিক্ষা দিয়েছেন যে মা তাকে যে একবার নমস্কার করতে বড় ইচ্ছে হয় !

হন্তদন্ত হয়ে গেট খুলে উকিল বাবু ঢুকলেন

-- ক্ষমা করো বৌদি ,বড্ড দেরী হয়ে গেলো। তোমাদের কাজেই কলকাতা গেছিলাম।সে অখিলেশের কি শাসন।তুই আজই যা ,এই কাজটা করে দে যত তাড়াতাড়ি পারিস।

হতভম্ব পরমা বলে উঠলো

-- কি কাজ, কি বলেছিলেন তিনি!

-- সব বলবো বৌদি আগে চলো তার সামনে নিয়ে চলো।

হল ঘর পুরো পরিষ্কার হয়ে গেছে।একপাশে ছোট টেবিলে ফটোর রজনীগন্ধার মালার মাঝে হাসছেন নিখিলেশ।

বন্ধু নয় ভাই বলেই ভাবতেন তো একজন আরেকজনকে।

মাটিতে বসে পড়লেন উকিল বিনোদ চৌধুরী আর ব্যাগ থেকে আগে একটা চিঠি বের করে তুলে দিলেন পরমার হাতে।

ততক্ষনে অনেক কাগজ বের করে রেখেছেন একে একে ওই ছোট টেবিলের ওপরে।

-- বুঝে গেছিলি আর দেখা হবে না তাই পড়িমরি করে পাঠিয়েছিলি আমাকে সব কাজের জন্য দূরে তোর কাছ থেকে কলকাতায়।আমরা কিন্তু কেউ ঘুণাক্ষরেও জানতাম না তোর মনের কথা।হয়তো শেষের হাতছানি তুই দেখে নিয়েছিলি তাই না ভাই !

কান্নায় ভেঙে পড়লেন উকিল বাবু।

দুই ভাই এগিয়ে এলো কাগজ দেখবে বলে ,মাথা তুলে হাত দিয়ে ইশারায় থামালেন উকিল কাকু

-- এ কাগজ দেখার অধিকার তোমাদের দিয়ে যাননি তোমার বাবা। আমি কি করি বলো ! আর তাছাড়া বেঁচে থেকে সব তো দিয়ে গেছেন তোমাদের আর নেওয়ার বাকি আছে বলো তো !

রেগে লাল মুখ করে দুজনে এগিয়ে যাবার আগেই শান্ত অহনা কথা বলে উঠলো ..

-- এখনও চিতার আগুন ঠান্ডা হয়নি দাদাই , ছোড়দা।বাবার ফটোর সামনে দাঁড়িয়ে আজ এমন কিছু করিস না যাতে মা কষ্ট পায়। বাবা মার কত টাকা ছিল বা ছিল না আমি তার হিসেব কোনদিন জানতে চায়নি আর আজও চাইবো না।

--শুধু অনুরোধ করবো উকিল কাকু কি বলতে চান সেটা আমরা সবাই শুনি বাবাকে সম্মান করে।

একটা বড় খাম থেকে কাগজ বের করে পড়তে শুরু করলেন উকিল বাবু ..

-- আমার স্থাবর অস্থাবর সব কিছু আমি না চাইতেও দিয়ে দিয়েছি সমুদ্র আর সৌভিককে।দিনের পর দিন মাসের পর মাস ওরা শুধু চেয়ে গেছে আর আমি দিয়ে গেছি আমার সাধ্যমতো কারণ বাবা বলতেন "

কিন্তু আমার ছোট্ট মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে যাবার পরে অভিমানে ফিরে আসেনি একবারও তা ঠিক কিন্তু ওর ছোটকাকার হাতে প্রতিমাসে আমাদের দরকারি জিনিষ পাঠিয়েছে দিব্যি দিয়ে দিয়ে ,ও তো আমিও একবার উল্টো দিব্যি দিয়ে তোদের ছোট কাকার থেকে সব জেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু শান্ত ছিলাম তোর মাকেও এই কদিন আগে সব জানিয়েছি।

এই বাড়ি ছাড়া কিছুই বাঁচাতে পারিনি আমি তোদের হাত থেকে।চোখ খুললো যখন আমার তখন বড্ড দেরী করে ফেলেছি।

অহনা মা আমার ! তোর ওপর বড় অবিচার করেছি আমরা দুজন !ক্ষমা করে দিস এই বুড়ো বাবাটাকে। বড় ইচ্ছে করতো তোকে জড়িয়ে সব ভুলের ক্ষমা চেয়ে নিই। তুই বড় সুখে আছিস অরিন্দম আর তোর শাশুড়ি মার সাথে।তুই বড় যত্নে রেখেছিস ওদের আর ওরা তোকে প্রানভরে ভালোবাসে।সব বলেছে তোর কাকু আমায়।

--কেন যে ভগবান এত কম সময় দিয়ে পাঠায় মানুষকে ,সব যখন সে বুঝতে পারে তখন যে তার যাবার সময় হয়ে যায় রে।

--শুধু আশীর্বাদ নয় ...আমার অংশ তুই আর বড় গর্ব আজ আমার সেই অংশের ওপরে।

--পরমা হয়তো বুঝতে পারে নি আমি এত তাড়াতাড়ি চলে যাবো কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

--তোর ছোট কাকুর কাছে শুনেছি তুই মা হতে চলেছিস।আমার সেই আদরের পরম ভালোবাসার দাদুভাই বা দিদিভাইকে এই বাড়িটুকু উপহার দিয়ে গেলাম। আর যে কিছুই নেই রে আমার।

তোর মাকে দেখিস বলার মতো শক্তি কিছুতেই জুটিয়ে উঠতে পারছি না তাই বলে গেলাম পারলে মাঝে মাঝে এসে ওকে দেখে যাস তুই আর অরিন্দম ,তোর ছোট কাকা নিজের বৌদির অনাদর করবে না তা বেশ জানি আমি।

--বড় সাধ আমার পর জন্মে তুই যেন আমার মা হোস ..

ধূপের ছাই এসে পড়লো সেই চিঠির ওপরে।

ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নামার আগে মেয়ের হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে এলেন পরমা। বাবার বলা কথা কানের কাছে ভেসে এলো "অ্যাডজাস্টমেন্ট মানেই হেরে যাওয়া নয় , অ্যাডজাস্টমেন্ট মানে সুন্দর করে বাঁচা "তাই হবে হয়তো আর কে বলেছে মায়েরা কোনদিন ভুল করে নাতিনি তো করেছেন।

অন্য হাত অরিন্দম এসে ধরলো,

বড় শান্তি পেলেন যেন পরমা আজ।

বাইরে বেরোতে বেরোতে পেছন ফিরে দেখলেন জলভরা চোখে।

জ্বলজ্বল করছে নেমপ্লেটের লেখাটা "সুখের ঠিকানা "

 

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু