বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অসহায় বোনের শত্রু

তোরা সবাই আমাকে দোষারোপ করছিস , তখন যা পরিস্থিতি ছিলো, তাতে আমার নিজের জন্য কিছু একটা  করা ভীষণ দরকার  হয়ে পড়েছিলো........

দুই বোন, অনুমিতা আর পারমিতা  বিয়ের পর পাশাপাশি পাড়ায় থাকে। বড়ো বোন অনুমিতার অর্থনৈতিক দিক থেকে ছোটো বোন পারমিতার তুলনায়  একটু উঁচু আসনে স্থান পেয়েছে। সেই নিয়ে অবশ্য অন্যদের দৃষ্টিতে ভেদাভেদ থাকলেও তাদের দুই বোনের মনের মধ্যে সামান্য টুকু ইগোর লড়াই নেই। দুই বোনের বর, একজন ব্যবসায়ী ও অন্যজন বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করে। পারমিতাকে তার জামাইবাবু অরূপ নিজের পছন্দ করা পরিচিত ছেলে সুমিতের সাথে বিয়ে দিয়েছিলো।

সবই তো ঠিক ঠাক চলছিলো, সময়ের নিষ্ঠুর আঘাতে পারমিতার সুখের জীবন বদলে গেলো কালো আঁধারে। বর্ষার জলে শহরের রাস্তাঘাট জলমগ্ন। অফিস থেকে ফেরার পথে জলমগ্ন রাস্তায় সুমিতের বাইক একটা বড়ো গর্তের মধ্যে উল্টে পরে, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার সুযোগটা পর্যন্ত হলোনা, তার আগেই রক্তাক্ত সুমিতের হৃদ স্পন্দন ধমকে গেলো!

সুমিত আর পারমিতার একটা ছয় বছরের মেয়ে আছে। লোন নিয়ে সুমিত বাড়িটা কমপ্লিট করেছিল, তাই ব্যাংক এ জমানো টাকা পয়সা কিছুই নেই। এদিকে বাড়ির লোনও সোদ হয়নি।  সুমিত চলে যাওয়ার পর পারমিতা মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে। পারমিতা মনে মনে স্থির করে, বাড়ির দুটো রুম ভাড়া দিয়ে, তারা মা মেয়েতে একটা রুমে কষ্ট করে থাকবে, বাড়ির লোনের কয়েকটা কিস্তি বাকি আছে , গয়নাগাটি বিক্রি করে ও বাড়ির ভাড়া দিয়ে লোনটা শোধ করে দিবে। পারমিতার দাদা বৌদিরা পারমিতাকে বলেছিলো তুই তো পৈতৃক সম্পত্তির ভাগ পাবিই, তাহলে বাড়িটা বিক্রি করে আমাদের সাথে থাকবি চল, আমরা থাকতে তোর খাওয়া পরার কোনো কষ্ট হবে না । পারমিতা দাদা বৌদিদের কথায় এক প্রকার রাজিই ছিলো, কিন্তু ওর দিদি জামাইবাবু বললো, বিধবা বোনকে বৌদিরা  বাড়ির দাসী করে রাখবে, তার চাইতে তুই পুরো বাড়িটা ভাড়া দিয়ে আমার বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে থাক। অল্প বয়সের মেয়ে তুই, একা বাড়িতে  তোর প্রতি কামুক মানুষের দৃষ্টি থাকবে, এতদিনের সুখ দুঃখের সাথী দিদি জামাই বাবুর কথা অমান্য করতে না পেরে পারমিতা দাদা বৌদিদের প্রস্তাব নাকচ করে দেয় এবং দিদি জামাই বাবুর ডাকে সাড়া দিয়ে তার বিশাল বাড়ির একটি ঘরে পারমিতা ও তার মেয়ে আশ্রয় পায়।

বিবাহিত দাদাদের থেকে বোনের আপন বোনই হয়,  পারমিতার এই ভাবনা উল্টে গেলো, দিদি অনুমিতার বাড়িতে কয়েক মাসের মধ্যেই যখন সে স্নেহের বোনের থেকে দিদির হুকুমের দাসী হলো।  নিজের পায়ের তলা থেকে দিদি নামক ভরসার জায়গাটা চাকর আর মালিকিনের দিকে যাচ্ছিলো, তাছাড়া অল্প বয়সের সুন্দরী বিধবা মানুষ একা বাড়িতে থাকলে বিপদের সম্মুখীন হতে হবে, তাই যে নিরাপদ আশ্রয়ে পারমিতা এসেছিলো, সেই আশ্রয়ের মালিক তার জামাইবাবু আজ কাল ছিলা অছিলায় তার গায়ে লালসার স্পর্শ  রাখে। পারমিতা ওর দিদিকে বললে সে সব কথা বিশ্বাস করতে চায়না। পায়ের তলায় জমি শক্ত করতে, সব বুঝে দিন রাত এক করে পারমিতা একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসতে থাকে।

চেষ্টা সাধনার ফলে পারমিতা একটা চাকরী পায়। যেদিন চাকরির অফার লেটারটা আসে, সেদিন ওর দিদি অনুমিতা বাড়ি ছিলোনা, সেই সুযোগ নিয়ে ওর জামাই বাবু  ঘরে ঢোকে বলে,  এই কাগজটায় সই করে দেও।  আজ থেকে তোমার বাড়িটা তুমি আমার নামে লিখে দিলে। আপন মানুষ মুহূর্তে রঙ বদলে পর হয়ে যেতে পারে, অবাক হয় পারমিতা!  সে সই করতে চায় না। তখন ওর জামাই বাবু ভয় দেখাও, নিচের ঘরে দাস দাসী কাজ করছে, আমি যদি সবাই কে ডেকে বলি, তোমার দিদির অনুপস্থিতিতে তুমি আমাকে ভোগ করতে চেয়েছো, তাহলে সাক্ষী প্রমানের অভাব হবে না!কয়েক দিন পর চাকরিতে তোমার জয়েন করাও হবে না। নিজের চরিত্র কলঙ্কমুক্ত রাখতে, ও চাকরিটা হাত ফস্কে না যায়, ভয়ে লজ্জায় পারমিতা বাড়িটা জামাইবাবুর নামে লিখে দেয়।

অনুমিতা বাড়ি ফিরলে, পারমিতা সব খুলে বললে, অনুমিতা বলে এই কয়েক বছর তোদের মা মেয়েকে খাওয়ালাম, মেয়েকে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়াচ্ছি এবং বাড়ির লোনটাও তো প্রায় তোর জামাই বাবু শোধ  করলো, তাহলে প্রতিদানে বাড়িটা তো তোকে লিখে দিতেই হতো বোন।

পারমিতা তার সবথেকে আপনজন দিদির থেকে আঘাত পেয়েছে শুনেও পুনরায় দাদা বৌদিরা আবার এসেছে  পারমিতাকে নিতে। বৌদিদের কাঁদে মাথা রেখে, পারমিতা বলে, বৌদির নিজের চরিত্রের উপর কালো দাগ যেনো না লাগে তাই তখন আমার নিজের জন্য সাদা কাগজে সই করাটা ভীষণ দরকার ছিলো গো। দাদা বৌদির আজ আমি ক্ষমা চাইছি, দিদির কথায় তোদের ভুল বুঝেছিলাম বলে, আর জীবনে একটা শিক্ষা পেলাম, তাই আমার মতো অসহায় মেয়েদের উদ্দেশ্যে  বলতে চাই এই সংসারে  কিছু কিছু দাদারা কেবল বোনেদের ঠকায় না, কিছু কিছু বোনও বোনের পিঠে ছুরি মারতে পারে!


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু