বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

বন্ধন

  আজ বছর কয়েক ধরে প্রায়ই ঝুম্পা লক্ষ্য করছে তার স্বামী প্রায়ই কেমন আনমনা থাকে। মাঝে মধ্যে আড়ালে ফোনে কাউকে বলে "একদম চিন্তা করতে হবেনা আমি তো আছি ওদের অনাথ ভাবার কিছু নেই"। ঝুম্পার আজ পনেরো বছর বিয়ে হয়েছে, বিমল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ,ভালো অফিসে কাজ করে । চরিত্রের দিক থেকে কেউ কোনোদিন প্রশ্ন তোলেনি, ওদের একমাত্র ছেলে সিঞ্চন দার্জিলিংয়ে হোস্টেলে থেকে পড়ে। ইদানিং সুগারের কারণে ঝুম্পা প্রায়শই অসুস্থ থাকে, ডাক্তারের পরামর্শে তাই বিকেলের দিকে একটু হাঁটতে বেরোয়।
    বিমলের এহেন আচরণে ঝুম্পা বার কয়েক প্রশ্ন করেছে সে কার সঙ্গে এতো ফিসফিস করে কথা বলে। প্রতিবার বিমল এড়িয়ে গেছে পার্টির সঙ্গে কখনো অফিসের বিষয় এই সব বলে।
   সেদিন হাঁটতে বেরিয়ে ঝুম্পার এক পুরোনো বান্ধবীর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলো কথা প্রসঙ্গে বিমলের কথা সেই তুললো। সে নাকি তার অফিসের কাছে কোন এক পার্কে বিমলকে কারো সঙ্গে বসে থাকতে দেখে ভেবেছিলো পাশের মহিলাটি ঝুম্পা কিন্তু কাছে গিয়ে অন্য মহিলা দেখে চলে আসে। ঝুম্পা তো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা, বিমল অন্য মহিলার সঙ্গে অফিস ছেড়ে! বান্ধবী এও বলে ওরা প্রায় প্রতিদিনই ওখানে বসে। ঝুম্পা তার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করতে চায়না কারণ সে জানে তার এই বান্ধবী সুবিধার নয় অনেক বদনাম আছে। অফিসের কোন এক কলিগের সঙ্গে এফেয়ার আছে পরকীয়া করে বেড়ায়। ঝুম্পা ঠিক করে সে নিজে হাতেনাতে বিমলকে ধরবে, সেইমতো সে নিজে ওই পার্কে এসেছে। কিন্তু একি সে দেখছে তার কাছে বলা সব কথাগুলো সত্যি! হ্যাঁ বিমল এক মহিলার কাঁধে মাথা দিয়ে বসে আছে মহিলা বিমলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ডান হাতে করে কিছু একটা বিমলের মুখে তুলে দিচ্ছে। ঝুম্পা নিজেকে স্থির রাখতে পারেনা এতটা বেইমানি তাও এই বয়েসে এসে? ঝুম্পা রাগে দিগ্বিদিক জ্ঞান শুন্য হয়ে ওদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ঝুম্পা কে দেখে বিমল হতচকিত হয়ে উঠে দাঁড়ায়,
বিমল: একি তুমি এখানে
ঝুম্পা: অবাক হলে তাইনা আমি কিন্তু অবাক হইনি কারণ তোমার ইদানিং পরিবর্তন আমাকে জানান দিয়ে দিয়েছিলো মাসের মধ্যে তিনবার পার্টি মিটিংয়ের মানে। বাকিটা কবিতা দি তুমি বোধহয় জানতে না ওর অফিস চ্যাটার্জি বিল্ডিং আর নিজেও পরকীয়া য় যুক্ত তাই শিকারী বেড়ালটা কে দিয়ে তোমার শিকার করলাম। ছি ছি ছি বিমল তুমি এতো নীচ এই বয়েসে মেয়েছেলে নিয়ে ফূর্তি করছো!
বিমল: (মেয়েটার দিকে তাকিয়ে) তুই এখন যা পড়ে কথা বলবো।
ঝুম্পা : নাহ ও কোথাও যাবেনা, এখানে দাঁড়িয়ে আজ তোমায় ফয়সালা করতে হবে তুমি কার সঙ্গে বিছানা ভাগ করতে চাও আমার সঙ্গে নাকি এই বেহায়া নির্লজ্য মেয়েছেলেটার সঙ্গে।
মহিলা এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে " নাহ বৌমনি না তুমি ওকে অমন অপবাদ দিওনা, এসব কথা শোনার থেকে তুমি আমায় বলো আমি নিজে আত্মহত্যা করে তোমাদের মুক্তি দেবো। সেই ন বছর বয়েসে ছোট্ট বিমলকে মা যখন বাড়ি নিয়ে এলো তখন থেকে ও আমার কাছে মানুষ। আমাদের বংশ গোঁড়া সনাতনী বংশ , ভালোবেসে বিধর্মী বিয়ে বাবা মেনে নিলো না আমায় পরিবার থেকে ছেঁটে দিলো। ছোট ভাইটাকে কাছ ছাড়া করা কোনদিন তাকে আর চোখের দেখা টুকু দেখতে পাবোনা এই ভেবে যখন আমি অসুস্থ হয়ে পড়লাম ইকবাল তার সবটুকু দিয়ে আমায় সুস্থ করে তুললো। ইকবালের ছোট কাপড়ের ব্যাবসা আমার ছোট সংসার নিয়ে যখন সব ভুলতে চেষ্টা করছি জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা আমার ইকবালকে কেড়ে নিলো ওর লাশটুকু দেখতে পেলাম না,কোনো প্রমাণ আমার কাছে ছিলোনা ক্ষতিপূরণ না পেয়ে দুটো বাচ্ছা নিয়ে পথে বসলাম। একদিন ওর অফিসে ঝাড়ু দিতে দিতে বিমলের সঙ্গে দেখা। ভাইটা আমার তখন অনেক বড়ো হয়ে গেছে আমিতো চিন্তেই পারিনি কিন্তু ভাই আমাকে সেদিন চিনেছিলো। মহল্লায় নিয়ে যেতে পারিনা পাছে কোনো ধর্মীয় দাঙ্গায় আমার ভাইটার উপর কু নজর পড়ে আবার হারিয়ে ফেলি তাই এখানেই দেখা করি ।ওর দয়ায় আমার বাচ্ছা দুটো লেখাপড়া শিখছে। সামনে ঈদ এই কটা দিন ইফতার শেষে একটু ভালমন্দ খাবার বানিয়ে ভাইটা র মুখে না তুলে আমি খাই কি করে বলো বৌমনি তাই ও প্রতিদিন এখানে আসে ওর মুখে খাবার তুলে আমি আমার সমস্ত পুণ্য আল্লাহ তালার কাছে চেয়ে ওর কপালে চুমু দিয়ে ওকে দীর্ঘায়ু ওকে অনেক অনেক সুখ দিতে বলি(মহিলা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে বিমল দুহাতে নিজের দিদিকে জড়িয়ে ধরে) ঝুম্পা কি করবে ভেবে পায়না দূরে কোনো মসজিদ থেকে ভেসে আসে আল্লাহ হো আকবর।
                     ????????????????????
কপিরাইট রিজার্ভ@সৌগত@মুখোপাধ্যায়#২০২৩


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু