বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

করোনার ভয়

ভয়ের নাম করোনা

হিমাদ্রি শেখর দত্ত

হাইওয়ের এপাশে দুপুরের এই সময়টায় পুলিশ কাকুরা থাকে না। চৈত্রের কাঠফাটানো রোদে এদিকটায় কোন ছায়া নেই। ন্যাপা, ভটা, হুকো আর চামু দুটো বাইক নিয়ে, এই একটু ঘুরতে বেড়িয়েছে। আগে কলেজের মেয়েরা ফিরত, বেশ মস্তি হত। আগে পিছে বাইকে করে কথা ছুঁড়ে দেওয়া, আর তাদের কলকল হাসি। সে সব দিন এখন ইতিহাস। 

চৌমাথা পর্যন্ত চল, ঘুরে আসি - ভটা বকে। 

যদি কাকুরা থাকে!  ন্যাপা পেছন থেকে জানতে চায়

ব্যাক মারবো, আমার বাইক ধরতে আসবে, ছোঃ

হুকোকে বল তবে

কি বে,  চামু- হুকো একটু খেলিয়ে আসবি না'কি?

যদি ধরে না, তবে এক বচ্ছর ঘানি টানতে হবে। কালকে কালুদা খপর বলছিল। 

কে ধরবে রে শালা! ধরলেই হল, দাদুর মোয়া! 

তবে চল, যদি ঘনুদার চা খোলা রেখে থাকে


চৌমাথায় একটা কাউকে দূর থেকে নজরে আসে না। রাস্তার ওপরে কোন পুলিশের ভ্যানও নেই। শুধু একটা অ্যাম্বুলেস ধারে দাঁড় করান। 

বলেছিলাম না, এই রোদে শালারা ডিউটি করবে!  দেখ সব ভো ভাঁ। ভটা দাঁত দেখায়। 

অ্যাম্বুলেসের ভিতরে কি আছে দেখবার জন্য হুকো গাড়িটাকে প্রায় গায়ে ঠেকিয়ে থামায়। চামু পেছন থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে।

কি বে, লাশ না জ্যান্ত- কিছু আছে? 

আবে পেসেন্ট শুয়ে আছে, ডাক্তারও আছে।

সে কিরে?  তো নিয়ে যাচ্ছে না কেন?  শালা রাস্তায় ফেলে পাইলেছে না'কি রে।

কোথা থেকে পাঁচ-ছজন পুলিশ ওদের কখন ঘিরে ফেলেছে, কথায় কথায় কেউ খেয়ালই করেনি।


এই, এদিকে আয় শালা, মাস্ক কোথায়?  এই দুপুরে কিসের মটরগস্তি করতে বেরিয়েছিস?  শালা একটাও মাস্ক পড়েনি, হেলমেট নেই। মস্তি চড়েছে? 

ধর, ধর সব কটাকে। অ্যম্বুলেন্সে তোল। ভেতরে করোনা নিয়ে শুয়ে আছে- এগুলোকে ঢোকা, টের পাবে। 

এই চল, অ্যাম্বুলেন্সে ওঠ। হাত পা ছুঁড়ে কোন লাভ নেই। ওঠ ওঠ। 

চারজনকে পাঁজাকোলা করে চার পাঁচজন পুলিশে ওদের অ্যাম্বুলেন্সে ভরে দেয়। 

থাক এবার ভেতোরে, পেশেন্টের অসুবিধা করেছিস তো রুল ঢোকাব পেছনে। 

ও বাবারে, মরে যাব তো। আমার টান ওঠে মাঝে মাঝে। কখনও বেরোবি নি, ও কাকু বড্ড ভুল হয়ে গেছে। এখান থেকে বেরোতে দাও। মরে যাব। বাড়িতে জানে না। এবারের মত ছাড়ান দাও। 

ডাক্তার হাত তুলে চুপ করতে বলে চারজনকে। রোগীর দিকে দেখায় - রোগীর পাশে কিসের নল লাগানো। 

ভটার মাথা ঘুরছে। হুকো অ্যাম্বুলেন্সের জানলা দিয়ে গলে বেরোনর চেষ্টা করে, শরীর একটু বেরলেই, বাইরে থেকে ধাক্কা দিয়ে আবার ভেতরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। দরজা বাইরে থেকে বন্ধ। 

ডাক্তার ওদের মাস্ক পড়ে নিতে বলে। ইশারায় কাঁচের বাক্সের মধ্যে রাখা মাস্কগুলোর দিকে হাত তোলে। চারজনে যত তাড়াতাড়ি পারে, সেদিকে এগোয়। 


যাদের কিছুতেই ঘরে থাকতে ইচ্ছে নেই, পুলিশ থেকে এইরকম ভাবে ভয় দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পেশেন্ট, ডাক্তার, অক্সিজেন পাইপ সব সাজানো। কেবল ঘটনার বক্তব্যটা অত্যন্ত সিরিয়াস। 


আধ ঘন্টা পরে, নিজের পাড়ার মোড়ে এই চারমূর্ত্তি যখন ঝড়ের বেগে বাইক নিয়ে পৌঁছায়, তখনও তাদের চোখের সামনে দিনের আলোয় মৃত্যুভয় নাচানাচি করছে। বেড়াতলার সামনে টিউকল থেকে ভাল করে হাত মুখ ধুয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়ে, শিবুর দোকানের সামনে পাতা বাঁশের বেঞ্চে এসে বসে। 

কাল যেতে হবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে? পুলিশে যে বললো! 

যদি আইজ রেতে জ্বর আসে, তবে।  সাতদিনের মধ্যে গলা ব্যথা বা জ্বর হলে যেতে হবে বইকি।


ওরা পুলিশের সাজানো অভিনয়ের বিন্দু বিসর্গ জানে না। আপনারাও বলবেন না। সবাইকে এক ভাবে রাস্তায় আনা যায় না যে। এ দেশটাই এমন। 


বিদ্রঃ এই গল্পটা সত্যি ঘটনার ছায়া অবলম্বনে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু