ও হাতে ফুল মানায় না
পর্ব - ১
এ বাড়িতে এখন রান্নার কাজ করে শ্রীলতা l অনেক ধরে কয়ে তবে কাজটি পেয়েছে। ঝক্কি নেই খুব একটা পাঁচ সাতজনের দুইবেলার রান্না l মাইনে নেয় না মালিককে বলে ব্যঙ্কের বইতে জমা করা হয় l দিনের খাওয়া দাওয়া জল টিফিন মেলে মাগনায় l এ জন্য কোন পয়সা ন্যান না মালিক l অবশ্য পাঁচসাতজন বলতে মালিকের স্ত্রী দুই পুত্র এক কন্যা এক ভাগিনা ও সে নিজে, ছেলে মেয়ে সকলেই পড়ুয়া l ভদ্রলোকের হোটেলের ব্যবসা সিজনকালে রমরমা এমনিতে বারোয়ারী ভাত মাছ মাংস সবজি রুটি সবসময়ই মেলে ভদ্রলোক কিছু এদিক ওদিকের ব্যবসাও করেন বলে শোনা গেছে l তবে এ যাবৎ কিছু প্রমাণ পায়নি শ্রীলতা l ভাগিনা তার হোটেলের কাজে সহায়তা করে আর অবসরের দুপুরে মাসি শ্রীলতার দেশ গাঁয়ের খোশ গল্পে জমে ওঠে দাওয়ার রোয়াক গিন্নী এসে যোগ দেন মুখে সুগন্ধি পান জরদা ঠেসে ঠিক মাঝখানটায় ধবধবে পা"দুটোকে মেলে বলেন দে দেকি শ্রী ভালো করে পা দুখানায় আলতা পরিয়ে l
খচে উঠে মালিক শুরু করেন, ঠিক যখনই আমি একটু বিশ্রাম করব উনি এসে ব্যঘাত না ঘটালেই নয় l বলি এই বয়সে আলতা পরে কার মন গলাবে গো? গিন্নীও কম যান না সঙ্গে সঙ্গে উত্তর,ক্যানো জানোনা বুঝি ওই যে তোমার বন্ধু মিত্তির l আহা এই রাঙাজবা আলতা এনে দিয়েচে l তাই বলো বুড়ো বয়সে তোমার এমন ভিমরতি ধরবে ম্যাগো আগে জানলে চিরজীবনের জন্য মিত্তিরের আসা বন্ধ করে দিতাম l তাই বলি দোকানে নয় সোজা ঘরে বৌদির হাতের সোয়াদের চা না গিললে ওনার মন ভরে না কেন? শালা হারামজাদা l ছয় মাসের টাকা বাকি পড়ে আছে মেটানোর মুরোদ নেই শালা ফষ্টি নষ্টি? গিন্নী পান চিবোন আর দুলে দুলে টিপ্পনী কাটেন উহু ওর কাঠালের কি সোয়াদ গো,এই সত্যি বল তুমি খাওনি?ভালো না কিরে শ্রী কি মিষ্টি না? আমার তো খুউব ভালো লেগেচে। হুম্ লাগবেই তো ! খাইয়ে দিলে আরও ভালো লাগত l লম্পট চরিত্রহীন মাতাল কোথাকার l শালা নিজের বৌটা বাতের ব্যথায় কোকাচ্চে ডাক্তার দেখানোর মুরোদ নেই শালা এর ঘরে তার ঘরের মে বৌদের মুখের গড়ণ না দেখলে ওর পেট ভরে না l জানোয়ার কোথাকার l স্রেফ অসভ্য l
বেশ করবে দেখবে তাতে তোমার কি? তুমি তো আজ পর্যন্ত একদিনও দেখলাম না কোন জিনিস হাতে করে নিয়ে এসেছো l মিত্তির দা মাঝে মধ্যে একটু এটা ওটা নিয়ে আসেন তাতে তোমার এত আপত্তি কিসের শুনি ? ব্যস্ ব্যস্ স্টপ l এই নিয়ে আর কোন কথা নয় l ইয়া বড় ট্রেতে গরম গরম চা আর পকোড়ার বাটিটা এনে মাঝখানে ঢিব করে রাখে শ্রী আওয়াজ হয় l রেগে ওঠেন কর্তা বলি ওভারে দুম দাম্ করে না রেখে বুঝি আস্তে রাখা যায় না? যখনই দেখি হো হো করে হাসছে নয়তো ফ্যচ্ ফ্যচ্ করে কথা বলছে l গো গ্রাসে গিলছে যেন বাপের জম্মে কিছু খায়নি l রাক্ষুসে হাবভাব আমার একদম পছন্দ হয় না l অলক্ষুনে কোথাকার l সৌন্দর্য্য বোধ বলে কোন কিছু নেই যত্তসব আনকালচার্ড ব্রুট l গরম চায়ের কাপটা কর্তার মুখের কাছে ধরে শ্রী l প্লেট কোথায়? এসব হল ভদ্রতা বুঝেছ মেনটেইন করতে হয় l আড়চোখে গিন্নী তাকান কর্তার দিকে ফিক করে হেসে ফেলে শ্রী l দু"জনে চোখাচোখি হলে কোন একজনের চোখে যেন গভীর ইশারা খেলে যায় ধরা পড়েনা গিন্নীর কাছে l
সোয়ামি টির সৌন্দর্য্যবোধের পরিচয় এ বাড়িতে ঢোকার পর পরই নজরে পরেছে গিন্নী ওরফে মধুছন্দার l ওর অবশ্য এতসব খেয়াল হয়নি কখনও যদিও তেমন উৎসাহও তৈরী হয়নি কোনদিন l বরাবরই আগোছাল্ স্বভাবের ছন্দা না স্কুলের কোঠা না কাজে কম্মে পটুতা কোন কোঠাই সম্পন্ন করতে পারেনি এই পর্যন্ত l অল্পবয়সে সঙ্গদোষে বিভ্রান্ত গ্রস্ত মেয়েকে মাধ্যমিক পেড়োনোর আগেই পাত্রস্থ করেছিলেন বাবা আদ্যনাথ মিত্র l সেকেলে জমিদারের গোমস্তা আদ্যনাথ উইলপত্র লেখালেখির কাজে পটু ছিলেন ফলে জমিদারের নায়েবের নজরে পড়ে যান ও ধীরে ধীরে তার অত্যন্ত প্রিয় পাত্রে পরিণত হন l সে অবশ্য প্রথম জীবনের কথা আজও অবসরে সময় সুযোগ পেলে দলিল দস্তাবেজ নিয়ে বসে যান অবসরে l জামাই নির্বাচনও এই জমিদারের সহৃদয়তায় সম্পন্ন হবার কারণে ওনার প্রতি সকলেই একপ্রকার সন্তুষ্ট l
পর্ব - দুই
মেয়েরা যে যার মতো ট্র্যডিশন ভিত্তিক স্কুলের পথে বেড়িয়ে যায় l ছেলেটি স্কুলে যাবার কালে যখন জুতোর একপাটি খুঁজে পায়না চিৎকারে বাড়ি মাথায় করলে ছুটে আসেন গিন্নী সঙ্গে শ্রী কোনদিন খাটের তলায় মেশিনের বাক্সের পাশে কোনদিন আলমারীর তলা থেকে আবিষ্কার হয় আরেক পাটি l জুতো খুলে পায়ের একপ্রকার ইরিটেটিং ঝাঁকুনি যাকে সোজা ভাষায় বলে মর্কট রোগ যার ফলে আক্রান্ত হয় কখনো জামা কখনো গামছা কখনো ইউনিফর্মের লং প্যন্টটি l এর ফলে ঘরে একপ্রকার ইডেন মার্কা মাঠ সৃষ্টি হয় l গিন্নী উপুর হয়ে আলমারীর নীচে আর শ্রী খাটের তলায় একটা লাঠি দিয়ে কি যেন খোঁচা মেরেই চলেছে l অন্য পাটিটি সেই ক্ষণে বোধহয় গৃহস্থের সঙ্গে টুকি টুকি খেলতে ব্যস্ত l রা'টি কাটার উপায় নেই সাতবার মানত করে দশ ষষ্টি উপোস করে মা মনসার থানে মাতা কুটে তবে এ রত্ন গভ্ভে এসেচে সে কি কম আদরের !
ওদিকে চচ্চড়ি পোড়ার তীব্র গন্ধে রান্নাঘর ধোঁওয়া ধোঁওয়া দৌড়ে এসে কেস সামাল দেন গিন্নী l ভাগ্যিস এতসব নজর পড়েনা লোকটার l বাসায় ফেরার আগে সব টিপটপ যে কারণে শ্রীয়ের নিয়োগ l ওদিকে আদরের পুত্তুরের জন্য আড়াল করে রাখা গোটা মাছের মুড়োটি এক হুলোর কবলে,ধস্তাধস্তি চার পাঁচটি বিড়ালের l অতঃপর পুরোটা সাবাড় করে জিভ দিয়ে নাক মুখ পরিষ্কার করে পাশের বাড়ির কার্ণিশে হেলান দিয়ে ঘাড় ফুলিয়ে জানান দিচ্ছে মেঁয়াও" l অর্থাৎ অধিকারের নো ছাড়াছাড়ি !
পর্ব-তিন
সক্কালবেলা নিমডালে দন্ত মজ্জনরত ভাগিনা টয়লেট মুখে যাবার কালে ধাক্কা লেগে ঝিঁয়ের হাত থেকে বাসন কোসনের গুচ্ছ মেঝেতে পরে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে চোখ ঘষতে ঘষতে বেড়িয়ে আসেন কর্তা আদ্যনাথ l টয়লেটে ঢুকে বসে আছে ভাগনা হাবুল সময় বরাদ্দ কমপক্ষে এক ঘন্টা l ওপাশেও অন্য টয়লেটে তবে জলের ব্যবস্থা ভালো না থাকায় এটার দিকেই নজর অধিকাংশ গৃহস্থের l তিন চারটে ভাঙা কাপ প্লেটের অবশিষ্টাংশে পা পরে ঘোরতর আহত কর্তা চিৎকার করে ওঠেন 'বলি এ বাড়িতে কি বিয়ে লেগেছে নাকি হ্যাঁ ? কোন সিস্টেম নেই l যে যা পাচ্ছে তাই করছে শালা গরুর গোয়াল পেয়েছে সব l হাতে ছেড়া কাপড়ের টুকড়ো অর স্যভলন নিয়ে ছুটে আসে শ্রী l কর্তা তখনও হাত পা ছড়িয়ে পড়ে আছেন পেছনের কলঘরের রোয়াকে জল কাপ প্লেটের টুকরোর উপর গামছা খুলে অর্ধেক শরীর জড়িয়ে আছে কোনমতে, 'ন্যেন্ কাঁধে হাতটা রেখে ওটেন দেকি l ওই মেয়েটাকে বিদেয় করতে হবে এবারে l সযত্নে পটু হাতে ফার্স্ট এইডের ব্যবস্থা করে দেয় শ্রী l বলি ও হাবুল এট্টু বেড়া বাপ বাজারের বেলা উতরে গেল যে l ধন্মন্তরী ফার্ষ্ট ফুড" আমিষ/নিরামিষের ঢালাও ব্যবস্থা এ হোটেলে একটা প্লেট আমিষ কিনলে ফকোটে মেলে এক বাটি মুখরোচক আঁচাড় l তেঁতুল,আম,যেকোন পদের l বিকেলে ফার্ষ্ট ফুডের l তিন চার হাতের কাজ একাই সামলে নেবার ক্ষমতা রাখে হাবুল l তাছাড়া ওর হাতের রুমালী রুটির কদর ও চাহিদা টেক্কা দিতে পারে যে কোন কুককে l মায়ের মৃত্যুর পর ছোট্টবেলা থেকে মামার কাছে মানুষ ভাগ্নেটির তীর্থভূমি ও একমাত্র স্থল এই মামাবাড়ি l আজও অবিবাহিত বছর আঠাশের এই মাতৃহারা অনাথ ছেলেটিকে ঘিরে রেখেছে মাতুল স্নেহ মমতা l শত বিপত্তিতেও মামা বিঘ্ন ঘটতে দেননি এই সম্পর্কে l বাজার শেষে মুদি সেরে ব্যঞ্জনের তোরজোরে হেঁসেলে জমে ওঠে ওর নৈমিত্তিক একান্তের জগৎ l সহকারী আরো দু'জন আসে বিকেলে ময়দা পেষা ও বিভিন্ন পদের জোগার যন্ত্রের জন্য l স্যন্ডউইচের জন্য হারুদার পাউরুটি আছে এছাড়া আছে ময়নাদির হরেক সবজির দোকান দুধ বেচা লোকটি সারা পাড়া ঘুড়ে দুধ বেঁচে পাঁচশো দুধে একলিটার জল ঢেলে বত্রিশ পাটি বের করে,আজকাল গরুগুলো যা হয়েছে বিঁচালি খাবেনা কোনমতে, মাঠে যাবে ঘাস খাবে বলার অভ্যেস আজও গেলনা l কোথায় আর মাঠ l পেট আর ভরেনা l দুধও দিচ্ছে ভেজাল " l যথাসম্ভব কটকট করে তাকায় হাবুল l
পর্ব- চার
বেলা দেড়টায় ফের মুখোমুখি ফের অশান্তি l পরিচ্ছন্ন হবার জল গামছা হাতের কাছে গোছানো নেই কেন? সাবানদানিতে সাবান কোথায় ? আবারো তড়িঘড়ি এদিক ওদিক অবশেষে অগতির গতি সেই শ্রী l একজায়গায় স্তূপীকৃত পরে আছে কাঁচা ধোওয়া জামা কাপড় সকালবেলা খেয়ে বেড়ানো একরাশ এঁটো থালা বাসন ইতস্তত ছড়ানো প্রবেশ দরজার পাশে l তাতে হামলে পড়া গোটা চার বিড়ালের উৎপাত বিরক্তে ছুড়ে ফেলে দেন হাতের মোড়কের একরাশ মুদি সামগ্রীর শ্যম্ফু সাবান তেল স্যভলনের শিশি বোতল ভেঙে চূরমার l নিজের ঘরে ঢুকে সশব্দে দোরে খিল এঁটে ফুল স্পীডে চালিয়ে দেন পাখা l এমনিতেই ক্যপসুল খাবার পর সকালের কোমড়ের ব্যথাটা আবার যেন মোঁচড় দিয়ে উটছে l শ্রীয়ের চেঁচামেচি ও দরজা ধাক্কায় বিরক্ত হয়ে খিল খুলতেই একরাশ বিরক্তি উগলে ওঠে l এমন ছেলেমানুষি করেন কেন কত্তা? আজ থেকে বিদেয় দিতে হল বাসন মাজা মেয়েটাকে আমার এই দুটো হাত কত্তা কত আর একা সামাল দেব বলেন ? আসেন আসেন,হাত ধরে খাবার টেবিলে এনে বসায় শ্রী l গিন্নী স্নান সেড়ে সবে ঠাকুর ঘরে ঢুকলেন খাবার সময় কোথায় পাশে বসে দুটো সুখ দুঃখের কথা বলে প্রাণ জুড়াবে এমন ভাগ্যও এ মানুষটার কপালে জোটে না সাধে কি আর খিচড়ে ওঠে মনটা lএ যেন শালা খিদের জ্বালায় হাভাতের মত গোগ্রাসে কোনরকম গেলা আপন মনে বিড়বিড় করতে থাকেন আদ্যনাথ l
পর্বম - পাঁচ
ভর সন্ধ্যে l শঙ্খ উলু ধূপ দীপে দূর হচ্ছে কলুষ বিষাদের অপছায়া l সমুখে টিভি স্ক্রীনে ঝুঁকে পড়ে আছে মেয়ে বৈজন্তী মাথার ওপর শঙ্খ ঘোষের ছোট কাটপিস্ নিচে দুকলি কবিতা l না,জীবন নরক করে দেবার কবিতা নয় আমরা বরং এগিয়ে যাবার কথা বলব ও শুনব l ইদানিং অবশ্য অভিভাবকদেরও যথেষ্ট দায় দায়িত্ববোধ লক্ষ্য করা যায়না l ঘরটা যেন আবাদী মাঠ একদল শ্লোগানের দাবিদাওয়া মুখর হয়ে ওঠা l মুখগুলো অস্পষ্ট এক একটা স্নায়বিক বৃত্ত বোঝা যায় না দাবী দাওয়াগুলোর প্রকৃত উদ্যোক্তা ও প্রাপকের প্রকৃত চরিত্র l একদল আকূল হয়ে ভাবতে থাকে তবেকি অসম্পুর্ণ শিক্ষার পদ্ধতিতে ভুল ছিল? হয়তো ! এইসময় গৃহস্থ বাড়িতে একপ্রকার পরিশুদ্ধির গন্ধ বের হয় I ধূপ দীপের মাঙ্গলিক শুদ্ধিতে দূর হয় সব অপবিত্র ভাব l অবশ্য এই সময় ধন্বন্তরী ফার্স ফুড সেন্টার " কাস্টমারের অর্ডারে মুখর হয়ে ওঠে l রস রসনার চাহিদায় মানুষগুলো যেন এক একটা আইটেম উদগ্রীব হয়ে ফেঁসে থাকে চক্রব্যুহের জাঁতাকলে l পঞ্চভূতের দেহটি যেন রোদে জলে ঝড়ে টিঁকে থাকবার শিঁড়দাড়াটাকে পোক্ত করে তোলার তাগিদে কংক্রীটের কামড় l এ হল প্রাত্যহিক কর্মসূচীl
য়দিও দিনের কর্মসূচী শেষ করে বাসায় ফিরে সময় হয়না দেখার এঁটো বাসন আর গামছা জল ভরা বালতি রাখা আছে কি নেই l ঘরে ঢুকে টয়লেটে হাত পা মুখ ফ্রেশ করে কাপড় চেঞ্জ করে বসে পড়েন টেবিলে l হাবুল আর বাপ্টুর পাশে ঘুমন্ত চোখে জেগে থাকে শ্রী l ওর আর হাবুলের ঘর পাশাপাশি l স্টোর রুমটাকে পরিচ্ছন্ন করে একখানা চৌকি চেয়ার টেবিল আর একটি প্লাস্টিক জগ ও গ্লাস দিয়ে তৈরী করা হয়েছে হাবুলের ঘর l পাশের সিঁড়ি ঘরটা শ্রীয়ের l দুই মেয়ে ও ছেলের আলাদা ঘরে ঘুমে কাতর সারাদিনের ক্লান্ত শৈশব l ছেলের ঘরে ঢুকে ভালো করে গুঁজে দেন মশারীর চারপাশটা l মেঝেতে ইতস্তত ছড়ানো ব্যডমিন্টনের ট্র্যকস্যুট রাকেট স্পোর্স স্যু ইত্যাদি l দলামোচা করে ওয়ার্ডরোবে চালান করে দেন কোনমতে l ফিরে আসেন একান্তের জগৎটায় l বিছানার তিনভাগ জুড়ে বিশাল ভূরিসর্বস্ব দেহটার ওঠানামা আর সঙ্গে সমুদ্র গর্জনের বিকট এইট্টি হর্স পাওয়ার মেশিনের নাক ডাকার আঁওয়াজে কুঁচকে ওঠে চোখ মুখের অংশ l আলতা পরা ফর্সা পা"দুটো দুপাশে ছড়ানো চিৎ হয়ে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মধু নাকের দু"পাশটা বাতাসের প্রভাবে ফুলে ফুলে ওঠা নামার মহাজাগতিক দৃশ্যে আবদ্ধ আদ্যনাথ প্রায় প্রতিদিনই এই আপাত শান্তির দৃশ্যে স্বস্তি পান l দরজায় টোকা পড়লে সামান্য ফাঁক করে শ্রী দু"জন ছায়ামূর্তি প্রবেশ করে ওর ঘরে l গোলাপী প্যকেট খুলে হাতে তুলে নেন মোক্ষের টুপিটা l গামছাটা খুলে নিমগ্নের প্রথম প্রহরে ওঘর থেকে গোঙাণির শব্দে হন্তদন্ত হয়ে নেমে গামছা হাতে দৌড়ে দরজার কাছে কান খাঁড়া করেন কিছুক্ষণ l কিছু না বেঘোরে নাক ডাকার আঁওয়াজ l হ্যবলা উটে পড়েছে ততক্ষণে l একদিকে চরম বিরক্তি আরেকদিকে হাবলার সুখের আঁওয়াজ মিলেমিশে সিঁড়িঘর যেন ফিল্মী স্পট l
পর্ব - ছয়
গাঢ় ঘুমের প্রদেশে জগৎ l ঘুমের নিস্তব্ধতা ভেদ করে ভেসে আসে বিবিধ শব্দের অস্পষ্টতা l রাত প্রায় তিনটে পা টিপে ঘরে প্রবেশ করে মশারির ভেতর বিশালাকায় মাছের মত দেহটায় দৃষ্টি নিবদ্ধ হয় নাহ্ এপাশ ফিরে শুয়েছে l সমুখের টেবিলটাতে জ্বলছে জিরো পাওয়ারের সবুজ ফ্লুরোস্যন্ট ভাসে প্রিয় রজনীগন্ধার তোড়া, তার পাশে ফ্রেম বাঁধানো ছবিতে ওদের ডুয়েট কোলাজ l হালকা ছিপছিপে গড়নের সু মুখশ্রীর মধু পাশে ইয়া ভূড়ি মেদসর্বস্ব শরীরে আদ্যনাথ, প্রথম মেয়ে হবার পরপরই ছবিটা তোলা l
তখন প্রায় প্রতিদিনই ফুল কিনে আনতেন আদ্যনাথ টেবিলের ভাসে একগুচ্ছ টাটকা ফুল যেন উপশমের গন্ধ বিলিয়ে রাখত ঘরটায় l কোমড়ে আঁচল গুজে ঘরদোর ঝাড়া পোছা বিছানা বালিশ জামাকাপড় কেঁচে শুকিয়ে ফের ওয়ার্ডরোবে চালান করা l সারা বাড়ি ঘরদোর সাফ সুফরো রান্না বান্না সকলের তদারকি নুন আদার মুদির লিস্ট l রেকারিং ভিপোজিট ইত্যদির খোঁজ খবরে রাতদিন ছোটাছুটির হরেক বাহানায় সেই তন্মী মধুর ছিপছিপে 54kg. ছবিটা মূর্ত হয়ে উঠেছে l নখের খোঁচায় অতিষ্ট করে তুলছে গর্দন ঘাড় পিঠে পেটে গালের আদ্যনাথকে l উরি ব্বাস 85 kg. শুরু মেনু চার্ট l তা থেকে আলু ডিম মটন বাটার ঘি ইত্যাদি বাদ l ভাত একচামচ l ডাল এক চামচ l সবজী মাছ এক পিস্ l বাদ দুধ ফার্স্ট ফুডের সব আইটেম l ভোর হয়ে আসে বাথরুম ফ্রেশ হয়ে মশারী খুলে ফের আরেক ধাপ এলিয়ে দেন 54kg. শরীরটা l
সমাপ্ত
