বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ফিরে পাওয়া

কিছুদিন ধরে কলকাতায় গুমোট গরম। আজ সকাল থেকে একটু বৃষ্টি হয়ে গরম ভাব টাকে আরও বাড়িয়ে দিয়ে গেল যেন। বাবার অপারেশনের পর আর কার্শিয়াং এর দিকে যাওয়াই হয়ে উঠেনি দোয়েলদের। সবকিছু ভেবেই অনিশ গরমের ছুটিতে এক সপ্তাহের জন্য কার্শিয়াং যাওয়ার প্ল্যান করে নিয়েছিল। দোয়েল যে স্কুলে শিক্ষকতা করে সেখানে ওদের মেয়ে তিতলিও পড়ে। তাই দুজনের ছুটি একসঙ্গে পেতে সমস্যা হয় নি। সমস্যা শুধু অনিশের ছুটি নিয়ে, বেসরকারি অফিসের হাজারো নখরা। অনেক কষ্টে এক সপ্তাহের ছুটি জোগার করতে পেরেছে।

মনে প্রচুর আনন্দ নিয়ে দোয়েল গুছিয়ে নিল। পরের দিন ভোরেই বেরিয়ে পড়তে হবে, তিতলির হাজারো প্রশ্ন! সে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত। আনন্দে সারা রাত ঠিক মত ঘুমালো না।

সকালের ফ্লাইটে ওরা বাগডোগরা রওনা দিল। ফ্লাইট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর রূপ দেখে চোখ আর মন দুই জুড়িয়ে গেল। অর্পূব তার শোভা। তিতলি তো লাফিয়ে উঠল। এয়ারপোর্টে নেমে দোয়েলের বাবার পাঠানো গাড়ী করে ওরা কার্শিয়াং এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো। শিলিগুড়ি টাউনকে বাইপাস করে মাটিগাড়া কার্শিয়াং রোড ধরে ওরা চলল বাড়ির পথে। অনেকটা পাহাড়ী রাস্তা, মাঝে চরাই উতরাই আছে। রাস্তার দুধারে জঙ্গল, মাঝে মধ্যে বৃষ্টি পেয়ে তারা চির সবুজ। কখনও কখনও পাহাড়ী ঝোরার দেখাও মিলছে, সুন্দর মনোরম সফর শেষ হল কার্শিয়াংএ গিয়ে। ওরা পৌঁছে গেল দোয়েলের অতি প্রিয় জায়গাতে।

বাবা, মা, দাদা, বৌদি, তিন্নি সবাই ওদের জন্যই অপেক্ষা করছিল। দোয়েলের বাবা বিলাস বাবু এম.ই.এসে ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পরে অবসর প্রাপ্ত হয়ে কার্শিয়াংএ পৈত্রিক ভিটেতে পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন। শহুরে কোলাহল থেকে দূরে, প্রকৃতির কাছে থাকবেন ভেবে। মা রিমা দেবীর একটা ছোট্ট স্কুল আছে, বৌদি সোমলতাও সমান তালে মার সঙ্গে সঙ্গ দিচ্ছে, সেখানে কিছু  আদিবাসী শিশুরা পড়াশুনা করতে আসে। দাদা বরুন ওখানেই এস. বি. আইতে কর্মরত।

পাঁচ বছরের তিন্নি আর সাত বছরের তিতলি দুজনে দুজনকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা । দাদুর বানানো বাগানে তারা প্রজাপতির মত উড়ে বেড়াচ্ছে। বিলাস বাবুর বাইপাস অপারেশন হয়েছিল গত দুমাস আগে। এখন অনেক সাবধানতার মধ্যে রয়েছেন। সাতটা দিন খুব আনন্দের মধ্যে হুড় হুড় করে কেটে গেল। ফেরার সময় চলে এলো, এত অল্প দিনের ছুটিতে যেন কারই মন ভরে না। তার উপর গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, টিকিট বুক করাই আছে, অফিসের ছুটিও শেষ, তাই কিছু করার নেই । তিতলি খুব কান্নাকাটি করে আবার আসার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বাগডোগরার পথে বেরিয়ে গেল বাবা, মার সঙ্গে। এবার রুটিন লাইফে ফিরতে হবে সকলকেই। রাস্তায় বৃষ্টির প্রকোপ বাড়তে শুরু হল। শুকনার জঙ্গলের রাস্তায় গতকালের বৃষ্টিতে বড়ো বড়ো গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। পুরো রাস্তা জুড়ে পরে রয়েছে কিছু। বৃষ্টির তোড় বেড়েই চলেছে ক্রমশ। রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। গাড়ীর ড্রাইভার মিখা বলল, আগে মালুম ছিল না, নেহি তো ইধার সে আতা নেহি!

এবার কি করার! অনিশ ভাবছে তাহলে কি অন্য রাস্তা দিয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়া যাবে? মিখা বলল, ইধার সে দুসরা রাস্তা ভি লেনা মুশকিল হোগা। উশকে লিয়ে কার্শিয়াং হোকে যানা পরেগা। অনিশ বলল, তবে তাই কর। আবার কার্শিয়াং দিকে যাবে ঠিক করল। কিন্তু কিছু দূর গিয়েই আরও বিভ্রাট, যে রাস্তা দিয়ে একটু আগেই ওরা এসেছিল, সেটায় বিরাট ল্যন্ড স্লাইড হয়েগেছে। এবার ভীষন অনিশ্চয়তা মনেহলো। কারন, যে পরিমান বৃষ্টি হচ্ছে তাতে রাস্তা ক্লিয়ার করতে লোক আস্তে  পারবে না। দু দিকেই রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তারমধ্যে মোবাইলের কোনো সিগনালও নেই। কাউকে কিছু বলাও যাচ্ছে না। হঠাৎ মনেহলো যেন সমস্ত পৃথিবীর থেকে আলাদা হয়েগেছে। এই অনিশ্চয়তার মধ্যে আসে পাশে কোনো অন্য গাড়ীরও দেখা নেই। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না ওরা। রাস্তায় কোনো হোটেলও দেখা যাচ্ছে না। চারিদিকে যেন ভীষণ দুর্যোগ শুরু হয়েছে। তিতলি ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। দোয়েলেরও খুব দুঃচিন্তা শুরু হল এবার। কিন্তু অনিশকে কিছু বলার উপায় নেই। এমনিতেই তিতলির কান্নাকাটি তারমধ্যে যদি দোয়েলকে টেনশনে দেখে তাহলে হয়ত কোনো ডিসিশনও নিতে পারবে না। ওদের অবস্থা দেখে মিখা বলল, নজদিক মে মেরা গাও আছে। থোরা পরেশানি হোগা আপ লগোকা, লেকিন রাত গুজর কর সাক্তে হো।

অনিশ তখন মিখার কাছে জানতে চাইল, সে কোথায় থাকে? মিখা বলল, রোহিনী সে পহেলে একটা ছোটা গাও আছে, জঙ্গল কে ভিতর সে রাস্তা হায়। আরও বলল, ঘরে বিবি আছে আর ওদের দুই ছেলে মেয়ে। তার ঘর খুবই ছোটো আছে।

এখন আর কি করার, অনিশদের অগত্যা মিখার বাড়ি জেতেই হবে। মনের মধ্যে প্রচুর অনিশ্চয়তা নিয়ে ওরা মিখার সঙ্গে চলে গেল। শুধু একটাই ভরসা মিখা দোয়েলের বাবার পরিচিত ড্রাইভার।

ফ্লাইটের টিকিটটাও ক্যানসেল করতে পারল না মনিশ। মিখার গ্রামে যখন ওরা এসে পৌঁছোলো তখনও প্রচন্ড বৃষ্টি। প্রকৃতি যেন আজ সর্বনাশী খেলাতে মেতে উঠেছে।

কাঠের তৈরী ছোটো দোতলা বাড়ি মিখার। পাহাড়ি ফুলের শোভা বাড়ির চারপাশে রয়েছে। দুই ছেলে মেয়ে, শোভন আর শোভনা বারান্দাতেই খেলছিল। ওদের দেখে একটু অবাক হয়েইছিল কি মিখা বলল, মাম্মা কো যা কে বল... সাহাব কে ঘর সে লোগ আয়ে হ্যয়। মমতা গাড়ীর শব্দ শুনেই এসেছিল। আজ কিতনা বারিশ হোরাহা হ্যয়! কহি, আপ ভিগে তো নেহি? বলতে বলতে আসছিল, আর এসেই নতুন লোকজন দেখে একটু অবাক হয়েই পরমুহূর্তে সরল হাসি হেসে বলল, আইয়ে। মমতার ওই হাসিতেই দোয়েলদের সব দুশ্চিন্তা যেন কিছুটা দূরে চলে গেল।

দোয়েলদের থাকার ঘর দেখিয়ে দিল মিখা। বলল, আপ লোগ চেঞ্জ কর লিজিয়ে।

দোয়েল বলল, কত অদ্ভুত সরল মানুষ এরা। কিছু না জেনেই কেমন আপন করে নেয়! অথচ, দেখো আমরা এই ভাবে না জেনে শুনে হঠাৎ করে কাউকে এমন করে ঘরে নিয়ে আসব কি? অনিশ, কিছু না বলে জানলার ধারে গিয়ে দাঁড়াল। দোয়েল আর কিছু না বলে, তিতলি কে চেঞ্জ করিয়ে, নিজে ফ্রেশ হয়ে নিচে গেল তিতলিকে নিয়ে। নিচে শোভন আর শোভনাকে পেয়ে তিতলির তিন্নিকে ছেড়ে আসার দুঃখ ভুলে গেল, পুরো মেতে গেল ওদের সঙ্গে। মমতা বাচ্চাগুলোকে কিছু খেতে দিয়ে দোয়েলকে ডেকে নিয়ে গেল ওর সঙ্গে।

মমতা, দোয়েলকে বলল, এরকম কখনও কখনও হয়, রাস্তা এরকম হলে মিখা অতিথীদের নিয়ে বাড়িতেই আসে, কারন আশেপাশে কোনো হোটেল নেই। ওদের এই ছোট্ট গ্রামের লোকজন এমনি করে থাকে। তিতলি ছুটে এসে বলে... দেখো দেখো মা, কি সুন্দর নদী ওদের বাড়ির পাশে! দোয়েলকে টেনে নিয়ে গেল দেখাতে। দোয়েল তিতলিকে বলল, এগুলোকে পাহাড়ী ঝোরা বলে।

তিতলি জেদ করে বলল, আমি যাবো ওই ঝোরাতে। চল না, আমরা যাই, ওরা বলছে, পরে যাবে। দোয়েল তিতলিকে বুঝিয়ে বলল, বৃষ্টি কমলে ওকে নিয়ে যাবে। তিতলি আবার শোভনাদের সঙ্গে খেলতে চলে গেল। শোভনার পুতুলের বাক্স বের করে তিনজনে মিলে খেলতে শুরু করল।

অনিশ খুবই চিন্তায় পড়ে গেল, কি করে বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ করবে? অফিসেও জানানো দরকার। কি যে করে? এরকম ঝামেলাতে কোনদিনও পড়তে হয়নি আগে। মিখা এসে চা আর কিছু খাবার দিয়ে বলল, ইতনা মত সোচিয়ে, কাল তক সবকুছ ঠিক হো জায়েগা, ইস টাইম মে ইধার এইসা হি  হোতা হ্যায়। অনিশ মিখা কে বলল, ইধার কি কোন চ্যাট সেন্টার হ্যায়? আমার কিছু মেইল করতে হবে। মিখা বলল, শুনা তো থা হ্যয়, খবর লেনা পড়েগা, আপ চায়ে পিজিয়ে মে তবতক খবর লাতা হু। অনিশের কিছুই ভাল লাগছে না, কিছু খেতেও ইচ্ছে করছে না, শুধু চা খেল। কিছুক্ষণ বাদে, মিখা জানাল, যে সেন্টারটা ছিল সেটা বৃষ্টির জন্য বন্ধ। আর গাছ পড়ে ইলেক্টিকের কানেক্সনও চলে গেছে। আজ যদি বৃষ্টি কমে তো কাল ঠিক হওয়ার আসা আছে। অনিশ এবার পুরই কিংকর্তব্ববিমুঢ় হয়ে গেল। দুপুরে মমতার হাতে রাঁধা রাইশাক, ডিমের ঝোল আর ভাত সবাই খেল শুধু অনিশ খেতেই পাড়ল না, শরীর ভাল লাগছে না বলে উঠে চলে গেল।

পাহাড়ি অঞ্চলে এমন বৃষ্টি হলে, দিন যেন খুব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়। দোয়েল অনিশের মানসিক অবস্থা বুঝে তার কাছে যায়, কিন্তু কিছুই বোঝাতে পারে না। কিছুক্ষণ বাদে মিখা আসে, অনেকক্ষণ কথা বলে অনিশকে সহজ করার চেষ্টা করে। কিন্তু এই বৃষ্টি যে আজ কমছেই না। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল, এই অঞ্চলে ইলেক্টিকের আলো সবার ঘরে ঘরে এখনও আসে নি।  আগে রাস্তায় কিছু বাড়িতেই আছে, কিন্তু আজ পাওয়ার কাটের জন্য চারিদিক ভীষন অন্ধকার।

অন্ধকারকে আলোকিত করতে কুপি অথবা লণ্ঠনের দরকার পড়ে। তিতিলির কাছে এইসব খুবই মজার ব্যপার। অনেক অনেক প্রশ্ন করেই চলেছে, দোয়েলের অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে উত্তর দিতে দিতে। রাতের খাবার খেয়ে অবশেষে ঘুমোতে গেল। দোয়েল এবার জোড় করে অনিশকে খায়িয়ে দিল। সারারাত টিনের চালে বৃষ্টির আওয়াজে তিতলি ঘুমিয়ে গেল, কিন্তু দোয়েলকে জাগিয়ে রাখল অনিশের সঙ্গে। অনিশের বুকে মাথা রেখে শেষরাতে একটু চোখ লেগেছিল যেন, আর তা ভাঙল মিখার ডাকে। মিখা খবর দিয়ে গেল, কার্শিয়াংএর দিকে গতরাতে আবার ধ্বস নেমেছে, রাস্তার হাল আরও খারাপ হয়েগেছে। আর এদিকে যে গাছ পড়েছিল তাও সরানো হয়নি। আজ যদি বৃষ্টি কমে তবেই কিছু করা হবে।

অনিশ এবার হাল ছেড়ে দিল, দোয়েলকে বলল আমি একটু বারান্দাতে গিয়ে বসি। দোয়েল বলল, বস, আমি চা নিয়ে আসছি। বারান্দা থেকে দেখল, মিখার বাড়িটা বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো, বাড়ির সামনে বেশ সুন্দর করে ছোট ছোট জায়গায় মাটি তৈরী করে মরশুমী সব্জী লাগিয়েছে। একটা ছাতা নিয়ে নীচে নেমে এল। হাটতে হাটতে বাড়ির পেছনে এসে দেখল একটা ঝোরা। মিখা পেছন থেকে এসে বলল, ‘গুমতি ঝোরা কেহতে হ্যয় ইসে’। দেখল বাড়ির পেছনে একটা বড় গাছে দোলনা লাগানো আছে।

হঠাৎ করে দোয়েল আর তিতলিও চলে এল, তিতলি বলল, ‘দেখ বাবা কি সুন্দর ঝোরাটা, আজ বৃষ্টি কমলে ওই ঝোরাতে যাবে আমাকে নিয়ে?’ অনিশ তিতলিকে কোলে নিয়ে বলল যাব, কিন্তু এখন ঘরে চল, এই বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।

একটু বেলার দিকে বৃষ্টি কমে পরিস্কার হলো আকাশ। তিতলি শোভনাদের সঙ্গে দোলনা চড়তে গেল। তিতলিকে এই নতুন পরিবেশে বাচ্চাদের সঙ্গে ছাড়তে মন চাইল না তাই দোয়েল আর অনিশও ওদের সঙ্গে সঙ্গে গেল। মিখা গেল রাস্তার অবস্থা দেখতে। মমতা রান্না করছে।

দোয়েল আর অনিশ বাচ্চাদের সঙ্গে মেতে উঠল ওদের খেলাতে। ঝোরার জলে ছোট ছোট মাছ ধরল ওদের সঙ্গে আবার ছেড়েও দিল। তিতলি কিছু নুড়ি কুড়লো। খেলতে খেলতে সবাই সময় ভুলেই গিয়েছিল। মিখাকে আসতে দেখে সম্বিত ফিরে পেল। মিখা জানাল, গাছ কেটে রাস্তা পরিস্কার করা হচ্ছে। বিকাল হয়ে যাবে সব করে উঠতে। অনিশ বলল, তাহলে কাল সকাল সকাল বাগডোগরা চলে যাওয়া যাবে।

সবাই ঘরে ফিরে এল, মনটা এখন অনেক শান্ত হয়েছে মনিশের। দুপুরে সবার সঙ্গে লাঞ্চ করল। এরপর একটু ঘুমিয়ে পড়েছিল। চলেযেতে হবে তাই দোয়েল আর উপরে গেল না, মমতার সঙ্গে গল্প করতে বসে গেল। বাচ্চারাও জলে খেলে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তিতলি তার বাবার সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিছুক্ষন বাদে হঠাৎ করে অনিশ তিতলি কোথায় গেলি বলতে বলতে নীচে এল। নীচে এসে দেখল দোয়েল মমতার সঙ্গে সব্জী বাগানে মোড়া নিয়ে বসে গল্প করছে। শোভনরা দুজন মিখার সঙ্গে ঘুমাচ্ছে। অনিশ দোয়েলের উদ্দেশ্যে বলল, তিতলি কোথায়? তোমাদের কাছে এসেছে? দোয়েল বলল, কেন ও তো তোমার সঙ্গেই উপড়ে গেল ঘুমাতে। মমতা বলল, ইধার তো নহি আয়ি থি। দোয়েল বলল, একবার বাড়ির চারপাশটা দেখে এস, আমি ভিতরটা দেখছি। এখানে এসে মেয়েটার বেশ ভাল লেগেছে, সারাবাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনিশ সঙ্গে সঙ্গে বের হলো। সকালে যেখানে খেলেছিল সব জায়গা ভাল করে দেখল। নাহ্‌, কোথাও নেই! মিখাও চলে এল মমতার থেকে শুনে। এবার ভীষন টেনশন হতে লাগল। কোথায় গেল ওইটুকু মেয়েটা হঠাৎ করে! এইজন্যই অচেনা জায়গায় এসে থাকা উচিৎ নয়, অনিশ মনে মনে বিড়বিড় করে চললো। দোয়েল, মিখা সবাই বেড়িয়ে পড়ল খুঁজতে, তিতলি...... তিতলি......!!

নাহ্‌, কোথাও সাড়া নেই মেয়ের!

দোয়েলের মুখের রক্ত কেও যেন শুষে নিয়েছে, বুকভাঙ্গা কান্নাটাকে কোনোরকমে চেপে রেখেছে সে। আর শুরু হল অনিশের সঙ্গে কথা কাটাকাটি... একে অপরকে দোষারোপের পালা। মিখা আশেপাশের চেনাশুনো বাড়িগুলো খুঁজে হতাশ ভাবে ফিরে এলো। ততক্ষণ শোভনারা দুই ভাই-বোনের ঘুম ভেঙ্গে গেছে। শোভনা আন্দাজ করলো তিতলি মনে হয় ঘুরতে ঘুরতে ঝোরা পার করে তাসুদের গ্রামে চলে গেছে। বলবে কি বলবে না ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত বাবাকে জানানোটাই সমীচিন মনে করলো। আরো জানালো তিতলি সকালে অনেকবার বলেছিল ওই দূরে কি আছে দেখতে যাবে, অনেক কষ্টে আটকানো গেছিল তখন।

মিখা বলল, তুম ফির হামে উধর লে চলো। মনিশ আর দোয়েল তো পুরো হতবাক। মেয়েটা এতদূর কিছু করতে পারে সে তো স্বপ্নাতীত! সবাই মিলে গুমতী পার করে তাসুদের গ্রামের দিকে গেল। কিছুদূর যাওয়ার পরে বাচ্চাদের হই হই করে খেলার আওয়াজ কানে আসছিল। শোভনা নিয়ে গেল সবাইকে খেলার মাঠে। ওখানে গিয়ে অবাক হওয়ার পালা, তিতলি ঐ গ্রামের বাচ্চাদের সঙ্গে খেলায় মত্ত্ব। আর সে খেলায় এমন মত্ত্ব যে বাবা, মা কাউকেই খেয়াল করতে পারে নি। শোভনা গিয়ে ডাকল তবে মেয়ের হুশ এল। এবার মা, বাবার মুখ দেখে বুঝতে পারল সে খুবই অন্যায় করেছে। তাই মা, বাবার কাছে এসে মাফ চাইল। দোয়েল বলল, তুমি নিশ্চয়ই বুঝে গেছ কি ভুল করেছ, তাই আর কখনো এমন করবে না। অনিশ আর সেই মুহূর্তে কিছু বলল না। শোভনা এসে বলল, হামলোগ থোড়া খেলকে ঘর জায়েঙ্গে আঙ্কেল? অনিশ বলল, ঠিক আছে, তুম লোগ বোলনা কব ঘর জায়োগে। হাম আশপাস রহেঙ্গে।

রাতে খাওয়া দাওয়া করে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে, শুধু দোয়েল আর অনিশ জেগে আছে, তিতলির দিকে তাকিয়ে ছিল দোয়েল। অনিশ বলল, গতকাল বুঝি নি এইদুটো দিন এতদিনের বাধাধরা জীবনে এতবড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে, এটাও ভাবি নি এমন অচেনা অজানা মানুষরা এত আপন করতে পারবে, তুমি গতকাল বলেছিলে তখন আমি তো আমার চিন্তায় মগ্ন ছিলাম। আজ যখন তিতলিদের নিয়ে সকালে এত আনন্দ করলাম, তিতলির ওই খিলখিল হাসি অনুভব করলাম, আবার বিকেলে তিতলিকে খুঁজতে গিয়ে ওকে যখন অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মশগুল ভাবে খেলতে দেখলাম, তখন যেন মনেহল, এই অজানার পথ তো মন্দ নয়। কতই আনন্দ লুকিয়ে ছিল এই মুক্ত পরিবেশে। তাই ভাবছি, এমন করে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে পড়ব তোমাদের নিয়ে। দোয়েল সেই আগের অনিশকে ফিরে পেল যেন। খুশীতে অনিশকে জড়িয়ে ধরল। অনেকদিন বাদে আবার দুজন দুজনের কাছে এল।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু