বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

চ্যালেঞ্জ

কলেজ ক্যান্টিনে পল্লবীর ভুতের বিশ্বাস দেওয়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে গণেশ আর সুমিত পলাশবাড়ী সার্কিট হাউসে এসে ওঠে।প্রথমরাতেই বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনার সামনে ওরা করে।পরদিন আলমারি থেকে পল্লবীর ডায়েরি পড়ে জানতে পারে এই ঘটনার সামনে পল্লবীও করেছিল।একদিন রাতে ওর বাবা অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে ।তারপর------

    দরজায় পিঠ চেপে দাঁড়িয়ে আমি আর মা রীতিমতো হাঁফাতে আরম্ভ করেছি।বাবার ওকি ভয়ানক চেহারা,আজ অব্দী আমি বা মা বাবাকে ওই ভাবে দেখিনি।বাইরে কোনো শব্দ নেই,তবে কেনো যেনো মনে হচ্ছিল আমাদের দরজার ঠিক বাইরে কোনো এক জানোয়ারের ঘন ঘন নিশ্বাস নেওয়ার শব্দ হচ্ছে।কতক্ষণ এরকম ছিলাম জানিনা হটাৎ মায়ের ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দে আমার হুঁশ ফেরে ।মা তখন বাবার চিন্তায় কাঁদতে শুরু করেছেন।আমি কি করবো বুঝতে পারি না ,ঠিক তখনই বাইরে লনে রাখা গাড়ির দরজা বন্ধ করার শব্দ পাই।তারপরই কিছু একটা টেনে হিঁচড়ে আনার শব্দ শুনতে পাই।আমি কান খাড়া করে কিসের শব্দ বোঝার চেষ্টা করি।একটা অস্ফুট গোঁঙানি ,কোনো মেয়ে,হ্যাঁ একটা মেয়ের গোঙানীর শব্দ।শব্দটা লন পেরিয়ে আমাদের বারান্দার কাছে।আমি দরজাটা খুলে দেখার চেষ্টা করি।সে দরজা বাইরে থেকে কে যেনো বন্ধ করে দিয়েছে।বাইরে তখন একটা হুটপাটি শব্দ এবার গোঁঙানি কণ্ঠ আর্তনাদে রূপান্তরিত হয়েছে, পরিষ্কার একটি তরুণীর প্রচন্ড আর্তনাদ।আমি মা দুজনেই জানলার দিকে দৌড়ে যাই যদি চিৎকার করে কারো সাহায্য পাওয়া যায়।জানলার পাল্লা খুলতেই দেখতে পাই জানলা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে এক বীভৎস মহিলা যার চোখের কোলে কালি পড়া তার ভিতরে ধক ধক করে জ্বলছে দুটো সাদা মনি।এলথেলো চুলের ভিতর এক অশরীরী হাঁসি।আমার প্রচন্ড ভয়ে তখন মুখের ভাষা চলে গেছে।মা ওই দৃশ্য দেখে জ্ঞান হারিয়েছেন।শরীরের সমস্ত শক্তি এক করে জানলার পাল্লাটা বন্ধ করি।অচৈতন্য মা কে কোনোক্রমে বিছানায় টেনে তুলি।আমি কি করবো এখন,দরজা ধাক্কা দিয়ে বাবাকে ডাকতে যাবো বলে যেই দরজার দিকে যাবো বলে ঠিক করেছি দেখি দরজা আগলে দাঁড়িয়ে সেই বিভিৎস জানোয়ারটা ,আমার শিরদাঁড়া বেয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো।ওটা এখানে কখন ঢুকলো???জন্তুটা স্থির দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

      সকালের রোদ্দুর চোখে পড়তেই আমি হুড়মুড় করে উঠে বসলাম।চারপাশ তাকিয়ে দেখলাম,মা আমার পাশে নেই।মা মা করে ডাকতেই মা ঘরে এসে জিজ্ঞাসা করলেন কেনো ডাকছিলাম।মায়ের দিকে কৌতুহলী হয়ে কালকের ঘটনার কথা উল্লেখ করায় মা তাড়াতাড়ি আমার কপালে হাত দিয়ে দেখতে লাগলেন আমি ঠিক আছি কিনা।বাবার কথা জিজ্ঞাসা করতেই জানলাম বাবা নাকি নিয়মমত কাজে বেরিয়েছে।আরো অবাক হলাম কাল নাকি বাবাকে ছাদ থেকে ডেকে আমি খেয়ে শুয়ে পরি।রাতে একবার ঘুম থেকে উঠে বাইরে পায়চারী করে আবার কখন বিছানায় এসে ঘুমিয়ে পরি।তারমানে এইসব ঘটনার কিছুই হয়নি,সব আমার কল্পনা।

    এগুলো যে আমার শুধুমাত্র কল্পনা নয় সেটা বুঝলাম রান্নার মাসির একটা কথা শুনে।ওঁদের গ্রামের একটা ১৬ বছরের মেয়ে কাল সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ,গ্রামের লোক তল্লাশি চালাচ্ছে।

     এখানে ফোনের টাওয়ার একদম পাওয়া যায় না।আজ বহু কষ্টে রজতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি।ও আজ কালের মধ্যে আসছে।কিন্তু আমি কালকে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মেলাতে লাগলাম।আমাকে এটা খুঁজে দেখতেই হবে।

   চাবি নিয়ে দোতলায় উঠলাম,সেই ঘরের দরজাটা এখনো আধা খোলা।দরজাটা ঠেলে খুলতেই আমি চমকে উঠি ঘরের ধুলোর আস্তারণ কিছুটা এলোমেলো কেউ যেনো সেটার উপর ধস্তা ধস্তি করেছে।ঘরের এক কোনে পরে আছে মহিলার অন্তর্বাস,ছেড়া শাড়ির টুকরা যেটা কখনোই পুরোনো নয়।হটাৎ পায়ের কাছে লক্ষ্য করলাম ফোঁটা ফোঁটা শুকিয়ে যাওয়া রক্তের দাগ যেটা সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেছে।আমি সেই রক্তের দাগ অনুসরণ করে ছাদে পৌঁছে যাই।আর অবাক বিস্ময়ে দেখি সেই দাগ ওই ভাঙা দরজার কাছে থেমে গেছে ।আমি খুব ভয় পেয়ে যাই দৌড়ে নীচে নেমে আসি।মাকে কিছু বলিনা জানি মা বিশ্বাস করবে না।আমি সেদিন রাতের অপেক্ষায় থাকি।

    বাবা সন্ধ্যে বেলায় যখন ফিরলো তার মুখটা কেমন থম থমে, কারো সঙ্গে কথা না বলে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।আজ দুপুর থেকে মায়ের শরীর খারাপ বিছানায় শুয়ে আছেন।বাবাকে খাবার দেওয়ার কথা বলতে বললেন তার খিদে নেই।আমি আজ দোতলা যাবার চাবিটা বাবার ঘর থেকে লুকিয়ে নিজের কাছে রেখেছি।সন্ধ্যে হবার সঙ্গে সঙ্গে লনের গ্রীলে চাবি দিয়ে রেখেছি।

    এখন রাত দশটা হবে এখন অব্দী সেরকম কিছু শুনিনি।দু একবার বাইরে বাবার চঞ্চল পায়ের শব্দ পেয়েছি,দু একবার গ্রীল ধরে ঝাঁকানোর শব্দ পেয়েছি কিন্তু বাবা আমাদের ঘরের দরজা ধাক্কা দেননি বা কিছু জিজ্ঞাসা করেন নি।সেই বদ গন্ধ টা আবার বেরোতে শুরু করেছে।মা বাবাকে খাবার দিয়ে আসতে উঠছিলো কিন্তু আমি মাকে থামিয়ে নিজেই যাবো বলে ঠিক করি।জানিনা আমার মধ্যে আজ এতো সাহস কোথা থেকে এসেছে।বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, দরজা খুলে দেখি বাইরের লাইটটা জ্বলছে না,বোধহয় কেটে গেছে।এদিক ওদিক চেয়ে দেখলাম না ভয়ের কিছু দেখতে পেলাম না।খাবারের থালা হাতে বাবার দরজার দিকে এগোতে গিয়ে মনে হলো কি একটা চট চটে বস্তুতে আমার পা টা আটকে যাচ্ছে।আর তার সঙ্গে সেই বিশ্ৰী গন্ধ।বাবার ঘরের সামনে এসে বাবাকে ডাকতেই ভিতর থেকে বাবা বললেন দরজা খোলা ভিতরে এসো।দরজা খুলতেই দেখি ভিতরে একটা ডিম লাইট জ্বলছে আধো অন্ধকারে বাবা কোথায় জিজ্ঞাসা করতেই।একটা ফ্যাস ফেসে গলায় বলে আমি এইখানে।আমি চমকে তাকিয়ে দেখি বাবা কখন আমার পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে।আমি বাবাকে দেখে ভরসা পাই,খাবারটা টেবিলে রেখে বাবাকে আলো জ্বালাতে বলি।কিন্তু বাবা আলো না জ্বালিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে,আমি ভয় পেয়ে যাই কালকের ঘটনার কথা মনে পড়ে যায়।বাবা আমার কাঁধ দুটো চেপে ধরে আমার দিকে ঝোঁকে।আমি চমকে উঠি এ কে এতো আমার বাবা নয়।বীভৎস একটা মুখ,চোয়াল ঝুলে পরেছে, চোখ দুটো লাল টকটকে,বিশ্রী সে চাহুনি,জিভটা সাপের মতো সে তার ঠোঁটে বোলাচ্চে, আমি ভয়ার্ত ভাবে দরজার দিকে ছুটে যাই,আমার ওড়না তখন সেই পিশাচের হাতে।কিছুতেই দরজা খুলতে পারিনা,পিশাচটা তখন চার হাতে ভর করে জন্তুর মতো লক লকে জিভ বার করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।আমি ভয়ে প্রচন্ড জোরে মা মা বলে চিৎকার করতে থাকি।পিশাচটা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পরে।হটাৎ একটা ভয়ঙ্কর শব্দে দরজাটা ভেঙে পড়ে।পিশাচটা থমকে দাঁড়ায়,আমি দেখি দরজা আগলে দাঁড়িয়ে আমার মা তার সমস্ত চুল এলো,হাতে একটা দা কিংবা কাটারী জাতীয় বস্তু,ঠোঁটের চারপাশ লাল,মুখটা ভীষণ সাদা চোখে র কোলে কালি,মনি গুলো ধক ধক করছে।মা তার লম্বা হাত দিয়ে আমাকে টেনে বাইরে ছুড়ে দেয়।তারপরই একটা আর্ত চিৎকার আর পিশাচের মুন্ডুটা আমার পায়ের কাছে এসে পরে।আমি তারপর জ্ঞান হারাই।​


  • ​      চারদিন বাদে আমার জ্ঞান এলো,তারপর এলো সেই দুঃসংবাদ আমি যেদিন জ্ঞান হারিয়েছিলাম সেদিন ফেরার পথে বাবা একদল পাচার কারীর পিছনে ধাওয়া করতে গিয়ে মারা যায়।বি এস এফ জওয়ান সারা রাত তল্লাশির পর বাবার মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধার করে।সার্কিট হাউসে আমাদের খবর দিতে এসে দেখে কারা যেনো আমাদের বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে ,মাকে ওরা খুঁজে পায়না আমার সংজ্ঞা হীন দেহ নিয়ে ওরা হাসপাতালে ভর্তি করে।আমার ডায়েরি খুঁজে ওরা রজতের নম্বর পেয়ে ওকে ডেকে আনে।মায়ের খোঁজ ওরা চালাচ্ছে।আমি ওদের আসল কথা বলতে যাবো হটাৎ দেখি আমার কেবিনের বাইরে সেই অদ্ভুত প্রাণীটা আমার দিকে চেয়ে আছে।আমি কিছু বলতে যাবো হটাৎ দেখি আমার ঠোঁটে একটা আঙ্গুল দিয়ে আমাকে বিশ্রাম নিতে বলছে রজত,ওর মুখে মৃদু হাঁসি।আমি ওর হাত ধরে কাঁদতে থাকি,আমার সব কথা বলতে চেষ্টা করি।ও আমায় অভয় দেয় বাড়ি ফিরে আমার সব কথা ও শুনবে।ওর হাতটা খুব ঠান্ডা,আমি কিছুতেই ওই সার্কিট হাউসে ফিরতে চাইনা।বি এস এফ অফিসার বলে কোনো ভয় নেই ওরা ওখানে দুটো গার্ড নিযুক্ত করেছে।আর দুদিন দেখবে যদি মায়ের কোনো সন্ধান করতে পারে ভালো না হলে আমায় বহরমপুর ফেরার ব্যাবস্থা করে দেবে।সেদিন সমস্ত ফর্মালিটি চেক আপ করে আমায় হাসপাতাল থেকে রিলিজ করে দেয়।সার্কিট হাউস পৌঁছতে পৌঁছতে আমাদের সন্ধ্যা হয় যায়।মেন দরজা দিয়ে ঢোকার সময় আমার চোখ হটাৎ ছাদের দিকে চলে যায়।সেই আধো আলো অন্ধকারে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই ছাদের রেলিং ধরে আমাদের পথের দিকে চেয়ে আছে রজত।কিন্তু এ কি করে হয় আমার পাশে তখন রজত বসে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রহস্যময় মৃদু হাঁসি হাসছে।আমি আবার ছাদের দিকে তাকাই না সেখানে আর রজত নেই সেই ভয়ঙ্কর জন্তুটা রয়েছে, আমি রজতকে চিৎকার করে সেটা দেখাই, কিন্তু রজত বোকার মত সেদিকে তাকিয়ে বলে কিছুই সে দেখতে পাচ্ছেনা।
  • ​     আজ রাতের পর আমি কিছুতেই এখানে থাকবো না।কাল ভোরেই আমি ফিরে যাবো এই অভিশপ্ত বাড়ী থেকে।
  • ​এরপর ডাইরির পাতা ফাঁকা আর কিছু লেখা নেই।আমি তন্ন তন্ন করে খুঁজতে থাকি যদি এরপরে কোথাও পাওয়া যায় পল্লবীর কি হলো।না কিছুই লেখা নেই,বিফল মনে ঘড়ির দিকে তাকাই প্রায় আরাইটে মেঘলা আকাশ থাকায় সময়ের খেয়াল করতে পারিনি।দুপুরের খাবার অনেকক্ষন দিয়ে গেছে।কিন্তু গণেশের কান্ড জ্ঞান নেই এখনো ফেরেনি।টাওয়ারের যে অবস্থা ফোন করা বৃথা।
  • ​   খাওয়া সেরে বাইরে টা দেখার খুব ইচ্ছা হলো।লনে বেরিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম,বৃষ্টির জলে ধোয়া পাইন গাছের পাতা গুলো সবুজ হয়ে আছে।সারা জায়গা নিস্তব্ধ তারই ফাঁকে কোনো এক অজানা পাখি ডেকে উঠছে,পাশের জলের ধারে ব্যাঙের একটানা ডাক সঙ্গে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক পরিবেশটা গম্ভীর করে তুলেছে।হটাৎ চোখটা আটকে যায় ত্রিপল ঢাকা গাড়িটার দিকে।একটা অজানা শক্তি আমায় গাড়ির দিকে নিয়ে গিয়ে ফেলে।আমি গাড়িটার সামনে পিছন ঘুরে কি মনে হতে ত্রিপল টা উঠিয়ে দেখতে যাই।ত্রিপল তোলার সঙ্গে সঙ্গে একটা বীভৎস দৃশ্যের সামনে করি।

            -------চলবে-----

কপিরাইট রিজার্ভ@সৌগত@মুখোপাধ্যায়@২০২১




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু