বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

নীল ভালোবাসা

#নীল_ভালোবাসা
#মিষ্টিমৌ

-"এই নে চা।"

-"শুধু চা?আর কিছু নেই বুঝি।বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে।শুধু চায়ে চলবে না।কি বলো ভায়া!!"

-"উরি বাবাহ আনছি তো।ডিমের অমলেট ভেজছি।মুড়ি মাখাও আছে।সব আনছি একটু ধৈর্য্য ধরো।"

-"এই সময় রাধুর দোকানের গরম গরম ফুলুরি হলে জমে যেত।"

-"ও ফুলুরি ভালোবাসে না।মোচার চপ,ফুলকপির পকোড়া ও খুব ভালোবাসে।তাছাড়া আমি তো পেঁয়াজি ভাজলাম।"

-"একবার রাধুর দোকানের ফুলুরি খেলে না বারবার খেতে চাইবে তুমি।আমি বরং টুক করে গিয়ে নিয়ে আসি। "

-"সে কি।এই বৃষ্টিতে কি দরকার যাওয়ার।এই ছাড়োতো!!!আর যেতে হবে না গো।"

-"আরে যাবো আর আসবো।"

-"আসলে তোমার খেতে ইচ্ছা করছে তাইতো।"

-"ঐ আর কি!!বোঝোই তো।"

*********************************************

বরুণ পাজামাটা গুটিয়ে নিয়ে ছাতা মাথায় বেরিয়ে গেল রাধুর দোকানে।গলির মুখেই ওর দোকান।সত্যিই ওর দোকানের ফুলুরি দারুণ খেতে।তবে এই বৃষ্টি মাথায় বরুণের বাইরে আসার কারণ ঠিক ফুলুরি নয়।প্রায় এক যুগ পর মেখলার সঙ্গে প্রবীরের দেখা হয়েছে আজ।হয়তো ওদের অনেক কথা বলার আছে, তাই একটু সুযোগ করে দিল ওদের।

প্রবীর আর মেখলা এক কলেজেই পড়তো।ভালো বন্ধুত্ব ছিল ওদের।দুজনের ইচ্ছে ছিল বন্ধুত্বকে একটা নাম দেওয়ার।কিন্তু সব প্রেমের পরিণতি সুখের হয় না।তাইতো কলেজের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই মেখলার বাবার ক্যান্সার ধরা পড়তেই বাড়ির সবাই ওকে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়ে দেয় বরুণের সঙ্গে।বিয়ের দুমাসের মধ্যে ওর বাবা গত হন।ভাগ্যিস বিয়েটা দেখে যেতে পেরেছেন উনি, সবাই এতে খুশিই হন।তবে মেখলা তখন সবসময়ই মনমরা হয়ে থাকতো।একে তো পিতৃবিয়োগ, উপরন্তু মনের মানুষের সঙ্গে বিয়ে না হওয়া।যদিও ধীরে ধীরে সবটাই মানিয়ে নিয়েছে মেখলা।কিম্বা এও বলা যেতে পারে যে মানিয়ে নিতে বাধ‍্য হয়েছে।

বরুণের সবসময়ই মনে হত যদি সুযোগ আসে কোনও দিন তবে মেখলাকে প্রবীরের কাছে ছেড়ে দিয়ে আসবে।তারপর যা ভাগ্যে থাকবে তাই হবে।সুযোগটা হঠাৎই এসে গেল।প্রবীর ওর অফিসেই ট্রান্সফার নিয়ে এসেছে, এর আগে সে উড়িষ্যায় ছিল।এখনও বিয়ে-টিয়ে করেনি কথায় কথায় জানতে পেরেছে বরুণ।প্রবীরের সঙ্গে ক্যানটিনে আড্ডা দিতে গিয়ে একদিন জানতে পারে মেখলা আর ও এক ব্যাচ।তার পর থেকেই ওদের দুজনকে এক করে দেওয়ার ইচ্ছে মনে জাগে।

তাইতো ছলে বলে ওকে ঘরে নিয়ে আসে।মেখলা ওকে দেখে ভীষণ খুশি হয়।কত পুরানো কথা মনে পড়ে দুজনের।বরুণের সামনেই দুজনে হাসি ঠাট্টা চালিয়ে যায়।বরুণের বারবার মনে হয়েছিল ও থাকায় ওদের দুজনের খুব অসুবিধা হচ্ছে।তাই বাইরে বেরিয়ে আসে, তবে মনটা সম্পূর্ণ ঘরেই পড়ে থাকে।রাধুর দোকান থেকে ফুলুরি নিয়ে তাইতো বাড়ি ফেরেনা,চা নিয়ে বসে পড়ে পাশের।রোয়াকে।

***********************************************

প্রবীর ডিমের অমলেট খেতে খেতে বলে,-"বরুণদাকে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি।বড় ভালো মানুষ রে উনি।তুই খুব লাকি রে।এমন মানুষকে সঙ্গী পেয়ে।"

-"সেতো ঠিকই বলেছিস।ও খুব ভালো মানুষ।আমার খুব যত্ন করে।ভীষণ ভালোবাসে,একদম অন্ধের মত ভালোবাসে।বাবা চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের সংসারটা কি সুন্দর সামলেছে জানিস।আমার তো তখন বিয়ের ইচ্ছে ছিল না, তার ওপর........"

-"তার ওপর কি বল?"

-"ছাড়তো ওসব কথা।তুই বিয়ে করেছিস?"

-"না রে।মনের মত মানুষ পাইনি।দিব্যি আছি তো।চালিয়ে দিচ্ছি।"

-"এভাবে জীবন কাটবে না।বয়স হলে একজন সঙ্গী খুব প্রয়োজন হবে।তাই এখনো সময় আছে রে, টোপরটা পড়েই ফেল।তোর বিয়েতে ডাকবি কিন্তু আমাদের।"

-"কি যে বলিস না।সে দেখা যাবে।"

-"আমি কিন্তু বিয়ের পর ভীষণ ভীষণ ভালো আছি।বরুণের মত মানুষ, দুই সন্তানের সুখ সব পেয়েছি।"

-"হুমম।সেই ভালো।তবুও কেন যেন দুচোখের কোণে জল ছলছল করে, কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে।তাই না বল।"

-"মানে কি বলছিস?"

-"স্মৃতির পাতায় অনেক কথা লেখা আছে।সেগুলো স্মৃতিতেই থাক।আমি আমার মত থাকি সেই স্মৃতি নিয়ে।আমার জানা ছিল না এই অফিসে আসলে আবার যে দেখা হয়ে যাবে তোর সঙ্গে।জানা থাকলে আসতাম না।তঙে সুখে থাক।আমি আজ উঠি রে‌।যদি আবার কখনও সুযোগ হয় দেখা হবে।তখন হয়তো দেখবো তুই আরও অনেক অনেক অনেএএএএক বেশি সুখে আছিস।বরুণদাকে বলিস বৃষ্টি কমতেই বেরিয়ে পড়েছি।অফিসে কথা বলে নেব কাল।আসি রে।ভালো থাকিস।"

-"হুমম।সাবধানে যাস।তুইও ভালো থাকিস।"

***********************************************

বরুণ ফুলুরি নিয়ে আসতেই মেখলা জানায় প্রবীর বৃষ্টি কমতেই চলে গেছে।তারপর ঘরের কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলে।বরুণ কৌশল করে ওদের দুজনের সম্পর্কে জিজ্ঞেস ক‍রতেই,মেখলার মুখে তেমন কিছু উত্তর না পেয়ে বোঝে এত বছরে ওদের প্রেমটা বোধ হয় কেটে গেছে, কোনও টান নেই।যাক গে একটু নিশ্চিন্তে হয়েছে সে।ফুরফুরে মন নিয়ে গুনগুন গান গাইতে থাকে।মুড়ি ও ফুলুরি খেতে থাকে গরম চায়ের সঙ্গে।

রান্নাঘরে প্রেসারের সিটিতে, মিক্সির শব্দে, গরম বাষ্পের সাথে পুরানো ভালোবাসাকে মনের চোরাকুঠুরিতে রেখে বাস্তবের রঙ্গমঞ্চে নেমে পড়ে ত্রুটিহীন অভিনয় করতে।এমন অভিনয় করে যে কেউ ধরতেই পারে না।

রাতে বিছানায় হালকা নীল আলোয় যখন শরীরটাকে দিয়ে দেয় বরুণকে উন্মত্ততার খেলায় জেতার জন্য,তখনও মনের ভিতরে ছটফট করতে থাকে পুরানো সব মধুর স্মৃতি, পুরানো ভালোবাসা।হালকা নীল আলোর বিলীন হয়ে যায় সে স্মৃতি ঘেরা অতৃপ্ত নীল  ভালোবাসা।

????????????????????????????????????????????????????????????????

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু