বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

পাগল

#অনুগল্প

#পাগল

#অন্তরা_রায়


প্রিয়াংশু গলির মুখে নামিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল পুরোটা সময়। তবু এইটুকু আসতে ভয়ে হাত'পা যেন সিঁটিয়ে যাচ্ছিল শরণ্যার। গলির ভেতরে ঢুকে আসতে গিয়ে বারবার পিছন ফিরে প্রিয়াংশুর দিকে ঘুরে ঘুরে ও দেখছিল। প্রিয়াংশু ইশারায় বলছিলো, ও আছে সাথে, হাসি মুখে ডান হাতের বুড়ো আঙুল সামনে এগিয়ে ওকে ভরসা দিচ্ছিল।

অভিনব, দ্বিজা, মানবী, রূপঙ্কর ওরা গত তিনদিন বাড়িতে এসে বারবার করে শরণ্যার মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করে গেছে। কিন্তু সেই রাতের কথা শরণ্যা কি এতটুকু ভুলতে পেরেছিল? নাকি গত দশ দিনে সেই বিভীষিকাময় রাতটা এতটুকু আবছা হয়েছিল কখনো? বারবার ঘুরে ফিরে সেই লোকটার ভয়ঙ্কর কুৎসিত মুখটাই তো ওর মনের ভিতর ফিরে ফিরে আসছিল।

হোঁচট খেলো শরণ্যা।

রাস্তার ওপর ইঁটটা চোখেই পড়েনি।


একটু দূরেই ও দেখতে পেল মন্দিরের গেটের পাশ বেয়ে ছ'সাততা মুখ উঁকি দিচ্ছে। নিমেষে মন ভালো হয়ে যায় শরণ্যার।

বেশ কিছুদিন হলো এখানকার বস্তিতে ও পড়াতে আসে। পড়ানোর সাথে সাথে চলে গান, গল্প, খেলাও।


আজ ক্লাস শেষ হতে হতে আবার সন্ধে হয়ে গেল। শরণ্যা ভেবেছিল বিকেলর দিকেই বেরোবে, কিন্তু হলোনা। বছর তিনেকের বাবলু ছুট্টে এসে ওপাশের দরজা ঘেঁষে চিৎকার করে হঠাৎ বললো," তুমি লাজার গপ্পোতা কি বলতে পালো"?

রূপকথা ওরা ছুঁয়ে দেখতে চায় । ছেঁড়া জামা, আধ পেটা খিদে নিয়ে ওরা নিজেদের একদিন রাজার মতো দেখতে চায়। শরণ্যা ওদের পক্ষীরাজের পিঠে চাপিয়ে মেঘের দেশে নিয়ে যায় প্রায়ই। এদেশে হাত বাড়ালেই চকলেট, আইসক্রিম, পোলাও, মাংস উপচে উপচে আসে। একমুখ তৃপ্তি নিয়ে ওরা ক্লাস সেরে যে যার বাড়ি ফিরে যায়।


বস্তির এরাস্তায় তেমন আলোর জোর নেই। আগের দিনের সেই জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়ে যায় শরণ্যা।

ওই যে দূরে মনে হচ্ছে লোকটা আজও দাঁড়িয়ে। শরণ্যা ঘামছে।

লোকটা ভয়ার্ত চোখে আস্তে আস্তে উল্টোদিকের ফুটপাথ ঘেঁষে এগিয়ে আসে।

শরণ্যার হাঁটার শক্তি নেই।

আগের দিন এই পাগলটাই হঠাৎ করে ওর মুখের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। ফিসফিস করে শুধু বলেছিল,

-- ফারজানা!

শরণ্যা ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। লোকটার খাঁকি ছেঁড়া প্যান্টটা নারকেলের দড়ি দিয়ে বাঁধা। গায়ের জামাটা শতচ্ছিন্ন।

রূপঙ্করের  এই এলাকায় বড়ো হওয়া। ও জানে পাগলটা কোনো একদিন এমন ছিলোনা। ভালোবেসেছিলো ফারজানাকে। প্রেম, স্বপ্ন, বিশ্বাস দফন করে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয় ফারজানাকে। না, কবুল ও করেনি। বিষ খেয়েছিল।

রিহান তাই আজ শুধু এলাকার এক পাগল। শরণ্যাকে দেখে ছুট্টে এসেছিল ওর কাছে, খুঁজছিল ওর মধ্যে যেন কাউকে। ওলটপালট করছিল পাগলটার দুটো চোখ।


আড় চোখে শরণ্যা দেখে সকালের পরে থাকা ইঁটটা সরিয়ে নিজের ছেঁড়া জামা দিয়ে রাস্তাটা পরিষ্কার করে দিচ্ছে পাগলটা।।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু