বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

পরকীয়া

"শর্মি আজও তোর এতো দেরী হলো? এখন কটা বাজে জানিস? আমার কথা না হয় নাই ভাবলি, কিন্তু তোর ঐ একরত্তি ছেলেটার কথা তুই ভাববি না? আর আমার নিলয়? সেও তো কতোক্ষণ ধরে তোর অপেক্ষা করে করে এখন নিজের ঘরে গেল। এখন তো আবার রাতটুকুও ওর সাথে থাকিস না"।


"মা তোমার ছেলে অনেক সময় দেরী করে বাড়িতে ফেরে। তুমি জিজ্ঞেস করলে বলে মিটিং ছিলো অফিসে। তাই মিটিং কথাটা নিশ্চয়ই তোমার শোনা আছে? আমারও তাই ছিলো। আর ছেলের দায়িত্ব শুধু আমার একার না। তোমার ছেলেরও। খিদে পেয়েছে আমার, মিটিং-এ কিছু খাওয়া হয়নি। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি"।


"দাঁড়াও শর্মি। আমি বা মা কখনই তো তোমার স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করিনি। চাকরি করা থেকেও আটকায়নি। বরং সবসময় উৎসাহ দিয়েছি তোমায়, পাশে থেকেছি তোমার। তবে কেন তুমি দিন দিন এতো বদলে যাচ্ছো? যে কোনো একটা অজুহাত দেখিয়ে তুমি বাড়ির বাইরে থাকার চেষ্টা করো। কেন? বাড়ির প্রতি, আমাদের প্রতি তোমার কোনো কর্তব্য নেই এখন? তুমি তো এত কর্তব্যপরায়ণহীন মানুষ ছিলেনা শর্মিলা"?


"আসলে কী জানো নিলয়, আমি না সংসার করতে করতে বোর হয়ে গেছি। তাই ঘরে থাকতে আমার আর ভালো লাগেনা। বাইরের পরিবেশে থাকলে আমি বেশ আনন্দে থাকি। ঘরে আসলেই তো তোমার পুরোনো হয়ে যাওয়া মুখটা দেখতে হয়, তাই বাড়ি আসতে ভালো লাগেনা। আর তাছাড়া আমি মনে করি জীবনের বদলটা কারোর একচেটিয়া নয়। সবার অধিকার আছে তাতে। যাই হোক, এতো রাতে তোমার লেকচার শুনতে ভালো লাগছেনা। তাই নিজের রুমে যাচ্ছি"।


নিলয় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। সে মেনে নিতে পারছেনা শর্মিলার এই আকস্মিক পরিবর্তনটাকে। মাকে কোনোরকমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে শুতে পাঠালো।


আট বছর হতে চললো নিলয় আর শর্মিলার বিয়ের। সম্বন্ধ করেই বিয়ে হয়েছিলো দুজনের। কিন্তু খুব একটা বেশী সময় লাগেনি পরস্পরের কাছে আসতে। শর্মিলার মতো শান্ত ও লক্ষীমন্ত বউমাকে নিজের মা -ছেলের সংসারে সাদর অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন নিলয়ের মা সুপ্রিয়া। খুব সহজেই বউমা থেকে মেয়ে হয়ে উঠেছিলো শর্মি। শান্ত সহজ সরল নিলয়ের নরম আদরে যখন ওর শরীরটা মোমের মতো গলে যেতো, তখন নিজেকে সবচেয়ে সুখী মনে হতো ওর। তারপর বুকাই এলো আরো সুখের সন্ধান নিয়ে। পুরো পরিবারটা হয়ে উঠলো এক স্বর্গরাজ্য।


কিন্তু এতো সুখ তো সয়না কারোর।তাই নজর লাগতেও দেরী হলো না। হঠাৎ করে শর্মিলার পরিবর্তন নিলয় আর সুপ্রিয়ার বড্ড বেশী করে চোখে পড়তে লাগলো। বুকাইয়ের এখন পাঁচ বছর বয়স। সুপ্রিয়ার নাতিকে নিয়েই বেশীর ভাগ সময়টা কেটে যায়। নিলয়ও অফিস থেকে ফিরে পরিবারকে যথেষ্ট সময় দেয়। অফিসের কাজে মাঝে মাঝে বাইরে যেতে হয়। আবার ফিরে এসেই চারজন মিলে কয়েকদিনের জন্য কোথাও ঘুরতে চলে যায়। নিলয় কোথাও কোনো ত্রুটি রাখেনি পরিবারের। তবে কেন শর্মিলার এই বদল?


"মা, একটা কথা ছিলো তোমার সাথে। বলছিলাম, বুকাই তো এখন অনেকটাই বড়ো। আর তোমার কাছে বেশ ভালোই থাকে ও। তাই কয়েকটা কোম্পানিতে অ্যাপ্লাই করেছিলাম। রিপ্লাইও এসেছে। কাল ইন্টারভিউ আছে। যদি চাকরিটা হয়ে যায়, তোমার কোনো অসুবিধা হবে নাতো"?


"দূর পাগলি। আমি তো আগেও তোকে কতোবার বলেছি বাইরে যা, লোকের সাথে মেলামেশা কর। চাকরি করতে চাইলে কর্। তুই নিজেই তো বারণ করেছিস। তোর নাকি চাকরি করতে ভালো লাগে না। ঘরই তোর ভালো। যাক এতোদিনে মেয়ের আমার মতি ফিরেছে। যা ইন্টারভিউগুলো দিয়ে আয়। কোনো চিন্তা করিসনা। আমি এদিকটা সব সামলে নেবো"।


"থ্যাংকস্ মা। তুমি খুব ভালো জানো তো মা"।


"তাই বুঝি? কিন্তু তোর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেন? বললাম তো বাড়ি নিয়ে তোকে ভাবতে হবেনা। হ্যাঁ রে, নিলু জানে তোর চাকরির ব্যাপারটা"?


"না মা বলিনি। সারপ্রাইজ দেবো। ঠিক মাঝে মাঝে যেমন নিজের অজান্তেই আমাকে সারপ্রাইজ দেয়"।


চাকরিটা হয়ে গিয়েছিলো শর্মিলার। অভীক রায়ের নজর কেড়েছিলো শর্মিলার স্মার্টনেস, গুছিয়ে কথা বলার ধরণ। শর্মিলাকে খুব কনভিন্সিং লেগেছিলো স্মার্ট, হ্যান্ডসাম অভীক রায়ের। প্রথম প্রথম সব ঠিকঠাক চলছিলো। কিন্তু ধীরে ধীরে বদলাতে থাকলো সবকিছু। শর্মিলার সাজ-পোষাক, নিলয়ের প্রতি আচার ব্যবহার সবকিছু। নিলয় জিজ্ঞেস করলেও কিছু বলতো না। কাছে আসলে দূরে সরিয়ে দিতো। ভালো করে দুটো কথাও বলতো না নিলয়ের সাথে। ওর বিশ্বাস বুকাই আর মায়ের জন্যই শর্মিলা সম্পর্কটা টিকিয়ে রেখেছে। না তো কবেই..


"মা, আমাকে কিছুদিনের জন্য অফিসের কাজে বাইরে যেতে হবে। তুমি বুকাইকে একটু সামলে রেখো। আমি কাজ সেরে তাড়াতাড়ি ফিরবো"।


"কিন্তু শর্মি বুকাইয়ের শরীরটা খুব একটা ভালো না। তুমি অফিসে বলে ছুটি নিতে পারবেনা? পরের বার না হয় যেও"।


"কিন্তু নিলয় বুকাইয়ের আগেও শরীর খারাপ হয়েছে। তখন তুমিও বাইরে গেছো অফিসের নাম করেই। তখন তো আমি তোমায় বাধা দেইনি। তবে তুমি কেন আমায় ছুটি নিতে বলছো"?


"কারণ তখন তুমিই আমায় যেতে বলেছিলে। বুকাইয়ের দেখাশোনা তুমি করতে পারবে বলেছিলে"।


"এক্সক্টলি নিলয়। আমারও সেই প্রশ্ন। আমি যখন তোমাকে বাধা দেইনি, তখন তুমি কেন দিচ্ছ আমায়? আমি মেয়ে বলে? একজন মা বলে? না তোমার স্ত্রী বলে? কোনটা"?


"তোমার সাথে তো কথাই বলা যায়না আজকাল। সবসময় তোমার কথা রেডি থাকে। এরকমভাবে চললে.."


"এরকমভাবে চললে কী নিলয়? ডিভোর্স দেবে আমায়? আমিও চাই সেটা। একটা কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ আমার। কিন্তু বুকাইয়ের ভবিষ্যৎ আর মায়ের কথা ভেবে এগোতে পারছিনা। যাক গে, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। আমি আসি। আর হ্যাঁ আরেকটা জিনিস, কথা শুধু আমার রেডি থাকেনা, তোমারও থাকে। আর আমার মনে হয় তুমিও আমার মতো বুকাইয়ের কথা ও মায়ের কথা ভেবে আমাকে ডিভোর্স দিতে পারছো না। তাই আমার এই বদলটা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই তোমার"।


"এতো ডেসপারেক্ট হয়ে গেছো তুমি শর্মি, আমি ভাবতে পারছিনা"।


শর্মিলা ট্রলি ব্যাগটা নিয়ে পায়ের স্টাইলিশ জুতোর হিল্ টায় গটগট আওয়াজ তুলে বেরিয়ে যাওয়ার পর নিলয় ভাবলো, না এভাবে চলতে পারে না। কালই ওর বাবা-মাকে ডেকে পাঠাতে হবে। ওর পরিবর্তনটা সবার চোখে ধরিয়ে দিতে হবে। না তো সংসারটা আমার ভেসে যাবে।


"কী হলো নিলয়, তুমি আমাদের ডেকে পাঠালে যে? কিছু হয়েছে নাকি? আপনি কিছু জানেন বেয়ান? শর্মি কোথায়"?


"একটু ধৈর্য্য ধরে বসুন। একটু পরেই জানতে পারবেন কেন ডেকেছি আমি আপনাদের"?


"নিলু কী হয়েছে আমায় বলনা। আর তুই এমন থম মেরে আছিস কেন? শর্মি আবার কিছু করেছে নাকি? আচ্ছা যদি কিছু হয়েও থাকে, আমরা নিজেদের মধ্যেই আলোচনা করে মিটিয়ে নিতে পারতাম। শুধু শুধু ওনাদের ডেকে আনলি কেন বাবা"?


"না মা, আমি আর পারছি না। শর্মির একটু শিক্ষা হওয়া দরকার"।


ইতি মধ্যেই শর্মিলা ঢুকলো ঘরে। মা-বাবাকে এখানে দেখে একটু অবাকই হলো। 


"কী ব্যাপার মা, তুমি আর বাবা এখানে কী করছো এখন? নিলয় ডেকেছে বুঝি? তা ভালোই করেছে। সবার সবটুকু জানা উচিৎ বলে আমি মনে করি। কতোদিন আর চেপে রাখবো? একদিন না একদিন তোমরা জানতে পারতেই"।


মাথা নীচু করলো শর্মিলা। "বুকাই কেমন আছে মা"?


"সেটা জানার আর তোমার প্রয়োজন নেই শর্মি। তুমি এই মুহূর্তে এই বাড়ি ছেড়ে তোমার বাবা-মায়ের সাথে চলে যাবে"।


"কিন্তু কেন নিলয়"? খুব শান্ত ভাবেই নিলয়ের কথার মানে জানতে চাইলো শর্মিলা।


"লজ্জা করেনা তোমার? আবার জানতে চাইছো কেন? কাল রাত্রে তুমি কোথায় ছিলে শর্মি"?


"কেন তুমি জানোনা আমি কোথায় ছিলাম"?


"খুব ভালো করে জানি। তাই সবার সামনেই বলছি সত্যিটা। কাল তুমি কলকাতাতেই ছিলে। তোমার বস কাম প্রেমিক অভীক রায়ের সাথে ফাইভস্টার হোটেলে ডিনার করছিলে? কী তাই তো? তুমি জানতে চাইছিলে না মা, শর্মিলা কেন হঠাৎ করে এভাবে বদলে গেলো? অভীক রায়ের সাথে তোমার বউমার অবৈধ সম্পর্কই এর কারণ। সেই কারণেই ওর আমাকে ভালো লাগে না। বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। এমনকী আমার সাথে এক রুমে থাকতেও তোমার আপত্তি। কী তাইতো শর্মি? কিন্তু আর নয়। এবার তোমাকে এ বাড়ি ছেড়ে যেতেই হবে"।


এতোক্ষণ ধরে নিলয়ের সব কথা শোনার পর শর্মিলা এবার কথা বললো, "বেশ চলে যাবো আমি। কিন্তু আমার সাথে বুকাই আর তোমার মাকেও নিয়ে যাবো"।


"হা হা হা! হাসালে শর্মি। বুকাইয়ের কথা ছেড়ে দিলাম, আমার মা নিজের ছেলেকে ছেড়ে অন্যের মেয়ের সাথে গিয়ে থাকবে। অভীক রায়ের সাথে প্রেম করে তোমার মাথাটাই খারাপ হয়ে গেছে দেখছি"।


সুপ্রিয়া দেবী আর সহ্য করতে পারছিলেন না। ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটলো তাঁর।


"চুপ কর তোরা। চুপ কর। নিলু কী বলছে শর্মি এসব? তুই কাল রাতে কলকাতাতেই ছিলি? বল চুপ করে আছিস কেন? এমনটা করতে পারলি তুই আমার ছেলের সাথে? যে কিনা তোকে এতোদিন ধরে মাথায় করে রেখেছে, এতো যত্ন করেছে, কোনো অভাব রাখেনি তোর। তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে বিবেকে বাঁধলোনা?


"না মা মাথায় করে রাখেনি তোমার ছেলে। মাথায় রাখার অভিনয় করে পায়ের তলায় রেখেছে আমায়। বিশ্বাসঘাতক আমি না মা, বিশ্বাসঘাতক তোমার ছেলে"।


"কী বলতে চাইছো তুমি? নিজের কুকীর্তি সবার সামনে ধরা পড়ে গিয়ে এখন আমাকে দোষারোপ করছো? দেখো মা দেখো। আপনারাও দেখুন, আপনাদের মেয়ে কতো নীচে নেমেছে"?


"ময়ূরীকে চেনো নিলয়"?


"কে...কে...ময়ূরী? আ..মি চিনিনা ময়ূরী নামের কাউকে"।


"এতো ঘাবড়ে গেলে কেন নামটা শুনে? যার সাথে গত ছয়মাস ধরে সবার আড়ালে উঠছো-বসছো, অফিসের নাম করে ঘুরতে চলে যাচ্ছো, নামী-দামী রেস্তোরাঁয় লাঞ্চ ডিনার করছো আবার আমার মতো শাড়িও গিফ্ট করছো। আর তুমি বলছো ময়ূরীকে চেনোই না। স্ট্রেঞ্জ"!


শর্মিলার কথায় সবাই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ভালো মানুষের রূপ নিয়ে চরিত্রহীন নিলয়ের দিকে।


"দে..খো শর্মি তুমি কিন্তু নিজেকে সতী প্রমাণ করার জন্য আ..মার নামে মিথ্যে এলিগেশন আনছো। আমি কিছুতেই তা মেনে নেবো না। দে..খো মানলাম তুমি আ..বেগের বশে একটা ভুল করে ফেলেছো, কিন্তু আমরা তোমায় একটা সুযোগ দিতে পারি। তুমি যদি নিজেকে বদলে নাও, কথা দাও এ..মন ভুল আর করবে না, তাহলে তুমি এবাড়িতে থাকতে পারো। কী ব..লো মা"?


"হা হা হা! তুমি দেবে আমায় সুযোগ? আমার বদলাবার দিন এবার শেষ নিলয়। নিজেকে বদলে বদলেই তো নিজের সর্বনাশ করেছি। মুখ বুজে থেকেছি শুধু ছেলেটার আর তোমার মায়ের মুখের দিকে চেয়ে। আজও থাকতাম। ভেবেছিলাম তোমার চোখের সামনে আমাকে বদলে যেতে দেখলে, তুমি নিজের বদলটাও বুঝতে পারবে, কিন্তু না, তুমি সেই মানুষ না। তুমি একজন লোক দেখানো চরিত্রবান মানুষ। যে কিনা ঘরের বাইরে সবার চোখে ধুলো দিয়ে অন্য মহিলার সাথে ফূর্তি করবে আবার বাড়িতে এসে ভালো মানুষটি সেজে পরিবারের সব কর্তব্য পূরণ করবে। কি সুন্দর ব্যালেন্স রেখে খেলো গো তুমি। অলিম্পিকে গেলে ব্যালেন্স বীমে তুমি জিতবেই জিতবে"।


"শর্মি তুমি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছো.."


"চুপ একদম চুপ। সব প্রমাণ আছে আমার কাছে। তোমার হোটেলের বিল, রেস্তোরাঁর বিল সব আছে। সব তোমার পার্স থেকে পেয়েছি। কী ভেবেছিলে, শর্মি তো আমার পার্স ঘাটে না, তাইতো? নির্লজ্জ কোথাকার। অন্যায় করে আবার বড়ো বড়ো কথা। আর সবথেকে বড়ো প্রমাণ আমি। ছেলের সামনে সিগারেট খাওয়াটা ঠিক নয় বলে যেদিন ছাদে গিয়ে তোমার প্রেমিকার কাছে কাঁদুনি গাইছিলে, আমার পুরোনো হয়ে যাওয়া মুখ তোমার আর ভালো লাগে না, তাই তুমি বাইরে থাকতেই বেশী আনন্দ পাও, সংসারটা বড্ড বোরিং হয়ে গেছে? সেদিন নিজের কানেই আমি সব শুনেছি। তোমার পিছনে গোয়েন্দাগিরি করতে নয়, নিজেকে ভুল প্রমাণ করতেই গিয়েছিলাম। ছিঃ"।


শর্মির কথাগুলো শুনে মুখ কালো হয়ে যাওয়া নিলয় মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, "মা, মানলাম আমি না বুঝে একটা ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু শর্মিও তো ভুল করেছে বলো। ওতো ওর বসের সাথে নোংরামি.." 


নিলয়ের কথা শেষ করতে না দিয়েই শর্মি নিলয়ের গালে পাঁচ আঙুলের চিহ্ন বসিয়ে দিলো। নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলো, "মা তোমার অভীকদাকে মনে আছে? আমার কলেজের সিনিয়র ছিলো? প্রায়ই আমাদের বাড়ি আসতো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কুহেলীর সাথে"?


"হ্যাঁ মনে থাকবেনা কেন? এইতো সেদিন আমায় ফোন করে কতো খোঁজ খবর নিলো আমাদের। বউকে নিয়ে আসবেও বললো একদিন। কিন্তু তোর কথা জিজ্ঞেস করলোনা"।


"করবে কী করে মা? অভীকদা আর কুহেলী সবটাই জানে। তাই আর জিজ্ঞেস করেনি আমি কেমন আছি। আমি অভীকদার অফিসেই চাকরি করি মা। অভীকদাই প্রথম দেখেছিলো নিলয় আর ময়ূরীকে এক সাথে এক হোটেলে। অভীকদার মিটিং যেই হোটেলে হয়, সেখানে অন্যান্য কোম্পানিদেরও হয়। নিলয়ের মিটিং ও সেখানেই.."


"কিন্তু শর্মি নিলুকে চিনলো কী করে তোর বস"?


"আমিই তোমাদের সবার ছবি দেখিয়েছিলাম"। আর বলতে পারলো না শর্মি। কান্নায় ভেঙে পড়লো।


"কিন্তু কাল রাতে তুই তোর বসের সাথে হোটেলে কী করছিলি? তোর তো কলকাতার বাইরে থাকার কথা"।


"কালকের মিটিংটা ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছিলো মা। আমি বাড়ীতেই ফিরছিলাম। কিন্তু অভীকদা আর কুহেলী এতো জোর করলো যে ডিনারে যেতেই হলো। আর সেখানেই নিলয় আমাকে দেখে। কারণ ও ময়ূরীর সাথে একই হোটেলে ডিনার করতে গিয়েছিলো। ভেবেছিলো আমি ওকে দেখতে পাইনি। কিন্তু নিলয় তুমি শুধু আমাকে আর অভীকদাকেই নোটিশ করেছো। অভীকদার পাশে বসে থাকা ওর স্ত্রী কুহেলীকে দেখোইনি। ভেবেছিলাম ডিনার সেরে বাড়ি ফিরবো। ছেলেটার শরীর ভালো নেই। কিন্তু অনেক রাত হয়ে যাওয়ায় কুহেলী আমায় ছাড়লোনা। একরকম বাধ্য হয়েই ওদের বাড়ীতে থেকে গেলাম। আর তাছাড়া তুমি থাকতে আমি বুকাইয়ের জন্য চিন্তা করি না মা"।


"নীলু তাই কাল রাতে তুই এতো দেরী করে বাড়ি ফিরেছিলি। বললি শরীর আর মন কোনোটাই ভালো না, তাই খাবো না। আর আমিও সরল মনে.."


"বিশ্বাস করো মা আমি.."


এবার সুপ্রিয়াও আর চুপ করে থাকলেন না। এক চড়ে নিজের ছেলের আরেকটা গালও রাঙিয়ে দিলেন।


"শর্মি আমায় একটু সময় দে। আমার জিনিসগুলো গুছিয়ে নি। তুইও তোর আর বুকাইয়ের জিনিস গুছিয়ে নে। একটু পড়েই বেরোবো"।


"মা মা আমাকে ছেড়ে তোমরা যেওনা মা, আমি থাকতে পারবো না। শর্মি তুমি মাকে একটু বোঝাও। তুমি বললেই মা ঠিক বুঝবেন"।


"আজ থাক্ নিলয়। অনেক বড়ো আঘাতটা পেয়েছেন তো। একটু সময় লাগবে..তুমি বরং নিজেকে বদলাও, মায়ের যোগ্য ছেলে আর বুকাইয়ের যোগ্য বাবা হয়ে ওঠো। দেখবে ওনারা ফিরে আসবে"।


"আর তুমি শর্মি"? নিলয়ের অসহায় আর লজ্জিত চোখ দুটো দেখে শর্মি মিথ্যে আশ্বাস দিতে পারলো না। অনেক কষ্টে নিজেকে বদলেছে। আর পারবে না।


"ভালো থেকো নিলয়। আজ আসি"।


                                                                               সমাপ্ত




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু