বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ব্রাত‍্য

"ব্রাত‍্য"


#শর্মিষ্ঠা মজুমদার(নূপুর )#


বহ্নি আজ খুব সুন্দর করে সেজেছে।খোপায় ওর প্রিয় বেল ফুলের মালা।পরনে একটা লাল পাড় সুন্দর ঢাকাই জামদানি।কপালে ছোট্ট টিপ।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক। বেশি সাজতে লাগে না বহ্নিকে।ও এমনিতেই বড় সুন্দর।


আজ তার ভালোবাসার মানুষটার সামনে গান গাইতে হবে।বহ্নির গলা খুব ভালো।বেশ নামডাকও আছে।নিখিলেশ মুখার্জি বেশ অল্প কদিনেই সাহিত্য জগতে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।এই কয়েক বছরে তার লেখা বহু মানুষের মনে ঘর করে নিয়েছে।


কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এমন জনপ্রিয় মানুষটাকে কেউ আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি।তিনি প্রকাশক ছাড়া কারোর সাথে দেখা করেন না নাকি।এমনকি কারো সাথে মেশেন না।তার বাড়ির ঠিকানা দূরে থাক,লোকটার একটা ছবি আজ পর্যন্ত কেউ দেখে নি।


লোকটা হঠাৎই যেন ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হয়ে সমস্ত জয় করে নিয়েছেন।বহ্নি রাতে যখন ওনার লেখা গল্পগুলো পড়েন মনে হয় তার উদ্দেশ্যে লেখা।সেই ই নায়িকা।এরকম নাকি সবাই সম্মোহিত হয়ে পড়ে ওনার লেখা।এমনকি যুবা সম্প্রদায়ের কাছেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন তিনি।


আজ সকাল থেকেই বহ্নির পাড়ার সাংস্কৃতিক মঞ্চে লোক উপছে পড়ছে। এই প্রথম ধরা দেবেন তাদের প্রিয় লেখক।শহরের এতো বড় বড় অনুষ্ঠানে তাকে আমন্ত্রন করা হয়েছে।কিন্তু তিনি কোথাও যান নি।হঠাৎ বহ্নিদের মতো পাড়ায় তিনি আসতে রাজী হলেন শুনে সবাই অবাক।


রজতও অনেকক্ষণ ধরে ভীড় ঠেলে ভেতরে আসার চেষ্টা করছে। রজতও লেখালেখি করে।বহ্নির প্রেমে পাগল।বহ্নিকে কয়েকবার প্রেমও নিবেদন করেছে। বহ্নি প্রত‍্যাখান নয় রীতিমতো অপমান করে বিদায় জানিয়েছে‌।এখন আর জ্বালায় না ওকে।ওকে দেখলেই বড় বিরক্ত হয় বহ্নি।


আজ নিজ থেকেই এগিয়ে এল বহ্নি। আজকেও পোষাক দেখ লোকটার।কেমন ভিখারী গোছের।আলখেল্লা পাঞ্জাবী।ঝোলা ব‍্যাগ।কতদিনের না কাটা দাড়ি। এলোমেলো চুল।শুধু মুখটা কেমন মায়া ভরা।আর চোখে কেমন ঘুমধরা নেশা।


বহ্নি হেসে ঠাট্টা করে বলল " ঠেলাঠেলি করে কি লাভ।দেখছেন তো ভেতরে তিল ধারণের জায়গা নেই।বরং বাইরে দাঁড়ান।মাইকে ঠিক ওনার বক্তব্য শুনতে পারবেন।"


রজত কি একটা বলতে গিয়েও চুপ করে যায়।হেসে বলে "আচ্ছা সেই ভালো। আমার মতো লোকেরা এখানে ব্রাত্য।"


মাথা নিচু করে রজত বাইরের দিকে পা বাড়ায়।তখনই শোরগোল পড়ে যায় " এসে গেছেন। এসে গেছেন।" ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। গাড়ি মঞ্চের পাশের দরজায় এসে দাঁড়ায়।সবাই রব তোলে " কোনটা, কোনটা।"


এদিকে প্রকাশক গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক তাকান। পাড়ার উদ‍্যোক্তাদের বলেন " সেকি দাদা যে বললেন, ঠিক সময়ে চলে আসবেন।সময়ের খুব হিসাবী তিনি।"


সবার মধ্যেই তখন গুঞ্জন।"আর আসবে না রে।"

কেউ কেউ বলছে " এমনই হয় একটু নাম হলেই লোকে নিজেকে ভগবান ভাবে।"


হঠাৎ এই সময় প্রকাশক ব‍্যক্তি চিৎকার করে বললেন " এই তো দাদা।জানতাম আপনার কথার নড়চড় হবে না। আসুন আসুন।"


বহ্নি অবাক হয়ে দেখলো হৈচৈ পড়ে গেল মূহুর্ত্তের মধ্যে। রজতকে প্রায় মাথায় করে নিয়ে যাওয়ার মতো সবাই ঘাড়ে করে মঞ্চে পৌঁছে দিল।ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে পাগল ছেলেটার আলখেল্লা পাঞ্জাবীটা।


সম্বোধনা পর্ব কোথা দিয়ে যে কেটে গেল।বহ্নির কানে শুধু জন সমুদ্রের করতালি বাজছে।হঠাৎ আনন্দ এসে বলল "কিরে, মাইকে তোর নাম ঘোষনা করল।যা গানটা কি গাইবি না।"


বহ্নি একবার তাকিয়ে দেখল সব ফুলের মালা গলা থেকে খুলে হাসি হাসি মুখে বহ্নির দিকে তাকিয়ে রজত। যেন বোবা দৃষ্টি দিয়ে বলছে " এখনো কি যোগ্য নই।




"বহ্নি মাথা থেকে বেল ফুলের মালাটা খুলে রজতের দিকে এগিয়ে গিয়ে পড়িয়ে দিল।মাথা নিচু করে মাইকের সামনে গিয়ে গান ধরল " চরণ ধরিতে দিও গো আমারে, নিও না, নিও না ফিরায়ে ।"


স্বত্ব সংরক্ষিত#


রচনাকাল✍ ২৯ শে জুন ২০১৮





পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু