ঝামেলা
"ঝামেলা "
#শর্মিষ্ঠা মজুমদার(নূপুর)#
"খেয়েছিস, খাসনি তো।যা খুশি তাই কর।" রেগে অভি মেসেজটা লিখে ফোনটা নামিয়ে সিগারেট ধরায়।
জানে এ সময় হাজার মেসেজ লিখলেও উত্তর মিলবে না ঝামেলার কাছ থেকে।
গত চার বছর ধরে নিশাকে ঝামেলা বলেই ডাকে অভি।ঝামেলা করেই আলাপ ফেসবুকে।অভি আর নিশার।
অভিই আলাপটা শুরু করে " এতো দুঃখ কিসের আপনার। সারাদিন ফেসবুকে কেঁদে যান।"
হেসে নিশা বলেছিল "কে পড়তে মাথার দিব্যি দিয়েছে আপনাকে।"
অভি বলেছিল "কী করি বলুন এক তো ফেসবুক খুললেই আপনার লেখা।ভালো লেখেন।হজম করে নি। কিন্তু ঐ মেয়েদের কান্নাটা ঠিক সহ্য হয় না। সারাদিন দুঃখের পোস্ট।"
নিশা হেসে বলেছিল "করবেন না একদম।হয় আনফ্রেন্ড করুন।নয় ব্লক মারুন।"অভি অনেক দিন আর কথা বলেনি নিশার সাথে।ভেবেছিল খুব দেমাক।
হঠাৎ ওর জন্মদিনে ওর টাইম লাইনে ভেসে ওঠে নিশার শুভেচ্ছা বার্তা।আর একটা সুন্দর কেকের ছবি।বাধ্য হয়ে ধন্যবাদ জানায় অভি।
সেই থেকে পরিচয় সম্পর্কটা এখন তুই তে উত্তীর্ণ।
হঠাৎ ফোন স্কিনে ভেসে ওঠে নিশার মেসেজ "তুই খেয়েছিস।খেয়ে নে।"
অভি একটা হাসির স্টীকার দিয়ে লেখে "আজকে আবার ঝামেলা বাঁধিয়েছিস। নইলে এগারোটার আগে তো মেসেজ করিস না। আমার ফোন করাও নিষেধ এগারোটার আগে।"
ব্যাস আগুনে ঘি, মেসেজ ভেসে ওঠে " হ্যাঁ মেয়েরা তো খারাপ। তোরা ছেলেরা তবে আসিস কেন মেয়েদের পিছনে।"
অভি জানে মেয়েটা খেপী।তাই কথা বাড়ায় না। সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করে।না, এগারোটার আগে আর মেসেজ আসবে না।
অধীর আগ্রহে এগারোটা বাজতেই ফোন করে "হ্যাঁ রে খেয়েছিস রে।খেয়ে নে।আমি পরে শুনছি কি ঝামেলা পাকালি।"
নিশার উত্তর নেই।এবার অভি রেগে যায় "তুই খাবি না আমি ফোন রাখবো।"
শুধু "হু" টুকু কানে আসে অভির।জানে নিশা খাচ্ছে।এই এক আজব মেয়ে।এবার সারারাত ঝামেলাকে নিয়ে ঝামেলা।কাল অফিসে মিটিং।তাড়াতাড়ি যেতে হবে।কিন্তু এখন মেয়েটা পাগলের মতো বকবে।আবার কথা না বললে কত দিন যে রেগে কথা বন্ধ করে থাকবে।
হঠাৎ ওপাশ থেকে নিশার কন্ঠস্বর ভেসে আসে "অরি, শুনছিস "
অভিকে অরি বলে ডাকে নিশা। বললেই বলে "তুই তো আমার জন্মের শত্রু।"
অভি বলে "হু ,কিন্তু তোর বুদ্ধি হবে কবে বলতো।কেন ফালতু ঝামেলা বাঁধাস। যে যা বলছে বলতে দে না।"
ফেসবুকে নানারকম বিষয় নিয়ে লেখে নিশা।আর ওই নিয়ে প্রত্যেক দিন কারো না কারো সাথে মতপার্থক্য ঝামেলা।
"ভালোবাসি" নিশার ভেসে আসা কন্ঠস্বরটাকে শুনে অবাক হয়ে যায় অভি।এমন তো হবার কথা না।অন্য সময় ঝড় বয়ে যায়। কেন বলবে।যুক্তিতে পারে না কেউ তাই উল্টো পাল্টা বলে।।মেয়েরাখারাপ তো মেয়েদের সাথে মেশারই বা দরকার কি?" এই সব।
কিন্তু অপ্রত্যাশিত "ভালোবাসি" কথাটা শুনে কি বলবে ভেবে পায় না। হেসে বলে সে তো বুঝলাম "কাকে আবার ভালোবাসিস।কার সর্বনাশ ঘটালি।"
ঝামেলা নিরুত্তর।
অভি বলে "বল বল, আমার কাছে তোর আর লজ্জা কি?"
কিন্তু কোথায় যেন মনে কাঁটা বেঁধে।এই পাগলীটাকে বড্ড ভালোবাসে।কতবার রাগ ভাঙাতে রাত ভোর হয়ে গেছে।রাগলে মাথার ঠিক থাকে না।কিন্তু এমনিতে ছেলেমানুষী যায় না।
ওপাশ থেকে ভেসে আসলো "বুঝলি, ঝগড়া করি কিন্তু আজ বুঝলাম তাকে সত্যিই ভালোবাসি। ভাবছি বিয়েটা করে নেব।"
অভি জানে ঝামেলা কোনদিন তাকে বিয়ে করবে না ।এর আগে অনেকবার বলেছে। ঝামেলা রাজী হয়নি। তাই উদাস গলায় বলে "বেশ,আমায় কি করতে হবে বলিস।করে দেব। আর বিয়ের পর তোর বরকে বলিস তোর রাগ সামলাতে। আমার আর দরকার হবে না।"
হঠাৎ নিশা গম্ভীর গলায় বলে "বিয়ের সাথে আমার রাগ ভাঙানোর সম্পর্ক কোথায়? ওটা তোর উপরই থাকবে।"
অভি রেগে উঠে বলে "কেন? সারাজীবন তোর রাগ ভাঙানো ছাড়া আমার কি কাজ নেই। ফোন রাখ আমার অফিস আছে কাল সকালে।"
বলে ফোনটা কেটে শুয়ে পড়ে।নিজেকে কেমন বঞ্চিত, নিঃস্ব লাগছে।
হঠাৎ ফোনটা আবার বেজে ওঠে।জানে না ধরলে পাগলীটাকে সামলানো মুশকিল হবে।কাল বাড়ি এসে চুলের মুঠি ধরে টানবে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফোনটা ধরে।ওপাশ থেকে ভেসে আসে উত্তপ্ত আওয়াজ "ফোনটা তোকে কাটতে বলেছিলাম?কাটলি কেন? শোন তুই আমার বরের একটা ভালো দেখে পাঞ্জাবি কিনে আনিস।মন্দিরে বিয়ে করবো।তোকে লাগবে বিয়ের দিন।একদম সাধারণ ভাবে বিয়েটা করবো।"
অভি রেগে বলে "আমার সময় নেই।তোর বরকে কিনতে বল।আর তোর বিয়েতে আমি যাব না।তুই যেখানে ঝামেলা সেখানে।"
হঠাৎ ওপাশ থেকে ঝামেলার হাসির আওয়াজ ভেসে আসে।এদিকে অভির বুকে হাতুড়ি পিটছে কে।রেগে বলে "ফোন রাখ। কাল আমায় তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।"
নিশা হেসে বলে "পাঞ্জাবি কিনলেই হবে না।ওটা পড়ে তুই বিয়ের পিড়িটায় বসিস।"
অভি এখনও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।চিৎকার করে ওঠে ফোনেই "মানে?"
নিশা হাসতে হাসতে বলে "এই ঝামেলাটা তোর কাঁধেই চাপবে।তোর বুকে মাথা রেখে গল্প লিখবে।আর তুই খাইয়ে দিবি।রোজ কষ্ট করে আর জিজ্ঞাসা করতে হবে না , "খেয়েছিস রে"।বুঝলি হতভাগা।"
ফোনটা অনেক্ষন আগে কেটে গেছে।তবু ফোনটা কানে ধরে বসে অভি।ঝামেলা আর নিজেকে নিয়ে গভীর স্বপ্নে বিভোর।এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ঝামেলা শুধু তার।একান্ত নিজস্ব।
স্বত্ব সংরক্ষিত#
রচনাকাল✍ ১লা জুলাই ২০১৮
