বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

অন্তের মুখে- শেষ পর্ব

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯

দুপুর ২:৪০,

প্রনয় জিজ্ঞাসা করল গগনকে, "দুপুরে কী খেতে চাও?"

গগন মৃদু হেসে বলল "গরীবের পেট দাদা। যা পেট ভরায়, তাই খেতে চায়।"

"ভাত নাকি রুটি?"

"ভাত খাব। পেটে অনেক দিন ভাত পড়েনি।"

"ঠিক আছে।" বলে প্রনয় ৫০টাকা গগনের হাতে দিল।

গগন টাকাটা নিয়ে জিজ্ঞাসা করল, "এত টাকা কী হবে দাদা?"

"মাছ-ভাত খেয়ে এসো।"

"না, না দাদা। ডাল-ভাত হলেই চলবে।"

"আরে, খেয়ে এসো তো। যেটা বলছি সেটা করো।"

গগন হেসে বলল, "আপনার মনটা খুব বড়ো দাদা। একদিন আপনি অনেক উন্নতি করবেন। এই গরীবের কথা ফ্যালনা যাবে না।"

"হয়েছে। যাও খেয়ে এসো। বেলা হলো।"

"আসছি দাদা তাড়াতাড়ি।" বলে গগন বেরিয়ে এলো দোকান থেকে।

বিল্ডিং'এর উল্টোপাশের ভাতের হোটেলে এসে সে বলল, "একটা মাছ-ভাত দাও।"


দুপুর ৩:১০,

গগন খেয়েদেয়ে বিল্ডিং'এ ঢুকতেই মুখোমুখি একজনের সাথে ধাক্কায় সে পড়ে যেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিল। যার ধাক্কায় সে পড়ে যাচ্ছিল, সে ইলেক্ট্রিসিয়ান সুশান্ত।

"আরে, মাফ করবেন। আপনার লাগে নি তো?" সুশান্ত জিজ্ঞাসা করল গগনকে।

গগন বিরক্ত হয়েই বলল, "দেখে চলতে পারে না?"

"আসলে একটু তাড়া আছে। মানে, কাজের তাড়া। এখানে একটা অফিসে কাজ করতে এসে মোবাইল ফেলে চলে যাচ্ছিলাম। ওটাই নিতে আবার ঢুকতে হয়।"

"আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে।"

"আপনার লাগে নি তো?"

"না, আমার..." বলতে গিয়ে থামল গগন। মুহূর্তেই আবার জিজ্ঞাসা করল, "মাটিটা কাঁপছে না? ভূমিকম্প নাকি?"

সুশান্ত অল্প বোঝার চেষ্টা করে বলল, "হ্যাঁ, কাঁপছে। মনে হচ্ছে, ভূমিকম্প। বাইরে..."

হুড়মুড় করে বিকট শব্দে ভেঙে পড়ল বউবাজারে আস্ত একটা বিল্ডিং। চারদিকে ধুলোয় ছড়াছড়ি। আর্তনাদ, চিৎকার, কান্নার শব্দ। প্রত্যক্ষদর্শীরা হতভম্ব।


দুপুর ৩:৪৫,

খবরের চ্যানেলে বিল্ডিং ভেঙে পড়ার খবর দেখামাত্র জয়ের মা ফোন করলেন তাড়াতাড়ি জয়কে। সেও তো এই বিল্ডিং এই গিয়েছিল ইন্টারভিউ দিতে। ফোনটা রিং হতে হতে কেটে গেল। উনি আবার ফোন করতেই যাবেন, এমন সময় কলিং বেলের শব্দ। তাড়াতাড়ি দরজা খুলে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললেন।

"ভগবানের অশেষ কৃপা যে, তুই ঠিক আছিস।"

"আমার কী হবে মা?"

"তুই যেখানে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলি, ওই বিল্ডিংটা ভেঙে পড়েছে।"

জয় হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞাসা করল, "কী বলছ?"

"হ্যাঁ রে। খবরে দেখাচ্ছে।"

জয় তাড়াতাড়ি কাঁধের ব্যাগ মেঝেতে নামিয়ে রেখে টেলিভিশনের সামনে এসে দাঁড়াল। খবরে এখনো ওই খবরই দেখাচ্ছে।

জয়ের মা ভগবানের উদ্দেশ্যে হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে বললেন, "একটুর জন্য রক্ষা পেয়েছিস আজ তুই।"

"কিন্তু মা, আমার চাকরিটা হলো না..."

"অন্য চাকরি..."

"এট হয়ে যেত মা। কত আশা ছিল। আবার নতুন করে..."


বিকাল ৪টা,

খবর পড়া শেষ করে জয়িতা ফোন করল অভীককে। ফোন সুইচ অফ বলছে। আবার ফোন করল অন্য নম্বরে। এটাও তাই।

হঠাৎ একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন ঢুকল জয়িতার ফোনে। সে ফোন ধরে বলল,

- হ্যালো।

- আমি সঞ্জীব বলছিলাম ম্যাডাম। অভীক স্যারের আন্ডারে কাজ করি।

- ওহ আচ্ছা। অভীক তোমার সাথে আছে? একটু ওকে ফোনটা দেবে? সুইচ অফ বলছে।

- ম্যাডাম, স্যার তো...

- স্যার কী? কোথায় অভীক?

- আমরা বউবাজারে ভেরিফিকেশনে এসেছিলাম।

- হ্যাঁ বলছিল ও।

- যে বিল্ডিং'এর দোকানে ভেরিফিকেশন চলছিল, সেটা ভেঙে পড়েছে ম্যাডাম। আমি উল্টোপাশের একটা দোকানে সিগারেট খেতে আসি। ঠিক সেই সময়েরই ঘটনা। আমার চোখের সামনে...

- মানে, এইমাত্র যে বিল্ডিংটা ভেঙে পড়েছে, ওটাতে অভীক ছিল?

- হ্যাঁ, ম্যাডাম...

জয়িতার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। যে খবর এতক্ষণ সে নিজেই এক্সক্লুসিভ পড়ছিল। সে খবরের পেছনে তার নিজের স্বামীর মৃত্যুও লেখা।


(সমাপ্ত)


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু