বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

#আজি_বসন্ত_জাগ্রত_দ্বারে


#সুজাতা_দে


 জলি ম্যডামকে দেখলেই কেমন ভালোলাগায় ছেয়ে যায় প্রতীকের মন। জলি ম্যামের কিউবকিউলটা একেবারে প্রতীকের মুখোমুখি নাহলেও একটু সাইড ঘেঁষা। তবে অনেকটাই সামনা সামনি।  মুখ তুললেই ম্যামের সাথে সারাদিনে চার ছয় বার চোখাচোখি হয়েই যায়। আর তখনই প্রতীকের কেন জানি  মনটা একেবারে হালকা ফুরফুরে রোমান্টিক হয়ে ওঠে। নামে  যেমন জলি কাজে আর ব্যবহারেও খুব জলি আর হাসিখুশি উনি। কোম্পানির সিনিয়র ইনচার্জ হয়েও সবার সাথে মেজাজ না হারিয়ে ট্যাক্টফুলি কাজ আদায় করে নিতে জানেন।

জলি ম্যাডাম না আসলে অফিসটাই কেমন ফাঁকা লাগে প্রতীকের। 


কন্ট্রাক্টচুয়াল কম্পিউটার প্রোগ্রামার হিসাবে সদ্য জয়েন করা জুনিয়র প্রতীকের বয়স তিরিশের আশেপাশে। জলিও দেখছে প্রতীকের চোখে ভালো লাগার রঙীন ঘোর। সারা জীবন পুরুষের প্রশংসা পাওয়া সুন্দরী ফর্সা জলি পাত্তা দেয় না জুনিয়র প্রতীককে। পঞ্চাশোর্ধ জলিকে দেখে চল্লিশের বেশি মনে হয় না।

 কলেজে পড়া দুই মেয়ে,ডাক্তার  বর আর সংসার অফিস সামলেও অসাধারণ সব পেন্টিং করে জলি। ছোটো থেকেই আঁকাটা ওর প্যাশন। তুলি ক্যানভাসের সাথেই ওর প্রথম প্রেম। 

প্রায় সাড়ে ছয় ফুট লম্বা পেটানো চেহারা আর খয়েরি চোখের প্রতীককে ওর আঁকার মডেল হিসাবে বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়। ভাবে ওকে মডেল হবার অফার দেবে কিনা। যদিও যেচে  মুখ ফুটে এসব কাউকে বলা যায় না।

 বিশেষ অফিসে দু একজন ছাড়া ওর আঁকার এই শখের কথা কেউ জানেই না। তাই বোধহয় বার বার চোখ পড়ে যায় প্রতীকের দিকে। প্রতীক কিভাবে নেয় কেজানে। প্রতীক ওদিকে জলি ম্যামের প্রেমে হাবুডুবু। সেদিন জলি ওর থেকে বয়সে একটু সিনিয়র বোসদাকে বলে -"আর তো হয়ে এল বোসদা,আপনার কবে যেন রিটায়ারমেন্ট?" বোসদা বলেন -তোমাদের তো অনেকদিন আছে জলি আমার তো আর চার বছর মোটে। আরে আমিও তো আপনার পিছনেই আছি।

-সেকি! তুমি তো আমার চেয়ে অনেক ছোট জলি।

-ছোট আর কতো,ওই তো আপনার চার বছর পরেই নাম এসে যাবে আমার। 

প্রতীক খুব অবাক হয়ে শুনছে ওদের কথোপকথন। মনে মনে বলে প্রতীক, তোমাকে তো চল্লিশের বেশি লাগেইনা জলি।আমি তো ভেবেছি পঁয়ত্রিশ। হয়তো আমার চেয়ে দুচার বছরের ছোট-বড়ো হবে তুমি। কেন জানালে আমাকে এসব? তুমি তো এখন আমার রাতে স্বপ্নের সাথী আর এখন আমার  স্বপ্নদোষেও তো ঢুকে পড়েছো অবলীলায়!  ঠিক আছে যাও আর তাকাবো না তোমার দিকে।


কদিন তাকায় না আর প্রতীক। চোখ নামিয়ে রাখে জলির সাথে কথা বলার সময়। সেদিন কি কারণে অফিসে আসেনি। ওর অনুপস্থিতিতে জলির মনটাও উসখুশ। কি হলো বিনা নোটিশে  আসেনি কেন ছেলেটা;কে জানে! শরীর ভালো তো?

তবে কি জলি প্রেমে পড়ে গেল ওর?

ধুসস কি সব ভাবছে এসব আবোলতাবোল।


কদিন আর তাকায় না প্রতীক। কিন্তু ওর বয়সী  রাখী আর ফারহার সাথে খুব হেসে হেসে কাজের বাইরেও কথা বলছে আজকাল। কম কথা বলা ছেলেটাকে কদিন কথায় পেয়েছে। মিস ম্যাচ করা ড্রেস প রলেও জলি জাঙ্ক জুয়েলারিতে সেগুলো মেক আপ  হয়ে যেত।  আজকাল বড়ো সাদামাটা পোষাক পরে আসছে জলি। কপালে একটা টিপ ও পরছে না। জলির  হাসিটাও ইদানীং কমে গিয়ে গাম্ভীর্য দেখা দিয়েছে।


আজ প্রতীক এবসেন্ট। মনটা ভারী হয়ে আছে জলির।কাজের চাপ টাও আজ কিছু কম।

জলি  টিফিন টাইমে  ফেসবুক খুলতেই নতুন কিছু  মেসেজ পেল ফ্রেন্ড রিকুর।

কি নাম রে বাব্বা! "বসন্ত জাগ্রত দ্বারে"। বেরিয়ে যেতে গিয়েও চোখ আটকে গেল  কভার ফটোয়..আরে এ তো তার জুনিয়র প্রেমিক, প্রতীক!

যাচ্চলে, মৃদু হেসে খুউব খুশি হয়ে ফ্রেন্ড রিকুটা এক্সেপ্ট করে নিল জলি। কোথা থেকে একটা কোকিল কুহু কুহু করে ডেকে উঠছে বারে বারে।

আরে সত্যিই তো জলির মনেই ছিল না। আরে! বসন্ত আবারো এসে গেছে তার জীবনে...নতুন রূপে...নতুন আঙ্গিকে  ।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু