মোহিনী
এক
সেবার গিয়েছিলুম এক জঙ্গলে। নাম? না ভাই নামটি বলতে পারব না, কারন তাতে আমার বন্ধুটির চাকরী চলে যাবে। খান কয়েক ভাঙা হাড়ের ওপর দিয়ে তার যা যাবার গেছে, পিতৃদত্ত প্রাণটি যে রক্ষা পেয়েছে সেটাই বড় কথা নয় কি?
আসলে আমি ছবি তুলতে বড়ই ভালবাসি, বিশেষত জঙ্গলের জন্তু-জানোয়ারের ছবি। সারা বছর কংক্রিটের জঙ্গলে চাকরী করি আর সময় পেলেই এই শখটির টানে জঙ্গলে চলে আসি। ভাগ্যবলে কিছু বন্ধুবান্ধব ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে, আর তাদেরই দৌলতে জঙ্গলে আমার এমন বাড়বাড়ন্ত। এ রাজ্য এবং বাইরের কিছু রাজ্যের জঙ্গলের কোর এরিয়ায় যাবার অভিজ্ঞতা বন্ধুবলে আমার হয়েছে। সেসব জায়গায় নাকি আবার বনকর্মী ছাড়া কেউ যেতে পারে না।
আমার বন্ধু পুষ্পেন্দু ফরেস্ট রেঞ্জার। এর আগেও তার কাছে গিয়েছি। সাধারণের অগম্য কিছু জায়গায় গিয়ে বেশ কিছু ছবিও তুলেছি। এর মধ্যে দু-একটা ছবি পুরস্কারও পেয়েছে। তাই এবারও পুষ্পেন্দুর ডাকে সাড়া দিয়ে পৌঁছে গেলাম তার নতুন ডেরায়। নতুন বলছি এই কারণে যে এখানে তার নতুন পোস্টিং। তবে অন্যবারের থেকে এবার উত্তেজনাটা একটু বেশি। ইদানীং এই অঞ্চলে বাঘ দেখা গিয়েছে বলে খবরের কাগজে পড়েছিলুম। মিডিয়াতে বেশ লেখালিখি হচ্ছিল। ঠিক তখনই পুষ্পেন্দুর ডাক পেলাম,তাই ডাক পেয়ে আর তর সইলো না।
দুপুরে মুরগীর ঝোল দিয়ে অন্যদিনের চেয়ে একটু বেশি ভাত সাঁটিয়ে ফরেস্ট বাংলোর বারান্দায় বসেছিলাম। পুষ্পেন্দু কি একটা কাজে খেয়েই বেরিয়ে গেল। যাবার আগে অবশ্য সূদনকে বলে গেল আমার খেয়াল রাখতে। সূদন পুষ্পেন্দুর বাবুর্চি কাম আর্দালী। হাতের রান্নাটি বেশ ভালো। বনমোরগের ঝোল আমি আগেও খেয়েছি কিন্তু এমন স্বাদ আগে পাইনি। বারান্দায় বসে আমি আর সূদন বসে গল্প করছিলাম। ক্যামেরায় আমার তোলা কিছু ছবি তাকে দেখাচ্ছিলুম।
খানিক পর চাপা গলায় সূদন বলে উঠল, ‘ স্যার আপনারা আজ যেখানে যাচ্ছেন সেখানে কি না গেলেই নয়?’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আজ জঙ্গলের ভেতর পুরোনো ফরেস্ট রেস্ট হাউসে রাত কাটানোর ব্যবস্থা করেছে পুষ্পেন্দু। ওখানে এখন কেউ থাকে না। ব্রিটিশ আমলে তৈরি বাংলোটা এখন ভগ্নপ্রায়। তারই আশেপাশে বাঘটাকে দেখা গিয়েছে বলে খবর।
‘কেন সূদন? বাংলোটা একটু নোংরা, কিন্তু একটা রাত দিব্বি কাটানো যাবে।’
‘না না স্যার, সেজন্য বলছি না। আসলে ওই জায়গাটায় মোহিনী থাকে বলে শুনেছি।’
জঙ্গলে ঘোরার সুবাদে এই মোহিনীর সাথে আমার পরিচয় আছে। দেশের প্রায় প্রতিটি জঙ্গলেই এই মোহিনীর কাহিনী শোনা যায়। তবে সব জায়গায় মোহিনী নাম নয়, অন্য অনেক নামেও এ পরিচিত। এ নাকি জঙ্গলের এক মায়াবী অপশক্তি। এর মায়ার বাঁধনে একবার বাঁধা পড়লে তার আর নিস্তার নেই। অত্যন্ত সুন্দরী এক মহিলার বেশে এ নাকি জঙ্গলে ঘোরে। একে নাকি যেই দেখেছে সেই মারা গিয়েছে। রাত্রের জঙ্গলে ভয়ঙ্কর মোহিনী ঘোরে শিকারের উদেশ্যে। আর তার সামনে কোনো হতভাগ্য পড়ে গেলে পরের দিন তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
‘তা সূদন মোহিনী কোন জঙ্গলে নেই শুনি?’ খানিক কৌতুকের ছলেই বলে উঠলাম।
‘না স্যার এ মোহিনী সেরকম মোহিনী নয়। জঙ্গলের খালি ওই জায়গাতেই নাকি এর বাস। ওখানে তো সন্ধ্যের পর কেউ যায় না। গত বছর বুধুর বাপ সন্ধ্যেবেলায় ওইদিকে গিয়ে আর ফেরেনি। একেবারে গায়েব। শুধু তার রক্তমাখা গামছাটা পাওয়া গিয়েছিল বাংলোর সামনে। তার পর থেকে মোহিনীর ভয়ে বিকেলের পর কেউ যায় না ওখানে। আগের রেঞ্জার সাহেবও যেতেন না। কিন্তু নতুন সাহেব একেবারে ডাকাবুকো লোক। এসে লোকমুখে এই জায়গাটার কথা শুনে আগ্রহী হয়ে পড়েছেন। আমার তো একদম পছন্দ হচ্ছে না আজ আপনাদের ওখানে রাত কাটানোর ব্যাপারটা।’
‘চিন্তা কোরো না সূদন। আমাদের কিছু হবে না।’
‘জানি স্যার আপনারা আমার কথা শুনবেন না। তবে কাল বনবিবির পূজো দিয়ে তবে বনে ঢুকবেন। আর একটা কথা মাথায় রাখবেন, কাল রাত্রে বাংলো ছেড়ে বাইরে জঙ্গলে যাবেন না। কাল পূর্ণিমা, মোহিনীর শক্তি কাল সবথেকে বেশি।’ এই বলে সে ‘জয় বনবিবির জয়’ বলে হাতটা প্রণামের মত করে মাথায় ঠেকাল।
বাধ্য ছেলের মত মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। সূদন না বললেও রাত্রে জঙ্গলে যেতাম না। মোহিনী থাকুক আর না থাকুক বাঘটা তো সেইখানেই আছে।
দুই
পুষ্পেন্দুর বাংলো থেকে কিছুটা গেলে সূদনের গ্রাম দেখা যায়। আমাদের গন্তব্য অবশ্য অন্য ছিল। ওদের গ্রাম থেকে যে পথটা জঙ্গলে প্রবেশ করে তার মুখেই বনবিবির মন্দির। পুষ্পেন্দু প্রথমে রাজী হচ্ছিল না, কিন্তু সূদনের চাপে পড়ে শেষে সেও পূজো দিতে রাজী হল। আমাকে অবশ্য দ্বিতীয়বার বলতে হয়নি। আমি ভূত-পেত্নী-রাক্ষস-খোক্কস সবই বিশ্বাস করি! আর ভগবানেও বিশ্বাস করি। কয়েনের এক পিঠ থাকবে আর অন্য পিঠ থাকবে না, এটা আবার হয় নাকি?
পূজো সেরে বিকেলের আলো থাকতে থাকতেই দুই বন্ধু রওনা হলাম গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। পুষ্পেন্দু সূদনকে আসার জন্য জিজ্ঞাসা করায় সে এমন মুখ করেছিল যেন সাক্ষাৎ মোহিনী দেখেছে! যাই হোক খানিক এদিক-ওদিক ঘুরে আর ছবি তুলে সন্ধ্যের পড়ন্ত আলোয় পুরোনো ফরেস্ট রেস্ট হাউসটির সামনে এসে পৌছালাম।
ব্রিটিশ আমলে তৈরি কাঠের এই রেস্ট হাউসটির মধ্যে এখনো সেই পুরোনো আভিজাত্য বর্তমান। এতদিনের যত্নের অভাবে ধুলোতে ভর্তি চারদিক। পুষ্পেন্দু অবশ্য আগে থেকেই লোক পাঠিয়ে একটা ঘর পরিষ্কার করে রেখেছিল। আমি পুরো বাংলোটা একবার দেখে নিচ্ছিলাম। অনেকদিন কারোর পদচিহ্ন পড়েনি সেটা বোঝাই যাচ্ছিল। ইঁদুরগুলো আমাদের আসাতে বড়ই বিরক্ত হয়েছে।
চারিদিকে অন্ধকার নামতে শুরু করেছে। হঠাৎ দূরে একবার কর্কশ শব্দে যেন বাঁশি বেজে উঠল। শুনে বুকটা কেমন যেন করে উঠল। মনকে প্রবোধ দিলাম যে সূদনের কথায় মনটা দুর্বল হয়ে আছে। তাছাড়া জঙ্গলে ঘোরার সুবাদে আমি এটুকু জেনেছি যে জঙ্গলে দূরের আওয়াজ এমনভাবে কানে আসে যাতে করে রজ্জুতে সর্পভ্রম হয়।
জঙ্গলে প্রথম প্রথম আমারও অনেক কিছু মনে হতো। এখন আমি অনেকটাই পোক্ত হয়েছি। তাছাড়া পুষ্পেন্দু যখন ওই আওয়াজটা নিয়ে কিছুই বলল না তখন আমি বুঝলাম, যে ওটা আমার শোনারই ভুল। আসলে জঙ্গল আমাদের শহুরে লোকেদের কাছে একটা অদ্ভুত ধাঁধার মত। কংক্রিটের জঙ্গলে বেড়ে ওঠা চোখ-কান দিয়ে আসল জঙ্গল বিচার করা যায় না। তাইতো কতশত মায়াবী কথা-কাহিনী এসে ভিড় করে জঙ্গলের মধ্যে। এতে শহুরে চোখ-কান ভারী মুস্কিলে পড়ে। মনটা বিশ্বাস আর অবিশ্বাসের দোলাচলে দুলতে থাকে ক্রমাগত। আর তার ঠেলায় কখনও আমরা কিছু বিশ্বাস করি তো পরমুহূর্তেই তাকে অবিশ্বাস করতে থাকি।
পুষ্পেন্দু পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার নিয়ে এসেছিল। কিন্তু জঙ্গলের কোর এরিয়া হওয়ার জন্য জোর আলো জ্বালানো যাবে না। তাই টিমটিম করে জ্বলছিল আমাদের হ্যারিকেন। খুব জোর গলায় আওয়াজ করাটাও উচিত নয় এখানে। তাই মৃদু গলায় চলছিল দুই বন্ধুর গল্প। এত কিছুর মধ্যে একটাই বাঁচোয়া যে বাংলোর দরজাটা বেশ শক্তপোক্ত আছে। হঠাৎ বাঘবাবাজীর যদি আমাদের সাথে আলাপ করার ইচ্ছা জন্মায় তবে দরজাটা তাকে আটকাতে পারবে।
‘জানিস মলয়, জীবনে বহুবার শুনেছি এই মোহিনীর কথা। প্রায় প্রতিটি জঙ্গলেই নাকি এই মায়াবী অপশক্তি থাকে। এর হাত থেকে বাঁচতে গ্রামের লোকজন বনবিবির পূজো দিয়ে তারপর জঙ্গলে ঢোকে।’
‘কিন্তু সূদন বলছিল যে এ সেরকম মোহিনী নয়।’
‘জানি। এর বাস শুধু এই জায়গাতেই। জানিস একটা ব্যাপার কেউ জানে না?’
মনটা পুষ্পেন্দুর গলার স্বরে কেমন যেন কু গেয়ে উঠলো। তবে কি ও এখানে সেই মোহিনী দেখতে এসেছে? বাঘদর্শন একটা নিমিত্ত মাত্র?
‘তুই ঠিক করে বল তো তোর মতলবটা কি? তুই কি... ?’
মুখের কথাটা শেষ হল না। পুষ্পেন্দু বলে উঠল, ‘আমি মোহিনীকে দেখেছি জানিস!’
সামনে বাঘ এসে দাঁড়ালেও এত অবাক হতাম না। বলে কি? মোহিনীকে দেখেছে! কিন্তু তাকে দেখলে তো কেউ বেঁচে থাকে না বলে শুনেছি।
‘তাই বলে ভাবিস না যে আমি মরে গিয়েছি আর ভূত হয়ে তোর সাথে বসে গল্প করছি।’
‘না না, আমি ঠিক তা বলিনি।’
‘তখন এখানে সদ্য জয়েন করেছি। মাঝে মাঝেই কাজের কারণে চারিদিক টহল দিতে হয়। নিজের এরিয়াকে হাতের তালুর মত না চিনলে কাজ করা খুব মুশকিল। পোচারগুলো খুব ভালো চেনে জঙ্গল। তাই আমাদেরও চিনতে হয়। এরকমই একদিন গাড়ী নিয়ে জঙ্গলে ঘুরছিলাম। সন্ধ্যে হয়ে গিয়েছিল। এই বাংলোটা থেকে কিছুটা আগে হঠাৎ এক ঝলকের জন্য জঙ্গলে এক আদিবাসী মেয়েকে দেখতে পেলাম বলে মনে হল। সন্ধ্যের পর জঙ্গল নিরাপদ নয় ভেবে তাকে হাঁক পেড়ে থামাবার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সে সেসব কিছু না শুনে আরও গভীর জঙ্গলের দিকে চলে গেল। আমি গাড়ী নিয়ে এগোতে যাব ঠিক তখনই কাছেই কোথাও বাঘের গর্জন শুনলাম। আর এগোলাম না। সঙ্গে বাঘকে ঘুম পাড়াবার রাইফেল আনিনি তাই সাহস হল না। তবে পরে গ্রামে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে ওইদিন কেউ সন্ধ্যের দিকে জঙ্গলে যায়নি।’
‘ব্যাপারটা তো বেশ ভয়ের রে’
‘হ্যাঁ, তা তো কিছুটা বটেই। তবে আমার একটা খটকা লাগে। আদৌ মোহিনী নাকি আগেরবারের মত কেস? তবে ঠিক করেছি আজ এই মোহিনী কেসটার শেষ দেখে ছাড়ব। শালা সত্যিই মোহিনী নাকি মোহিনীর নাম ভাঙিয়ে কোনো গ্যাং নিজের স্বার্থসিদ্ধি করছে সেটার ফয়সালা আজ হবে।’
ঘটনাটা আমি পেপারে পড়েছিলাম। একটা আন্তর্জাতিক চোরাকারবারি দল জঙ্গলে ডেরা বেঁধেছিল। জঙ্গলের নিরীহ লোকগুলোকে তারা ডাইনির ভয় দেখিয়ে সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল। অবশ্য তার জন্য কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যাও করে তারা। এতে ভয়ের আবহ তৈরিতে সুবিধা হয়। জঙ্গলে পরপর কয়েকটি হাতির মৃতদেহ ও সন্দেহজনক কিছু লোকের আনাগোনায় টনক নড়ে বনদপ্তরের। পুষ্পেন্দু ডিটেলসে জানিয়েছিল সেই চোরাকারবারি গ্যাংটার ব্যাপারে। তাদের ধরার ব্যাপারে তার নিজের ভূমিকাও কম ছিল না। প্রাণসংশয় হবার আশঙ্কা প্রবল ছিল। গুলির আঘাতে পুষ্পেন্দুকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল।
আমি কি একটা বলতেই যাচ্ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ বাইরে খুব কাছে একটা বাঁশির আওয়াজ শোনা গেল। এবার বেশ জোরে এবং খুব কর্কশ তার আওয়াজ। ঠিক কিছুক্ষণ আগের শব্দটার মতোই। অবাক ব্যাপার! এই সময় জঙ্গলে বাঁশি, তাও বারবার!
পুষ্পেন্দুও শুনেছে আওয়াজটা। যেন খুব কাছ থেকেই আসছে। মৃদু কণ্ঠে সে বলে উঠল, ‘বুঝলি মলয়,আগের বারের থেকে খুব বেশি জোর বাঁশিটায়’
তার মানে সে আগেরটাও শুনেছে! ওটা আমার ভুল ছিল না। আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই পুষ্পেন্দু জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়াল। কি একটা যেন দেখতে পেয়েছে। ইশারায় আমাকে ডাকল। গিয়ে দেখি এক আদিবাসী মেয়ে খানিক দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আমাদের দিকে পেছন করে থাকার কারণে তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে মানতেই হবে, অসাধারণ তার শরীরের গঠন। খুব কালো নয়, শ্যামবর্ণা রঙ, মাথায় খোঁপা আর তাতে কয়েকটা বন্য ফুল গোঁজা। বাইরে পূর্ণীমার আলোর বন্যা বইছে। প্রায় পরিষ্কার ভাবেই দেখা যাচ্ছে সবকিছু।
আমি কিছু করার আগেই দরজা খুলে সটান বাইরে বেরিয়ে গেল পুষ্পেন্দু। বাইরে বেরিয়েই মেয়েটির দিকে বন্দুক তাক করে এক বিশাল হাঁক ছাড়ল, ‘এই মেয়ে থাম এখনই, নইলে গুলি করব।’
মেয়েটা থেমে গেল। তারপর ঘুরে দাঁড়াল। গোল মুখ, বড় বড় টানা চোখদুটোয় গাঢ় কাজল দেওয়া রয়েছে, চুল টেনে খোঁপা করা আছে। পরনে একটা শ্যাওলা রঙের কাপড়, গলায় বেশ কিছু মালা। একইরকম মালা আমি গ্রামের অনেক আদিবাসী মেয়েরই গলায় দেখেছি। অনেকে তো বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের নখও মালা করে পড়ে থাকে। গ্রামের আদিবাসীদের মতই চেহারা, কিন্তু সবথেকে অদ্ভুত হল মেয়েটার চোখ আর তার গড়ন। বড়ই উজ্জ্বল, রহস্যময়ী চোখ আর এত দেহসৌষ্ঠব আমি এই গ্রামে কারোর মধ্যে দেখিনি। যৌবন যেন ফেটে পড়ছে। সত্যি বলতে কি আমি কথা বলব কি, খালি অবাক হয়ে মেয়েটাকে দেখেই যাচ্ছিলাম।
পুষ্পেন্দুও মিনিট কয়েকের জন্য বাক্যরহিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মেয়েটার ভীত সন্ত্রস্ত গলায় চমক ভাঙল দুজনেরই।
‘এ আফসার বাবু, মোর মরদের বড় বিপদ রে। তু বাঁচা কিনে।’
‘কি হয়েছে তোর মরদের? আর তুই এই রাতে এই জঙ্গলেই বা কি করছিস? এখানে এলি কি করে?’
হঠাৎ মেয়েটা মাটিতে বসে পুষ্পেন্দুর পা জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আমরা দুজনেই হতবাক। এ আবার কি ব্যাপার রে বাবা!
‘এ বাবু তু মোদের ইবারের মতন ক্ষমা টো করে দি। মায়ের কিরা রে, আর এত ভিতরে আসবুনি। আমি তো আসছিলাম না। কিন্তু মোর মরদের বড় লোভ রে। উ বুলল যে জঙ্গলের ই দিকে নাকি ভাল জড়িবুটি পাওয়া যাবেক।’
এইবারে ব্যাপারটা বোধগম্য হল। আসলে জঙ্গলের এইসব জায়গায় বনকর্মী ছাড়া সেরকম কেউ আসে না বলে জঙ্গলের ঔষধি গাছগুলো ভালই থাকে। জঙ্গলের গ্রাম লাগোয়া অঞ্চলে যা ঔষধি গাছ থাকে তা সব এরাই তুলে নেয়। কিছুটা নিজেদের জন্য রেখে দেয়, আর কিছুটা বেচেও দেয়। জঙ্গলের এত ভেতরে আসাটা বারণ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এরাও বোধহয় সেরকমই কারণে এতদূর এসে পড়েছে।
পুষ্পেন্দুর আবার পা ছোঁয়া কস্মিনকালেও পছন্দ না। সে বড়দের পায়ে হাত ঠেকিয়ে প্রণাম করত না। পায়ের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে প্রণাম করত। সুতরাং মেয়েটার এভাবে পা জড়িয়ে ধরাটাকে সে একদমই ভালোভাবে নিল না। তড়িঘড়ি পা ছাড়িয়ে নিয়ে মেয়েটাকে দাঁড় করাল।
‘এবার খুলে বল তো ব্যাপারটা কি? তোর মরদের কিসের বিপদ?’
‘এ বাবু তুরা একটু চল না মোর সাথে। ওই খানিক দূরে মরদ আমার পড়ে আছে রে। সাপ কাটছে রে বাবু। আমি বাঁধন দিয়ে এসেছি বুটি খুঁজতে। তুদের তো ভাল ওষুধ আছে। মোর মরদকে বাঁচা রে।’
কথাটুকু বলেই সে আবার ফোঁপাতে লাগল। এবার পুষ্পেন্দু এক ধমক লাগাল, ‘এই থামবি তুই? চল তোর মরদ কোথায় পড়ে আছে দেখা।’
মেয়েটি পুষ্পেন্দুর কথায় ভরসা পেল মনে হল। সে আগে আগে চলতে লাগল, পেছন পেছন আমরাও চলতে লাগলাম। আদিবাসীদের একটা জিনিস লক্ষ্য করেছি যে তারা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে অসাধারণ ক্ষিপ্রতায় চলতে পারে। কিন্তু এই মেয়েটি একটু বেশিই দ্রুতগামী। যেন মাটিতে পা পড়ছেই না। আমি তো দূর, পুষ্পেন্দু নিজেই ওর সাথে সাথে চলতে পারছে না। মেয়েটি আমাদের থেকে প্রায় হাত সাতেক দূরে থেকে যাচ্ছে।
মিনিট পনেরো আমরা চলেছি। জঙ্গল ক্রমশ গভীর থেকে গভীরতর হয়ে উঠছে। বেশ কয়েকবার তো হাত গাছের ডালে লেগে ছড়ে গেল। ছড়ে যাওয়া জায়গাটায় ভীষণ জ্বলছে। পুষ্পেন্দু এবারে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছে। সে দাঁড়িয়ে পড়ল।
‘এই তোর মতলবটা কি? সেই কখন থেকে জঙ্গলে তোর সাথে যাচ্ছি। কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস? তোর মরদ কই?’
মেয়েটাকে দেখে একটু বিহ্বল মনে হল। আমার কেমন যেন সন্দেহ হল। বললাম, ‘এই মেয়ে, তোমার দিক ভুল হয়নি তো?’
‘ঠিক বুইতে পাচ্চি না বাবু। ইদিকপানেই তো লাগচে। তুরা একটু দাঁড়া বাবুরা। আমি ওই হোথা দিখে আসি।’
আমাদের উত্তরের অপেক্ষা না করেই সে হনহন করে বামদিকের জঙ্গলে ঢুকে গেল। আমরা দুজনেই অবাক।
‘ধুর ধুর, এ আচ্ছা ঝামেলায় পড়া গেল। কোথায় মোহিনী দেখব ভাবলাম, আর দেখ কপাল। শালা সাপে কাটা পাবলিককে এই জঙ্গলে খুঁজে মরতে হচ্ছে।’
‘ওরকমভাবে বলিস না। হাজার হোক স্বামীকে সাপে কেটেছে।’
‘তুই থাম তো। কে বলেছিল ব্যাটাদের এত ভেতরে আসতে? আচ্ছা ঠিক আছে, এলি নাহয়। কিন্তু রাত অব্দি থাকতে কে বলেছিল? শালা যতসব উটকো ঝামেলা।’
এমন সময় খানিক দূর থেকে চিৎকার ভেসে এল, ‘ও বাবুরা বাঁচা কিনে।’ আওয়াজটা লক্ষ্য করে আমরা বামদিকের জঙ্গলে ছুটে গেলাম।
জঙ্গলে ঘুরেছি, কিন্তু রাতের জঙ্গলে দৌড়াইনি কোনোদিন। তার ওপর পুষ্পেন্দু আমার হাতেও একটা বন্দুক ধরিয়ে রেখেছে। সেটা নাকি আত্মরক্ষার কাজে আসবে। কিন্তু ঝোপঝাড়ের মধ্যে দিয়ে ছুটে যেতে যেতে সেই বন্দুকের ভারের জন্যই বার তিনেক পড়তে পড়তে বাঁচলাম। হঠাৎ আবার মেয়েলী কণ্ঠে সেই সাহায্যের আর্তি শোনা গেল। আমরা জঙ্গলের আরও গভীরে প্রবেশ করতে থাকলাম। মিনিট দশেক পর একটা জায়গায় মেয়েটাকে দেখা গেল।
এই জায়গাটায় জঙ্গল একটু হালকা। একটা সামান্য উঁচু টিলার পাশে আমাদের দিকে পেছন ফিরে মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে।
হাঁপাতে হাঁপাতে পুষ্পেন্দু জিজ্ঞাসা করল, ‘কিরে? কি এমন দেখলি যে বাঁচাতে বলে ডাকছিস? ভূত দেখলি নাকি?’
ঠিক তখনই একটু দূরে আবার সেই বাঁশিটি বেজে উঠল। মেয়েটি এবার আমাদের দিকে না তাকিয়েই সামনে জঙ্গলের দিকে পা বাড়াল। আমরা কয়েক সেকেন্ড হতম্ভব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে তার পিছু নিলাম। নাহ এবার রোখ চেপে গেছে। ভেবেছেটা কি? একবার দাঁড়াচ্ছে, একবার কাঁদছে তো একবার কিছু না বলেই হাঁটা দিচ্ছে। পুষ্পেন্দু দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠল, ‘তবে রে! মস্করা হচ্ছে আমার সাথে। দাঁড়া, একবার হাতে পাই তোদের দুজনকে।’
আমি পুষ্পেন্দুর দিকে তাকালাম। ফর্সা মুখ টকটকে লাল হয়ে উঠেছে। চোখদুটো বনবন করে ঘুরছে। তাকে কিছুটা অপ্রকৃতিস্থ মনে হচ্ছে। কেমন যেন একটা ঘোরের ভেতর সে মেয়েটাকে অনুসরণ করে চলেছে। আমার আর যেতে ইচ্ছা করছে না। কেমন যেন ভালো ঠেকছে না ব্যপারটা। তাছাড়া আমার পা দুটো আর নিতে পারছে না। ক্রমশ পুষ্পেন্দুর থেকে পিছিয়ে পরছি।
কি ভাল আর কি যে ভাল না কে জানত? কি ঘটতে চলেছে আগে জানলে আমি এই জঙ্গলে আসতামই না। মিনিট দশেক জঙ্গলের পথে পুষ্পেন্দুকে অনুসরণ করার পর একটা খোলা জায়গায় এসে দুজনেই দাঁড়ালাম। সামনে হাত দশেক দূরে মেয়েটা আমাদের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে।
পুষ্পেন্দুর রাগ এবার চরমসীমায়। সে বলল, ‘এই তোর মতলবটা কি বল এখুনি। নাহলে এই বন্দুকের গুলিতে তোর খুলি উড়িয়ে দেব।’ কথাটা বলেই সে মেয়েটার দিকে বন্দুক তাক করল।
এবার মেয়েটি আমাদের দুজনকে অবাক করে দিয়ে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল। তারপর সে ঘুরে দাঁড়াল। তার চেহারাটা বদলে গিয়েছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কোনো বাঘিনী প্রবল জিঘাংসায় ফুঁসছে। তার চোখদুটো একেবারে সবুজ। সেই চোখের ভয়ানক ভাষা পড়তে বিশেষ বেগ পেতে হল না।
‘কি বাবু মোহিনী দিখবি? খুব শখ উঠিছে, না? তো দিখ ইবার। ভালো করে দিখে নে।’
মেয়েটার গলা এত কর্কশ হল কি করে? এমন মনে হচ্ছে যেন সে একা নয় আরও অনেকজন মিলে কথাটা বলছে। ভয় পেলাম, ভীষণ ভয় পেলাম। তাহলে এই সেই মোহিনী! জঙ্গলের কিংবদন্তী মায়াবী অপশক্তি। হঠাৎ চারিদিকে কেমন একটা ঝোড়ো হাওয়া বইতে লাগল। সেই হাওয়ায় মেয়েটার চুল উড়ছে। ভয়ানক এক প্রেতেনী আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে। এবার সে হাতদুটো বাড়িয়ে দিলে আমাদের লক্ষ্য করে। একি! তার হাতদুটো যে আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে! আর সেই হাত এগিয়ে আসছে আমাদের গলা লক্ষ্য করে।
পুষ্পেন্দুর হাতের বন্দুক গর্জে উঠল ‘গুড়ুম।’ মেয়েটার ঠিক কপালে গুলিটা লাগল। হাত দুটো হঠাৎ থমকে গেল। তার কপাল বেয়ে রক্তের ধারা নেমে আসছে। মুখমণ্ডল রক্তে মাখামাখি। সব মিলিয়ে বীভৎস নারকীয় এক দৃশ্য। ভাবলাম এইবার এর জারিজুরি শেষ। কিন্তু এরপর যা ঘটল তা আরও অবিশ্বাস্য!
এক বীভৎস চিৎকার বেড়িয়ে এল মেয়েটির মুখ থেকে। দেখতে দেখতেই সব রক্ত যেন তার চেহারাটা শুষে নিল। এমনকি কপালে গুলির দাগটাও মিলিয়ে গেল। পুষ্পেন্দুর দিকে তাকালাম। তার দৃষ্টি বিস্ফারিত। সে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। এবার সে মেয়েটিকে লক্ষ্য করে বারংবার গুলি চালাতে থাকল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। সামনের প্রেতেনীর দেহ যেন সব গুলি হজম করে নিচ্ছে। এমনকি রক্ত পর্যন্ত পরছে না!
হাত দুটোকে আটকানো গেল না। দুটো লোহার মত শক্ত হাত আমাদের দুজনের গলা চেপে ধরল। কি ভয়ানক জোর! মনে হচ্ছে এইবার মরেই যাব। দুই হাতে আমাদের দুইজনকে মাটি থেকে খানিকটা উপরে তুলে ধরল সে। তারপর ছুঁড়ে খানিক দূরে ফেলল। ভাগ্যের জোরে আমি নরম মাটির উপর পড়লাম। কিন্তু খানিক দূরে পুষ্পেন্দু পড়ল একটা পাথরের ওপর। তার আর্তচিৎকারে বুঝলাম হাত-পা কিছু একটা ভেঙেছে। আমি উঠে বসার চেষ্টা করতেই দেখলাম আর এক ভয়ানক দৃশ্য।
ধীরে ধীরে মেয়েটা একটি বাঘে পরিণত হল। তারপর গর্জন করতে করতে এগোতে লাগল মাটিতে পড়ে থাকা পুষ্পেন্দুর দিকে। পুষ্পেন্দু ইতিমধ্যেই জ্ঞান হারিয়েছে বোধহয়। নাহলে মুর্তিমান বিভীষিকা তার দিকে এগিয়ে আসছে দেখেও সে মাটি ছেড়ে ওঠার কোনো চেষ্টাই করল না।
আমার মাথা কাজ করছিল না। মৃত্যু এক পা এক পা করে এগিয়ে যাচ্ছে আমার বন্ধুর দিকে। তাড়াতাড়ি পাশে পড়ে থাকা বন্দুক তুলে বাঘটার দিকে তাক করে গুলি চালালাম। একটা দুটো নয়, একেবারে এলোপাথাড়ি গুলি চালালাম। তখন মাথায় ছিল না যে গুলি পুষ্পেন্দুর গায়েও লেগে যেতে পারে।
এবার বাঘটা প্রবল আক্রোশে আমার দিকে ঘুরল। তার চোখের দিকে তাকিয়ে আমার হাত থেকে বন্দুকটা পড়ে গেল।চোখের সামনে মৃত্যুকে এগিয়ে আসতে দেখলাম। পেছনে যেতে গিয়ে কিসে যেন পা আটকে মাটিতে পড়ে গেলাম। ওদিকে বাঘটা একেবারে আমার সামনে। তার সবুজ চোখদুটো যেন জ্বলছে। আমার থেকে মাত্র এক হাত দূরে এসে সে ভয়ঙ্কর গর্জন করে উঠল। বুঝলাম আর বাঁচার আশা নেই। তবু কেন যেন মন্দিরের বনবিবির কথা মনে পড়ল। বড় কান্না পেল, ভাবলাম হা ঈশ্বর! শেষে এভাবে জঙ্গলের শয়তানের হাতে মরতে হবে!
এমন সময় আমার ঠিক পেছনেই একটা চাপা গরগর আওয়াজ পেলাম। ঘাড় ঘুরিয়ে আবছা আলোয় দেখলাম একটা বেশ বড়সড় কুকুরের ছায়া। চোখদুটো আগুনের ভাঁটার মত লাল। মুহুর্তের মধ্যে সে বাঘটার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ঝাঁপানোর মুহুর্তে তাকে চিনতে পাড়লাম। এযে আমার বাঘা!
বাঘা আমার ছোটবেলার সাথী। সাধারণ দেশী কুকুরের প্রায় দ্বিগুণ চেহারা ছিল বলে বাবা নাম রেখেছিলেন বাঘা। অবশ্য শুধু চেহারাই নয় তেজও ছিল বাঘের মতনই। বাঘা আমার খুব ন্যাওটা ছিল। কিন্তু বাঘা তো বয়সজনিত কারণে গতবছর মারা গেছে! সে কি করে এখানে?
এরপরে যা যা ঘটল আমি যেন মূক দর্শকের ন্যায় খালি দেখে গেলাম। বাঘার সাথে সেই বাঘটার ভয়ানক এক যুদ্ধ শুরু হল। চাঁদের আলো থাকলেও স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। শুধু বারংবার একটা বাঘ আর বাঘার গর্জনের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমার থেকে হাত খানেক দূরে যেন অন্ধকারের টর্নেডো চলছে! দুটো অন্ধকারের মূর্তি পরস্পর পস্পরের সাথে ভীষন যুদ্ধে ব্যস্ত। শুধু দুজোড়া সবুজ আর লাল চোখের অস্তিত্ব টের পাচ্ছিলাম। শেষে একটা ভয়ানক চিৎকার ছেড়ে বাঘটা আরও গভীর জঙ্গলে পালিয়ে গেল। আমি কেমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। জ্ঞান হারানোর আগে আমি বাঘার সেই পুরোনো ডাক আর কুঁইকুঁই আওয়াজ শুনতে পেলাম। তারপর সব অন্ধকার।
জ্ঞান ফিরে নিজেকে হসপিটালের বেডে পাই। পাশেই সূদন দাঁড়িয়ে ছিল। ওর কাছেই শুনি যে পরদিন কয়েকজন মিলে আমাদের দেখতে গিয়ে আমাকে আর পুষ্পেন্দুকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে এবং শহরের হাসপাতালে নিয়ে আসে। আমার হাতে পায়ে খানিক কেটে-ছড়ে গিয়েছে, কিন্তু পুষ্পেন্দুর বাম পা ফ্র্যাকচার। হাসপাতালের সবাই জানল যে পুরো ব্যাপারটা বাইসনের কীর্তি। আমি যে ওখানে ছিলাম এটা সবাই মিলে চেপে গেল। কারণ বিনা পারমিটে আমি জঙ্গলের কোর এরিয়ায় গিয়েছি জানলে পুষ্পেন্দু সহ সবার চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত। সবই ভালোয় ভালোয় মিটল, শুধু পুষ্পেন্দুকে মাস তিনেক ভুগতে হবে।
কিভাবে প্রাণে বাঁচলাম সেটা কোনোদিন ভুলব না। সূদনের মতে বনবিবিই নাকি বাঘাকে পাঠিয়েছিলেন মায়াবী অপদেবতার হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে। আমি এর কোনো সদুত্তর এখনো পাইনি। জ্ঞান না থাকার জন্য পুষ্পেন্দু এসব কিছু দেখেনি। আমিই সবটা বলেছি। সব শুনে সে আর একবার বনবিবির পুজো দিয়ে এসেছে!
ও হ্যাঁ আর একটা কথা তো বলাই হয়নি। বাঘা এখন সবসময় আমার সাথেই থাকে। ওকে অন্য কেউ দেখতে না পেলেও আমি দেখতে পাই!
