বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

নাকছাবি



#অণুগল্প_নাকছাবি  


#কলমে-অর্পিতা



সকাল থেকে একটু ফুরসত নেই রিমার।ঘুম থেকে ভোর ছটায় উঠেই সমস্ত ফুলগাছগুলো তে জল দিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসা।তারপর ছোট্ট ছয় বছরের  মেয়ে দিয়াকে তুলে রেডি করানো স্কুলের জন্য।তার ফাঁকেই আধঘন্টার ওয়ার্ক আউট সেরে নিজেকে ফ্রেশ করে নেয় সে।এই চৌত্রিশ বছর বয়সে ও সে যথেষ্ট সুন্দরী, নিয়মিত শরীর চর্চার কারণে।

চটপট ফ্রীজার থেকে বরফ দুধ আর ফ্রজেন মাছের প্যাকেটগুলো জলে ডুবিয়ে দিয়ার জন্য পরিজ বানিয়ে ফেলে রিমা,দুধ আর ওটস দিয়ে ,সঙ্গে কিছু ড্রাই ফ্রুটস আর স্ট্রবেরি । ভারী পছন্দের দিয়ার।নিজের আর পার্থ এর জন্য কর্নফ্লেক্স রেডি করেই ওয়াশ রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে যায় রিমা।হঠাৎই মিরর এ চোখ পড়তেই চমকে ওঠে রিমা।ওর  হীরের নাকছাবিটা নাকে নেই...ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে তন্ন তন্ন করে খোঁজে সারা বাড়ী কিন্তু কোথাও পায় না। ওটা পার্থর ঠাকুমা রিমা কে দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন ওদের বিয়ের দিন। বলেছিলেন---" বুঝলি নাত বৌ এটা তোকে দিলুম,তোর কাছ থেকে কখনো হাত ছাড়া করবি নে,এটা বংশ পরম্পরায় এ বাড়ীর বড় বৌমারা পায়।তবে এ জিনিস কাউকে ভুলেও পরতে দিবি নে যদি দিস তার ঘোরতর বিপদ হবে।"  তখন থেকেই রিমা এটা কে আগলে রেখেছিল লকারে নয় তো নিজের নাকে।

অজানা বিপদের আশংকায় বুক কেঁপে ওঠে তার।সকাল টা  নিমেষে বিস্বাদ হয়ে যায়। গ্রীন কফি বীন্স এর দানাগুলো গরম জলে ভেজাতে গিয়ে কফি মগ টা নামিয়ে রেখে দৌড়ে বেডরুমে ঢুকে ড্রয়ার টা টানে সে...স্পষ্ট মনে পড়ছে কাল রাতে শোবার আগে মুখে নাইট ক্রিম মাখার সময় এখানেই খুলে রেখেছিল সে।কোথায় গেল?নাকছাবিটা?


"পার্থ ,এই পার্থ ---তুমি আমার নাকছাবি টা দেখেছ?"সকাল সকাল কী শুরু করলে বলো তো?কাজ নেই আমার... তোমার  নাকছাবির খোঁজ আমি রাখবো?"___ঝাঁঝিয়ে ওঠে পার্থ।

রিমা আজকাল পার্থ কে চিনতে পারে না। মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে কার সাথে কথা বলে আজকাল পার্থ।রিমার চোখ এড়িয়ে।

রিমা বুঝতে পারে তাদের মধ্যে তৃতীয় কারো উপস্থিতি।মুখে কিছু না বললেও ভেতরে ভেতরে ভেঙ্গে যায় সে।

আজ ও পার্থ ব্রেকফাস্ট না করেই বেরিয়ে গেল একটা ফোন আসার পরই।

দিয়া কে স্কুল বাসে তুলে ঘরে ফিরে আসে রিমা।সারাদিন একাজ -সেকাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সে। ছোট্ট দিয়া কে বুকে আগলে সন্ধে বেলায় ভাবে  আবার তাকে ইন্টারভিউ দিতে হবে নেট এর।আবারও তার নিজের পায়ের তলার মাটি টা শক্ত করার পালা।দিয়ার জন্য চাকরি ছাড়তে হয়েছিল তাকে কিন্তু পার্থর ওপর আর তার ভরসা হয় না।নিজের আর দিয়ার কথা ভাবার সময় এসেছে তার।


এমন সময়ে সশব্দে কলিংবেল বেজে ওঠে। ভাবনার তার ছিঁড়ে যায় রিমার---

দরজা খুলতেই পুলিশ দেখে চমকে ওঠে রিমা___


"আপনি কী মিসেস সেন?আই মিন পার্থসারথি সেনের ওয়াইফ রিমা সেন?" প্রশ্ন করেন পুলিশ ইন্সপেকটর।   মাথা নেড়ে সম্মতি জানায় রিমা।"আমি ইন্সপেকটর  ধীমান বোস,  "তালতলা থানা থেকে আসছি। আমরা আপনার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছি এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর অভিযুক্ত হিসেবে,যদিও উনি এখন হসপিটালে ।উনি এক ভদ্রমহিলার সাথে  প্রাইভেট গাড়ীতে করে কোথাও যাচ্ছিলেন।  বাই পাসের দিকে ওনাদের গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটে।ঐ ভদ্রমহিলা ঘটনা স্থলেই মারা যান ।আপনার স্বামী ও আহত হয়েছেন,তবে আঘাত গুরুতর নয়। আচ্ছা দেখুন তো একবার...?" বলেই ইন্সপেক্টর একটা ছবি রিমার সামনে তুলে ধরে---

দেখুন তো এনাকে চেনেন কিনা?"চমকে ওঠে রিমা !মেয়েটির নাকে জ্বলজ্বল করছে রিমার হীরের নাকছাবিটা।

 

                                      --- অর্পিতা

ছবি ঋণ _গুগল।


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু