বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

এভাবেই চলুক বন্ধুত্বের গাড়ি

#গল্প


#এভাবেই_চলুক_বন্ধুত্বের_গাড়ি

#মিষ্টিমৌ 


-"চিত্ত কি ব্যাপার হৈসে ক তো তুই?দুদিন ধৈরা আইতাসিস না পুকুর পাড়ে?"


-"একখান দরকারি কাম করতাসি কদিন ধৈরা।পুরা হৈলে দেখামু।"


-"হ,অহন তোর কাম দেহনের লৈগ‍্যা বৈয়া থাকুম।"


-"আর বেশি বাকি নাই।হৈয়া গেসে প্রায়।শ্যাষের দিকে আসে।"


********************************************


চিত্তরঞ্জন সরকার ও নিখিল দে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে একে অপরের বন্ধু।এক সঙ্গে চাকরির ইন্টারভিউয়ের লাইনে দাঁড়িয়ে চাকরির চিন্তা করতে করতে ওপার বাংলা ছেড়ে আসা দুই যুবক কখন যেন একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়।সেই থেকে দুই জনের এই বন্ধন অটুট।ওদের দুই পরিবারের মধ্যেও এক আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।একদিন দেখা না হলে মন আনচান হয় দুজনের।তবে বার্ধক্যের কারণে আজকাল প্রতিদিন দেখা হয় না ঠিকই ফোনে কথা হয় দুজনের।


নিখিল প্রথম থেকেই চিত্তর ওপর অভিভাবককের মত কড়া নজর রেখে আসছে।নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ওর বিয়ে দেওয়া, জমি কিনে বাড়ি বানানো,এমনকি ওর সন্তানের জন্ম থেকে তাদের শিক্ষা, তাদের চাকরির জন্য খোঁজ খবর করা থেকে তাদের বিয়ে পর্যন্ত সবেতেই নিখিল সামলেছে।চিত্তর বাড়িতেও সবাই তাই জানে।তাইতো চিত্ত কিছু এদিক ওদিক করলেই ওর বাড়ির থেকে নিখিলের কাছে নালিশ চলে আসে।নিখিলও চলে যায় তাকে ধমক দিতে।ওদের সম্পর্কের সমীকরণটা ভীষণ সহজ সরল ও ভালোবাসা মাখানো।


আজকাল সপ্তাহের চারদিন ওরা কাছের এক পুকুর পাড়ে দেখা করে।বেশ কদিন ধরে চিত্তকে পুকুর পাড়ে না দেখে চিন্তিত নিখিল চিত্তর বাড়ি গিয়ে উপস্থিত।সেখানে গিয়ে চিত্তকে দেখে মনের শান্তি হয় তার।তবে এই বয়সেও বকাঝকা করতে ছাড়েনি চিত্তকে।চিত্ত হাসি মুখে ওর সব দাদাগিরি মেনে নিয়ে ওর হাত দুটো ধরে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় দোতলার ঘরে।সেখানে গিয়ে ওর চোখ খুলে দিয়ে বলে-"অহন দ‍্যাখ ব্যাটা ক্যান পুকুর পাড়ে যাই নাই।"


-"কি করসোস রে তুই!!!!এতো আমার স্বফনো রে।"


-"হেয়াই তো বানাইতেসিলাম অত ডি দিন ধৈরা।তর লৈগ্যা।তর জন্মদিন আইতাসে সামনেই তাইতো এয়া বানাইতে বৈলাম।অহন ক কেমন ডি হৈসে?"


-"চমৎকার হৈসে।জীবনে এমন উপহার কেউ দেয় নাই রে আমারে।"


-"ভীষণ খুশি হৈলো রে আইজ,আমার এই বানানো তাজ মহল তর পসন্দো হৈসে দেইখ্যা।"


-"কানতাসিস ক্যান?বলদের লাহান কাইন্দা পড়লি যে?পোলাপান গুলা দেইখ্যা কি কবে ক তো?"


-"কউক গিয়া।তাতে কি?"


ঐ ঘরের বাইরে চিত্তর ছোট ছেলের স্ত্রী দাঁড়িয়ে ওদের সব কথাই শুনেছে।তবে বুঝতে দেয়নি ওদের।এ কদিন শ্বশুর মশাইয়ের এই তাজ মহল বানানো নিয়ে কম অশান্তি করেনি ও।সারাদিন ঠুকঠুক আওয়াজ কেন হচ্ছে, কাঠের গুড়োতে ঘর নোংরা হচ্ছে এমন ধরনের কত অভিযোগ ছিল ওর।ওর দুই ছেলে দাদুর সঙ্গে এই কাজে জড়িত ছিল বলেও বেশ আপত্তি জানিয়ে ছিল সে।বলেছিল নাতিদের মাথা খাচ্ছে ওদের দাদু, পড়াশোনা নষ্ট করছে ওদের।কিন্তু আজ খুব লজ্জা লাগছে নিজের ওপরেই ওর।


এমন ভাবে দুজনের বন্ধুত্ব দেখে অনেক কিছুই শেখার আছে।ও্য ছেলেরা নিশ্চয়ই ওদের দাদুর থেকে এই ভালো গুণগুলো শিখেছে।ওতো নিজেও শিখলো সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখার রেসিপিটা।বর্তমানে দুদিন টেকেনা কোনও সম্পর্ক,চাইনিজ জিনিসের মত দেখতে দেখতেই ভেঙে চুরমার।সেখানে এই দুজন মানুষের মধ্যে যে বন্ধন পাঁচ দশক ধরে অটুট রয়েছে।ওদের ছেলেমানুষি ওদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি।ওদের ভালোবাসা ও বিশ্বাস ওদের সম্পর্কের স্তম্ভ।


**********************************************


ছোট বৌমাকে ঘরের বাইরে হঠাৎ দেখে চিত্ত ডেকে আনে ঘরের ভিতর,তার পর বলে-''বলি কি দুই কাপ চিনি ছাড়া চা কৈরা দিবা?"


-"ঐ জন্য এসেছিলাম তো ডাকতে।চা হয়ে গেছে আপনারা নীচে আসুন।"


-"ও হৈয়া গেসে।শুনো চায়ের সঙ্গে কিসু টাও দিও আমাগো।আইজ অনেক সময় ধৈরা গল্প করুম।বাবু আইলে তোমাগো নিহিল জ্যাঠারে বাড়িতে না হয় পৌঁছাইয়া দিবে।আর হ শুনো অর বাড়িতে একখান ফোন কৈরাও দিও।অরা চিন্তা করতে পারে তো।"


-"ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না।জেঠুর বাড়ির থেকে ফোন ঊসেছিল।বড়দি বলে দিয়েছে সব।"


ছোট বৌমার কথায় নিশ্চিন্ত হয়ে নীচের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই,দুজনের পায়ে হাত দিয়ে বৌমা প্রণাম করে।প্রণাম করে বলে-"বাবা আপনাদের এই ছেলেমানুষি নিয়ে থাকুন এভাবেই।আপনাদের দেখেই শিখুক আপনাদের নাতি নাতনিরা কি ভাবে বন্ধুত্ব করতে হয়,কি ভাবে একটা সম্পর্কের বন্ধনকে অটুট রাখতে হয়,কি ভাবে বন্ধুত্বের গাড়িকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় যুগের পর যুগ।"



************************************************


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু