বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

দেহতত্ব

   "কি রে বাবু তু তো দেখেই চলিস, মহা হারামী আছিস বটে, তুর মতলবটা কি আছে। সারারাত আমারে বসায়ে দেখতি থাকবি ভোর হলে ভাগায় দিবি লাকি? উসব চালাকি চলবেক লাই। টেকা না লিয়ে আমি যাবেক লাই আগেই বলে দিছি। যা করার করে মুয়ে ছাড়ি দে। পেটের টানে গতর বেচতে আসছি সখে পরে লয়।"

   দেহাতি মেয়েটার দিকে মহুয়ার রসে আচ্ছন্ন ঢুলু ঢুলু চোখে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো সাগ্নিক।কালো চাবুকের মতো নিভাঁজ শরীরের তরুণী।একচিলতে শাড়ি দিয়ে পেটানো শরীরটা ঢেকে রেখেছে , বুকের উচ্চতা ফিল ফেলে শাড়ির বাঁধন অস্বীকার করে চারপাশ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চাইছে। মিস কালো অন্ধকার ঘরে শরীরের রং মিশে গেছে শুধু দুটো টানা চোখের সাদা অংশ আর মুক্তোর মতো সাদা দাঁতের কামনা জড়ানো হাসি ঝলকে ঝলকে উঠছে। হোগলার ঘরে জ্বলা ছোট্ট প্রদীপের আলো লক লকে জিভ তুলে তরুণী দেহ লেহন করে চলেছে। শুধু একটা ফুঁ পাবার অপেক্ষা, দপ করে নিভে যাবে , অন্ধকার ঝাঁপিয়ে পড়বে দেহ জুড়ে ,গরম তেল পটপট করে জ্বালিয়ে তুলতে চায় দেহতত্ব।

  এদিনটা সাগ্নিক চাইনি, একটা ঘর একটা সংসার বাচ্ছা কিছু আনন্দ কিছু ঝগড়া এইটুকু চাওয়া ছিলো। রত্না তার সঙ্গে প্রবঞ্চনা করলো, তার অসহায় অবস্থার সুযোগ সে উশুল করে নিলো।স্বচ্ছল সংসারের লোভ দেখিয়ে সে কাজের জন্য বাইরে বেরোলো। সাগ্নিক যেদিন প্রমোশন পেলো খুব আনন্দ পেয়েছিল, ছুটে গেছিল বসের বাড়ি ধন্যবাদ জানাতে। সেখানে তার স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো, বসের কোলে তার স্ত্রী ! তার বস উন্মুক্ত নগ্ন শরীর দিয়ে জড়িয়ে ধরে পাপ পুণ্যের মন্ত্র শিখিয়ে দিতে পাশের ঘরের দরজা খুলে দেহতত্বর নতুন পাঠ দেখায় তাকে। যেখানে রত্নার তৃপ্তি সুখের শীৎকার বসের ঘর্মাক্ত শরীরে চাপে নিষ্পেষিত হচ্ছে। ক্যামেরা চলছে তৈরী হচ্ছে সভ্য সমাজের বিনোদন পাঁচালী।

সব মিথ্যে কর্মের পুরস্কার প্রমোশন নয় দেহতত্ব আসল।

  পাহাড়ী আদিবাসী গ্রামে এসে সাগ্নিক মুখ লোকায় । দেহাতি মানুষের কাছে দেহতত্বর আদিম পাঠ নিতে এসেছে সে। কিন্তু কমলির যৌবনে সে উত্তেজিত হতে পারছেনা কেনো! বার বার ওর চোখ  কমলির পেটে আটকে যাচ্ছে কিছুতেই তলপেট খুঁজে পাচ্ছে না। এখানে খরায় সব শেষ কমলির পেটে দুদিন ভাত নেই, শরীরের গরম বেচতে ও এসেছে সাগ্নিকের কাছে কালকে গরম ভাত খাবার আশায়। ওর বুকের আঁচল ভিজে উঠছে সুধা ধারায়, হয়তো ওর ঘরে ঘুম পাড়িয়ে রাখা বাচ্ছাটার ঘুম ভেঙে গেছে খিদের জ্বালায় কাঁদছে। কমলির শরীর জানান দিচ্ছে, হয়তো কমলির দেহে ব্যাথা উঠেছে তাই ও ছটপট করছে তাড়াতাড়ি গরম ঢেলে ঠান্ডা মনে ঘরে ফেরার জন্য।

  ঘরের প্রদীপের তেলটা ফুরিয়ে এসেছে বোধহয়, শিখা ছোট হয়ে যাচ্ছে। দেহতত্ব ওর আর জানতে ইচ্ছা নেই, কমলির শরীর আধা অন্ধকারে আর চাটছে না, ধীরে ধীরে অন্ধকারে ঘরটা না পারার নপুংসক লজ্জা ঢেকে দিতে চাইছে।

   সাগ্নিক ঢুলু ঢুলু চোখে মানিব্যাগ খুলে অনেক গুলো পাঁচশ টাকার নোট কমলির দিকে বাড়িয়ে দেয়, দেহতত্বর আনন্দ চিত্র তৈরী করে ক্ষুধার্তদের দৃষ্টি ক্ষুধা মিটিয়ে পাওয়া। কমলির কালো দেহের পরিষ্কার মন দিয়ে ফর্সা করার জন্য ওকে ওটা সে ওকেই  দেয়। ওটার কোনো মুল্য নেই সাগ্নিকের কাছে সুখ বেচা টাকায় দেহের সুখ কেনার বৃথা চেষ্টা করেনা সাগ্নিক।

সে চিৎকার করে ওঠে "যা পালা ঘরে যা, বাচ্ছাটা কাঁদছে ওর খাবারটা এইভাবে নষ্ট করিস না। এই শালা খিদের জন্যই আমরা বেঁচে আছি, কোনোদাম নেই শালা মানুষের , যাহ পালা পালা ।

কমলি বোকার মতো তাকিয়ে থাকে সাগ্নিকের দিকে, ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় সাগ্নিকের কাছে আরো কাছে  মাথার উপরের প্রদীপটা এক ফুঁয়ে নিভিয়ে দেয়। আলতো করে মমতা ভরা হাতে সাগ্নিকের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, আঁচলের ফাঁক দিয়ে গড়িয়ে পড়া এক ফোঁটা অমৃত সুধা সাগ্নিকের চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। সাগ্নিক ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় অনেকদিন পরে শান্তির ঘুমে হয়তো নিজের মায়ের হাত ধরে।

             ????????????????????????????

কপিরাইট রিজার্ভ@সৌগত@মুখোপাধ্যায়#2023



পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু