শ্মশানের ওপারে
ৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃৃ
শ্মশানের ওপারে
প্রসেনজিৎ মজুমদার
আজ আমার পাঠক বন্ধুদের যে গল্পটা শোনাবো তা রীতিমতো সত্যি ভয়ংকর। আমার জীবনে এমন ঘটনা ও ঘটতে পারে তা আমার ধারণা বাইরে।
দিন কয়েকের জন্য চন্দনপুরে মামার বাড়ি ঘুরতে গিয়েছিলাম। প্রথম দিন গাল গল্প, খাওয়া দাওয়া, বিশ্রাম আর বই পড়ে কেটে গেল। পরেরদিন মামা বলল, হাঁটতে হাঁটতে নদীর ধার থেকে ঘুরে আসতে পারিস। পশ্চিমে একটা ভাঙা কালীমন্দির রয়েছে, মন্দিরটা খুব পুরানো। একসময় ওই ভাঙা কালীবাড়ির ঠাকুর খুব জাগ্ৰত ছিল। প্রতি শনি মঙ্গলবার ভর হত ওখানে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, একসময় হতো মানে এখন হয় না! মামা ঘা নাড়িয়ে বলল, না। কেন? মামা বলল, সে অনেক ঘটনা। মা এখন আর ওখানে থাকে না। আয়লা ঝড়ের নাম শুনেছি? আমি ঘাড় নেড়ে বললাম হ্যাঁ শুনেছি। ওই ঝড়ে মন্দিরের এক অংশ ভাঙ্গা পরে। মায়ের বেদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময় মা ওই মন্দির পরিত্যাগ করে চলে যায়। আগে বছরে ষাট সত্তোরটা পাঠা বলি হতো। আবার কেউ কেউ হাঁস বলি ও দিতো। শয়ে শয়ে লোক জড়ো হত ওখানে। দূর দুরান্ত থেকে কত মানুষ ছুটে আসতো শুধু মাকে দেখার জন্য। সে কী রূপ আর জৌলুস। চোখ দুটো জ্বল জ্বল করত। সব বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ওখানে শুধু ওই ভাঙ্গা বেদি ছাড়া আর কিছু নেই। তুই বিকালের দিকে বেড়িয়ে ওই ভাঙ্গা মন্দির দর্শন করে আসতে পারিস। কথা শেষ করে তার মামা এ ঘর থেকে চলে যায়।
মনে মনে ঠিক করলাম আজ বিকালে নদীর পাড়ে গিয়ে ওই মন্দিরটা দর্শন করে আসবো। আর মায়ের বেদিতে একবার মাথা ঠুকে আসবো।
বিকেলে মেঘ পরিস্কার আকাশ, হাঁটতে হাঁটতে নদীর ধারে এসে কিছুক্ষণ বসলাম। এলোমেলো বাতাস বয়ে চলেছ। ফেরার পথে ওই মন্দির হয়ে ঘুরে যাব।
সবকিছু ঠিকঠাক ছিল, বিপত্তি হল মন্দির দর্শন করে বাড়ি ফেরার সময়! পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। ঠিক এ সময় আমি চন্দনপুরের শ্মশান ক্রশ করছি। সমস্ত শরীর কেমন শিহরণ খেলে গেল। গা'টা ছম ছম করছে, শ্মশানের উল্টোদিকে যতদূর চোখ যায় ধূ ধূ ফাঁকা মাঠ, কোথাও কোন জনপ্রাণী নেই। কানের ধার ঘেঁষে হু হু করে বাতাস বয়ে চলেছে। আমার প্রতিটা পা ফেলার সাথে সাথে মনে হল কেউ আমার পিছু নিয়েছে। রাস্তার দু'ধারে উচু উচু সোনাঝুরি গাছের পাতার খসখস শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে। অন্ধকারে আকাশের বুকে যেন কোনো অজানা আতঙ্ক দানা বাঁধছে। কোন দিকে না তাকিয়ে সোজা পথ হাঁটছি। ততক্ষণে আমার হাঁটার স্পিড দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। এই রাস্তাটা যত তাড়াতাড়ি পার করবো ততই মঙ্গল। শ্মশানটা ক্রস করলাম, এবার আরো স্পষ্ট শুনতে পেলাম কার হাঁটার শব্দ! আমি থমকে দাঁড়াতে ওই আওয়াজটাও থমকে গেল। চারিদিক নিস্তব্ধ নিঝুম অন্ধকারে ঢেকে গেছে। একটা গুমট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, আমি আবার হাঁটা শুরু করতে ওই শব্দটি আবার আমার পিছু পিছু আসতে থাকে। নিজের অজান্তেই গলাটা শুকিয়ে আসছিল। আবার থমকে দাঁড়ালাম পিছন ফিরে দেখতে কাউকে দেখতে পেলাম না বোধহয় একটা শিয়াল লাফ মেরে রাস্তার ধারে ঝোঁপে লুকিয়ে পড়ল। সত্যি কি ওটা শেল ছিল না অন্য কিছু! ভয়ে আমার শরীরের লোমগুলো খাঁড়া খাঁড়া হয়ে গেছে। টর্চের আলোটা যতদূর গেল কিছুই দেখতে পেলাম না। ধূ ধূ ফাঁকা রাস্তা নিস্তব্ধতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সামনের দিকে ঘুরতে একটা জন্তু পাশের তালগাছ থেকে নেমে ছুটে চলে গেল। আমি আরো জোরে হাঁটতে লাগলাম কিন্তু সেই শব্দটা আবার আসতে থাকে।আমি যত জোরে ছুটছি সে তত জোরে ছুটছে। চন্দনপুর ঢোকা ঠিক আগে দেখি একটা বড়ো তালগাছ গুড়িতে জড়িয়ে রয়েছে অসত্য গাছ, আবার সেই গাছের শরীর ভেদ করে একটা খেজুর গাছ গজিয়ে উঠেছে। সচরাচর এমন ধরনের গাছ দেখা যায় না। তারপর দেখলাম ওই অসত্যের ডালে কারো যেন বসে পা দোলাচ্ছে। ওরা আমাকে দেখে হো হো করে হাসছে। তারপর সবকিছু নিস্তব্ধ। আবার কিছুক্ষন পর সেই অট্রোহাসির রব উঠতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে তাদের হাসি আরো জোরে হতে থাকে। আমি কান দুটোতে হাত চাপা দিলাম তারপর অন্ধের মত পড়ি কি মরি দিলাম ছুট। অন্ধকারে কোথায় ছুটেছি তা জানি না, ছুটতে ছুটতে একসময় বেহুশ হয়ে মাটিতে পরে যায়। এরপর আর কিছু মনে নেই।
পাঁচ দিন ধরে ধুম জ্বর। জ্বরের ঘোরে শুধু ভুল বকছি। গুনীন এসে জলপড়া দিয়ে গেল, ভালো বড় ডাক্তারও দেখানো হলো। দিন দশেক পর যখন জ্বরটা একটু কমলো আমার শরীর কঙ্কাল হয়ে গেছে। মামা বাবাকে খবর দিয়েছে বাবা আমাকে কলকাতায় নিয়ে আসে। তারপর আমাদের পারিবারিক ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে সুস্থ হই। এখন শরীর ঠিক আছে।
কিন্তু সেদিনের পর থেকে কেন জ্বর এলো তা আজও বুঝতে পারলাম না। মামা বলেছিল আমি নাকি পুকুরে পড়ে গিয়েছিলাম অর্ধেক শরীর ছিল জলে। রাস্তা কিভাবে পুকুরে পড়লাম সেটাও বুঝতে পারছি না। সেদিন কারাই বা হাসছিল আর কারাই বা আমার পিছু নিয়েছিল কিছুই জানতে পারলাম না।
প্রসেনজিৎ মজুমদার (8017220471)
গড়িয়া বোড়াল মেন রোড, উসাপল্লী বাস্টান্ড,
কল- 700084
majumderprasenjit602@gmail.com
