বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

শোধন পর্ব

ঝুমাদির বাড়ি যে যাবো সেদিন সেটা আগে থেকে মোটেই ঠিক ছিল না। এক সপ্তার জন্যে ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম হঠাৎ সৈকত ফোন করে বলল যে ও ওদের গ্রামের বাড়িতে এসেছে। অনেক দিনের বন্ধু সৈকত কিন্তু ও দিল্লিতে, আমি ব্যাঙ্গালোরে বলে খুব একটা দেখা হয় না। তাই ও খুব করে বলতে ওর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলাম। ওর বাড়িতে গিয়েই কেমন যেন দুম করেই ঝুমাদির কথা মনে পড়ল। সৈকতকে জিজ্ঞেস করলাম, “হ্যাঁরে ছোট ... এখান থেকে কতটা দূর?”

“ও তো ট্রেনে একটা স্টপ! তারপর অবশ্য বাসে কিছুটা যেতে হবে।”    

তখনই ঠিক করে ফেললাম এতটা দূর যখন এসেছি তখন ঝুমাদির সঙ্গে দেখা করেই যাবো। সেই কবে ক্লাস এইটের পরীক্ষার পর গরমের ছুটিতে গিয়েছিলাম ঝুমাদির বাড়ি। বড় মাসিই নিয়ে গিয়েছিলেন। তার পর থেকেই মা মাসি মামাদের মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে কী একটা ঝগড়াঝাটি হয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। তাই ঝুমাদির সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি। অথচ আমাকে খুব ভালবাসত ঝুমাদি। আমরা কত কী নিয়ে তর্ক করতাম। বেশ সুন্দরী ছিল ঝুমাদি। পড়াশোনাতেও বেশ ভাল ছিল সে কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পরই মাসি ওর বিয়ে দিয়ে দিলেন! মাকে বললেন, “এ রকম পাত্র ভাগ্য করে পাওয়া যায়! কী হবে বেশি পড়াশোনা করে? ওদের ঝুমাকে খুব পছন্দ হয়েছে!” পছন্দ না হওয়ার তো কিছু ছিল না! ছোট ...তে পাত্রদের নাকি জমিদারি ছিল এক কালে, এখনও বিশাল সম্পত্তি আছে। খাওয়া পরার নাকি কোনদিন চিন্তা করতে হবে না। আমি শুনে বলেছিলাম কিন্তু লোকটা করে কী? মাসি হেসে বলেছিলেন, “ওর কিছু করার দরকার নেই!”   

আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমার কথার কোন গুরুত্বই নেই! ঝুমাদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। ওর বিয়েতে আমাদের যাওয়া হয়নি বাবা কাজ থেকে ছুটি পাননি বলে। তাই পরের বছর আমারা মাসির বাড়ি যেতে আমাকে আর মাকে ঝুমাদির শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন মাসি। বাড়ি দেখে তাক লেগে গিয়েছিল আমার। বিশাল বাড়ি, প্রচুর চাকর বাকর। একেবারে এলাহি ব্যাপার। মা মাসি বলাবলি করছিলেন ‘আমাদের ঝুমা রাজরানি হয়ে গেছে!’ সত্যি সত্যি দামি শাড়ি গয়নায় সুসজ্জিত ঝুমাদিকে দারুণ লাগছিল কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল ঝুমাদি বদলে গেছে। ওর ঠোঁটের কোনে লেগে থাকা হাসিটা যেন মিলিয়ে গেছে। আগে দেখা হলেই দুম দাম প্রশ্ন করত, “বল তো সাইপ্রাসের রাজধানী কী?” অথবা, “আমাদের শরীরে কটা হাড় আছে জানিস?” আমি বেশির ভাগ সময়ই ওর প্রশ্নের উত্তর জানতাম না তাই ঝুমাদিকেই উত্তরটা বলে দিতে হত। স্কুলের ছুটির সময় কতদিন ওদের বাড়িতে গিয়ে থেকেছি। খুব ভাল বন্ধু ছিল ঝুমাদি আমার। এই নতুন সাজাগোজা ঝুমাদির সঙ্গে অবশ্য সেই ঝুমাদির কোন মিল নেই! শ্বশুরবাড়ি বলে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বসে ছিল। আমি একবার টুক করে কাছে গিয়ে বলেছিলাম, “ডেনমার্কের রাজধানী কী?”

শুকনো হাসি হেসে ঝুমাদি বলেছিল, “ভুলে গেছি রে!”

তখনই ঝুমাদির বরকে দেখেছিলাম। নরেশদাকে আমার প্রথম থেকেই তেমন পছন্দ হয়নি। কেন ঠিক বলতে পারব না। কিছুটা হয়তো ঝুমাদির বিয়ের পর বদলে যাওয়ার সব দোষ নরেশদার মনে করেছিলাম বলে আর কিছুটা ওনার চাহুনি দেখে। ওনার চাহুনিটা আমার মোটেই ভাল লাগেনি। যাই হোক সেবার প্রচুর খেয়ে দেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম আমরা। সেই আমার ঝুমাদিকে শেষ দেখা।   

আজ কেন জানি না হঠাৎ সৈকতদের বাড়িতে এসে ঝুমাদির কথা মনে পড়ল। অনেক বছর কেটে গেছে। আমি ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে কিছুকাল বিদেশে থেকে এখন ব্যাঙ্গালোরে আছি কিন্তু ঝুমাদির কোন খবর পাইনি। তবে বড়মাসি গত হয়েছেন সেটা শুনেছি। মাদের সেই প্রবল ঝগড়া এখনও চলছে, কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেন না। আমি অবশ্য ওসবের তোয়াক্কা করি না। সেই ভেবেই ট্রেন থেকে নামলাম। তখন বিকেল। ট্রেন থেকে নেমে একটা বাস ধরে কিছুটা যেতে হল। বাস স্ট্যান্ডে একটা রিক্সাকে বলতে সে মিনিট সাতেকের মধ্যে ঝুমাদিদের বাড়ির সামনে নিয়ে গিয়ে হাজির করল। সেই একই বাড়ি কিন্তু এখন যেন কেমন জীর্ণ দেখাচ্ছে। হয়তো সত্যি পুরোনো হয়েছে বা আমার দৃষ্টিভঙ্গি পালটেছে । রিক্সাওয়ালার পাওনা মিটিয়ে দিয়ে ওকে বললাম, “ভাই তুমি একটু দাঁড়াও। দিদি যদি না থাকে তাহলে আমি এখুনি ফিরে যাবো।” সে দাঁড়ালো।

আমি দরজার কাছে গিয়ে ভিতরে একজনকে দেখেতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “ঝুমাদি আছে বাড়িতে?”

লোকটা মুখ বেঁকিয়ে বলল, “ঝুমা কে?”

“ঝুমাদি, মানে নরেশদার স্ত্রী, উনি বাড়িতে আছেন?”

“অ, বউদিমণি! হ্যাঁ, বাড়িতে আছেন কিন্তু দেখা পাবে কিনা জানি না,” হেঁয়ালি করে বলল লোকটা।

ঝুমাদি বাড়িতে আছে শুনে আমি রিক্সাওয়ালাকে ছেড়ে দিলাম।

ও চলে গেল। আমি আমার কাঁধের ব্যাগটা নিয়ে ঝুমাদির বাড়িতে ঢুকলাম। যে লোকটা হেঁয়ালি করছিল সে বেশ কৌতূহল নিয়ে আমাকে দেখছিল। এবার জিজ্ঞেস করল, “আপনি বউদিমণির কে হন?”

“মাসতুত ভাই। ওনাকে একবার ডেকে দেবে?”

লোকটা মাথা নাড়ল, “না, ডাকা যাবে না। চলুন বৈঠকখানায় বসবেন চলুন। আমি বরং দাদাকে ডেকে দিচ্ছি। আপনি দাদাকে চেনেন তো?”

“হ্যাঁ, আমি চিনি কিন্তু উনি হয়তো চিনতে পারবেন না। সেই অনেকদিন আগে একবার এসেছিলাম। ডাক নামটা বললে হয়তো বুঝতে পারবেন। আমার নাম টুকান।”

“ঠিক আছে। এদিক দিয়ে আসুন,” বলে লোকটা আমাকে বৈঠকখানায় নিয়ে গিয়ে বসালো। আগের বারও এই ঘরটাতে এসেছিলাম এবং মোহিত হয়েছিলাম কিন্তু এবার কেন জানি না জলসাঘর সিনেমাটার কথা মনে পড়ে গেল। সেই রকম মলিন হয়ে যাওয়া সব কিছু, ধুলো পড়া ঝাড়লন্ঠন!

“কে এসেছে রে লোকনাথ?” বলতে বলতে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক ঘরে এসে ঢুকলেন।

“বউদিমণির মাসতুত ভাই হয় বলছে হরিদাদাদাকে ডাকব?”

“হ্যাঁ, যাও যদি খুঁজে পাও তো ডেকে নিয়ে এসো!”

লোকনাথ চলে যেতে ভদ্রলোক আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন, “আমি হরিপদ মন্ডল। এ বাড়ির নায়েব বলতে পারেন, বাজার সরকার বলতে পারেন। আপনি কী আপনার দিদির সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন? আগে তো আপনাকে কখনও দেখেছি বলে তো মনে পড়ছে না!”  

“আমি আগে একবারই এসেছিলাম। সেটা অনেক দিন আগের কথা। আমি তখন ক্লাস এইটে পড়ি তাই আপনার মনে থাকার কথা নয়!”

“ও! তা এতদিন বাদে আবার কী মনে করে?”

ওনার অত প্রশ্ন আমার মোটেই ভাল লাগছিল না তাও বললাম, “বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এই তল্লাটে এসেছিলাম তাই ভাবলাম ঝুমাদির সঙ্গেও একবার দেখা করে যাই।”

“তা দিদির অবস্থার কথা জানেন?”

“কী হয়েছে ঝুমাদির? না, আমি তো কিছু জানি না।”

ভদ্রলোক আঙ্গুল দিয়ে মাথার এক দিকে জিলিপি আঁকলেন দিদির মাথা ঠিক নেই বোঝাবার জন্যে।

“সেকি! আপনি বলতে চান ঝুমাদি পাগল হয়ে গেছে?”

“নাহ, ঠিক পাগল বলব না তবে অদ্ভুত এক রোগ! এমনিতে আমরা বাইরের লোকের কাছে বলি না তবে আপনি বউমার ভাই তাই বলছি। বছর ছয়েক হল বউমার একটা বিকট রোগ দেখা দিয়েছে। একবার স্নানের ঘরে ঢুকলে আর বেরতে চান না! স্নান করছেন তো করছেন! একদিন তো পাঁচ ঘন্টা ভিতরে ছিলেন তারপর নরেশকে লোকজন ডেকে দরজা ভেঙ্গে বার করতে হয়।“

ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল আমার। এ কী হল ঝুমাদির?

“আচ্ছা ঝুমাদির ছেলে, সে কোথায়?”

“সে তো বোর্ডিং স্কুলে পড়ে। ছুটি টুটিতে আসে। ছেলেটাও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। মনে হয় মার ওই অবস্থা দেখে।

“ডাক্তার দেখানো হয়েছে?”

“না, না, কী যে বলেন! ওই সব কী আর বাইরের লোককে বলা যায়!”

“কেন? যদি জ্বর জ্বালা কিছু হত তাহলে ডাক্তার দেখাতেন না? এটাও তো এক রকমের অসুখ! যাক কোথায় ঝুমাদি? আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে চাই!”

“চলুন নিয়ে যাচ্ছি।“

উনি আমাকে ঝুমাদির ঘরে নিয়ে গেলেন। সুন্দর সাজানো ঘর। কোথাও এতটুকু ধুলো ময়লা নেই। ঘরের সঙ্গেই লাগোয়া বাথরুম সেখান থেকেই ছুপছুপ করে জল পড়ার শব্দ আসছে। আমি দরজায় আস্তে আস্তে টোকা দিলাম।

“ঝুমাদি, আমি টুকান। অনেক দিন বাদে তোমার সঙ্গে দেখা করতে এলাম!”

আমার কথায় কাজ হল। জল পড়া বন্ধ হল। একটু পরেই দরজা খুলে ঝুমাদি বেরিয়ে এলো। আমাকে দেখে খুব খুশি।

“টুকান! এত দিন পরে তোর দিদিকে মনে পড়ল! কতদিন দেখিনি তোকে! কত বড় হয়ে গেছিস! কোথায় আছিস, কী করছিস? মা বেঁচে থাকতে তাও তোদের খবর পেতাম। জানি ঝগড়া তাও মা ঠিক কী করে সব খবর জুটিয়ে ফেলত এখন আর...। যাক তোর কথা বল!”

“বলার তেমন কিছু নেই ঝুমাদি! ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে একটা কম্পানিতে ঢুকেছি। তারাই ক্যালিফর্নিয়া পাঠিয়েছিল কিছুদিনের জন্যে। এখন আবার ব্যাঙ্গালোর। বড্ড কাজের চাপ ছুটি তেমন পাই না। এই আর কি!”

“বিয়ে করেছিস?”

“না গো! তবে মা মেয়ে দেখছেন!”

“বাহ! এর পরের বার এলে তার মানে বউ নিয়ে আসতে পারবি। দাঁড়া, ওদের বলি তোর জন্যে কিছু খাবার নিয়ে আসতে,” বলে ঝুমাদি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

ফিরে আসতে আমি বললাম, “তুমি কেমন আছো ঝুমাদি?”

মুখটা আঁধার হয়ে হয়ে গেল তার, চোখে জল ছলছল করে উঠল, বলল, “আমি ভালো নেই রে টুকান!”

আমি ওর হাতটা চেপে ধরে বললাম, “কী হয়েছে তোমার ঝুমাদি? কেন এমনটা হল? শুনলাম তুমি নাকি ঘন্টার পর ঘন্টা বাথরুমে ঢুকে...”

ঝুমাদির চাহুনিটা কেমন যেন হয়ে গেল, ফিসফিস করে বলল, “কাউকে বলিনি টুকান তোকেই শুধু বলছি। আমি না স্বপ্নে রোজ দুটো কালো হাত দেখি! দুটো অসম্ভব নোংরা কালো হাত আমার সারা গা ছুঁয়ে যায়! কী ময়লা আর দুর্গন্ধ তোকে বলে বোঝাতে পারব না আমি! আমার দম বন্ধ হয়ে আসে!” 

“কী বলছো তুমি!”

“ঘুম ভেঙ্গে যাওয়ার পরও সেই হাতের স্পর্শ আমার শরীরে লেগে থাকে! তখন মনে হয় আমার শরীরটাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও ঐ নোংরা আর দুর্গন্ধ আমি সরাতে পারি না রে! বুঝতে পারি বাথরুমে অনেকটা সময় কেটে যাচ্ছে কিন্তু ছেড়ে দিতে পারি না কিছুতেই!”   

“আমার এক বন্ধুর দাদা নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট, আমি তোমাকে ওর কাছে নিয়ে যাবো ঝুমাদি! প্লিজ হ্যাঁ বলো!”

উদাসভাবে মাথা নাড়ল ঝুমাদি, “না রে টুকান, ও সব আমার হবে না। আমাকে এই ভাবেই ছেড়ে দে। এই যে তুই আমাকে মনে রেখেছিস, দেখা করে গেলি তাতেই আমার মনটা ভালো হয়ে গেল!”

ইতিমধ্যে একজন কাজের লোক এসে প্লেটে করে লুচি তরকারি আর মিষ্টি দিয়ে গেল।   

আমার মোটেই খেতে ইচ্ছে করছিল না, মনটা খারাপ লাগছিল কিন্তু ঝুমাদি জোর করল, “খেয়ে নে টুকান!”

অগত্যা খেতে হল।

“আজ রাতটা থেকে যা না এখানে।“

“না গো ঝুমাদি। কাল দুপুরে আমার ফ্লাইট। আজ বাড়ি না ফিরলে মা খুব মন খারাপ করবে! এসে থেকেই টোঁ টোঁ করে ঘুরছি!”

“কেমন আছে রে মাসি?”

“ওই কোমরে ব্যথা, পায়ে ব্যথা ওই সব বলে এমনিতে ঠিকই আছে।“

“আর মেসো?”

“ডায়াবিটিস ধরা পড়েছে কিছুকাল হল, তবে এমনি ঠিক আছে।“

“কতদিন দেখি না ওদের! কিসের থেকে কী যে হয়ে গেল! ওই গ্রামের বাড়িটাতে তো আমরা কেউ কী থেকেছি না থাকবো, তাই নিয়ে এত গন্ডগোল!”

“আমিও মাকে ওই এক কথাই বলি সব সময়!”

“যাক তুই তাও তো দিদির কথা মনে করে এলি!”

“নরেশদাকে দেখছি না? লোকনাথ বলল ডেকে আনবে!”

“ও তো আজকাল বাড়িতে থাকে না খুব একটা! লোকনাথ হয়তো খুঁজেই পায়নি! ছেলেটা বাড়ি এলে ওর সঙ্গেও তেমন সময় কাটায় না! আমাকে ওই স্বপ্নের ভূতে ধরার পর নিজেকে আলাদা করে নিয়েছে। অন্য ঘরে থাকে শোয়। তাও শুধু মাত্র রাতে আসে কী তাও আসে না!”

“তুমি আমার সঙ্গে চলো ঝুমাদি। তোমার চিকিৎসা হলেই তুমি ভালো হয়ে যাবে। তখন সব কিছু আবার আগের মতন হয়ে যাবে!”

“না রে টুকান, আগের মতন কিছুই হবে না আর! জানিস ওই ছোটবেলার দিনগুলোই ভালো ছিল। বেশ ছিলাম দেশ বিদেশের রাজধানী আর পড়াশোনা নিয়ে। কত স্বপ্ন দেখতাম...”

তারপর আর বেশিক্ষণ থাকিনি ওখানে। লাস্ট ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।

অনেক রাত তাও মা জেগে ছিলেন আমার জন্যে। সব শুনে বললেন, “তোকে বলিনি। বিভার সঙ্গে তো আমার কথা হয় মাঝে মধ্যে ওই বলেছিল। ও তো কত কী বলে কোনটা ঠিক কোনটা ভুল বুঝতে পারি না। তাছাড়া তুই পছন্দ করিস না বলে তোকে বলিনি!”

বিভা মানে মেজো মামিমা। রাজ্যের গুজবের ভান্ডার! তিলকে তাল করতে তাঁর জুড়ি নেই! এক ভাগ কিছু একটা পেলেই তাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে একশো ভাগ করে ফেলবেন! আমার একেবারে পছন্দ নয়। আমি অনেকবার মাকে বলেছি ওনার কথায় কান দিও না কিন্তু মা তাও শুনবেই!

“কী বলেছে বিভা মামিমা?”

“ঝুমাদের ওদিকে কী একটা কান্ড হয়েছিল। নরেশের নামে একটা ধর্ষণের মামলা উঠেছিল। এমনিতেও ছেলেটার নাকি চরিত্রের দোষ ছিল আগেই শুনেছিলাম এই মেয়েটার বয়স নাকি পনেরো! মেয়েটার বাবা কী সব টাকা ধার করেছিল আর ফেরত দিতে পারেনি তার পর থেকেই ঝামেলা। মাঠে নাকি পাওয়া যায় মেয়েটাকে। হাসপাতালে ভর্তি করার পর মারা যায়। প্রচুর টাকা দিয়ে কেসটাকে নাকি ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল...”    

###

ব্যাঙ্গালোরে ফিরে যাওয়ার দিন সাতেক পর খবরটা পেলাম মার কাছে। আবার সেই বিভা মামিমার কাছ থেকে শোনা খবর! ঝুমাদি নাকি হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করেছে।

নিজের রক্ত দিয়ে ধুয়ে ফেলতে চেয়েছে কালো হাতের যত নোংরা আর দুর্গন্ধ!



পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু