বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

( এক্সট্রাকশন )

বাড়িতে বসে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ দেখে বা বই পড়ে এখন আমাদের দিন কাটছে। লকডাউন যত দীর্ঘ হচ্ছে, মানুষ ধৈর্য হারাচ্ছে। তবুও এই ক’টা দিন ঘরবন্দি থাকলে, স্বাস্থ্যবিধি মানলে তবেই করোনা ভাইরাসকে দূরে রাখা সম্ভব হবে। গৃহবন্দি লকডাউনে এক টুকরো তাজা বাতাস আনছে OTT প্ল্যাটফর্মের ওয়েব সিরিজগুলো। এমন সময় নেটফ্লিক্সে এলো "এক্সট্রাকশন"।

একটি সম্পূর্ণ অ্যাকশন-প্যাকড আমেরিকান থ্রিলার। 

সিনেমার মূল গল্প বাংলাদেশের ঢাকা শহর নিয়ে। এতে দেখানো হয়েছে, ভারতের মুম্বাইয়ের এক ডনের ছেলেকে অপহরণ করে বাংলাদেশের এক ডন। আর তাকে উদ্ধার করতে নিয়োগ করা হয় দুর্ধর্ষ আততায়ী ক্রিস হেমসওর্থকে। ছবির ট্রেলার বেরোয় ৭ এপ্রিল। ছবিটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় ২৪ এপ্রিল। ‘এক্সট্রাকশন’-এ অভিনয় করেছেন ক্রিস হেমসওয়র্থ। এ ছবিতে তিনি মার্সেনারি টাইলার রেকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আরও অভিনয় করেছেন ইরানি অভিনেত্রী গোলশিফতা ফারাহানি, সাতাফ ফিগার,  রণদীপ হুদা, পঙ্কজ ত্রিপাঠিসহ অনেকে। ভারত ও বাংলাদেশের ক্রাইম লর্ডদের লড়াই নিয়ে এই সিনেমার কাহিনী আবর্তিত হয়। যেখানে ভারতীয় এক মাফিয়ার ছেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। তাকে উদ্ধারের জন্য ঢাকায় পাড়ি দেন ক্রিস। এখন টাইলার পারবে কি সেই ছেলেটি কে নিরাপদে উদ্ধার করে নিয়ে সেই ছেলে এবং সে নিজে এক সুস্থ সুন্দর জীবন গড়তে । নাকি তারা দুজনেই এই অপরাধ জগতের সাথে আরও জড়িয়ে যাবে ? তা জানতে হলে দেখতেই হবে, ক্রিস হেমসওয়ার্থ অভিনীত "এক্সট্রাকশন" । 

ঢাকার প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও মূল দৃশ্যায়ন হয়েছে আহমেদাবাদের একাধিক লোকেশনে। সেখানে বাংলাদেশের মতো করেই সেটা তৈরি করা হয়। পরে ঢাকায় সামান্য কিছু শ‌্যুট করা হয়।


"প্রমান" চেয়েই বাঙালি মনে জায়গা করে নিলেন ক্রিস হেমসওয়ার্থ। এই হলিউড তারকার সংলাপে "প্রমাণ দাও" এখন নেটফ্লিক্স থেকে বেরিয়ে সোজা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে গিয়েছে। রণদীপ হুডা এবং হেমসওয়ার্থের পর্দায় যুগলবন্দীও বেশ মানানসই।

যখন কোনও সিনেমার নেতৃত্বে ক্রিস হেমসওয়ার্থ থাকেন এবং সেটি স্যাম হারগ্রাভ ( যিনি কিনা মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের স্টান্ট কো-অর্ডিনেটর )-কর্তৃক পরিচালিত হয়, তখন ধরেই নেওয়া চলে যে ছবিটিতে স্টান্ট এবং অভিনয়, উভয়ই  দুর্দান্ত হতে চলেছে। তবে এরকম একটি অ্যাকশন ফিল্মের জন্য অনেক ধরণের ফ্ল্যাশব্যাক, বর্ধিত কথোপকথন এবং চরিত্রগুলির প্রস্ফুটনও অত‌্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়ায় ; সত‌্যি বলতে সেগুলির উপস্থিতি একটু কমই চোখে পড়লো। তবে, এই ছবির ট্রিটমেন্ট খুবই সুন্দর। আর সত‌্যি বলতে এই সিনেমার গল্প, সংলাপ ইত‌্যাদি যেমনই হোক না কেন, অ্যাকশন যাঁদের প্রিয়, তাঁরা ১ ঘণ্টা ৫৭ মিনিটের এই ছবি চুটিয়েই উপভোগ করবেন। কারণ, সিনেমার প্রায় ৮০ ভাগ জুড়েই মার–মার, কাট–কাট অ্যাকশন। স্প্যানিশ শব্দ সিউদাদ অর্থ শহর। তাই প্রথমে এই ছবির নাম ছিল "ঢাকা"। চিত্রনাট্যকার জো রুশো এই গল্প নিয়ে বই প্রকাশেরও আগে ২০১২ সালে একটা সিনেমা করতে চেয়েছিলেন। সেই ছবিতে 'টাইলার'-এর চরিত্রের জন্য ডোয়াইন জনসনকে চুক্তিবদ্ধও করা হয়েছিল। সিনেমাটির গল্প ছিল প্যারাগুয়ের প্রেক্ষাপটে। ছ'বছর পর প্যারাগুয়ের জায়গা নিল ঢাকা। আর ডোয়াইন জনসন হয়ে গেলেন অস্ট্রেলীয় অভিনেতা, ৩৬ বছর বয়সী ‘থর’ ক্রিস হেমসওর্থ। যদিও বইয়ের গল্প অনুসারে, এক মাফিয়ার মেয়েকে অপহরণ করে লুকিয়ে রাখা হয় পৃথিবীর নিকৃষ্টতম একটি স্থানে।

ছবিটি মূলত প্রযোজনা করেছেন হলিউডের জনপ্রিয় দুই ভাই, এন্টনি রুশো আর জো রুশো। অভিনেতা ক্রিস হেমসওর্থ নিজেও এই ছবির অন্যতম প্রযোজক। আর পরিচালক স্যামও এই ছবিতে দেখা দিয়েছেন অভিনয়শিল্পী হিসেবে। সিনেমার মূল গল্প মূলত ২০১৪ সালে প্রকাশিত সিউদাদ নামের এক উপন্যাস থেকে নেওয়া। ৩১ আগস্ট ২০১৮ তে প্রথম ঘোষণা করা হয় যে, সিনেমার কাজ শুরু হবে । আর এটির ডিরেকশন দেবেন Sam Hargrave । তাদের পাশাপাশি অভিনেতা Chris Hemsworth এই সিনেমায় অভিনয় করবেন । ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে বাকি কাস্টিং নির্বাচিত করা হয়। একগুচ্ছ ভারতীয় অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ভিড়ে ক্রিস হেমসওয়ার্থের অ্যাকশনের দৃশ্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে দর্শকদের মধ্যে। ভীষণ জনপ্রিয় গেম ‘পাবজি’র আদলেই যেন প্রত্যেকটা দৃশ্যে মারপিট করে চলেছেন অভিনেতারা। ভিডিও গেমের মতোই যেন প্লেয়াররা খেলছেন, পাশাপাশি সমস্ত লেভেলের যুদ্ধক্ষেত্র তৈরি। অতিক্রম করতে পারলেই যেন পরের লেভেলে পৌঁছতে পারা যাবে। একদিকে এরকম দৃশ্যায়ন অন্যদিকে বলিউড তথা বাংলার স্পর্শ কিন্তু বর্তমান। ‘মেহেন্দি লাগাকে রাখনা’-র মতো একের পর এক বলিউড গানের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। আবার বাংলা র‍্যাপের ব্যবহারে হলিউড এই সিনেমা বাঙালি দর্শকদের মন খুব সহজেই ছুঁয়ে গেছে।

রক্ত-মাখা শরীর নিয়ে কোনোক্রমে নিজেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন হেমসওয়ার্থ, ছবির প্রথমেই এরকম দৃশ্য দেখালেও তখনও প্রশ্ন একটাই ‘মর্দ কো দর্দ কিউ হো রাহা হ্যায়!’। একই দৃশ্য দেখা যাবে ছবির শেষেও। তার মাঝেই গোটা ঘটনাটিকে আস্তে আস্তে ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে দিয়েছেন পরিচালক। ছবির ক্যামেরা এবং অ্যাকশনে এত বেশি জোর দেওয়া হয়েছে যে প্রেক্ষাপট এবং গল্প আরও বেশি উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। দুজন প্রোটাগনিস্টের সুন্দর চিত্রায়ন ও অন্যান্য চরিত্রগুলোর যথার্থ প্রয়োগ ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। পাশাপাশি ক্রিস এবং রুদ্রাক্ষের কিছু সংলাপ এবং হেমসওয়ার্থ ও হুডার মতো দুই ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’-এর অ্যাকশনকে মাথায় রেখে এই ছবিটিকে ৫-এর মধ্যে ৩. ৫ অনায়াসেই দেওয়াই যায়।


( অভ্র )



পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু