( ঠিকানা )
সন্ধ্যার দুর্যোগান্তে পৃথিবী ভেসে যাচ্ছে অপার্থিব অলীক আলোয়...
জং-ধরা প্রাচীন ট্রাম, ভাঙা স্বপ্ন নিয়ে বসে আছে পিচ-ঢাকা ভেজা রাজপথে।
বিকেলের গায়ে-গায়ে মিশে পিছু নিয়ে একমাথা সন্ধ্যে মেখে ভালোয় ভালোয়...
বছর-কুড়ি পুরোনো বন্ধ দরজাটায় এসে দাঁড়ালাম অবশেষে।
সন্ধ্যের দোয়েল প্রচণ্ড ঝড়ের পর তুমুল বৃষ্টি গায়ে মেখে বসে আছে ছাদের কার্নিশে।
আমি সূর্যপক্ব দিনের প্রান্তরে লক্কা পায়রার মতো ক্রমশ ডানা ঝাপটে গেলাম।
ভাবছি, ক্রমাগত অন্ধকারে হাঁটতে হাঁটতে যেমন পৌঁছে যাই কোনও কবিসম্মেলনে...
তেমনই আঁধার বাড়ির ওই বন্ধ জানলায় আদৌ কিছু কি দেখতে পেলাম?
বাবা আমাকে ঘোর দুপুরে বাড়িতে আটকে রেখে পড়ে শোনাতেন টেনিসন।
পরীক্ষার পরবর্তী ছুটিতে বাবার সঙ্গে গিয়ে কিনে আনতাম নানাবিধ গোলাপের গাছ।
বাবা বলতেন, কবিতা রচনা অন্য একপ্রকার মনুষ্যজাতির কাজ; আচার বা ট্রেডিশন।
বুকে-পেটে দাউদাউ আগুন জ্বলবে কিন্তু পকেটটি সেই ফাঁকাই থেকে যাবে তার।
এখন যেমন কবিতায় আশ্রয় খুঁজি, তেমনই আশ্রয় খুঁজতাম মায়ের আঁচলে।
বর্ণবাহার পঙক্তি সাজিয়ে চমকপ্রদ স্থাননাম দিয়ে ছড়া কাটতাম দুজনে!
মা বলতো, "ঢাকার বাজারে ঢাকের ঢেঁকুড় ঢিঢিক্কারে ঢোঁড়ে"!
আমি বলতাম, "ফাগুনের গুণে সেগুন বাগানে আগুনে বেগুন পোড়ে"!
হ্যাঁ, এই বাড়িটা আজও অনেক কিছু বলে, আমার বয়স ভেঙে দশে নামায় ।
আমায় দেখালো সারা বিকেল খেলে-ছুটে বাড়ি ফিরছি ধুলোয় করে স্নান।
বাবার একটা বই বেরিয়েছিলো - কালো মলাটের ক্ষীণতনু, বড্ড স্বল্পকায়।
তাতে একটা কবিতা ছিলো, "আঁধার মেঘের ভারী বুকে বালকের অভিযান" !
এখন ঘড়ির কাঁটার নিয়ন্ত্রণে এক-একটা দিন মেপে-জুপে
সাজিয়ে ফেলা আমার অভ্যাস।
এখন, পরিমিত আহার, সময়মত নিদ্রা, বুকভরা ধোঁয়া আমার জীবনজুয়ায় তুরুপের তাস !
ক্রমাগত অপ্রয়োজনে বাড়ি ভর্তি করে কেবল নগ্ন আপোষ খুঁজে গেছি ঠিকানার ভাঁজে।
এখন এমনকি এমনও কেউ নেই যে আচমকা সিগারেটটা ফেলে দিয়ে নিজের ঠোঁটে টেনে নেবে!
( অভ্র )