বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

( হলুদ বসন্ত - বুদ্ধদেব গুহ )

" নয়নাকে যে শাড়ি আমি দেবো সে তো নিছক শাড়ি মাত্র নয়। তা আমার ভালোবাসার সুতো দিয়ে বোনা, তাতে যে আমার দুঃখের পাড় বসানো - সে শাড়ির আঁচলার জরিতে যে আমার অবুঝ চাওয়া শরতের আলোয় জ্বলবে।সে শাড়ির সমস্ত মসৃণতায় আমি যে আমার নয়নাসোনার সমস্ত শরীরে মিশে থাকবো --- ছড়িয়ে থাকবো।আমি যে জড়িয়ে থাকবো। "

বাংলা প্রেমের উপন্যাসে নতুন যুগ নিয়ে এসেছে নয়না আর ঋজুর এই রসায়ন।

টানা তিন ঘন্টা ধরে বসে পড়ে ফেললাম আমার অন‌্যতম প্রিয় লেখক শ্রী বুদ্ধদেব গুহ'র বিখ্যাত সাহিত্যকর্মগুলোর একটি এবং ১৯৭৬ সালে 'আনন্দ পুরস্কার'-প্রাপ্ত উপন‌্যাস 'হলুদ বসন্ত'। অল্প কথায় বলতে গেলে, ঋজু নামের এক যুবকের নিজের ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছোট বোন নয়নার প্রেমে পড়াকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে মাত্র নব্বই পৃষ্ঠার বইটার কাহিনি। তবে বৃহৎ পরিসরে ছক কেটে আলাপ করতে গেলে, হলুদ বসন্তকে নিছক প্রেমের উপখ্যান বলা যাবে না কিছুতেই। হৃদয়ের অনুভূতি, অনিশ্চয়তা, মস্তিষ্কের যুক্তির টানাপোড়েন, হিংসা, ক্রোধ, নিজের কাছে নিজে হেরে যাওয়া, ছলকলা-কত ধরণের মানসিক প্রবৃত্তি একই সাথে উঠে এসেছে এই বইয়ের পাতায়। যদিও পুরো গল্প জুড়ে নয়না আর ঋজুর মানসিক অন্তর্দ্বন্দ্বটাই মূল উপজীব্য।

জানি না কেন এই বইটা, বা আরও ভালো করে বলতে গেলে ঋজু আমার ভীষণ কাছের হয়ে থাকবে। ঋজুর জীবনে ঘটে চলা প্রত্যেকটা ঘটনা, আমি অনুভব করতে পেরেছি। লেখকের বর্ণনা বা সাহিত্যশৈলী নিয়ে কিছু বলাই চলে  না কিংবা অসম্ভব সুন্দর বললেও কম বলা হয়!  এই বইতেও জঙ্গলের বর্ণনা যা আছে তা যথারীতি বেশ মনোরম লেগেছে আমার। সবচেয়ে নাড়া দিয়েছে উপন‌্যাসটির শেষের কয়েকটি অনুচ্ছেদ। পড়ে নিজেকে শক্ত রাখা সত্যিই খুব কঠিন। আমি পারিনি নিজেকে ধরে রাখতে। এক চরম দুঃখের ভালো লাগায় মরে গিয়েছি। একজন প্রেমিকের হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতির এমন চমৎকার বহিঃপ্রকাশ খুব কম বইতেই পড়েছি। সত‌্যি, বুদ্ধদেবই পারেন এমন চমৎকার করে দেখাতে! প্রত‌্যেক মুহূর্তে ঋজুর জন‌্য বুক কেঁপে উঠেছে, উপন‌্যাসটা পড়ার সময়।

মানুষ প্রেমে পড়লে অনেক কিছু বদলে ফেলে, ঋজুও বদলাতে থাকে নিজেকে, শিকার করতে ভালোবাসলেও নয়নার কথায় সে তা ছেড়ে দেয়। কিন্তু নয়নার কাছে সে কোনোদিনই মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে না সে। নয়নাকে অন্য কোনো পুরুষের সাথে দেখলে তার শরীর জ্বলে ওঠে। সে নিজেই নিজেকে অক্লান্ত শাস্তি দেয়। কিন্তু নয়নাকে কখনোই ঘৃণা করতে পারে না, তাকে দুঃখ দিতে পারে না, বরং উল্টে নিজের কষ্ট সহস্রগুণ বাড়িয়ে তোলে। ভালোবাসার টানাপোড়েন, সম্পর্ক, ও অনুভূতির ঘেরাটোপে উপন‌্যাসটা সমাপ্ত হয় বেশ এক আবেগঘন আবহে। এবারেও বুদ্ধবাবু হতাশ করেননি আমায়। বরং, মোহিতই করেছেন যথারীতি। কাজেই, 'হলুদ বসন্ত'-কে আমি দেবো ৪. ৫/৫।


( অভ্র )

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু