বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

কষি পথের নৌকো

"আরে ওই দ্যাখ! প্রকাশ এসে পড়েছে।" আনন্দের উত্তেজনায় সুধীর বলে উঠল।

বিনোদ সান্যালের বাগানের আমগাছটির সামনে দল বেঁধে দাঁড়িয়ে রয়েছে সুধীর, বিনয়, পিকু, রোহন আর শ্যামল। খানিক দূর থেকে বন্ধুদের দিকে প্রবল বেগে ছুটে আসছে দলের পান্ডা প্রকাশ। দেখে মনে হবে না, সে মাত্র ছয় বছরের একটি ছেলে। পাড়ার সবথেকে ডানপিটে, দস্যি ছেলে প্রকাশ; দুষ্টুমি বুদ্ধিতে সবাইকে নাজেহাল করে বেড়ায় দিনরাত। সেদিনও তার অন্যথা ঘটল না। বিনোদবাবু তখন দুপুরের খাবার খেয়ে ভাতঘুম দিচ্ছিলেন। সেই সুযোগে প্রকাশ আর তার দলবল আম চুরি করতে ঢোকে ওনার বাগানে। বিনোদবাবু বেজায় কৃপণ স্বভাবের একটি লোক; যাকে বলে গিয়ে হাড়কঞ্জুষ। গাছের সব আম তিনি বাজারে বিক্রি করতেন আর ছেলেপুলেরা কেউ একটিও চাইলে তাদের দুঃছাই করে তাড়িয়ে দিতেন। অগত্যা এইভাবে আম পাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না প্রকাশদের। ওদিকে শিক্ষকমশাইয়ের সেই কথাটাও স্মরণে আছে তার– চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা, যদি না পড়ো ধরা।

অতি সন্তর্পণে গুটিগুটি পায়ে প্রকাশদের দলটি এগিয়ে চলেছে আমচুরির উদ্দেশ্যে। বিনোদবাবুর স্ত্রী নির্মলাদেবী পান খেতে খেতে আচমকাই দোতলার জানালা দিয়ে প্রকাশ আর সুধীরকে গাছে চড়তে দেখে ফেলেন। প্রায় একরকম আর্তনাদ করে স্বামীকে ঘুম থেকে জাগানোর পর ঊর্ধ্বশ্বাসে তিনি বলতে থাকেন, "হায় রে হায়! আজ তোমার সব আম গেল। দ্যাখো গিয়ে, ছেলে-ছোকরার দল আম নিয়ে পালাচ্ছে।"

আধঘুমো চোখদুটো মুছতে মুছতে বিনোদবাবু একটা লাঠি হাতে এগিয়ে গেলেন প্রকাশদের দিকে। লাঠিটা ওদের তাড়ানোর জন্যই রাখা থাকত বারান্দার এককোণে। দূর থেকে বিনোদবাবুকে আসতে দেখে সবাইকে সতর্ক করে দিল পিকু। তারপর আর তাদের দেখে কে! যে যতগুলো করে পারল, ততগুলো আম নিয়ে ছুটে পালাল বাগান ছেড়ে। গাছের কয়েকটি আম কমে যাওয়াতে বিনোদবাবুর তখন মাথায় হাত! ওদিকে ছেলেগুলো দৌড়ে পালাচ্ছে খালপাড়ের সাঁকো ধরে মাঠের দিকে। মাঠের মাঝে বসেছে মেয়েদের হাট। ওরা মিছিমিছি মাটি, বালি, গাছের পাতা, পাথরের কুচি, কাগজের টুকরো, মাটির ভাঁড়, নারকেলের মালা -এসব জোগাড় করে গুছিয়ে বসেছে। এই খেলাটার নাম নাকি রান্নাবাটি! সেইমতো কেউ পাথরের টুকরো সাজিয়ে তার ওপর নারকেলের খোলা রেখে তাতে রান্না করছে, কেউ বা বিভিন্ন উপকরণ বাজার করে নিয়ে আসছে। আজকে ওদের মেনু হলো– ভাত, ডাল, সবজি আর মাছের ঝোল।

পিয়ালী হলো মেয়েদের দলের কর্ত্রী। প্রকাশ এসে পিয়ালীকে বলে, "অ্যাই! তোরা আমাদের খেলতে নিবি?"

পাশ থেকে লতিকা গর্জে ওঠে, "না, কখনোই না। মনে নেই, সেদিন তোরা সবাই মিলে ডাংগুলি খেলছিলিস। আমরা কত করে বললাম যে, আমাদের একটু খেলতে নে তোদের সাথে। তোরা কি নিয়েছিলিস?"

শ্যামল বলল, "আরে, ডাংগুলি তো ছেলেদের খেলা। আর তোরা তো মেয়ে। খেলতে পারতিস আমাদের সাথে?"

শ্যামলের বোন শিউলি তখন মুখ বাঁকিয়ে বলল, "রান্নাবাটিও তো মেয়েদের খেলা।"

সবাইকে থামিয়ে পিয়ালী বলে, "তোদের আমরা খেলতে নিতে পারি, যদি তোরা আমগুলো আমাদের দিয়ে দিস।"

প্রকাশ জিজ্ঞেস করল, "কেন? আম দিয়ে কী করবি?"

"আজ আমাদের মেনুতে চাটনি বাদে সবকিছুই হয়েছে। তোদের আমগুলো পেলে আমরা চাটনি বানাতাম। তারপর সবাই মিলে একসাথে ভোজ করব। তোরা ছ'জন আমের খোসা ছাড়িয়ে ওগুলো কেটে দিবি আর আমরা চারজন রান্না করব। রাজি?"

"আচ্ছা, তাই হোক। তবে চারজন কেন? তোদের দলের আরেক জন কই?"

"মনীষা? ওকে তো আমরা বাদ করে দিয়েছি, বাজার করতে যায়নি বলে।"

অদূরে একটা কালভার্টের ওপর বসে মনীষাকে কাঁদতে দেখে সুধীর বলে ওঠে, "দ্যাখ, মনীষা ওখানে একা একা কাঁদছে। ওকে আবার খেলতে নে। সবাই মিলেমিশে খেলার কতই না মজা!"

ছেলে-মেয়েদের দলটি মনীষার কাছে গিয়ে গোল করে ঘিরে ধরল তাকে আর খেলতে লাগল, 'মেলা মেলা মেলা...'। তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে বসে খেতে শুরু করল আজকের মহাভোজ। এইভাবেই হাসি, মজা, আনন্দ আর দুষ্টুমিতে একটু একটু করে বড় হয়ে উঠতে থাকে তারা।

৮ বছর পর...

সময়ও আস্তে আস্তে অনেকটা এগিয়েছে এই আট বছরে। প্রকাশের এখন ক্লাস নাইন। তাদের দলটিও বেশ ছোট হয়ে গেছে এই কয়েকটা বছরে। রোহন, লতিকা আর বিনয় বাড়ি বদলের কারণে অন্যত্র চলে গেছে। মনীষা আর লীনাও বাবার কাজের সূত্রে চলে গেছে অনেক দূরের দেশে। থাকার মধ্যে আছে কেবল প্রকাশ, পিকু, সুধীর, শ্যামল, পিয়ালী আর শিউলি। দুপুরে ঝিলের জলে স্নান করা এবং বিকেলে লুকোচুরি খেলাটা ওদের এখন নিত্য রোজনামচায় পরিণত হয়েছে। ওদের মধ্যে যে একদিন কোনো কারণে অনুপস্থিত থাকত, পরের দিন তাকেই খেলায় চোর হতে হতো।

সত্তরের মাঝামাঝি দশকে কয়েকজনের বাড়িতে এসেছে সাদা-কালো টিভি আর হাতে গোনা দু-একজনের ঘরে রঙিন টিভি এসেছে। প্রকাশদের বাড়িতে তখন সাদা-কালো টিভি। হঠাৎ করে চ্যানেল চলে গেলে উঁচু ছাতার মতো অ্যান্টেনাটাকে ঘোরাতে হয় বার কয়েক। তবুও মাঝে মাঝে তাতে চ্যানেল ফেরতের ভরসা থাকে না। বিশ্বকাপ খেলা দেখতে তারা সকলে দল বেঁধে পাশের পাড়ার নিমাই মিত্রের বাড়িতে গিয়ে ভিড় জমায়। রঙিন টিভিতে ইন্ডিয়ার ম‍্যাচগুলো দেখার উত্তেজনায় সকলেই উদগ্রীব হয়ে থাকে। সেখানে অবশ্য অন্য পাড়ার ছেলে-মেয়েরাও থাকে। খেলা বিষয়ক নানান কথা কাটাকাটি তাদের মধ্যে লেগেই চলে প্রায়শই।

পিয়ালী তার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে তা দিয়ে নৌকো গড়ে ভাসিয়ে দেয় গাঙের জলে। আর মনে মনে আশা করে, 'একদিন এই নৌকো বার্তা নিয়ে ঠিক গিয়ে পৌঁছবে তার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুদের বাড়ি। মনীষা, লীনা, রোহন, বিনয়, লতিকা... সকলের কাছে। ওরা হয়তো সকলে খুব ভালো আছে। হয়তো সেই ভালো থাকার বার্তা নিয়ে পুনরায় ফিরে আসবে নৌকোগুলো। এইভাবে একদিন হয়তো ফিরে আসবে তার হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরাও।'

শ্যামলের বাবা খবর শোনার জন্য একটা নতুন রেডিও কিনেছে। শ্যামল আর শিউলির সেটা নিয়েই সময় কেটে যায়। পরবর্তী কয়েক বছরে তাদের দলটা আরও ছোট হয়ে গেছে। এখন কেবল প্রকাশ, সুধীর আর পিয়ালী। প্রকাশ আর আগের মতো ডানপিটে নেই। নানান ভালো গুণ ফুটে উঠেছে তার চরিত্রে। পাড়ার সমস্ত মানুষের বিপদে-আপদে তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় সে। বছর কয়েক বাদে পিয়ালীও বিয়ে হয়ে চলে যায় তার শ্বশুরবাড়িতে। এগারো জনের একটি সম্পূর্ণ দল মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই পরিণত হলো দু'জনে! তবে প্রকাশ আর সুধীর শৈশব থেকেই খুব ঘনিষ্ট। ওরা দু'জনে প্রতিজ্ঞা করেছে– যা কিছুই হয়ে যাক না কেন, কোনো পরিস্থিতিতেই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ত্যাগ করবে না। এরপর ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে সময়। বদল আসে মানুষের স্বভাব, চরিত্র, রুচি আর অভ্যাসেও।

কয়েক যুগ পর...

একবিংশ শতাব্দীতে প্রায় সকলের ঘরেই আজ রঙিন টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, আরও কত কী! প্রকাশ এখন 'ছোকরা' থেকে 'বাবু' হয়ে উঠেছেন। বরং তার চেয়েও উৎকৃষ্ট সম্বোধন করা যেতে পারে রিটায়ার্ড টিচার 'প্রকাশরঞ্জন চৌধুরী' নামে। বর্তমানে তিনি তিন বছরের একটি শিশুর ঠাকুরদা। বছর তিনেকের ছোট্ট যশ যখন হামাগুড়ি দিয়ে তাঁর বুকের ওপর খেলে বেড়ায়, তখন নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে যায় প্রকাশবাবুর। কতটা সোনার আলোয় ছেয়ে থাকত সেইসব দিনগুলো, আর আজ...

যশ একটু বড় হলে তাকে ইস্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসার কাজটা তিনিই করতেন। যশের বাবা-মা দু'জনেই নিজের নিজের অফিসের কাজ সামলাতে ব্যস্ত। আরও কয়েক বছর পর যশ যখন ক্লাস সেভেনে ওঠে, তখন সে-ও ব্যস্ত হয়ে পড়ে নিজের পড়াশোনা নিয়ে। তিনজন টিউটরের কাছে পড়ে সে, বাড়িতে এসেও একজন পড়িয়ে যায়। স্কুল থেকে এসে বসার অবসরটুকুও পায় না যশ। কোনোরকমে ভাত'কটা মুখে পুরে চলে যায় টিউশনে, তারপর ফিরে এসে আরেকটা... এভাবেই স্রোতের প্রবহমান ধারায় যেন বয়ে চলে সময়ের নৌকো।

একদিন প্রকাশবাবু যশকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, "আচ্ছা দাদুভাই, তুমি চিঠি লিখতে পারো?"

"না তো, তাতুভাই! তুমি কীসের কথা বলছ, বলো তো?"

"আচ্ছা ধরো, তোমার একজন বন্ধু এখান থেকে অনেক দূরের কোনো এক দেশে চলে গেছে। তুমি তার খবর নেবে কেমন করে?"

"কেন? সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে তার সাথে চ্যাট করব কিংবা ফোন করে নেব। আর নাহলে মেইল করে খবর নেব তার।"

"বুঝলাম। আচ্ছা ধরো, মাধ্যমগুলো যদি না থাকত, তখন তুমি কী করতে?"

মাথায় হাত দিয়ে বেশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে যশ উত্তর দিল, "ধুর! এরকম হতেই পারে না কখনও।"

"কেন হতে পারে না দাদুভাই?" কিছুক্ষণ থেমে মৃদুস্বরে প্রকাশবাবু বললেন, "আচ্ছা, বেশ! এসো তো আমার কাছে। আমি আজ তোমায় চিঠি লেখা শিখিয়ে দেবো।"

একটা নতুন উদ্দীপক ব্যাপার মনে করে যশ প্রথমে আগ্রহ দেখায় ঠিকই, কিন্তু বেশ খানিকটা দেখার পর অধৈর্য হয়ে ওঠে তার মন। অস্থিরতা মিশ্রিত কণ্ঠে সে বলে, "ধুর! তুমি বড্ড ব্যাকডেটেড, তাতুভাই। মোবাইল, ল্যাপটপ থাকতে শুধু শুধু হাতে লিখে টাইম ওয়েস্ট করার কোনো মানে হয় কী! আমাকে এবার ছাড়ো তো।"

"সেকি দাদুভাই? কোথায় যাবে? শিখবে না চিঠি লেখা?"

"না, তাতুভাই। এসব বোরিং জিনিস শিখতে একটুও ভালো লাগছে না আমার। আমি এখন বাপির মোবাইলে পাব-জি খেলব। তুমি খেলবে?"

"পাব-জি মানে!"

হো হো করে হেসে ওঠে যশ। তারপর হাসি থামিয়ে বলে, "তুমি না সত্যিই ভীষণ ব্যাকডেটেড গো তাতুভাই। পাব-জি হলো একটা গেম, যেটা..."

ওকে থামিয়ে প্রকাশবাবু বলেন, "না, দাদুভাই। থাক! তোমার গেম তুমিই খেলো গিয়ে।"

মুখভর্তি হাসি নিয়ে প্রকাশবাবুর ঘর থেকে দৌড়ে গেল যশ নিজের ঘরে। প্রকাশবাবুর ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি খেলে ওঠে। একমনে তিনি চিন্তা করে চলেন ফেলে আসা সেইসব সময়ের স্মৃতিগুলো। বর্তমানে দাঁড়িয়েও আজ তাঁর ভীষণ ইচ্ছে করছে অতীতে ফিরে যেতে। নিজের মনের অজান্তেই মৃদু কণ্ঠে বিড়বিড় করে তিনি বলতে থাকেন, "কত ভালোই না ছিল সেইসব দিনগুলো। কত সুখ, কত শান্তি আর কত স্মৃতি অবিরাম ভেসে চলেছে সময়ের জোয়ারে। সত্যিই! আজ উপলব্ধি করতে পারছি, মানুষ একমাত্র সময়ের কাছেই পরাজিত। অতীতের সেই দিনগুলো প্রযুক্তিবিদ্যার দিক দিয়ে এতটা সমৃদ্ধ ছিল না ঠিকই, কিন্তু একথা নিশ্চিতভাবে বলা যেতে পারে– দিনগুলো ছিল অত্যন্ত প্রাণোচ্ছল, হাসিখুশির রঙিন আলোয় ভরা। প্রতিটা জীবনের ভাষা মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যেত সুদূর লক্ষ্যপথে আর জীবনের নানান রঙে ফুটিয়ে তুলত অন্তরের আঙিনাকে। বর্তমান যুগের মানুষদের মধ্যে এগুলোর কোনোটাই আর চোখে পড়ে না। আধুনিক সভ্যতা যেন কোনো ছলনার দ্বারা শিশুদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের সুন্দর শৈশবটাকে। তাদের জীবনে এখন খেলা মানে কেবলই মোবাইল গেম বা কম্পিউটার গেম। হায়! কী রহস্যময় সময়ের মায়া! তবে বোধহয় এতটা উন্নতি না ঘটলেই বেশি ভালো হতো। আর কখনও ফিরে আসবে না সেইসব দিনগুলো, কখনোই তো ফিরবে না! বিনোদবাবুর সেই আমবাগান, ডাংগুলি খেলা, খালপাড়ের সাঁকো ধরে সবুজ মাঠের পথ, বিকেলের নরম রোদ গায়ে মেখে একসাথে দৌড়ে বেড়ানো, মেয়েদের হাটবাজার, রান্নাবাটি, ঝিলের জলে সাঁতার কাটা, এগারো জনের একটা সম্পূর্ণ দল, তাদের মধ্যে প্রায়শই ঝগড়া-খুনসুটি-আড়িভাবের সম্পর্ক -এ সমস্ত কিছুই আজ হয়ে গেছে রূপকথা।"

দু'চোখের কোণে লেগে থাকা অশ্রুবিন্দুগুলি মুছে নিলেন প্রকাশবাবু। মনে মনে ঠিক করলেন, 'আজ আমি আবার চিঠি লিখব আমার বন্ধুদের জন্য।' চিঠি লিখতে লিখতে হঠাৎই মনে পড়ে গেল, পিয়ালীর চিঠি প্রেরণের উপায়টির কথা। একসময় পিয়ালীকে জলে নৌকো ভাসাতে দেখে, তা নিয়ে অনেক কৌতুক করেছিলেন প্রকাশবাবু। তবে আজ যেন সেইদিনেরই হারানো স্মৃতিকে পুনরায় বাস্তবায়িত করার ইচ্ছে জাগে তাঁর মনে। দশটি চিঠিকে একত্রিত করে গুছিয়ে নিলেন তিনি। তারপর চলে গেলেন গঙ্গার ঘাটের দিকে। বিকেলের পড়ন্ত রোদ তখন নদীর সচল জলরাশির ওপর খেলা করছে, মৃদুমন্দ বাতাস খেলে বেড়াচ্ছে তাঁর চারপাশে। তবুও, এগুলোর কোনোকিছুই আজ যেন প্রকাশবাবুর মনে প্রশান্তি দিতে পারছে না। এরপর কাগজগুলো দিয়ে একটা একটা করে নৌকো বানিয়ে সেগুলোকে তিনি ভাসিয়ে দিলেন নদীর জলে। মনের অজান্তেই হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে তিনি বলে চললেন, "আমার শৈশবের প্রতিটা মুহূর্তকে আজ আমি উজাড় করে দিলাম তোমাদের উদ্দেশ্যে। আমার বিশ্বাস, একদিন ঠিক তোমরা আমার বন্ধুদের খবর নিয়ে আসবে। যাও, সাবধানে এগিয়ে চলো আপন গন্তব্যের লক্ষ্যে।"

আকাশের বুক চিরে সন্ধের আঁধার ঘনিয়ে আসছে। নদীর কালো জলে তাঁর ছায়াটাও এখন আর নেই। তবুও, ঢেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে নৌকোগুলো যেন এগিয়ে চলেছে কষি পথ ধরে, আর একবার করে তাকিয়ে নিচ্ছে প্রকাশবাবুর অমলিন হাসি মুখটির দিকে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু