বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

সুইসাইড নোট

সুইসাইড নোট


আমি আর অয়ন হস্টেলে একটা রুম শেয়ার করে থাকি।আমরা দুজনেই এই হস্টেলে এসছি দু বছর আগে। সেম কলেজ,সেম সাবজেক্ট, সেম ইয়ার আমাদের।


তবে কয়েকদিন ধরে অয়নের শরীরটা খুব খারাপ যাচ্ছিল।চোখের নীচে কালো গভীর দাগ দেখে মনে হতো যেন কত রাত ঠিকমতো ঘুমায়নি। দিন দিন শরীর ভেঙে যাচ্ছিল।সামনে আমাদের ফাইনাল সেমিস্টার ছিল। পড়ার ভীষণ চাপ।অয়ন ওর এই শরীর খারাপ নিয়েই পরীক্ষা দেবে বলে ঠিক করেছিল।কিন্তু পরীক্ষার আগের দিন অয়নের শরীর আরও ভেঙে পড়লো। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারলো না।তাও কোনোভাবে অয়ন পরীক্ষাটা দিল কিন্তু পরীক্ষা একদমই আশানুরূপ হলো না। এর মধ্যেই ঘটে গেছিল আর একটা বিপদ।একদিন রাতে শুয়ে আছি দেখি অয়ন ওর বুকের বামদিকটা ধরে ক্রমাগত গোঙানির মতো আওয়াজ করে যাচ্ছে।কাছে গিয়ে দেখলাম ওর মুখটা অস্বাভাবিক রকম ব্যাথায় কুঁচকে গেছে। কোনোভাবে কষ্ট করে আমায় বললো তার বুকে বীভৎস ব্যাথা হচ্ছে।আমি সঙ্গে সঙ্গে হস্টেলের সবাইকে ডাকতে শুরু করলাম। হস্টেলের দারোয়ান কাকা এই অবস্থা দেখে ছুটলেন গাড়ি আনতে। গাড়ি এলে সবাই মিলে অয়নকে ধরে গাড়িতে তুলে শুইয়ে দিল। আমি ওর মাথাটা আমার কোলে রেখে গাড়িতে বসলাম।আমাদের সঙ্গে আমাদের একজন স্যারও গাড়িতে উঠে বসলেন।তিনি খুব ব্যাস্ত হয়ে অয়নের বাড়িতে ফোন করতে লাগলেন।আমি দেখেছিলাম অয়ন তখনও চোখ বুজে ছিল।ব্যাথাটা মনে হয় আরও বেড়ে গেছে। হসপিটালে পৌঁছে ডাক্তার অয়নকে দেখে বললেন "অ্যাম সরি।আর কিছু করার নেই। হি ইস নো মোর"। হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে অয়নের। ডাক্তার বললো অত্যাধিক ডিপ্রেশনের কারণেই এটা হয়েছে।সবাই এটা ভেবেই অবাক হয়ে গেল যে এমন কি ডিপ্রেশন ছিল অয়নের ।সবাই আমাকে জিজ্ঞেস করলো কিন্তু আমি কিই বা বলবো অয়ন তো আমাকেও কিছু বলতো না।


পরেরদিন সকালে অয়নের মা বাবা এসেছিল অয়নের বডি নিয়ে যেতে। অয়নের মা পাগলের মতো কাঁদছিল। অয়নের বাবা অয়নের মাকে শান্তনা দিচ্ছিলেন।এইসব দেখে আমার মন খারাপ হয়ে গেছিল।যতই হোক একসাথে থাকতাম আমরা।কতগুলো দিন একসাথে কাটিয়েছে। আমি আর হসপিটালে থাকতে পারিনি।হস্টেলে ফিরে এসেছিলাম।নিজের ঘরে এসে টেবিলের সামনের চেয়ারটায় বসে পরেছিলাম।মনটা সেদিন ভীষণ খারাপ হয়ে গেছিল। চেয়ারে বসে বসে আমি অয়নের কথা ভাবছিলাম।চোখ থেকে জল বেরিয়ে এসেছিল।কিন্তু আমার মনে তো অন্য কিছুই ছিল........






আমার চোখের জল অন্য কিছু বলছিল। আমি দুঃখী নই,আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না।কেনই বা হবে?? কারণ আমিই তো.....হা...হা....হা....আমিই তো অয়নকে খুন করেছি। হ্যাঁ আমিই।



বেশ কিছুদিন আগে অয়নের সাথে ঘরে বসে গল্প করছিলাম হঠাৎ কারেন্ট চলে যাওয়ায় দেখলাম অয়ন আমার কাছে সরে এলো।আমি মোমবাতিটা জ্বালাতেই দেখলাম অয়ন পুরো ঘেমে উঠেছে। আর ওর চোখ দুটো বিস্ফারিত।মনেই হলো খুব ভয় পেয়েছে।আমি ব্যাপারটার বেশ মজা নিচ্ছিলাম।তখনই ও কথায় কথায় আমাকে বলে ফেলে ওর একটা উইকনেসের কথা। অন্ধকারে আর ভূতে ভীষণ ভয় পায় অয়ন।ওর হার্টে ছোটোবেলায় একটা অপারেশন হয়েছিল তাই ওর হার্ট ভীষণই দুর্বল। ব্যাস আমার হাতে আপনাআপনিই এসে গেল অয়ন নামক কাঁটাটাকে উপরে ফেলার তুরুপের তাস। আমি রোজ রাতে ওকে ভূতের গল্প শোনাতে শুরু করলাম।দেখতাম ও ভয়ের চোটে দু হাত দিয়ে কান চেপে বন্ধ করে  রাখতো। দিন দিন ওর ভয় আরও বেড়ে গেল।ওর রাতের ঘুম উড়ে গেল।আমি শুয়ে শুয়ে দেখতাম ও বিছানায় শুয়ে এদিক ওদিক দেখছে আর ভয়ে কাঁপছে। আমি বিভিন্ন ভাবে অয়নকে ভয় দেখাতাম।আস্তে আস্তে আমি জলে নেশার ঔষুধ মিশিয়ে ওকে খাওয়াতে শুরু করি।ধীরে ধীরে অয়নের শরীর ভেঙে পড়তে লাগল। ভয়ানক স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল অয়ন। প্রায় ১ বছর ধরে ওর ওপর এইরকম অত্যাচার ও সহ্য করেছিল।নিজের ভয়ের কারণ ও কাউকে বলতে পারতো না।কেউ ওর কথায় বিশ্বাস করতো না।


সেইদিন রাতে আমি ঘরের পাখার সাথে একটা মানুষের কাটা মুন্ডুর মতো ভীষণ ভয়ংকর মাস্ক লাগিয়ে রেখেছিলাম।অয়ন টেরও পায়নি।তারপর রাতে যখন ওর ঘুম ভেঙে যায় আর ও চোখ খুলে দেখে ওর মুখের ওপর একটা মানুষের কাটা মুন্ডু ঝুলছে, ভীষণ জোরে চিৎকার করে ওঠে।এরপরেই ওর বুকে ব্যাথা শুরু হয়।সেই সময় ও অজ্ঞান হয়ে গেছিল। ওকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় মাঝ রাস্তাতেই ওর জ্ঞান ফিরে আসে।কিন্তু তখনও ওর বুকে ব্যাথাটা ছিল। ও আমার কোলেই শুয়ে ছিল তাই ও চোখ খুলতেই আমাকে...না না আমায় নয় সেই কাটা মুন্ডুটা দেখেছিল মানে আমি দেখিয়েছিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ও চিৎকার করতে যাচ্ছিল কিন্তু আমি ওর মুখ চেপে ধরি আর তার কিছুক্ষণ পরেই অয়নের শরীরটা স্থির হয়ে যায়। হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তারাও বলে হার্ট ফেলিয়রের কারণেই মৃত্যু হয়েছে। সবাই তাই মেনে নেয়।কেউ আমার ওপর সন্দেহও করে না।এটাই তো আমি চেয়েছিলাম। সবকিছু আমার প্ল্যানমাফিকই হয়েছিল।কিন্তু....



কিন্তু এমনও যে হতে পারে তা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি।এবার যেটা আমার সাথে হতে শুরু করলো সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল।


আস্তে আস্তে আমি অয়নকে দেখতে শুরু করলাম। হ্যাঁ অয়নকে।ঘুমের মধ্যে, ঘুম থেকে উঠলে, সবসময়। সবসময় আমি ওকে দেখতে শুরু করলাম। ও সবসময় আমার পাশে বসে থাকতো।আমায় দেখতো,আমার দিকে তাকিয়ে অদ্ভুতভাবে হাসতো।


ভয় কাকে বলে আমি ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম।

ও খালি আমায় একটা কথাই বলতো "এই দ্যাখ আমি এখন আর ভয় পাইনা অন্ধকারে কিন্তু তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?" বলেই কি অদ্ভুতভাবে হাসতো।সেই হাসির আওয়াজ এতটাই বিকট।আমি আমার কান বন্ধ করে দিতাম।ওর সেই ভয়ানক আওয়াজে আমার অন্তরাত্মাও কেঁপে উঠতো।অয়নের চেহারা ভীষণ ভয়ানক হয়ে উঠেছিল।


আমি ধীরে ধীরে ডিপ্রেশনে যেতে শুরু করলাম।ও সবসময় আমার চারপাশে ঘুরতো।ওর ওই ভয়ানক চোখ না আমায় শান্তিতে বাঁচতে দিছিল আর নাই মরতে।আমি কাউকে কিছু বোঝাতে পারছিলাম না।সবাই আমাকে পাগল ভাবতে আরম্ভ করলো।হস্টেল থেকে আমায় বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হলো।সেখানেও.... সেখানেও অয়ন আমার পিছু ছাড়লো না।কতগুলো রাত আমি ঘুমাতে পারিনি।আস্তে আস্তে আমি মানসিক রোগী হয়ে উঠছিলাম।চিল্লাতাম,অদৃশ্য কিছুকে মারার জন্য তেড়ে যেতাম,কাঁদতাম।আমার বাড়ির লোক আমায় নিয়ে চিন্তায় পরে গেল।তারা আমায় অ্যাসাইলামে পাঠাবে বলে ঠিক করতে লাগলো। আমি কাউকে বোঝাতে পারলাম না যে এবারে অয়নের আত্মা একটা পারফেক্ট মার্ডার প্ল্যান করেছে।যতক্ষণ না কার্যসিদ্ধি হচ্ছে ততক্ষণ ও আমায় ছাড়বে না। আমি আর এইসব সহ্য করতে পারছি না।আমার আত্মহত্যাই এর প্রমাণ।


ইতি-


অয়নের খুনী সুমিত


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু