বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

সর্ববেত্তা

সর্ববেত্তা


সংযুক্তা ব্যানার্জী চক্রবর্তী



শিবুদাকে এপাড়ায় সবাই চেনে কারণটা কিন্তু এ যুগে একটু অদ্ভূতই মনে হবে। তবে আমাদের ছোটবেলায় অদ্ভূত লাগতো না কারো বরং অনেকের কাছেই স্বাভাবিক ছিল। শিবুদার বৌ খুব একটা বাইরে বের হত না কারণ বৌদি বাজা মেয়েমানুষ, যার নাকি কোনো শুভকর্মে যোগ দেওয়া বারণ। আর বাজা বৌ যদি কারো থাকে তাহলে সাতসকালে তার মুখ দেখলে নাকি দিন খারাপ যায়। গ্রামেগঞ্জে এমন কুসংস্কার যুগ যুগ ধরে চলে আসছিলো সেসময়। সেদিন ছিল জন্মাষ্টমী পূজার দিন। বৌদি প্রতিবছরই এইদিন একটু পূজা করে আর পাড়ার সবাইকে ভোগ খাওয়ায়।বাজারটাজার সব আগেই সারা হয়ে গিয়েছে। ভোর ভোর উঠে বর বৌ পূজার কাজ সারতে গিয়ে খেয়াল করলো মিছরী আনা হয়নি। গোপালকে মাখনমিছরী না দিলে কি করে হবে! তাই শিবুদা তাড়াতাড়ি করে বেড়িয়ে পড়লো।আরেকটু পড়ে গেলেও হত কিন্তু শিবুদা তো জানে পাড়ার কেউ সকালে ওর মুখ দেখতে চায় না। নিজের খেয়ালে হেঁটে চলেছে, হঠাৎ একটা কান্নার শব্দে শিবুদা তাকিয়ে দেখেন উনি তোর্ষানদীর পাড়ে চলে এসেছেন আর সেখানে একটি কম বয়সী মেয়ে একটা বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সমানে কেঁদে চলেছে।আর আমিনা মানে ওদের বাড়ীতে একসময় কাজ করত, সে মেয়েটাকে বকে চলেছে। শিবুদা দাঁড়িয়ে পড়ে। আমিনার সাথে কথা বলে জানতে পারে মেয়েটির  গতবছর বিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ওর শ্বশুরবাড়ী থেকে ওকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এই বাচ্চাটা রেখে কি হবে? বরং বাচ্চাটা না থাকলে মেয়েটাকে আবার সাদি দিতে পারবে। দুদিন হয়ে গেল মেয়েটা কিছুতেই বাচ্চাটাকে ছাড়ছে না। আমিনা নিজের মনেই বলে চলেছে -' যত জ্বালা সব আমার। আরে মুখপুড়ী তোর সোয়ামী দিল্লী গেছে এক বছর হইতে চলল, ও হারামজাদা ঐখানে আবার সংসার পাতছে। পুরুষমানুষরে বিশ্বাস নাই রে।' শিবুদা কি আর করবে এমন অবস্থায,তারমধ্যে আর জন্মষ্টমীর পূজার কাজ আছে। তাই আস্তে আস্তে হাটতে থাকে। মনে মনে ভাবে যারা চায় না ভগবান তাদের ঘরে দেয় আর ওরা এত চেয়েও পায় না।

এমন সময় আমিনা ডাক দেয় - দাদাবাবু, একটু শোনেন।

শিবুদা পেছন ফিরে তাকায়।আমিনা আবার বলে-

একটু শোনেন।

শিবুদা এগিয়ে আসেন। আমিনা তার দুই হাত জোর করে বলে, দাদাবাবু কিছু মনে কইরেন না একটা কথা কই? শিবুদা তাকিয়ে থাকেন ওদের দিকে।আমিনা বলে, দাদাবাবু পোলাটারে লয়া যান আপনি। আজকের কথা কেউ জানবো না, হাতে কইরা মাইরাও ফেলবার পারতেছি না যে, কি করুম কন! শিবুদা অবাক হয়ে যায়  এমন প্রস্তাবে। তারপর চোখের সামনে বৌ অপর্ণার মুখটা ভেসে ওঠে। শিবুদা জানে অপর্ণা বাজা মেয়ে নয়, দোষ তার নিজের শরীরের। হাত বাড়িয়ে দেয় আমিনাদের দিকে। বাজার ভুলে ছেলে কোলে বাড়ী ফেরেন।


বাড়ী ফিরে অপর্ণাকে ডাক দেয় শিবুদা।বৌ এলে তার হাতে তুলে দেয় কাপড়ে জড়ানো পোটলাটা।শিবুদার বৌ অবাক হয়ে চেয়ে থাকে শিশুটির দিকে।শিবুদা হেসে বলেন, তোমার গোপাল দিলো গো।অপর্ণাকে ছেলে পাওয়ার কথা খুলে বলেন শিবুদা।শিবুদার বৌ শিবুদাকে বাজারে পাঠান ছেলের জন্য নতুন জামাকাপড়, দুধের কৌটো, বোতল আর একটা সুন্দর দোলনা কেনার জন্য।


সেই জন্মষ্টমীর দিন শিবুদার বাড়ীতে একটা পিঁড়িতে অপর্ণা শিবুদার বড়পুত্র ননীচোরা গোপাল  আর একটা পিঁড়িতে হাতপা নাড়িয়ে শুয়ে শুয়ে পূজোর আনন্দ নিল গোপালের ছোটভাই। অপর্ণা বৌদি তার ছোট ছেলের নাম রেখেছে সর্ববেত্তা, আর এই ছেলেকে দেখে রাখার ভার দিয়েছে বড় পুত্র গোপালকে।সন্তান অভাবে এক জন্মাষ্টমীতে ওকে ঘরে এনেছিল। এখন দুই ছেলের জন্মদিন একসাথে প্রতিবছর জন্মাষ্টমীতেই পালন করেন ওরা।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু