বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

পানের জাদু

মজার গল্প লিখবো ভেবে বসে আছি বহুক্ষণ, পুরোনো স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম যদি কিছু মনে পড়ে ।

আর ভাবতে গিয়েই মনে পড়ে গেলো কলেজ জীবনে এক শীতের সকালের কথা, যা আজীবন মনে থাকবে আমার |

সেদিনটা ছিল পয়লা জানুয়ারি|স্যারের কাছে যাচ্ছি পড়তে |

সকাল সাতটায় ক্লাস ।

ওমা ! পৌঁছে দেখি সব বন্ধুরা স্যার কে ধরেছে "স্যার আজ খাওয়াতে হবে ,আজ ফার্স্ট জানুয়ারি  ,কেক খাব ইত্যাদি ইত্যাদি ",

সে স্যার তো কিছুতেই রাজি নয় । খালি বলে যাচ্ছেন" পরে একদিন ,আজ নয় ,আগে ক্লাসটা করো "এসব দেখে আমিও যোগ দিলাম ওদের সঙ্গে,"ও স্যার ,হ্যাঁ স্যার ,খাওয়ান স্যার, শুনুন না ও স্যার "।

শেষ অব্দি স্যারকে রাজি করাতে না পেরে সবাই বললো "তাহলে স্যার আজ ছুটি দিন" ।

তিতি বিরক্ত স্যার যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন, আর কিছু না বলে সেদিনের মত ছুটি দিয়ে দিলেন ।

এবার আমরা কি করব সাত  সকালে ,বাড়ি ফিরলে মা বকবে সবার ,তাই ঠিক হল যেমন টাইমে ফিরি তেমনই ফিরব ,এখন চল সবাই মিলে কফি খাই ।


খুব ভালো কথা ।সবাই রাজি ।বাস রাস্তায় চলে এলাম ।ও বাবা.....তখন সাতটা পনেরো , সবে উনুনে আগুন দিচ্ছে ।আর কফি পাওয়া যাবেনা সেখানে ,চা পাওয়া যাবে । এদিকে আমরা তো চা খাবো না ,তাই কফি খোঁজার জন্য একটু এগোলাম আমরা ।

কিন্তু এমনই কপাল ,যে কটা দোকান পেলাম সবই চা এর দোকান ,কফি নেই ।

কিন্তু আমাদের তো কফিই খেতে হবে ।

হাঁটতে হাঁটতে গল্প করতে করতে কখন পৌঁছে  গেছি বিবেকানন্দ মোড়ে ,সেখানেও কফির দোকান নেই ।

কি কপাল সত্যি । রাস্তার ডান ফুটে একটা  স্ন্যাকসের  দোকান খুলেছে সবে ,জল দিচ্ছে দোকানের বাইরে ,সেই দোকানে যাওয়ার ঠিক হল । ক্ষিদে পেয়েছে ততক্ষণে কিন্তু দোকানে ঢুকে কেক ,পেস্ট্রি না খেয়ে আইস ক্রিম দেখে ইচ্ছা হলো ।

ব্যস যেমন ভাবা তেমনি কাজ ।

সেই শীতের সকালে খালি পেটে আইস ক্রিম খাওয়া হয়ে গেলো ।তখন নটা বাজে ।ওই দোকান থেকে বেরিয়ে এবার যে যার বাড়ির বাস ধরব ,হঠাৎ ওই দোকানের পাশেই  একটা পানের দোকান দেখে তারকের ইচ্ছে হলো পান খাওয়ার। গেলাম সবাই মিলে ।ঠিক হল সবাই পান খাব । আমি কোনদিন পান খেতাম না ,কিন্তু খাবনা বললেও সেদিন খেতেই হবে এমন ব্যাপার ।

পানের অর্ডার  দিয়ে দেখি সে বিরাট বড় পান পাতা তার মধ্যে আবার একটা পাতা অর্ধেক দিয়ে দোকানদার পান সাজতে শুরু করলো ।আর তার মধ্যে যে কতো অজস্র রকমের মশলা দিলো তার ঠিক নেই ।শেষে পান টা মোড়ানোর পর যে সাইজ হলো সেটা একবারে মুখে ঢোকানো খুব মুশকিলের ব্যাপার ।

আমরা মানে আমি ,মিমি ,রাজিয়া ,অরিজিত ,তারক ,পম্পা আর কৌশিক  মোট সাত জন ছিলাম  তাই চারটে পানের অর্ডার দিলাম ।সবাই হাফ করে খাব আর তারক একটা গোটা খাবে ।

আমার কৌতুহল একটু বেশি ,যে সব মশলাগুলো দিচ্ছিল পানের মধ্যে  নাম জিগগেস করতে  লাগলাম দোকানদার কে ,সেও বলতে লাগলো ,শেষে মিমি আমাকে জোর ধমক লাগালো ওদের সঙ্গে গল্প না করে কেন এত প্রশ্ন করছি দোকানদার কে ।তাইসব কটার নাম আর জিজ্ঞেস করা গেলো না ।

কিন্তু প্রতিটা পানের মধ্যে সব শেষে একটা সাদা গুঁড়ো মত কিছু দিচ্ছিল । সে যাই হোক সবাই মিলে পান নিয়ে অর্ধেক করে খেয়ে যে যার বাড়ির বাস ধরলাম ।

তখন দশটা বেজে গেছে ,ততক্ষণে আমাদের বাড়ি পৌঁছে যাওয়ার টাইম হয়ে গেছে কিন্তু মোবাইল ছিল না আমাদের তখন যে বাড়িতে  খবর দেবো ।এদিকে রাস্তা ভীষণ জ্যাম ।বাস আর এগোয় না ।বাসে ওঠার কিছুক্ষণ পর দেখি আর যেন চোখ খুলে বসতে পারছিনা ,হঠাৎ  এত ঘুম পেতে লাগলো, ঘুমে ঢুলতে ঢলতে বেশ কয়েকবার মাথাও ঠুকে গেলো সামনের সিটের হ্যান্ডেলে ।

তখন মায়ের বকুনির ভয়ে কান্না পাচ্ছে খুব, কিন্তু কাঁদতেও পারছিনা, বাস থেকে যখন নামলাম তখন বেলা বারোটা |

কোনোমতে বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখি মা হাতে স্কেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাড়ি ঢুকলেই মারবে বলে।

রাস্তায় দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ মায়ের চেঁচামেচির পর সে যাত্রা বাঁচালো  আমার ছোটকাকা ।সেদিন আবার পিসিমনির বাড়ি নেমন্তন্ন ছিল ছোটকাকার আর আমার|এদিকে আমার তখন "ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি" অবস্থা ।কোনমতে শুতে পারলে বাঁচি ।

শরীর যেন আর চলছেনা ।

মা কে যেই বলেছি "পিসিমনির বাড়ি যাবোনা" ,সে তো এই মারে কি সেই মারে.....কেন শরীর খারাপ লাগছে সেটাও বলতে পারছিনা মা কে ।

সকালে কি কি খেয়েছি কিছুই বলিনি ।তাহলে কপালে আরো দুঃখ আছে ।কোনমতে স্নান করে সঙ্গে পৌঁছে গেলাম পিসিমনির বাড়ি অটোতে উঠে, প্রায় চোখ বুজে  ছোটকাকার গায়ে হেলান দিয়ে ।

ওখানে পৌঁছে আবার বকুনি খেলাম এত দেরী করে যাওয়ার জন্য ।দুপুরের মাংস ভাত খেয়ে কিছুক্ষণ শুতে ঝিমুনি টা কাটলো  ।পিসিমনিকে সব গল্প বলতে সে তো হেসে অস্থির ।

পরের দিন কলেজে  সব বন্ধুরা একজোট হতেই জিজ্ঞেস করলাম কাল পান খাওয়ার পর তোদের শরীর কেমন ছিলো রে??  শুনেই অরিজিৎ বলছে "জানিস কোনমতে বাড়ি গেছি,বাড়ি ঢুকেই সেই যে শুয়েছি একদম বিকেলে উঠেছি ঘুম থেকে |, তারপর মা এতো বকেছে কি বলব তোদের ", কৌশিক বললো ও  নাকি এমন ঘুমিয়েছে ট্রেনে যে ওর নির্দিষ্ট স্টেশন পার করে চলে গেছিলো আরো দুটো স্টপ |বাকি সবারই কেমন নেশা মত হয়ে গেছিলো । তারক হ্যা হ্যা করে হেসে উঠে তখন বলছে "আজ সবাই আমাকে ট্রিট দে", সবাই অবাক হয়ে তাকাতেই হা হা করে হেসে বললো " খ্রিস্টমাসের দিন বলেছিলাম না  তোদের সবাইকে একসাথে ভাঙ খাওয়াবো, তোরা বুঝতেও পারবি না, আর আমি জিতলে তোরা সবাই আমাকে ট্রিট দিবি, নে এবার দে "| "ওরে শয়তান তাহলে পানওলা শেষে যে সাদা গুঁড়ো টা মেশাচ্ছিলো ওটা ভাঙ ছিলো?  তুই বলেছিলি? " বলেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে দুমদাম কিল ঘুষি দিয়ে বেশ ভালো করে ট্রিট দিলাম তারক কে, আর তারপর হো হো করে নিজেরাই ফেটে পড়লাম হাসিতে |




পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু