তুমি আছো তুমি থাকবে
মানুষ ওনাকে একজন রম্য লেখক হিসেবে চেনেন।বেশিরভাগই তার কলমে হাসির ফোয়ারা উঠেছে, মানুষকে ভীষনভাবে হাসতে বাধ্য করেছেন তিনি। কিন্তু তার জীবন ওতটা হাসিময় ছিল কিনা সেটা কতজন জানেন? শুনেছি যে বাইরে যত বেশি হাসে তার গভীরে তত বেশি দুঃখ বেদনা জমা হয়ে থাকে। আগ্নেয়গিরির মত জমা হতে থাকে সেগুলো।
আজ ওনার মৃত্যু দিবসে আমার এই লেখাটা ওনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি আর ভালোবাসা। আমার মনের অনেক কাছের একজন মানুষ তিনি।ওনার লেখার মাধ্যমে যেন কোথাও ওনার লুকায়িত বেদনা গুলো দেখতে পাই আমি।
চাঁচলের রাজবাড়ির উত্তরাধিকারী ছিলেন তিনি। ১৯০৩ সালের ১৩ই ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। এত বড় বংশ পরিচয়কে কোনদিন কোন কাজে লাগান নি তিনি। ওনার পুরো জীবনটাই কেটেছিল মুক্তারাম স্টিটের মেসবাড়ির দোতলার ঘরে। শেষ জীবনটা গভীর অর্থসংকটের মধ্যে দিয়ে গেছিলেন। শেষ পর্যন্ত পশ্চিম বঙ্গ সরকার তার মাসিক খরচের ব্যবস্থা করেছিলেন।
কলেজে পড়ার সময় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে আন্দোলন আর তার জন্য জেল খাটা। তারপর লেখালেখি চালু করা। প্রথম লেখা ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। শোনা যায় তার প্রথম লেখা তিনি আমাদের অনিলা দেবী মহাশয় কে দেখাতে নিয়ে গেছিলেন। এবং তিনি গ্রিন সংকেত দিতে সেটি একটি ততক্ষনাত পত্রিকাতে ছাপা হয় কিন্তু সেখানে লেখকের নাম ছিল শরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। এটা দেখে মুচরে পড়েছিলেন তিনি কিন্তু ভেঙে জাননি। আবার উঠে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।
জেল খেটে বেরিয়ে এসে শোনেন তার একমাত্র ভালোবাসার মানুষ রিনির বিয়ে হবে। সেই থেকে কিছুদিন ফুটপাতে কাটিয়েছিলেন, আর জীবন থেকে ভালোবাসা নামক জিনিষটা মুছে গেছিল চিরতরে। বিয়ে করেননি আজীবন। এখন একটু কিছু হলেই আমরা বলি মন ভেঙে গেছে। আর তারপর জোড়া লাগিয়ে আবার নতুনকে জায়গা করে দিই। কিন্তু মন ভাঙা মনে হয় এটাকেই বলে। আর জোড়া লাগেনি। শেষ জীবনটা নিঃসঙ্গ কেটেছিল তার। দেখাশোনার মত কেউ ছিলনা তার পাশে। তবুও সংগ্রাম করে গেছেন আজীবন।
আজকের দিনে ১৯৮০ সালে তার সংগ্রাম শেষ হয়। সারাজীবনটা মেস বাড়িতে থেকে নিজেকে সবার থেকে আড়াল রেখেছিলেন তিনি। অনেক অভিমানে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন প্রতিনিয়ত। তবুও লেখা ছাড়েননি। লিখে গেছেন আর সেই কলমের মাধ্যমে আজও আমাদের মধ্যে জীবিত তিনি।
কবির ভাষায় " তুমি রবে নীরবে".........
© রাজকুমার মাহাতো