বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ময়ূরাক্ষীর কবিতা

ঝলসানো রোদে পুড়ে যাচ্ছে তামাটে চামড়ার রঙ। গ্রীষ্ম তপ্ত কটাহের মতো শোষণ করছে অস্তিত্ব। ঝিমধরা দুপুরে আশেপাশে একটা পথকুকুরের দেখা নেই। সবাই খুঁজে নিয়েছে ছায়ার ছোঁয়া, সাময়িক আরামের অন্তরালে বসে যাপন করছে অতীত - বর্তমানের মিলনতিথি।

 

আস্তাকুড়ের একপাশে বসে এঁটোকাঁটা খাওয়া মন্টু পাগলের অবশ্য সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। তার কাছে যাহা গ্রীষ্ম তাহাই বর্ষা, তাহাই আবার দুর্দমনীয় শীতল রাত্রি। সকলে বলে, অনুভূতি মরে গেলে মানুষ মোক্ষের দিকে এগিয়ে যায়। মন্টুও কি তবে মোক্ষপ্রাপ্ত!  কে জানে! 

 

এইতো কিছুদিন আগে পাকড়াশিবাবুর বাড়ির কাঁঠালচুরির অপরাধে তাকে নির্বিচারে পেটানো হলো। একটা শব্দও করেনি সে। আসলে মন্টুপাগলকে কেউ কখনো শব্দ করতে দেখেনি। কোনো কথা, কোনো নির্দিষ্ট শব্দবন্ধ... নিদেনপক্ষে যন্ত্রণাসূচক চিৎকারটুকু নয়। তার পৃথিবী মূক, ঠিক যেন তারই মতো। যাইহোক, পরে যখন জানা গেলো কাঁঠালচোর পাড়ারই কিছু চ্যাংড়া ছেলেপুলে, মন্টু নয়... তাকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, তবে ক্ষমাটুকু চাওয়ার সৌজন্য দেখায়নি কেউ। পাগলের কাছে যে ক্ষমা চাইতে নেই! 

 

দিন যায় মাস যায়, সময়ের চাকা গড়িয়ে চলে। আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি নিজের পথ বদলায়, কিন্তু মন্টু স্থির বসে থাকে আস্তাকুড়ের একপাশে। লোকের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট খেয়ে, বাতিল থালা চেটে রক্ষা করে চলে নিজের অস্তিত্ব। কেন! কার জন্য! উত্তর পাওয়া যায় না। কালের চাকা উলটোদিকে ঘোরাবার প্রয়োজন অনুভব করে না কেউই। 

 

অফিসে যাওয়ার ও সেখান থেকে ফেরার পথে তাকে রোজ লক্ষ্য করে বৈভব। আইটি সেক্টরের কর্মী সে, দুদণ্ড দাঁড়িয়ে যে দুটো কথা বলবে সে সময় তার নেই। মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি প্রদত্ত বেতনের সবটুকু আদায় করে নেয় হাড়ভাঙা পরিশ্রম করিয়ে। তবু মন্টুপাগলকে নিয়ে তার কৌতুহলের শেষ নেই। কারণ মন্টুপাগল কবিতা লেখে। কাগজ কলমে নয়, বাড়ির দেওয়ালে ইঁটের টুকরো দিয়ে খোদাই করে রাখে তার কথা... এলোমেলো শব্দগুলো যে বলিষ্ঠ চাবুক হয়ে আছড়ে পড়ে বৈভবের বুকে। এক অদ্ভুত টান, কি যেন না বলা ব্যথা উজাড় করে রাখা কবিতায়, পড়লে যেন সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের শব্দ শোনা যায়। এক শব্দহীন মানুষের লেখনীতে এমন অমোঘ শব্দচিত্রের বাঙ্ময় উপস্থিতি, এর আগে কখনো দেখেনি সে। পাড়ার লোক যখন বাড়ির দেওয়াল নোংরা করার অপরাধে তাকে গালমন্দ, শাপশাপান্ত করে চলে... বৈভব কবিতাগুলির ছবি তোলে মুঠোফোনে। যত্ন করে তাদের তুলে রাখে ড্রাইভে, একাকীত্বের অন্ধকারে চোখের জল ফেলার কাজে বড্ড দরকারী মনে হয় পাগলের কবিতাগুলি। 

 

*   *   *

 

" আজকাল আর ভালোবাসতে ইচ্ছে করেনা।

 

অনেকগুলো দিন কেটে গেছে পড়ে থাকা খুচরো গুনে।

 

তাকের কোনায় তুলে রাখা পারফিউমের শিশিটায় জমাট বাঁধা মরচে... 

 

পরিত্যক্ত শিউলি শুকিয়ে আছে পায়ের নীচে,

 

তোমার - আমার না বলা শতেক গল্পকথার মতো। " 

 

নোটবুকের পেছনের পাতায় একমনে কথাকয়টি লিখছিলো অভিরাজ। সেকেন্ড পিরিয়ডের অঙ্ক ক্লাসটা বাতিল হয়েছে আজ।  অধ্যাপক না আসার খুশিতে সবাই এদিক ওদিক জটলা করতে ব্যস্ত। অভিরাজের আবার অনর্থক গসিপ বরাবরই নাপসন্দ।  ফাঁকা সময়টুকুতে একমনে কবিতা লিখতে পছন্দ করে সে। গতকালই একটা পাণ্ডুলিপি বাতিল হয়ে এসেছে প্রকাশকের অফিস থেকে। আজকাল অনামী কবির কবিতাগুচ্ছ ছাপার ঝুঁকি নিতে চায়না কেউ, পাঠক কোথায়! পকেটের রেস্ত খরচ করে বই ছাপানোর বিলাসিতা তার নেই, টিউশন করে যেটুকু রোজগার হয় সংসারচক্রে আত্মসমর্পণ করে। খুচরো যে কটা টাকা পড়ে থাকে, নিজের দৈনন্দিন খরচ চালিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারে না সে। কলেজের নানা অ্যাক্টিভিটির ফর্মপূরণ অথবা এটা সেটা দরকারী প্রয়োজনে হাত পাততে হয় ময়ূরাক্ষীর কাছে। নিজেকে তখন বড্ড ছোট মনে হয়। 

 

অভিরাজের সাদা কালো জীবনে ময়ূরাক্ষী প্রকৃতই যেন এক রামধনু। বড়লোক বাবার একমাত্র আদুরে কন্যা কেন যে এমন ধুলোমাখা ভ্যাগাবণ্ডর কপাল আলো করে এসে জুটলো তা নিয়ে বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে প্রায়ই ফিসফাস আলোচনা হয়। কিন্তু, ময়ূরাক্ষী যেন পূণ্যতোয়া জাহ্নবীর মতোই অটল। অভিরাজের জীবন ঘিরে স্বচ্ছসলিলার মতো কুলকুল বয়ে চলে, কখনো পাড় ভাঙে কখনো বুকের পলি তুলে সাজিয়ে দেয় নবজীবনের আহ্বান। কঠিন পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় পরামর্শ দেয়, অভিরাজের ক্ষিপ্ততাকে ধারণ করে শান্ত করে তাকে। আবার যেদিন সে বেগবতী, তার একের পর এক ধারালো বাক্যবাণে ক্ষতবিক্ষত হয় অভিরাজ। ধ্বংস এবং সৃষ্টি যেন একলয়ে অবস্থান করে ময়ূরাক্ষীর ভেতরে। 

 

অভিরাজের কবিতা লেখা ময়ূরাক্ষীর বরাবর না পসন্দ৷ বরং তার চেয়ে বেশিক্ষণ পড়াশুনা করলে অথবা চাকরির চেষ্টায় জুতোর সুখতলা খোওয়ালে বেশি খুশি হয় সে। 

 

কবিতাটা লিখে কাগজখানা ভাঁজ করে নিজের পকেটে চালান করে অভিরাজ। এসব ময়ূরাক্ষীকে এখন দেখানো যাবে না কোনোমতেই। গতকালই পাণ্ডুলিপি ফেরৎ আসায় তাকে যাচ্ছেতাইভাবে অপমান করেছে সে। এই অবস্থায় আবার কবিতা লিখতে দেখলে অভিরাজের হাল যে কি হবে তা বলাই বাহুল্য। 

 

সবে কাগজটা পকেটে পুরে বইটা টেনে নিয়েছে, ঝড়ের মত ক্লাসে এসে ঢোকে ময়ূরাক্ষী। 

 

--" অভি চল! তোর সঙ্গে আমার কথা আছে। এখুনি! " 

 

--" এখুনি! থার্ড পিরিয়ডে বিবস্বান স্যারের সোশিওলজি ক্লাস! উপস্থিত না থাকলে নোটস পাবো না রে! পরীক্ষা সামনে। " 

 

--" গোল্লায় যাক ক্লাস৷ তোর সঙ্গে কথা বলা এখন সবচেয়ে জরুরী আমার। "

 

--" একটু অপেক্ষা করলে কি হয়ে যাবে ময়ূরী। একটু বোঝ...! " 

 

--" কি বুঝবো বল! আর কতদিন বুঝবো বলতে পারিস! এমএসসি কমপ্লিট হয়ে এলো, এখনো পর্যন্ত একটা চাকরি জোগাড় করতে পারিস নি। এরপরেও আমায় তোকে বুঝতে হবে! " ঝাঁঝিয়ে ওঠে ময়ূরাক্ষী। 

 

নিঃশব্দে তার পিছুপিছু কলেজ ক্যাম্পাসের ঝাঁকড়া ছাতিমগাছটার তলায় এসে দাঁড়ায় অভিরাজ। চোখদুটো বড্ড জ্বালা করে তার। কান্না পায়। ময়ূরাক্ষী এর আগে কখনো তার সঙ্গে এতটা রূঢ় আচরণ করেনি৷ ঝগড়া হয়েছে ঠিকই তাদের ভেতর, কিন্তু সে তো সব দম্পতির ভেতরেই হয়ে থাকে অল্পবিস্তর। কিন্তু গতকাল থেকে ময়ূরাক্ষীর আচরণ বড্ড বেশি আহত করছে তাকে। কবিতার পাণ্ডুলিপি ফেরৎ আসার দায় তার নয়, এতে তার কবিতা বৃথা হয়ে যায় না কোনোমতেই। শুধুমাত্র এই কথা কয়টিই সে কিছুতেই বুঝিয়ে উঠতে পারছে না ময়ূরাক্ষীকে। মেয়েটার হলো কি! 

 

--" দ্যাখ অভি, আমি আর তোকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সময় দিতে পারছি না। বাপীর বিজনেস পার্টনার পরের মাসেই কোলকাতা  আসছেন। ওনার একমাত্র ছেলের সঙ্গে আমার বিয়ে দিতে চান তিনি। বাপী রাজি এই প্রস্তাবে, আমিও বিষয়টা নিয়ে ভাবছি। তোর সঙ্গে সম্পর্কটা চার বছর পেরিয়েছে, এখনো পর্যন্ত বলার মতো কিছুই করে দেখাতে পারিস নি তুই। চাকরিটাও জোগাড় করে উঠতে পারিসনি যে বাপীর সঙ্গে তোর পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করতে পারি। আমি ক্লান্ত অভি... ক্লান্ত তোর সঙ্গে মানিয়ে চলতে চলতে। এবার মুক্তি দে আমায়। " 

 

অভিরাজের পায়ের তলা কাঁপছে৷ বহুদূরে কোথাও নদীর ভাঙণ বেহায়া রূপে গ্রাস করছে বসতবাড়ি। হু হু করে জল বাড়ছে... অকল্পনীয় তার স্রোত। অভিরাজ ডুবছে। বুক ছাড়িয়ে আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে জল...  পাশ দিয়ে তীরবেগে ভেসে যাচ্ছে গবাদিপশুর শব, গৃহস্থালীর রোজনামচা। কোনোক্রমে একটা খুঁটি ধরে বেহায়া বন্যার কবল থেকে বাঁচতে চাইছে সে। আর্তনাদ করছে, 

 

--" এমন তো কথা ছিল না ময়ূরী! আমার জন্য সবার সঙ্গে লড়াই করবি বলেছিলি তুই! এমএ টা অন্তত কমপ্লিট হতে দে... দেখিস চাকরিটা ঠিকই পাবো। একটু সময় দে আমায় ময়ূরী... এভাবে চলে যাসনা!" 

 

দূর থেকে ধ্বংসকামী নদীর খলবল হাসির শব্দ শোনা যায়। দু হাতে মৃত্যুর গন্ধ মেখে নিষ্ঠুরস্বরে বলে সে, 

 

--" সময়!  সময়ই তো আর নেই রে অভি। তাঁরা এলেই বিয়ে পাকা হবে আমার। বিয়ে সেরেই উড়ে যাবো আমেরিকায়। গ্রিন কার্ড, বিলাসবহুল জীবনের পাশে তোর কবিতা যে বড্ড বেমানান অভি!  বড্ড বেশিই তুচ্ছ! " 

 

সশব্দে ভেঙে পড়ে শেষ খড়কুটো। ঘোলাটে কালো জল অন্ধকার নামায় অভিরাজের চোখে। দমবন্ধ মুগ্ধতায় ডুবতে ডুবতে এক কাঁচা কবি লক্ষ্য করে, নারী ও নদী কখন এক হয়ে গেছে৷ 

 

*  *  * * 

 

আজ সকাল থেকে অস্থির লাগছে মন্টু পাগলের। ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে উকুনভরা মাথা চুলকোতে চুলকোতে সে বারবার তাকাচ্ছে রাজপথের দিকে। রাত প্রায় একটা বাজতে চললো। বৈভবের পাত্তা নেই। হলো কি ছেলেটার! 

 

গোটা পাড়ার ঘৃণাদৃষ্টির মুখে পড়ে প্রতিবার কুঁকড়ে গেলেও বৈভবের দৃষ্টিতে এক অদ্ভুত মায়াভরা সারল্য টের পায় মন্টু পাগল৷ ছেলেটা কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকে লক্ষ করে, লোকের কাছে আপদসম তার কবিতাগুলোর ছবি তুলে নিয়ে যায়। একদিন যেচে এসেছিল কথা বলতে। ভালো ভালো খাবারও এনেছিল সাথে করে। উত্তর অবশ্য দেয়নি মন্টু পাগল, তবে ছেলেটার চোখের অদ্ভুত সারল্য লক্ষ্য করে তাকে খালি হাতেও ফেরায়নি সে। খড়খড়ে ফুটপাতে ইঁট ঘষে ঘষে নিজের কথা খানিক জানিয়েছে সে। জানিয়েছে ময়ূরাক্ষী নদীর কথা, যে একদিন কবিতা হয়ে গিয়েছিল। অতীত জীবন এখন আর তার মনে পড়ে না সেভাবে। কিন্তু ময়ূরাক্ষী নামটা যেন হৃদয়ে গাঁথা তার। হৃদয় উপড়ে না নেওয়া পর্যন্ত যে নাম থেকে তার কোনোদিন মুক্তি নেই। 

 

মাথাটা কেমন ঘোরাচ্ছে মন্টু পাগলের। ঝাপসা হয়ে আসছে দৃষ্টি। আজ ডাস্টবিনের ভেতরে বোতলভর্তি অদ্ভুত তরল পেয়েছে সে। ঢকঢক করে তারই কিছুটা গিলেছে আকণ্ঠ পিপাসায়... কি দুর্গন্ধ!  বুকটা জ্বলছে তারপর থেকে। রাস্তার ট্যাপকলে জল নিতে গেলে পাড়ার বখাটে ছেলেগুলো ঢিল মারে তাকে। একদিন সেটা দেখার পর বৈভব তাকে রোজ দুবেলা জলের বোতল দিয়ে যায় যাতায়াতের পথে। ছেলেটা বড্ড ভালো, তারই বয়সী কি! মনে পড়েনা মন্টু পাগলের। গলা দিয়ে গোঙানির মত শব্দ বেরোয়... এই প্রথমবার, ঢলে পড়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত রাস্তার দিকে চেয়ে থাকে মন্টু পাগল। বৈভবটা এখনো ফিরলো না কেন! 

 

রাত আড়াইটেয় অফিস শেষ ক্লান্তপায়ে টলতে টলতে বাড়ি ফেরার সময় আস্তাকুড়ের একপাশে মন্টু পাগলের ঠান্ডা শক্ত মৃতদেহটা আবিষ্কার করে বৈভব। চোখদুটো তখনও খোলা, ঘোলাটে দৃষ্টি রাস্তায় স্থির রেখে শেষ মুহূর্তে তাকেই খুঁজছিলো হয়ত। সামনের দেওয়ালটায় ঘষা ইঁট দিয়ে তেঁড়াব্যাঁকা অক্ষরে লেখা কবিতা,

 

" ঘুমিয়ে পড়ছি আমি...

 

একমুঠো বালি চেপে ধরেছে গলা,

 

অনাহুত অহংকারে শুনছি নিরাকার ঈশ্বরের পদশব্দ --

 

নিটোল জলের নীচে চলকে উঠছে অন্ধকার।

 

ময়ূরাক্ষী তুমি এলে! 

 

আসার পথে একদলা রোদ নিয়ে এসো। ভুখা পেটে প্রেম সয়না।। " 

 

অক্ষরগুলো যেন শঙ্কর মাছের চাবুক হয়ে আছাড় খাচ্ছে রাস্তায়। কবিতা হয়ে রাস্তায় গড়াচ্ছে একদলা রক্ত। একটা মাছি এসে বসেছে মন্টু পাগলের খোলা চোখে। অনাদরে মরে পড়ে থাকা মানুষটার শোকে সুর করে কাঁদছে কয়েকটা পথকুকুর। নিয়ন আলোয় ঝকমক করছে শহরের মুখোশ, দলাপাকানো একদলা কান্না উঠে আসতে চাইছে বৈভবের বুক বেয়ে। কীটনাশকের খালি বোতলটা হাওয়ায় গড়াগড়ি খাচ্ছে এদিক - ওদিক, বৃষ্টি ঝমঝমিয়ে নামছে।।

 

(সমাপ্ত)

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু