বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

আমার ২০২০, পেয়ে হারাবার খেলা



আবার একটা বছর নষ্ট হল সুপরিকল্পিতভাবে। যা ভাবা গেছে তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাজে পরিনত করা যায়নি, যা গেছে তাও কম নয় তেমন। আর কিছুঘন্টা পরেই ইনবক্সে বান ডাকবে নিউইয়ার মেসেজের। যাদের সারাবছর খুঁজে পাওয়া যায় না তারাও পাঠাবে ওয়ালপেপার। বন্ধুবান্ধব নিউইয়ার রেজোলিউশন টাঙাবে যে যার ওয়ালে, যার একখানাও তারা পূরণ করতে পারবে কিনা সেটা সময়ের ওপর নির্ভরশীল। 


মহামারীর বছর, লকডাউন - মাস্ক - স্যানিটাইজারের ঘেরাটোপে বন্দী বছর এই ২০২০। হারিয়েছি কিছু প্রিয় মানুষ, প্রিয় পাঠককে। বেজায় চমকে দিয়ে হটাৎ একদিন আকাশের তারা হয়ে গেছে তারা। কোভিড কেড়ে নিয়েছে তাদের। শেষদেখাটুকুও দেখতে দেয়নি, এমনকি পেতে দেয়নি প্রিয়জনের হাতের আগুন - কবরের মাটিটুকু! প্ল্যাস্টিকের ব্যাগবন্দী হয়ে সরকারের হাত ধরে চলে গেছে তারা, ছোঁয়াচে যে বড় ভয়! নিত্যদিনের ধুকপুক করা জীবন, কোভিড হলে চোখের সামনে মৃত্যুর নাচ দেখা... বছরটা কেটে গেছে অসীম ভয়ে। ২০২১ জানিনা কি আনবে, শুধু এই মহামারীকে দূরে ছেড়ে আসুক এইটুকু চাওয়া। 


দেখা যাক গতমান বছরে কি কি ভাবা হয়েছিল আর কি কি ঘটেছে। এবছরে সবচেয়ে বেশি মানুষকে যে ঘটনা বারবার আতঙ্কিত করেছে তা হল  " মব লিঞ্চিং "। মতবিরোধ হলেই লোক ডেকে হেনস্থা সোশ্যাল মিডিয়ায় নতুন নয়, তবে এতদিন সেটা শুধুমাত্র ফেসবুকীয় ওয়ালেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এবছরেই বোধহয় বদলায় পরিস্থিতিটা। সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং কিভাবে লোকের দরজায় কড়া নাড়তে পারে দেখিয়েছে এই বছর। একাধিক গনপিটুনির ঘটনা স্তম্ভিত করেছে এই একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, কড়া আইন করেও যা পুরোপুরি দমন করা যায়নি এখনো। 


দেখেছি কিছু ধার্মিক ভণ্ড যারা শাস্ত্রের বুলি কপচে রাতে মেয়েদের ইনবক্সে হানা দিয়ে থাকেন। ধর্মগুরুর মতবাদের বিরোধিতা করলেই অন্ধ ভক্তগোষ্ঠী বিরোধীকে খাটে তোলার জন্য কেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন আজও আমার মাথায় ঢোকেনি, তবে ধর্ম সম্পর্কে বিতৃষ্ণা বেড়েছে কয়েকগুণ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ধর্মব্যবসা বিগত বছরের তুলনায় বহুগুণ বেড়েছে, জন্ম হচ্ছে নতুন মা/বাবার ; তাঁদের আবার বিচিত্র পূজাপদ্ধতি। এসব দেখে দেখে নাস্তিকতার পথে আরো কয়েকধাপ এগিয়েছি, কোনোধর্মই যে আল্টিমেটলি মানুষকে শান্তি দিতে ব্যর্থ এটা বুঝেছি হাড়ে হাড়ে। 


এবছরে লক্ষ ছিল একটাই, সোশ্যাল মিডিয়ায় কম সময় দেওয়া, পরিবারকে বেশি। যে কাজে আমি মোটামুটি সফলই বলা যায়। যতটা পেরেছি বিতর্ক থেকে দূরে থেকেছি, তবে ঘাড়ের সমস্যার (অন্যায় দেখলে টনটনিয়ে ওঠার বাতিক আছে) জন্য একেবারেই যে দূরে থাকতে পেরেছি তা নয়, তবে চেষ্টা করেছি ঠিকই। দেখেছি কিছু মানুষের মুখোশ খসে পড়তে, সুযোগ না পেয়ে বন্ধুর দাঁত নখ বেরিয়ে পড়তে। আবার কিছু নতুন বন্ধুও তৈরী হয়েছে এবছরে, বিগত কিছু সম্পর্কও ফিরে এসেছে নতুন রূপে। 


এবছরের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা " খাপ খেলে ফলোয়ার বাড়ে " সুলভ ডোন্ট কেয়ার আচরণ। একদা সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং কুঁকড়ে দিত, এখন তাই নিয়ে খিল্লি করতে শিখেছি। লেখালিখি নিয়ে নতুন কিছু প্রচেষ্টার ইচ্ছা আগামীতে আছে, দেখা যাক কতটা সফল হই। ফেবু সর্বস্ব পৃথিবী থেকে সরে রিয়েল লাইফে বেশি সময় দিচ্ছি, মানসিক শান্তি আপাতত তুঙ্গে৷ সম্পর্ক বরাবরই আমার কাছে শূন্যতা ছাড়া নিয়ে আসেনি কিছুই, এবছরও ব্যতিক্রম নয়। তবে আগের মত অ্যাটেনশন ভিখারি নেই, অনায়াসে তাই ছেড়ে বেরোতে পারি। 


রেজোলিউশন বলে কিছু হয়না, তবে চাইব নতুন বছরে সম্পূর্ণ অনুভূতিহীন হতে। স্বার্থপর হওয়াটা এই পৃথিবীতে টেকার জন্য বড্ড জরুরী, তার জন্য জরুরি আপেক্ষিক উদাসীনতা ; এইটা রপ্ত করতে চাই চরমভাবে। সোশ্যাল মিডিয়া শুধুমাত্র কাজের জন্য ব্যবহার করতে চাই, সম্পর্ক তৈরী করে বাঁশবাগান বানাবার আর নূন্যতম ইচ্ছে নেই। সবশেষে মান ও হুঁশ টা ঠিকঠাক রাখতে চাই, বাকিটা ভবিষ্যৎ এর হাতে। নতুন বছরের শুভেচ্ছা সকলকে, মানে যারা এতটা পড়ার কষ্ট করবেন তাঁদের আরকি। বাকিরাও ভালো থাকুন, সুখে থাকুন। নতুন বছরে আমায় নিয়ে আরো খাপ বসান, বুলিং করুন, পিঠে ছুরি মারুন ; লোকের কান ভাঙান। আমি আরো আপনাদের ইরিটেট করতে থাকব, কাজ ও সাফল্য দিয়ে আপনাদের মুখে থাপ্পড় মারতে থাকব। আগামী দশবছর পর দেখা যাবে শেষমেশ কে জিতল, তদ্দিন ঘুমোন। উইশ ইউ অল এ ভেরী হ্যাপ্পি নিউ ইয়ার, অহম ব্রহ্মাস্মি।। 


©রিয়া

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু