বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

টু ডু লিস্ট

ডিসেম্বর মাসের শীতটা যেমন পড়ার কথা ছিল তেমন কনকনে ভাবটা আর নেই। কোনও কুয়াশা নেই। শুধু মাঝে মাঝে হালকা একটা ঠান্ডা হাওয়া বয়ে যায়। পাতলা একটা সোয়েটারও যেন বেশিক্ষণ গায়ে রাখা যাচ্ছে না। বয়স্কদের হাতে দস্তানা নেই। রাস্তার ধারের কলগুলোতে সকালে দিব্যি স্নান সেরে নিচ্ছে মানুষজন। তাদের শরীরে তেমন কোনও কাঁপুনি নেই। সপ্তা'খানেক আগেও সেলুনের এক বুড়ো খদ্দের সংবাদপত্রে মুখ গুঁজে গুঁজে নাপিত ভাইটাকে বলছিলেন, "বড়দিনটা যাক শীতটা কেমন জাঁকিয়ে পড়ে দেখিস"। সেইদিন অপেক্ষারত খদ্দেরদের সারির ৩ নম্বরে বসে বাঁ-হাতে মুখের ব্রোনো চাপতে চাপতে ডান হাতে মোবাইল ঘাঁটতে ব্যস্ত ছিল ২০ বৎসর বয়সের অরিন্দম। আশেপাশের কোনও কথাই তার কানে ঢুকছিল না। বাইরের অন্যমনস্কতা ছাপিয়ে গিয়ে সমস্ত মনোযোগ মোবাইলে রেখে দিব্যি ছিল সে।

আজ নতুন বছরের শুরু। গতকাল রাতে ঘুুুমাতে যাবার আগে নতুন বছরের টু ডু লিস্ট তৈরি করে রেখেছিল অরিন্দম। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে নতুন বছরের শুরু থেকেই ভালো কিছু করবে সে। এই অতীতের ব্যর্থতা, মন খারাপ, ব্রেক-আপ কোনও কিছু নিয়ে আর সে ভাববে না। ঘড়ির এলার্মের শব্দ শুনতেই ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠেই ব্যায়াম করে নিল কিছুক্ষণ। তারপর ব্রেকফাস্ট সারতে সারতে মোবাইলের মেমোরি ক্লিয়ার করল, মেসেজ ক্লিয়ার করল, আর তানিশার মোবাইল নম্বরটা ব্লক করে দিল। কষ্ট হলেও সে তানিশার মেসেজগুলো ডিলিট করতে সক্ষম হলো। এই সাহসের জন্য সে মনে মনে ভগবানকে ধন্যবাদ জানাল।

টাকা না থাকলে ভালবাসা কখনই ভালো বাসা নয়, খারাপ বাসা হয়ে পড়ে। গত দু'বছরের সম্পর্ক থেকে সে এটা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে। তবুও তার টিউশন পড়ানোর টাকায় সে যতটা পারত তানিশাকে খুশি রাখার চেষ্টা করত। গত দু'বছরের এমন সম্পর্কের পরে সে ভেবেছিল তানিশা তাকে নিশ্চয়ই বুঝতে পারবে এবং ধীরে ধীরে নিজেকে অরিন্দমের যোগ্য করে তুলতে পারবে। তার অন্ততঃ বিশ্বাস ছিল ভালোবাসায় মানুষ পরিবর্তন হয়, সহনশীল হয়ে উঠতে শিখে। কিন্তু অরিন্দম পুরোপুরি ভুল ছিল। সে বুঝে গেছে ভালোবাসায় অনুভূতির থেকে অভিনয়টা ভীষণ প্রয়োজন হয়। আর সেটাই সে একদম পারে না। 

সময়ের সাথে সাথে নিজেকে ভালো রাখতে অনেক কিছুই শিখে নিতে হয়। মন না চাইলেও জোর করে হলেও নিজের এবং অপরের মঙ্গলের জন্য তা করে নিতে হয়। অরিন্দম এত দিন যা পারেনি বছরের শেষ দিনে তানিশাকে ব্রেক-আপের কথা বলে দিতে পেরেছে। সে স্পষ্ট বুঝে গেছে আর যাই হোক তানিশার সঙ্গে তার কোনও সম্পর্ক রাখা চলে না। অবশ্য সে আগে থেকে তানিশার সঙ্গে আরেকটি ছেলের সম্পর্কের কথা জানতে পেরে গিয়েছিল যা ব্রেক-আপ করার আরেকটি কারণ ছিল।

ফোন মেমোরি থেকে তানিশার সঙ্গে তার ছবিগুলো, তানিশার পুরানো মেসেজগুলো ডিলিট করে দেওয়ার পর তার নিজেকে আজ খুব হালকা লাগছে। যেন কোনও সম্পর্কের বোঝা নেই, জীবনে ভালবাসার মিথ্যে অভিনয় নেই। সব কিছু স্বচ্ছ। জীবনে যা কিছু হয় ভালোর জন্য হয়।

ব্রেকফাস্ট সেরে নিজের ঘরে গিয়ে কম্পিউটার অন করে বসল সে। ফেসবুক নোটিফিকেশন আসতে লাগল একের পর এক। ফেসবুক বন্ধুদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানানো মেসেজে ভরে উঠেছে তার ফেসবুক। টু ডু লিস্টের আরেকটা কাজ যেটা বাকি ছিল সেটা তানিশাকে ফেসবুক থেকে আনফ্রেন্ড করা। ঝটপট তানিশাকে ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে অরিন্দম নিজের টাইমলাইনে বড় বড় অক্ষরে লিখল - 'সকল বন্ধুদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই। সকলের আগামী দিনগুলো ভালো কাটুক, আনন্দে কাটুক।'

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু