বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

তোমায় দেখেছি সন্ধ্যাতারায়


তোমাকে দেখেছিলাম স্বপ্নে, নদীর তীরে বনছায়ে, ফাল্গুনের রঙে একরাশ খুশির আবহে।

তারপর কতবার কত মেদুর রজনীতে,উদাস প্রাতে,মায়াময় জ্যোৎস্নায় কল্পনাতে তোমাকে দেখেছি।তোমার দীঘল আঁখি,অধর ওষ্ঠ ভরা মৃদু হাসি বার বার ভেসে উঠেছে চোখের সামনে।

ছুটির দিনে টুকটাক ঘরের কাজ সারতে সারতে এসব ভাবছিল মনে মনে তৃষা।

ভালবাসার মানুষটাকে অন্তত একবার চোখের দেখা দেখতে তেয়েছিল মন ভরে।রাজি হয়নি আর্য।আর্যর মনে হয়েছিল দেখা হলে তৃষার আবেগঘন ভালবাসায় ও আরো জড়িয়ে যাবে। ফেসবুকের মাধ্যমে আলাপ হয়েছিল দুজনের।তৃষা আর আর্য আলাপচারিতায় কখন যেন একে অপরের অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছিল।

আর্য মাঝবয়সী সুপুরুষ। একটা সরকারি সংস্থায় দায়িত্বশীল পদে কাজ করে। সাজানো সংসার।

তৃষা একটা স্কুলে চাকরি করে।ওর বিয়ের কদিন  পর বুঝতে পারে,ওকে এ বাড়িতে আনা হয়েছে শুধু নিজেদের স্বার্থে।সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাড়ির সমস্ত কাজ ও হাসিমুখে করে যেত। নতুন সংসারকে আপন করে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু ক্রমশঃ দেখল,বাড়ির সব কাজের লোক একে একে ছাড়িয়ে দেওয়া হোল।সব কাজ করার পরেও সারাদিন অভিযোগের আঙ্গুল উঠত তার প্রতি।প্রথম প্রথম তৃষার স্বামী কোন প্রতিবাদ করতে গেলে,তার প্রতি গঞ্জনা আরো বেড়ে যেত। এসব দেখে ওর স্বামীও নির্বিকার হয়ে যায়। একটানা পরিশ্রমে তৃষা প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ত। এরপর ও কিছু দিনের জন্য বাপের বাড়ি চলে আসে। লাঞ্ছনা গঞ্জনা থেকে কিছুদিনের জন্য মুক্তি পেয়ে ও যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে।বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা গড়ে ওঠার অবকাশ পায়নি ওদের।এমনকি হানিমুন যাবার পরিকল্পনাও বাস্তবায়িত হয়নি।দুদিন বাপের বাড়ি থাকলেই ওকে ওরা নিতে আসত। সংসারের কাজ ফেলে পালিয়ে যাবার জন্য কথা শুনতে হোত। তৃষার দম বন্ধ হয়ে আসছিল।ও বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। পড়াশোনায় ভাল।এত কাজের অভ্যাস নেই।তার ওপর এত দোষারোপ। ছোটখাটো গৃহস্থালি কাজে কেউ না কেউ ওকে অপদস্থ করে কথা বলত। প্রতিদিন সকাল হলেই ও তটস্থ থাকত,আজকে বাক্যের বাণ কোনদিক থেকে আসবে।ওর স্বামী ভাল চাকরি করত। সারাদিনের ক্লান্তির পর তৃষার কথা ভাবার মত মানসিকতা তার  ছিল না।রাতে স্ত্রীকে কাছে পাওয়া ছাড়া ওর আর কোন কর্তব্য ছিল না। তৃষার অপমান ওকে স্পর্শ করতে না।

একসময় তৃষা বাবা মায়ের কাছে ফিরে আসে।আর যায় না।ও মনস্থির করে, অপমানের জীবন থেকে মুক্তি পেতে এছাড়া আর কোন পথ নেই।ওর স্বামী কয়েক বার এসেছে ওকে ফিরিয়ে নিতে।ও জানিয়ে দিয়েছে ওখানে আর ফিরবে না। প্রথম প্রথম তৃষার বাবা মা দুজনকে মেলাতে চেষ্টা করেন।তৃষা আলাদা থাকার কথাও বলেছে। কিন্তু এর স্বামী বাড়ি ছাড়তে রাজি হয়নি। এভাবেই ওদের সম্পর্ক অন্যদের স্বার্থের কারণে ভেঙ্গে যায়।

তৃষা এবার রোজগারের চেষ্টা করে।বেশ কিছুদিন চেষ্টায় স্কুল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পেয়ে যায়।ওর স্বামীর আসা ক্রমশঃ বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন পর ডিভোর্সের নোটিশ আসে।পরে তৃষা শুনেছিল ওর স্বামী মৃন্ময় বিয়ে করেছে কোন ধনীর দুহিতাকে পণের বিনিময়ে।তৃষা বুঝেছিল,ঐ বাড়িতে ওর খামতি ছিল একটাই,ও গরীবের মেয়ে।


আজ এতদিন পর একাকী জীবনে কেউ যদি ভালোবাসার দাবী নিয়ে আসে,তাকে ফেরাতে মন চায়না।আর্যর সাথে ও বন্ধুর মত মনের কথা বলত।আজ পর্যন্ত কেউ ওর মনের কথা জানতে চায়নি।আর্য মরমী বন্ধুর মত পরামর্শ দিত। ভালোলাগার ছোঁয়া না থাকলে কেউ কি এত দরদী হতে পারে?

আর্য নিজের পরিবারকে খুব ভালবাসত।তাই তৃষার মায়ায় কোনভাবেই জড়াতে চায়নি।ও এটাও চায়নি যে,তৃষা ওকে ভালবেসে আবার নতুন করে কষ্ট পাক।তাই নিজেকে সরিয়ে নিতে চেয়ে কথাবার্তা কমিয়ে দিয়েছে।আর্যর বিচক্ষণতায় ওরা দূরেই অবস্থান করে।


তৃষা সবটাই বোঝে।তবু এই ভালবাসার ছোঁয়াটুকু জীবনের শেষদিন পর্যন্ত পাথেয় করে রাখতে চায়।তাই হোয়াটস এপে লিখে জানায়,'তুমি ভাল থেকো,এর বেশি কিছু চাওয়ার নেই।তবে তুমি না চাইলেও  তোমার ছবি আমার মনের মণিকোঠায় চিরদিন আঁকা হয়ে থাকবে।আমার হৃদয়েই আমি তোমাকে দেখব প্রতিক্ষণ।'

ওর মনে পড়ে যায় ওর প্রিয় কবির কবিতার কয়েকটা লাইন:


"ভালবাসা আঁজলা ভরা তৃষ্ণার জল,

অভিমানে বিদ্ধ হৃদয় চোখ ছলছল!

ভালবাসা হৃদয় চুঁয়ে স্বপ্ন ঝরায়,

ভালবাসা কখন এসে মনকে ভরায়!

ভালবাসা তার আবেশে চিত্র  সাজায়,

ভালবাসা তার দুয়ারে দুহাত বাড়ায়!"


কলমে শিখা রায়


পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু