বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

যোগাযোগ

কাল রাতে মেয়েটি ফোন ক’রে জানিয়েছে, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স ৯ই এপ্রিলের ক’লকাতা থেকে ফ্লাইট ক্যানসেল ক’রে দিয়েছে; কাজেই এখন সিডনীতে আসার ফ্লাইট কবে পাবে জানা নেই। হয়তো মেয়েটি ক’লকাতায় ভোট দিতে পারবে; ফ্লাইট পাওয়ার আগে হয়তো ভোটের রেজাল্টও বেরিয়ে যাবে; কিন্তু তাতে কি এসে যায় ওর বা আমার? ১০ই এপ্রিল শনিবার; ওকে এয়ারপোর্ট থেকে পিক্ আপ করার জন্যে ছুটি নেওয়ার দরকার ছিল না, কাজেই ক্যানসেল করারও কোনো দরকার নেই। এখন ও যদি এর মধ্যে কাজে ইস্তফা দিয়ে থাকে, সে ইস্তফার চিঠি ফেরৎ নিতে পারবে কিনা দেখতে হবে, না পারলে ওকে এখন বেকার হ’য়ে বাড়ীতে ব’সে থাকতে হবে কয়েকমাস। জানিনা মেয়েটি কবে এখানে আসার ফ্লাইট পাবে, জানিনা তার আগে ওর বা আমার কোভিড ভ্যাক্সিনেশন হ’য়ে যাবে কিনা; জানিনা প্লেন থেকে নামার পরে ১৪ দিনের কোয়ারান্টাইন ক’রতে হবে কিনা।

কোভিডের জন্যে আমারও দেশ-বিদেশ ঘুরে কাজ করা এখন বন্ধ, ২০২০ সালের মার্চ মাসের পর থেকে আমার বস বিদেশের কোনো কাজের জন্যে আমাকে ডাকেনি। এখানে সিডনীতেও বাড়ীতে ব’সেই কাজ, বিদেশে আমাদের যে অফিসারেরা কাজ ক’রে যাচ্ছে, তাদের সমস্যা লাঘব করার জন্যে ফোনে পরামর্শ দিয়ে চলেছি। যদি কোনো ক্লায়েন্ট বলে, ‘তোমার বসের সঙ্গে কথা ব’লতে চাই‘, তবে ইদানীং আমি ব’লছি, ‘বস্ এখন ক’লকাতায় ব্যস্ত রয়েছে। কথা বলার সুযোগ নেই।‘ কোভিডের জন্যে আমার রোজগারও কমেছে; বাইরে থাকলে কোম্পানী থেকে ফ্লাইট আর থাকার ব্যবস্থা ক’রে দিতো; খাওয়ার জন্যে যে দৈনিক ভাতা দিতো তার অর্ধেকেরও কম খরচে আমার খাওয়া হ’য়ে যেতো। কম্পিউটার নিয়েই পড়াশোনা ক’রেছি, ডিগ্রী পাবার পরে এই নিয়েই কাজ ক’রে চলেছি; এখন আমি একটা আমেরিকান কোম্পানীর সিডনী অফিসের হ’য়ে কাজ ক’রি; কাজ দেশ-বিদেশের ব্যাঙ্কের কম্পিউটারে কোর ব্যাঙ্কিং সফ্টওয়ার ইন্স্টল করা, যাতে ব্যাঙ্কের কাজ হয় দ্রুতগতিতে, অথচ ব্যাঙ্কের সব অ্যাপ্লিকেশনই একই সঙ্গে সমস্ত জমাখরচের হিসেব জানতে পারে। পাশ ক’রে চাকরী করার পর থেকেই বাবা-মা দুজনেই আমার বিয়ে দিয়ে ঘরে এক লক্ষ্মীমন্ত বৌ নিয়ে আসার জন্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমার সব সহপাঠী বন্ধুদেরও তাই মত – এবারে বিয়ে ক’রলেই হয়; অথচ এদেশের রেওয়াজ অনুযায়ী ক্লাবে গিয়ে আড্ডা মারতে, মাতাল হ’য়ে সুন্দরী যুবতীর কোমর জড়িয়ে নাচতে, নেশা ক’রে স্বপ্ন দেখতেও ভালো লাগে; বয়ফ্রেণ্ড বা গার্লফ্রেণ্ডের সঙ্গে বিছানায় রাতকাটাতে লাগে আরও মজা; এখানে গুরুজনেরা এতে আপত্তিকর কিছু দেখে না। কিন্তু প্রায়ই শোনা যায়, বয়ফ্রেন্ড এমনকি অচেনা পুরুষও বলাৎকার করার জন্যে অভিযুক্ত; বলাৎকারে সম্মতি বা অসম্মতি অ্যাপের মাধ্যমে মেয়েরা জানাতে পারবে এমন কথাও হচ্ছে। আবার, যে বাড়ীর বৌ বাইরে বেরোয় না কখনও, ঘরে ক্রীতদাসীর মতো কাজ ক’রে যায় সে ভাবে, ‘বিয়ের আগে তবু একটা স্বপ্ন ছিল’। প্রেমের উপন্যাস যা পড়েছি, তাতে খুব কমই দেখেছি, বিয়ের পরে স্বামী-স্ত্রী সারা জীবন মনের আনন্দে কাটিয়েছে; বেশীর ভাগ সময়েই তৃতীয় বা চতুর্থ কারুর জন্যে মন পড়ে থাকে, নিজের স্বামীর সঙ্গে দেহে বা মনে কোনো দিক দিয়ে থাকেনা মেলামেশা।

আমার কাজ সারদিন কম্পিউটার নিয়ে, দেশ-বিদেশের নানা মানুষের সঙ্গে আমার যোগাযোগ ইমেলে, ফেসবুকে, লিঙ্কড্ইনে, ফোনে বা হোয়াটস্ অ্যাপে, হয়তো অনেকটাই অফিসের কাজের জন্যে, বাকীটা বে-অফিস গল্প বা আলোচনার জন্যে। কাজের জন্যে ওয়ারশ, গ্লাসগো, লণ্ডন, ম্যানিলা, ব্যাঙ্কক, জাকার্তায় থেকেছি বহুদিন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে খুঁজেছি পরশপাথর, যে মনের মানুষের ছোঁয়ায় সোনা হ’য়ে ঊঠবে আমার মন। বূঝিনি কোনটি ছিল পরশ পাথর, হারিয়ে গেছে সঞ্চয়ের পাথরগুলো ধরাছোঁয়ার আওতার বাইরে।  তারপরে একদিন ক’রেছি আবিষ্কার, আমার মন কখন হ’য়ে উঠেছে সোনার, বুঝেছি এদের মধ্যে কেবল একটি পরশপাথর নেই, আমার দেখা প্রতিটি মানুষই পরশপাথর। বুঝেছি এদের কাঊকেই ক্রীতদাস বা ক্রীতদাসী ক’রে নিজের ঘরে ধরে-বেঁধে রাখা চলবেনা, কারণ এই পরশপাথর শুধু আমার একার জন্যে নয়। তখনই বুঝেছি, কেন কোনো মানুষ একজনকে বিয়ে ক’রে চিরকালের জন্যে সুখী হ’য়ে জীবন কাটাতে পারে না। অথচ একজনকে বিয়ে ক’রলে, পরে দুজনের সম্মতিতে বিবাহ-বিচ্ছেদ কার্য্যতঃ অসম্ভব, বিশেষ ক’রে সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যতের কথা ভেবে। এখানে আশার কথা এই যে, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিলের উদ্ভাবক কার্ল ডিজেরাসি ভবিষ্যদ্বাণী ক’রেছেন, ২০৫০ সালের পরে পাশ্চাত্য জগতে সকল নবযুবক ও নবযুবতী তাদের ডিম ও শুক্রাণুকে হিমায়িত ক’রে বাঁচিয়ে রেখে নিজেরা নির্বীজিত হবে, সুতরাং প্রজনন ছাড়াই যৌন উপভোগ সম্ভব হবে। বেশিরভাগ দম্পতি নিজের পছন্দে আইভিএফ ক’রবে, শারীরিক প্রয়োজনে বাধ্য হ’য়ে নয়। হয়তো, ২০৫০ সালের পরে বিয়ের প্রথা থাকবে না; নির্বীজিত নরনারীরা একাধিক মানুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক রাখবে, থাকবেনা কোনো অবাঞ্ছিত সন্তান প্রসব বা পালনের সমস্যা। অনেকদিন ধ’রে পরস্পরকে বোঝার পরে যদি কোনো পুরুষ-নারী অর্থাৎ দম্পতির মনে হয় তারা একসঙ্গে থাকবে তাদের নিজেদের সন্তানের মা-বাবা হ’য়ে, তবে হিমঘর থেকে তাদের ডিম ও শুক্রাণুকে নিয়ে আই.ভি.এফ. ক’রে ভ্রূণ সৃষ্টি করার ব্যবস্থা ক’রবে। মা নিজের গর্ভে ভ্রূণটির ন’মাস ধরে লালন পালন ক’রে সন্তানের জন্ম দিতে পারে, অথবা অন্য কোনো নারী (surrogate mother) তার নিজের জরায়ুতে একই দায়িত্ব পালন ক’রতে পারে। কাজেই কোনো অবাঞ্ছিত সন্তানের জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না; সন্তানের জন্ম হওয়ার পরে বিবাহ-বিচ্ছেদের সম্ভাবনাও কম হবে।

ভাবছিলাম, আজ সন্ধ্যেবেলায় যখন মেয়েটির সঙ্গে আড্ডা মারার জন্যে ফোন ক’রবো, তখন ওকে কার্ল ডিজেরাসির কথা বুঝিয়ে ব’লবো, ব’লবো যৌবনের সমস্ত সম্পদ হিমঘরে বাঁচিয়ে রেখে আমরা নিজেরা নির্বীজিত হবো। আমাদের মা-ঠাকুমারা যখন নতুন বৌ হ’য়ে শ্বশুরবাড়ীতে এসেছিল, তাদের এসব বোঝার দরকার হয়নি; এই মেয়েটি হয়তো বুঝবে, কিন্তু আমার ব’লতে একটু বাধবে। এই মেয়েটির সঙ্গে আমার আলাপ অন-লাইনে; ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে হাজারদুয়েক বন্ধু থাকা সত্ত্বেও সেখানে কারুর সঙ্গে এমন অন্তরঙ্গ আলাপ হয়নি। আলাপ হ’য়েছিল বাড়ীর ডেস্কটপ কম্পিউটারে ভাইরাস হাটাতে গিয়ে; লগ-মি-ইন ক’রে আমার কম্পিটারের অন্দরমহলে খুঁজে খুঁজে ভাইরাস নির্মূল করার ভার দিয়েছিলাম অ্যান্টি-ভাইরাস কোম্পানীর এক প্রতিনিধিকে; কথা শুরু হ’তেই বুঝেছিলাম একটি মেয়ের কন্ঠস্বর আর উচ্চারণ কোনো বাঙালীর; তাই ইংরেজীতেই জিগ্যেস ক’রেছিলাম উনি বাঙালী কিনা; উত্তর এসেছিলো পুরো ক’লকাতার বাংলায়; তারপর থেকে কথাবার্ত্তা বাংলাতেই চলেছিল, কিছু টেকনিকাল ব্যাপার বাদে।

ভাইরাস হাটানোর কাজ শেষ হবার পরে অ্যান্টি-ভাইরাস কোম্পানীর প্রতিনিধি মেয়েটি আমাকে একটি রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে বলেছিল, ‘যদি আর কোনো সমস্যা হয় প্লিজ আমাদের হেল্পডেস্কে ফোন ক’রবেন এই রেফারেন্স নাম্বার জানাবেন’।

জিগ্যেস ক’রেছিলাম, ‘তাহ’লে কি আপনাকেই পাবো?’

মেয়েটি ব’লেছিল, ‘সেটা বলা শক্ত; সে সময়ে যে টেকনিশিয়ান খালি থাকবে, সেই কাজটা নেবে। সে টেকনিশিয়ান ক’লকাতা, দিল্লী, বোম্বে, ম্যানিলা, ব্যাঙ্কক, জাকার্তা যে কোনো শহর থেকে হ’তে পারে।‘

‘যদি শুধু আপনার সাথে কথা ব’লতে চাই কি ক’রতে হবে?’

‘আমাদের কোম্পানীতে বিশেষ কোনো একজনের সঙ্গে কথা বলা যায় না; যে কোনো রিপ্রেজেন্টেটিভই সমানভাবে কাস্টোমারের কাজ ক’রে দেবে।‘

‘শুধু আপনার সঙ্গেই আমার কিছু কথা বলার ছিল। আপনার নিজের ফোন নম্বরটা একটু দেবেন?’

‘এখন নয়। আমাকে বসের অনুমতি নিতে হবে; পারলে জানাবো।‘

 

সেদিনের কথাবার্তা ওখানেই শেষ। দুদিন পরে মেয়েটির একটি মেসেজ এসেছিল, ‘সিডনীর রাত দশটা থেকে এগারোটার মধ্যে যে কোনোদিন ফোন ক’রতে পারেন; একটু আগে থেকে জানিয়ে দেবেন।‘

এখানে ব’লে রাখি, দুবছর আগে আমার বাবা চলে গেছেন, প্রায় চার বছর বাওয়েল ক্যানসারে ভোগার পর। বাবা চলে যাওয়ার আগে আমার বিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা ক’রেছেন; শেষদিকে আর পারতেন না। ইদানীং মা খুবই চেষ্টা ক’রছিলো অনলাইন পাত্র-পাত্রী সন্ধানে। কিন্তু কোনো পাত্রীরই ফটো দেখে মা আর আমি দুজনেই একমত হ’তে পারিনি। সিডনীতেও যে কটি আমার বয়সী বাঙ্গালী মেয়ে আছে তাদের কেউই ঠিক আমার মতো বোকাসোকা ভালমানুষকে পছন্দ করেনা; মাও মনে করে ওদের কেউই মাকে ভালবেসে ভক্তিশ্রদ্ধা ক’রবে না। কাজেই প্রচুর ইচ্ছে আর উৎসাহ থাকা সত্ত্বেও মা আমার বিয়ের ব্যাপারে কিছুই ক’রে উঠতে পারছিলো না।

সেই যে শুরু হ’লো মেয়েটিকে ফোন করা, সে এখনও চলছে। এর মধ্যে ঘটনা ঘটেছে কিছু; প্রথমে শুরু হ’য়েছিল কেবল কানে শোনা আর মুখে বলা দিয়ে; মেয়েটি ওর কলকাতার গল্প ক’রেছে, আমি সিডনীর জীবনের কথা বলেছি; মেয়েটি জিগ্যেস ক’রেছে কি ক’রে এখানে আসা যায়, কোন্ ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ হ’তে পারে। তারপরে শুরু হ’য়েছে ভিডিয়ো কল করা, অবশ্য বেশীর ভাগই অডিয়ো কল; তারপরে একবার ভিডিয়ো কলে আমার মাও যোগ দিয়েছিল; মেয়েটির মুখ দেখে মার খুব চেনা ব’লে মনে হ’য়েছিল; জিগ্যেস ক’রে জানা গিয়েছিল মেয়েটির মা আর আমার মা একসঙ্গে স্কুলে পড়েছে; তারপরে মেয়েটির মা আর আমার মায়ের মধ্যে কথা হ’য়েছে ভিডিয়ো কল ক’রে। তারপরে দেখা গেছে, দুই বন্ধুই নিজের সন্তানের বিয়ে দেবার জন্যে উৎসুক, আর দুজনেরই ইচ্ছাপূরণ হয় আমার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হ’লে। এরপরে ভিডিয়ো কলে মেয়েটির বাবাও যোগ দিয়েছিল; তারপরে মায়ের বন্ধু ও তাঁর স্বামী, মেয়েটির এক প্রতিবেশী কাকা-কাকিমাও ভিডিয়ো মিটিংএ সামিল হ’য়েছিল। তারপরে ২০১৯সালের আগস্টে মাকে নিয়ে ক’লকাতায় গেছিলাম; ওখানেই মেয়েটির সঙ্গে আমার রেজিস্ট্রি ক’রে বিয়ে হয়েছিল। রেজিস্ট্রি বিয়ের পরে আমাদের সঙ্গে মেয়েটি সিডনীতে এসেছিল বেড়াবার ভিসা নিয়ে; সাত দিন কাটিয়েও গেছে আমাদের সিডনীর বাড়ীতে। এর পরে সতেরো হাজার ডলার খরচ ক’রে, আমার স্ত্রী হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা হ’য়ে থাকার জন্যে মেয়েটির ভিসার দরখাস্ত ক’রেছি। ২০২০ সালের জানুয়ারীতে ক’লকাতাতে আমাদের বিয়ে-বৌভাত হ’য়েছে জাঁকজমকের সঙ্গে। অস্ট্রেলিয়া থেকে অনেক আত্মীয়-বন্ধুরা যোগ দিয়েছেন এই অনুষ্ঠানগুলোতে। তারপরে ২০২০এর ফেব্রুয়ারীর শুরুতে আমি সিডনীতে ফিরে আসি। ভেবেছিলাম ২০২০এর মে-মাসে মেয়েটির স্থায়ী বাসিন্দার ভিসা হ’য়ে যাবে, তখন ও সিডনীতে আসবে; কিন্তু মার্চ থেকেই কোভিড সংক্রমণের ভয়ে নিষিদ্ধ হ’লো বিমান চলাচল। মেয়েটি র’য়ে গেল ক’লকাতাতেই। এখন ২০২১ সালের ৯ই এপ্রিলের ফ্লাইটও ক্যানসেল হ’য়ে গেছে।

টিভির খবরে শুনলাম অনলাইন গোয়েন্দাগিরিতে সামিল হ’তে হচ্ছে চীনের প্রতিটি বাসিন্দাকেই; প্রতি বাসিন্দাই দেখবে আশে পাশের আত্মীয়-বন্ধু-প্রতিবেশীরা কোথায়, কি ক’রছে, শুনবে কে কাকে কি ব’লছে – সব খবর রিপোর্ট ক’রবে বিগ বসের কাছে; বিগ বস সময়মতো শাস্তি দেবে প্রতারক আর বিশ্বাসঘাতকদের, পুরস্কার দেবে  বিশ্বাসভাজনদের। ১৯৪৯সালে George Orwellএর লেখা বই ‘Nineteen Eighty-Four’এর কথা মনে পড়লো; মনে পড়লো সেখানের Thought Police আর Big Brotherএর কার্য্যকলাপ। মনে পড়লো, এই মেয়েটিরও কাজ তদন্ত ক’রে ভাইরাসদের খুঁজে বার করা; ইচ্ছে ক’রলে ও দেখতে পারে আমার কম্পিউটারে বেআইনী তথ্য কিছু আছে কিনা, যদিও ওর কোম্পানীর প্রতিশ্রুতি আছে – এরকম কিছু ক’রবে না ওদের কর্ম্মচারীরা। শুনেছি মেয়েটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে পড়াশুনো ক’রছে, জানিনা মুখ দেখে মানুষ চিনতে শিখেছে কিনা; তবে ওর মুখ দেখে আমার মায়ের মতো আনপড় মানুষও হদিশ পেয়েছিল ওর বংশ-পরিচয়ের। আজ সন্ধ্যেয় যখন কথা হবে, তখন সাবধানে নিজের কথা কম ব’লে ওর কথা শুনতে হবে।

হঠাৎ ক’দিন ধ’রে তুমুল বৃষ্টি শুরু হ’য়েছে এখানে। মাঠে, ঘাটে, রাস্তায় নেমেছে বন্যা। অনেক অঞ্চলের লোকজনকে সতর্ক ক’রে দেওয়া হ’য়েছে – বাড়ী ছেড়ে কোনো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নিতে বলা হ’য়েছে। একটি বিয়ের আয়োজন হচ্ছিল; ক’নের বাড়ী নদীর একপাশে আর বরের বাড়ী আর এক পাশে; টিভিতে দেখালো ক’নের বাড়ীর পাশে অতিথি আপ্যায়নের জন্যে বিরাট মণ্ডপে সাজানো রয়েছে টেবিলগুলো; কিন্ত সেখানে যাবার উপায় নেই শুধু অতিথিদের নয় স্বয়ং বরেরও। নদীর আর একপারে বন্যায় বৃষ্টিতে বিধ্বস্ত বরের বাড়ী, তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোনো সাময়িক আশ্রয়ে। টিভিতে সাহায্যের আবেদন পেয়ে সামান্য কিছু সাহায্য পাঠালাম।

এর পরে দুঘন্টা ধ’রে আমাদের পাড়াতেও অবিশ্রান্ত বৃষ্টি; তারপরে ব্ল্যাক-আউট – ইন্টারনেট নেই, ওয়াই-ফাই নেই। ভাবলাম আজ রাতে মেয়েটির সঙ্গে ভিডিয়ো কল করা যাবে না; ইন্টারন্যাশনাল ফোন কলেও অনেক খরচ পড়ে; সংক্ষেপে কি কি ব’লে আমাদের অনলাইন প্রেম চালিয়ে যেতে হ’বে তার দুচারটে পয়েন্ট নোট ক’রে রাখলাম…..

রাত দশটার সময়ে দেখি ফোনও করা যাচ্ছে না। আপাততঃ স্থগিত রইলো অনলাইন প্রেম, এবার ধ্যানে হবে কি আমাদের বার্ত্তা-বিনিময়?

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু