বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

সাতপাকে কেলেঙ্কারি


ঘোতনের পাড়ার পটলাদা'র আজকে বিয়ে। বিয়েতে আবার ঘোতন আর বুন্ডুর ইস্পেশাল নিমন্ত্রন, এই দুইমূর্তি 'বরযাত্রী' বলে কথা! আর পটলাদার সঙ্গে ঘোতন আর বুন্ডুবাবুর একটু বেশিই মাখামাখি কিনা....! সুতরাং আর কেউ যাক বা না যাক বরযাত্রী হিসেবে এই দুই বিটকেল পাবলিককে সঙ্গে নিয়ে তবেই বউ আনতে যাবেন পটলাদা। আসল ব্যাপারটা কী জানেন? 

কানটা এদিকে নিয়ে আসুন, বলছি... 

আসল ব্যাপারটা হলো বিটকেল দুটোকে রেখে বিয়ে করতে গিয়েও তো মানসিক প্রসন্নতা জুটবে না পটলাদার চিত্তে, সেটা মহামানব পটলাদাও ভালই জানেন। তাই তো ঘোতন আর বুন্ডুকে বগল দাবা করে নিয়ে চললেন বিবাহ বাসরে।

সে যাওয়া কি যে-সে যাওয়া? হুঁ হুঁ...

সারা রাস্তা কত খিস্তি আর মস্তি করেছে ছোড়া দুটো পটলাদার সঙ্গে তা তো বলাই বাহুল্য! মস্তির চোটে তো কেলেঙ্কারি হওয়ার যোগাড় ছিলো একখানা.... হয়েছিল কি সেটা তাহলে বলি। ঘোতন, বুন্ডু আর পটলাদা ঠাসাঠাসি করে বসেছিল বরের জন্য পাঠানো গাড়ির পেছনের সিটে। আর সামনে বসেছিল ড্রাইভার সহ পটলাদার এক কমবয়সী তুতোভাই। এইবার পেছন সিটে ঐ তিন করিৎকর্মা মিলে এত চৈচৈ হৈহৈ আর দাপাদাপি করছিল যে বিয়েবাড়ি পৌঁছানোর আগে ঠাকুরের আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য যেই মন্দিরের সামনে যখন গাড়ি থামলো, আর পটলাদা নামলো তখনই পটলাদা'র ধুতির কুচি গেল খুলে। যাহ্, কি কান্ড বলুন দেখি! উফ্... কী টানটান চরম উত্তেজনা তখন। এদিকে পটলাদার দিদি অ্যান্ড বৌদি গ্রুপের সদস্যরা মুখ লুকিয়ে হাসতে ব্যস্ত। ওইদিকে পটলাদার অবস্থা তো কী মারাত্মক! পারলে গাড়ির ডিক্কির ভেতরেই চালান করে দেন তিনি নিজেকে।

তড়িঘড়ি ঘোতন আর বুন্ডু মিলেই গোঁজামিল দিয়ে ধুতির কুচিখান গুঁজে দিল কোমরে। যাই হোক ঠাকুরের আশীর্বাদ নিয়ে নির্বিঘ্নেই কনে-বাড়িতে পৌঁছালো বরযাত্রীর গুষ্টি। জল মিষ্টি দিয়ে প্রাথমিক আপ্যায়নটা ভালোই হল বরযাত্রীদের।

বেশ কিছুক্ষন পর ওইদিকে ছাদনাতলায় পটলাদার বিয়ে হচ্ছে আর ঘোতন ও বুন্ডু মিলে তখন জম্পেশ ভোজন গলাধঃকরণে ব্যস্ত। এমন সময় হলো কি জানেন!


দাঁড়ান দাঁড়ান। অস্থির হচ্ছেন কেন? বলছি তো...

আরেক কেলেঙ্কারি হয়েছে আরকি তখন। বুন্ডু পাঁপড় ভাজায় দাঁতের পাটি কেবল বসিয়েই ছিল, ওমনি বিয়ের আসর থেকে গুরুতর চিল্লাচিল্লি আর হট্টগোলের আওয়াজে কান ঝালাপালা হবার যোগাড়। এক হাতে পাঁপড় নিয়েই বুন্ডু আর ঘোতন ছুট লাগলো ছাদনাতলার দিকে। গিয়ে যা শুনলো এবং দেখলো তা অনুধাবন করে তাদের চক্ষু চড়কগাছ। দুজনেই শুনতে পেল পুরুতমশাই মেয়ের বাপের উপর চেঁচাচ্ছেন। আর বলছেন,

"এইডা কি করতাসে নতুন জামাই? কইতাছি সাতপাকের এইপাক বৌ আগে দিব আর বর থাকব পিছনে, কিন্তু এই পোলা আমার কথাই শুনেনা। বৌ'রে ডিঙ্গাইয়া যাইতাসেগা...." দাঁত কিড়মিড় করে ঘোৎঘোৎ করে কথাগুলো বলছেন পুরুতমশাই। ওইদিকে পটলাদার চেহারা তো দেখার মতো। অবিকল গোবেচারা ভাব ধরে দাঁড়িয়ে।

অবস্থা বেগতিক দেখে বুন্ডু গলা উঁচিয়ে বললো,

"আরে পুরতমশাই, পটলাদা তো আগে যাইবোই কারন পটলাদা'র রক্তেই তো আছে ওভারটেক করা..."

বুন্ডুর কথা শুনে সবাই তাকালো তার দিকে। সে মৌজ করে পাঁপর ভাজার স্বাদ আস্বাদন করতে করতে বললো,

"আমাগো পটলাদা অটো-ড্রাইভার না! এরলিগ্গাই তো নতুন বৌদিরে ডিঙ্গাইয়া যাইতাসে...ড্রাইভারের তো কাজই ওভারটেক করা..."

বোঝো ঠ্যালা! পটলাদার নতুন বউয়ের মুখে তখন ফিক করে একটা হাসি আর পটলাদার চোখে তখন বুন্ডুর জন্য ৫৫০ ভোল্টের কটমটি বৈদ্যুতিক চাহনী। বউকে ওভারটেক করা নতুনজামাই পটলাদার মুখ দেখে সকলের তখন হাসতে হাসতে দমফাটা অবস্থা।

                        _____*_____

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু