বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

আস্থা

-" কেমন আছে প্রজ্ঞা? জ্ঞান ফিরেছে ? ডাক্তার কী বলল রূপ?"

-" না লেখা। ওর জ্ঞান এখনও ফেরেনি। ডাক্তার আটচল্লিশ ঘন্টার সময় দিয়েছে।" কথাগুলো বলতে গিয়ে গলাটা খানিক কেঁপে ওঠে রূপ অর্থাত রূপেশের।

-" প্রার্থনা করো রূপ মানুষটা যেন এ যাত্রায় মৃত্যুকে জয় করে ফিরে আসে। নাহলে তোমার প্রায়ঃশ্চিত্ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যে।"

লেখার কথায় হাত কেঁপে ওঠে রূপেশের। ফোনটা ধীরে ধীরে নামিয়ে বুক পকেটে ঢুকিয়ে মাথা নিচু করে বসে থাকে সে। হাসপাতাল চত্বরে এই মুহূর্তে বেশ কিছু অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা ইতস্তত এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। বোঝা যাচ্ছে ওরা সবাই বেশ উদ্বিগ্ন প্রজ্ঞার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে। ওরা সবাই মা বলে ডাকে প্রজ্ঞাকে। অনাথ ছেলেমেয়েগুলোকে নিজের মমতার আঁচলের তলায় পরম স্নেহের স্পর্শে আশ্রয় দিয়েছে প্রজ্ঞা।  ওরা মাঝে মাঝে রূপেশের দিকে তাকিয়ে দেখছে। হয়তো প্রজ্ঞার সাথে ওর সম্পর্কের হদিশ খুঁজে পেতে চেষ্টা করছে।

-" রূপেশ বাবু আপনি চাইলে এখন বাড়ি ফিরে যেতে পারেন। সেই সকাল থেকে এখানে আছেন। এবার বাড়ি গিয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন।"

রূপেশ মাথা তুলে তাকাতে দেখে প্রবাল সামনে দাঁড়িয়ে।এই প্রবালকে নিয়েই প্রজ্ঞা সম্পর্কে একটা ধারণা নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছিল রূপেশ একসময়ে। নিজের মনকে শান্ত করেছিল এই ভেবে প্রজ্ঞা ভালো আছে। কিন্তু সে ভুল ভেঙে যায় প্রবালের সাথে দেখা হবার পরেই।

-" আমি যদি থেকেই যাই কোন অসুবিধা হবে কী?" রূপেশ খুব শান্ত গলায় বলে প্রবালকে।

-" এমা না না অসুবিধা হবে কেন। তবে আপনাকে এমনিতে খুব দূর্বল লাগছে এই মুহূর্তে তাই ভাবলাম একটু যদি রেস্ট নিতেন।" প্রবাল উত্তর দেয়।

রূপেশ হাসপাতালের করিডরে পাতা চেয়ার থেকে উঠে ICUর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।এই মুহূর্তে ওর ভেতরে মৃত্যুর সঙ্গে জুঝে চলা মানুষটির কাছে গিয়ে বসতে খুব ইচ্ছে করছে। সেলাইনের ছুঁচ ঢোকানো শীর্ণ হাতটাকে নিজের হাতের মুঠোয় ধরে দু ফোটা চোখের জল ফেলতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে ক্ষমা করবে আমায় প্রজ্ঞা? তোমার সবটুকু ভালো দিয়ে আমার ভুলগুলোকে ক্ষমা করে দিতে পারবে?"

প্রজ্ঞাকে রূপেশ প্রথম দেখেছিল নূপুর পিসির বাড়ি। নূপুর পিসি হল রূপেশের বাবার মামাতো বোন। চন্দননগরে পৈতৃক ভিটেতেই অনূঢ়া নূপুর থাকে দুই ভাই ভাইবৌ আর ভাইপো ভাইঝিদের সাথে। যদিও সবাই একবাড়িতে থাকলেও হাঁড়ি আলাদা। নূপুর নিজের অংশে একাই থাকে। সাথে সর্বক্ষণের কাজের লোক মায়া দি। নূপুরের রোজগার বলতে বাড়ির নিচে একটা সেলাইয়ের স্কুল। সেখান থেকে যা রোজগার হয় তা থেকে নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে মায়াদির মাইনেও দেওয়া যায় ভালোভাবেই। বাকি জমানো অর্থ থেকে কিছু যায় দানের খাতায়। কিন্তু বাড়ির বহু পুরনো জগদ্ধাত্রী পুজোয় পরিবারের সকলে একসাথেই অংশগ্রহণ করে। প্রতিবছর সেই পুজোতে না গেলেও প্রায় বছর পাঁচেক পর সেইবার যখন রূপেশ গেছিল পুজোর একশ বছর পূর্তি উপলক্ষে তখন সেখানেই সে দেখেছিল প্রজ্ঞাকে। ঠাকুর দালানের চাতালে বসে একশ আটটা সলতে পাকিয়ে সরষের তেলের বাটিতে চুবিয়ে রাখছিল। রূপেশ তখন চারিদিকে ছবি তুলতে ব্যস্ত। ওর ক্যামেরার লেন্স থেমে গেছিল প্রজ্ঞার মুখের কাছে নেমে। কাজল কালো একজোড়া চোখ। কোমর ছাপিয়ে পিঠ বেয়ে নেমে আসা চুলের বেণী। ছিপছিপে গড়ন মেয়েটার মধ্যে কী খুঁজে পেয়েছিল সেদিন রূপেশ যার জন্য বারবার ছুটে যেত নূপুর পিসির বাড়ি। নূপুর পিসিও ঠাট্টা করে বলত-

-" হ্যাঁরে রুপু আগে তো হাজার বললেও আসতিস না। এখন কথায় কথায় আসছিস কী ব্যাপার বলতো। বলি কিছু হারিয়ে টারিয়ে ফেলেছিস নাকি রে?"

-" কি যে বলো না তুমি । হারাবো আবার কী।"

-" মন রে মন। ওইটাই তো ফেলে গেছিস। ভাবিস কী পিসি বোঝে না কিছু। জগদ্ধাত্রী পুজোর সন্ধ্যেবেলা তোর চোখদুটো যে প্রজ্ঞা সুন্দরীকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল সেকি আমি বুঝিনি ভেবেছিস।"

একথা তো সত্যিই। সেদিন রূপেশের চোখ আটকে ছিল প্রজ্ঞাতেই। সারাদিনে মেয়েটা পুজোর আয়োজনে যেভাবে সকলকে সাহায্য করছিল তা দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছিল রূপেশ। নূপুর পিসিদের পড়শি বাড়ির মেয়ে প্রজ্ঞা। বাবা নেই। মা নার্সের কাজ করেই লেখাপড়া শিখিয়েছে মেয়েকে। প্রজ্ঞা তখন মাস্টার্স করছে। পড়ার মাঝে কিছু অনাথ বাচ্চা নিয়ে একটা NGOও চালাতো তখন। তাদের নিয়ে পুজোর দিন প্রসাদ খাইয়েও নিয়ে গেছিল এক ফাঁকে।

শেষমেশ নূপুর পিসির কাছে নিজের মনের কথাটা খুলেই বলেছিল রূপেশ। বিয়ে করতে চায় সে প্রজ্ঞাকে। নূপুর পিসি নিজেই সমস্ত দায়িত্ব নিয়ে রূপেশের মাকে রাজি করিয়ে ওদের চার হাত এক করে দিয়েছিল। যদিও রূপেশের মা সম্পূর্ণ মন থেকে প্রজ্ঞাকে মেনে নিতে পারেন নি তবুও ছেলের পছন্দকে দূরে ঠেলে দিতেও পারেননি। সংসার শুরু হয় রূপেশ প্রজ্ঞার। বিয়ের এক বছর পর মাস্টার্স শেষ করে প্রজ্ঞা একটা চাকরিও পেয়ে যায়। তবে হঠাৎই শাশুড়ির অসুস্থ হয়ে পড়লে সে চাকরিও বেশিদিন করতে পারেনা প্রজ্ঞা। তবে সে খুশি মনেই ঘরের অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেয়। সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্তি দিনের শেষে রূপেশের আদরের জোয়ারে ভেসে চলে যেত এক নিমেষে। পরিতৃপ্ত ছিল রূপেশ প্রজ্ঞাকে ওর জীবনে পেয়ে। কিন্তু সেই রূপেশই একদিন অযাচিত ভাবেই প্রজ্ঞাকে বলে ফেলেছিল কঠিন কথাটি। সেদিন আকাশ মেঘলা থাকলেও প্রজ্ঞার মনে হাজার সূর্যের আলো জ্বলছিল। অপেক্ষা করছিল রূপেশের বাড়ি ফেরার। বলার ছিল কিছু তাকে। তাই রূপেশ বাড়ি ফিরতেই ছুটে গিয়েছিল তার কাছে। আর ঠিক তখনই বলে উঠেছিল রূপেশ-

-" আর পারছি না প্রজ্ঞা। এবার মুক্তি চাই। রোজরোজ এক অশান্তি আর মেনে নিতে পারছি না।"

স্থির হয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে কথাগুলো শুনেছিল প্রজ্ঞা। কাঁদেনি সেদিন। শুধু পরিস্থিতি বুঝে মনে মনে ক্ষমা করেই দিয়েছিল রূপেশকে। তাইতো পরের দিন সকাল থেকে প্রজ্ঞাকে আর ঐ বাড়িতে দেখা যায়নি।ভোর হতেই বেড়িয়ে পড়েছিল নিজের আলাদা জগত তৈরি করতে। তবে আজীবন রূপেশকে মন থেকে সরাতে পারে নি। ভুল বোঝেনি তাকে। কোন প্রতিহিংসাও জন্ম নেয়নি রূপেশের প্রতি প্রজ্ঞার মনে কখনো।

বিয়ের তিনবছর পেরিয়ে যেতেও কোন উত্তরসূরী জন্ম দিতে না পারার জন্যই প্রজ্ঞার প্রয়োজন সংসারে ফুরিয়ে গেছিল। রূপেশের মা নূপুর কে ফোন করে দু কথা শোনাতেও ছাড়েননি-

-" নিজে তো সংসার করলি না তাই সংসারের মাহাত্ম্য বুঝবি কী করে। এমন গাছ পুঁতে দিলি আমার ঘরে যে ফল ধরেনা। উপড়ে ফেলে না দিয়ে উপায় কী বল দেখি। আমার ছেলের কী বাবা ডাক শোনার অধিকারও নেই?"

বুঝিয়েছিল নূপুর, ফল না দিলেও একটা গাছ ছায়া তো দেয় অন্তত। যে ছায়ার তলায় মানুষ শান্তি পায়। প্রজ্ঞার সংসারের প্রতি আনুগত্য কী সংসারে ওর গুরুত্ব তৈরি করেনা?" কিন্তু নূপুরের কোন কথাই ধোপে টেকে নি।মায়ের ক্রমাগত বিলাপ মানসিক দিক থেকে বিপর্যস্ত করে তুলেছিল রূপেশকেও।হয়তো সেটা বুঝেই নিজেকে খুব সহজেই সরিয়ে আনতে পেরেছিল রূপেশের কাছ থেকে প্রজ্ঞা। তবু এক চিন্তা প্রতিনিয়ত কুরে কুরে খেত প্রজ্ঞাকে। রূপেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা। ওর কাছ থেকে ফিরে প্রজ্ঞা একটু একটু করে নিজের NGO 'আস্থা'কে গড়ে তুলেছিল আরও উন্নত করে। সেখানে আশ্রয় নিতে পেরেছিল আরও কত শত অনাথ শিশু। ধীরে ধীরে অসহায় নিঃসঙ্গ স্বামী পরিত্যক্তা আশ্রয়হীন মহিলাদেরও আশ্রয় দানে আস্থা হয়ে উঠেছে পরিপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠান। অপরদিকে রূপেশ দ্বিতীয়বার সংসার পেতেছে তবে এবার মায়ের পছন্দের পাত্রী লেখাকে বিয়ে করে। কিন্তু এবারেও বছর ঘুরতে যখন একই সমস্যা দেখা গেল তখনই আসল সত্যটা সামনে এলো। সন্তান জন্ম দেওয়ার অক্ষমতা প্রজ্ঞার নয় বরং রূপেশের, মানসিক দিক থেকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে রূপেশ। অনুধাবন করে প্রজ্ঞার সাথে করা অন্যায়ের। লেখার সামনে স্বীকার করে সবকিছু। একজন নারী হয়ে আরেকজন নারীর সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রথম প্রতিবাদ করে সে-ই। রূপেশকে দিয়েই তার মায়ের সামনে স্বীকার করায় সমস্তটা। নিজের কৃতকর্মের জন্য লজ্জায় গুটিয়ে যান রূপেশের মা।প্রজ্ঞা সম্পর্কে নূপুরকে বলা কথাগুলোও মনে পড়লে অনুশোচনার আগুনে পুড়তে থাকেন তিনি।

এরপর লেখা একদিন দেখা করে প্রজ্ঞার সাথে। অবাক হয় যখন লেখাকে প্রজ্ঞা জানায় রূপেশের ব্যাপারে সমস্তটাই তার আগে থেকেই জানা ছিল। নিজের অক্ষমতা যাচাই করতে গিয়ে বুঝেছিল সমস্যা আসলে বাড়ির ছেলেরই তবুও রূপেশের সম্মানের কথা চিন্তা করেই কাউকে কিছু বলতে পারেনি সে। সমস্ত কটুক্তির বিষ গলায় ধারণ করে নিয়েছিল সেদিন। তবে একদিন সত্যটা সামনে আসবে এই চিন্তাই প্রজ্ঞার মন চঞ্চল করে তুলত।
সত্যিকারে ভালোবেসেছিল প্রজ্ঞা রূপেশকে। ভেবেছিল সমস্ত পাওয়া না পাওয়াকে সাথে নিয়েই রূপেশ আগলে রাখবে ওকে। তাইতো নিজের লেখা প্রথম প্রকাশিত উপন্যাসের কথা বলতেই সেদিন ছুটে গেছিল কাছের মানুষটার কাছে। প্রতিহত হয়ে ফিরে যেতে হবে ভাবেনি সেদিন প্রজ্ঞা। তাই দুঃখবিলাস জীবনই বেছে নিয়েছিল নিজের জন্য। এদিকে আস্থা'কে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রজ্ঞা একসময় পাশে পায় প্রবালকে। সেই সময়ে একজন লেখিকা এবং সমাজসেবী হিসেবে প্রজ্ঞা সর্বজন সমাদৃত। তার কর্মকাণ্ডের সহকারী প্রবালকে দেখে রূপেশ মনে করেছিল প্রজ্ঞা বুঝি তার নতুন জীবনসঙ্গী খুঁজে পেয়েছে। প্রজ্ঞাকে হারানোর দুঃখ ছাপিয়ে সেদিন স্বস্তি পেয়েছিল রূপেশ এই ভেবে প্রজ্ঞা আর একা নেই। কিন্তু গতকাল প্রবালের ফোন পেয়ে রূপেশ যখন নার্সিংহোমে আসে তখনই বুঝতে পারে প্রজ্ঞার মন মন্দিরে আজও সেই উপবিষ্ট।

সকলের জন্য ভাবতে গিয়ে প্রজ্ঞা সবথেকে বেশি অবহেলা করেছে নিজের প্রতি। হয়ত প্রবালের একনিষ্ঠ মনোভাব দেখে মনে হয়েছিল প্রজ্ঞার যে সে না থাকলেও আস্থা'কে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে রূপেশ একাই। আর সেই আত্ম অবহেলার ফল স্বরূপ আজ প্রজ্ঞা নার্সিংহোমে ICUতে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।
ডাক্তারের অনুমতি নিয়ে রূপেশ প্রজ্ঞার পাশে গিয়ে বসে। ওর বাঁ হাতটি নিজের দুহাতের মুঠোয় আলতো করে চেপে ধরে। পাশে মনিটরের পর্দায় ক্রমাগত ওঠা নামা করা আঁকাবাঁকা রেখাগুলো জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রজ্ঞার শরীরে প্রাণের ধুকপুকানির অস্তিত্ব। মনে মনে ওর এই অবস্থার জন্য নিজেকেই দুষতে থাকে রূপেশ। রূপেশের চোখ বেয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে প্রজ্ঞার হাতে। পাশে মনের মানুষটির উপস্থিতি অন্তরে অনুভব করে চোখ মেলে প্রজ্ঞা। ধীর কণ্ঠে বলে ওঠে-

-" এসেছ রূপ? সেই এলে তবে কত দেরি করে ফেললে। তোমার সাথে দুদণ্ড কথা বলার সময়ও নেই আমার কাছে। যাবার বড় তাড়া আছে যে।"

-" এমন কথা বোল না প্রজ্ঞা। তোমাকে বাঁচতে হবে। ফিরে আসতে হবে ওদের কাছে যারা তোমার ফিরে আসার পথ চেয়ে বাইরে অপেক্ষা করছে।"

-" অপেক্ষা করলেই কী ফিরে পাওয়া যায় রূপ। আমিও তো করেছিলাম অপেক্ষা। ফিরে পেলাম কই। তবে লেখা মেয়েটি ভালো। তোমাকে ছেড়ে যায় নি। তুমিও ওর হাতদুটো সারাজীবন শক্ত করে ধরে থেকো। সুখী হবে তুমি।"

-" সুখী তো আমি তোমার সাথেও হতে পারতাম। কিন্তু সেদিন কেবল নিজের সুখের কথা চিন্তা করে তোমার হাত ছেড়ে দিয়েছিলাম। একদিন যাকে নিজে পছন্দ করে ঘরে এনেছিলাম তাকেই...."। কথাগুলো শেষ করতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে রূপেশ। খেয়াল করে হাতের মুঠোয় ধরে থাকা প্রজ্ঞার হাত শিথিল হয়ে গেছে। স্থির হয়ে গেছে প্রজ্ঞার চোখের পলক। ক্ষমা চাওয়া হলনা রূপেশের প্রজ্ঞার কাছে। বলা হল না "ক্ষমা করে দাও আমাকে"। সে সুযোগ আর দিল না রূপেশকে প্রজ্ঞা। তার আগেই চলে গেল এপারের সব পিছুটানকে পিছনে ফেলে ওপারের সব পাওয়ার দেশে।

ক্লান্ত বিধ্বস্ত রূপেশ বাড়ি ফিরে এসে লেখাকে সব জানিয়ে বলে -

-" যে কারণে আমি প্রজ্ঞাকে নিজের জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম সেই একই কারণে তুমি তো আমাকে ছেড়ে যাওনি। তোমার সঙ্গ তোমার ভালোবাসার যোগ্য নই আমি। চাইলে লেখা তুমি আমাকে ছেড়ে তোমার জীবনকে নিজের মতো করে গড়ে নিতে পারো। আমি তোমার পথে বাধা সৃষ্টি করব না।"

-" এটাই তো তোমার দোষ রূপ। দেওয়া নেওয়ার ওপর ভিত্তি করে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে না। তবে কী জানো রূপ আমি তোমাকে নিজে যত না বুঝতে পেরেছিলাম তার থেকেও বেশি চিনেছি যখন তোমাকে প্রজ্ঞার চোখ দিয়ে দেখেছি। ও তোমার মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পায় নি। হয়ত বাবা হবার সাধ তোমাকে ক্ষণিকের জন্য হলেও স্বার্থপর করে তুলেছিল। তবে তোমার মধ্যেও আমি প্রজ্ঞার প্রতি ভালোবাসা জিইয়ে থাকতে দেখেছি। অনুতপ্ত হতে দেখেছি তোমাকে কত সময়ে। অনুশোচনার আগুনে পুড়ে তুমি এখন পরিশুদ্ধ রূপ। তোমাকে ছেড়ে গেলে প্রজ্ঞা যে আমাকে ক্ষমা করবে না রূপ। ওযে সবসময়েই আমাকে তোমার সাথে থাকতে বলে গেছে। তাই আর কোন অনুশোচনা নয় তার থেকে চলো আমরা দুজন আস্থা'র সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ি। নিজেদের সন্তান না থাকলে কী হয়েছে। সেখানে যে শিশুরা রয়েছে তাদের বাবা মা হয়ে তো উঠতে পারি।"

-"ঠিকই বলেছ লেখা। আর সেটাই হবে প্রজ্ঞার কাছে আমার প্রকৃত ক্ষমা চেয়ে নেওয়া।"

পরের দিনই লেখা আর রূপেশ পৌঁছে যায় আস্থার দোরগোড়ায়। অনাথ শিশুদের হাত ধরে শুভারম্ভ হয় ওদের নতুন পথের যাত্রা।

( ছবি - গুগল )

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু