বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

ছবি : এক অজানা গল্প

ছবি - এক অজানা গল্প


ড্রেসিং টেবল এর পাশেই দেয়ালে ঝোলানো  ডার্ক বেকগ্রাউংডের ওপর হালকা রঙ এর টানে ফুটিয়ে তোলা একটি যুবতীর আবক্ষ ছবি ।একমাথা  কোঁকড়া চুল খোলা ঘাড়ের কাছ অবধি । পরমা সুন্দরী । কিন্তূ - - -শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত যেন বয়ে গেলো । অসস্তি টা উড়িয়ে দিয়ে তোয়ালে টা নিয়ে বাথরূমে ঢুকে পড়লাম।


বেশ কয়েক বছর আগেকার কথা ।  অফিসের কাজে আহমেদাবাদ গিয়েছিলাম । ওখানে আমার এক আত্মীয় থাকতেন । দিদি বলতাম । ওনার হাজব‍্যান্ড ইন্ডিয়ান আর্মি র অফিসার ছিলেন। প্রায়ই বলতেন আহমেদাবাদ আসলে যেন ওনাদের সাথে এক রাত কাটিয়ে যাই । পৌঁছে গেলাম । বিকেল তখন পাঁচটা বাজে প্রায় । আর্মি ইউনিটের কোয়াটার্স গুলো খুব বড় হয় । তেমনই একটা বাংলোএ  থাকতেন ওনারা ।  ঠিক পাশেই আর একটা বাংলোয় এ রাত কাটানোর ব্যবস্থা হলো আমার । প্রথমিক চা পর্ব শেষ হওয়ার পর দিদি বললেন ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যা বেলার আড্ডার জন্যে তৈরী হয় নিতে ।  ছোট একটা ব্যাগ ছিলো সঙ্গে ।  ঘরে ঢুকে প্রথম অনুভুতি টা ছিল বিকেল পাঁচটার  তাপমাত্রার হিসাবে ঘরটি একটু বেশী  রকম ঠান্ডা । খুব সুন্দর ভাবে গুজরাটি ফর্নিচর দিয়ে ছিমছাম  সাজানো ঘর । মাঝে একটা ডবল বেড খাট ।

ড্রেসিং টেবল এর সামনে দাঁড়িয়ে চোখ গেলো ছবি টার দিকে ।

খুব সুন্দর যুবতীর ছবি, কিন্তু চোখের দিকে তাকাতেই কেমন শিরশির করে উঠল । এতো সুন্দরী মেয়ের চোখ যে এতো নিষ্ঠুর হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না । তার সাথে মিলিয়ে মুখে ঝুলে থাকা হাসিটা । যেন একটা নীরব চ‍্যালেঞ্জ জানাচ্ছে দর্শক কে । ভালো অনুভুতি হলো না । মনের মধ্যে একটা খিচ খিচানি রয়ে গেলো ।

এখানে  একটা কথা বলে রাখি আমি মোটেও ভীতু স্বভাবের লোক নই ।  এয়ার ফোর্সে থাকা কালীন অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছি । তার গল্প অন্য আরেক দিন ।

যাই হোক অস্বস্তি টা ঝেড়ে ফেলে চান করার জন্যে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম ।

এরকম অদ্ভুত অভিজ্ঞতা কোনদিন হয় নি । বাথরুমে ঢোকার পর থেকে মনে হলো কেউ আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে । চোখ বন্ধ করে সাবান মাখতে অবধি ভয় লাগছে । মনে হচ্ছে এই বুঝি চোখ খুললেই সামনে কাউকে দেখতে পাবো । আর সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার বাথরুমের জানলা দিয়ে বাইরের অস্তগামী সূর্যের আলো তখনও দেখা যাচ্ছে ।

কোনোরকমে চান শেষ করে বাইরে এসে জামাকাপড় বদলে  দিদির বাংলো এ চলে গেলাম । 

তার পর থেকে খাওয়া দাওয়া গল্প গুজবের মধ্যে ভুলেই গিয়েছিলাম সেই ছবির কথা । হুঁশ এল যখন শোয়ার জন্য নিজের ঘরে যাওয়ার সময় এলো । সাহস করে ঘরে এসে দেখলাম পুরো ঘর টা হিম ঠান্ডা আর জানলার আলো শুধু ওই ছবির  ওপর পড়েছে । ক্রূর হাসি আরো অনেক বেশি ক্রূর আর নিষ্ঠুর লাগছে ।

কোনভাবেই নিজের মন কে রাজী  করাতে পারলাম না ওই ঘরে রাত্রি বাস  করার জন্য । ফিরে এসে দিদি কে বললাম তোমাদের ঘরেই আমাকে শোয়ার জায়গা করে দাও ।  যেন উনিও এমন অনুরোধ আশা করছিলেন । এক মিনিটের মধ্যে শোয়ার ব্যবস্থা হয়ে গেলো । পরের দিন খুব ভোরে আমার ট্রেন  ধরার ছিলো । বেরিয়ে পড়লাম এক রহস্যময়ী র কথা ভাবতে ভাবতে ।

এই গল্প এখনেই শেষ নয় । এর পরে ও অনেকে ওখানে গেছেন কিন্তূ কেউই ওই ঘরে রাত্রি বাস তো দূরের কথা, থাকতে ও চায়নি । ঘরের পোষা কুকুরকেও ওই ঘরে ঢোকাতে বাধ্য করা যায় নি । বেশ কিছু দিন পর অনেকের পরামর্শে ছবিটিকে ঘর থেকে সরিয়ে ফেলা হয় আর তার পারে ঘর আবার স্বাভাবিকতা ফিরে পায় । যারা ছবি থাকা কালীন ওই ঘরে ঢুকতে চাননি তারা ওই ঘরে রাত্রিবাস করে এসেছেন কোন রকম অস্বস্তি ছাড়াই।

এটি একটি সত্য ঘটনা এবং দিদি ছাড়া সকলেই এখনও জীবিত ।

ভূত আছে কি নেই তাই নিয়ে অনেক তর্ক করা যায় কিন্তূ জীবনের কিছু ঘটনার হিসাব মেলানো যায় না ।


The photo is for representational purpose only.

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু