ফৌজী বিবি
#বিভাগ_গল্প
আমি একজন ফৌজি বিবি
som©
এতো দিনের প্রেম পর্ব শেষ করে শেষ অবধি আমি এক ইউনিফর্ম পরা কাঁধে তারা লাগা আর্মি অফিসারের বৌ । আর প্রত্যেকটা আর্মি অফিসার আর সেনার ঘরনী দের মতো আমিও খু্ব খুশী হয়ে গেলাম যখন শুনলাম আমার হিরো এক ফ্যামিলি স্টেশনে ( নাম টা পরে শিখেছিলাম ) পোস্টিং পেয়েছে যেখানে গিন্নী কে নিয়ে একটানা তিন মাস সংসার করার স্বাধীনতা আছে । খু্ব আনন্দের খবর আর আমি দৌড়ে ঠাকুর ঘরে গিয়ে মা এর সাজানো সব ঠাকুর দেবতাকে ভক্তিভরে প্রণাম করে তাদের অসংখ্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি ।
আর দু সপ্তাহ পরেই আমি উড়ে যাবো আমার প্রিয় মানুষ টার কাছে । মনটা আনন্দে একদম ভরে ভরে উঠছিলো । আমার সৈনিক জীবন বা বলা যায় ফৌজি বিবির জীবন শুরু হয়ে যাবে ।
" আমি এয়ার পোর্ট এ আসবো তোমাকে নিতে "
আমার হিরো র গলার উত্তেজনা আমি অনুভব করতে পারছিলাম ।
" আমি দিন গুনছি " আমার চোখে জল ভরে উঠলো । আমাদের বিয়ের পর আড়াই মাস হয়ে গেছে একে অন্যকে ছেড়ে ।
" তিন চার মাস থাকার মতো জামা কাপড় প্যাক কোরো । সব ওষুধ গুছিয়ে নিও । এখানে হয়তো বিশেষ কিছু পাবে না । ভালো বই এনো কিছু নয়তো সময় কাটবে না । হার্ড ডিস্ক এ নতুন কিছু সিনেমা ভরে এনো । "
" রজার স্যার "
যাওয়ার আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকী । আমার ফৌজীর আর একটা ফোন ।
" বেশ কিছু শাড়ী এনো । তোমার শর্টস আর অন্য সব সেক্সী ড্রেস রেখে এসো । এ সি বা কোনরকম বিলাসিতা ছাড়া একদম বেসিক জীবনের জন্য তৈরী থেকো । আসার সময় সুন্দর কোনও ড্রেস পরে এসো । "
" আই আই স্যার ! ! " ( সুন্দর কোনও ড্রেস ? ? একটু চিন্তা হলো ! )
ফ্লাইট ছাড়ার দু ঘন্টা আগে আমার হিরোর ফোন ! !
" শাড়ী পরেছ তো ? আমার রক্ষী রা যখন তোমাকে জয় হিন্দ বলে অভিবাদন করবে তখন তাদের সুন্দর ভাবে প্রত্যুত্তর দিও । ওদের সামনে হি হি করে হেসো না । আমাকে দেখতে পেয়েই করণ জোহর এর মুশী প্রেম প্রেম সিনেমার দৃশ্যের মতো দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধোর না । আমার সাথে অন্য লোকও থাকবে । তোমার মাথার সব দুষ্টু বুদ্ধি গুলো একদম বার করবে না । ইত্যাদি ইত্যাদি ......"
হটাৎ আমি খু্ব বিচলিত বোধ করলাম । নার্ভাস লাগছিলো আর ভয় ভয় করছিলো । খু্ব তাড়াতাড়ি একটা শাড়ী পরে ফেললাম । অতো পছন্দ করে কেনা টপ আর সাংঘাতিক সুন্দর জিনস ও গেলো ।
আমার হাত ঘামছিলো । পাহাড়ের ওপর সুন্দর জামা কাপড় পরে দুজনে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ঘোরার কল্পনা খু্ব অবাস্তব মনে হচ্ছিলো । আমি হানীমুনে যাচ্ছিনা । আমার হিরো অ্যাকটিভ ডিউটি তে আর আমি তার সহধর্মিনী , গার্লফ্রেন্ড নয় । কাগজে কলমে আমি একজন সিভিলিয়ান কিন্তু একজন আর্মি অফিসারের ঘরনী হিসাবে অনেক না বলা নিয়ম কানুনে বন্দী আমার খোলামেলা স্বভাব । খুবই গোলমেলে ব্যাপার ।
আর শুধু তাই নয় আমি আমার ফৌজী স্বামীর অধস্তন প্রায় একশো জনের ম্যাম , মানে একজন মায়ের মতো যে তাদের প্রিয় কম্যান্ডার সাহেবের সহধর্মিনী । "With great power comes great responsibity" এই কথাটার মানে এতো সুন্দর ভাবে আর কোনদিন কেউ বুঝিয়ে দেয় নি ।
দেড় ঘন্টা ফ্লাইটের সময়ে শুধু এই সব কথাই মনে আসছিলো । কি বলবো দেখা হলে যেটা সিরিয়াস ও হবে আবার রোম্যান্টিক ও হবে ! নাঃ কিছুই মাথায় এলো না । নীচের দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা লাল নদী আর বেশ কিছু পাহাড় ।
ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট যখন ঘোষনা করলো যে বিমান নীচে নামছে আমার সত্যিই খু্ব নার্ভাস লাগছিলো । জীবনে যে ব্যাপারটা নিয়ে কখনও ভাবিনি আজ ওটাই আমার জীবনে সব থেকে মহত্বপূর্ন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে আর সেটা হলো স্বীকৃতি । আমার স্বামীর গ্রুপের সৈন্যরা কি আমাকে তাদের কমান্ডার এর স্ত্রী হিসাবে স্বীকার করে নেবে ? এটা আমার স্বামীর একটা গর্বের আর সম্মানের বিষয় ।
আমি এয়ার পোর্ট থেকে বাইরে এলাম আর দেখলাম আমার সুপুরুষ স্বামী আমার ফৌজি আমার হিরো সিভিল পোশাকে রোদ চশমা পরে লাজুক মুখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমার চার পাশের পৃথিবী অদৃশ্য হয়ে গেলো । আমার মনে হচ্ছিলো স্লো মোশনে হয়ে গেছে আমার পারিপার্শ্বিক সমস্ত কিছু । সেই মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিলো আমার হিল দুটো ছুঁড়ে ফেলে দৌড়ে আমার প্রিয় মানুষটার বুকে মুখ লুকোতে ।
ধীরে ধীরে ফিরে এলো চারিপাশের পৃথিবী । সব গান বাজনা থেমে গেলো । আমি দেখলাম চারজন সশস্ত্র সেনা আমার স্বামী কে ঘিরে আছে । আমি ধীর গতিতে হেঁটে গেলাম আমার প্রিয় মানুষটার কাছে । " হাই " শান্ত স্বরে বললাম তার দিকে তাকিয়ে । অবিভাবকের মতো এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরেই ছেড়ে দিলো । " জয় হিন্দ ম্যাডাম " একসাথে বলে উঠলো চার সেনানী । " জয় হিন্দ " যতটা সম্ভব সিরিয়াস গলায় প্রত্যুত্তর দিলাম তাদের । কিন্তু ওই দুটো শব্দের মধ্যে কি অনুভব করেছিলাম জানিনা , আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত নেমে যাচ্ছিলো । একি শুধুই দেশভক্তির অনুভুতি না নিজের স্বীকৃতি র উত্তেজনা ! ! আমি সেই মুহূর্তে এই বিশাল পরিবারের সদস্য হয়ে গেলাম ।