বইয়ের বিবরণে ফিরে যান প্রতিবেদন পর্যালোচনা

রিয়েল হিরো

(২০০৯-২০১৩)তে কোন্ ফুটবলারকে সবচেয়ে বেশী ডলার দিয়ে দলে খেলানো যেতো?
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ইতিহাসে ৫টি গোল ক’রেছে কে?
এক বছরে ২৫টি আন্তর্জাতিক গোল ক’রেছে কে?
টানা দুই মরসুমে পেশাদার লিগে ৪০টি গোল ক’রেছে কে?
অফিশিয়াল ফুটবল গেমের প্রতি মিনিটে গোল ক’রেছে কে?
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, রিয়াল মাদ্রিদ- দুটি ক্লাবের হ’য়ে ডোমেস্টিক সুপারকাপ, ডোমেস্টিক কাপ, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ক্লাব বিশ্বকাপ, লিগের বর্ষসেরা খেলোয়াড়, গোল্ডেন-শু ও ব্যালন ডি'অর জিতেছে কে?  
দুটি পৃথক ক্লাবের হয়ে ৯বার ফিফপ্রো ওয়ার্ল্ড একাদশে খেলেছে কে?
একাধিক ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ সিলভার বল জিতেছে কে?
ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ২০০৪, ২০০৮, ২০১২ এবং ২০১৬ সংস্করণে গোল ক’রেছে কে?
বিশ্বকাপের ২০০৬, ২০১০ এবং ২০১৪ সংস্করণে গোল ক’রেছে কে?
উপরের দশটি বিশ্বরেকর্ড ফুটবলপ্রেমী কিরীটির রিয়েল হিরো খ্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো-এর। কিন্তু রোনাল্ডোর রিয়েল হিরো তাঁর ছোটবেলাকার টিমমেট অ্যালবার্টো ফ্যান্ট্রাউ।

সম্প্রতি রোনাল্ডো তাঁর জেতা একটি পুরষ্কার উত্সর্গ ক’রলেন অ্যালবার্টো ফ্যান্ট্রাউকে; ব’ললেন: ‘হ’তে পারি আমি একজন দুর্দান্ত ফুটবলার; কিন্তু অ্যালবার্টোর মতো বন্ধু না থাকলে এ সাফল্যের কিছুই সম্ভব হ’তো না।’
দর্শকেরা একে অপরের দিকে তাকিয়ে ব’ললো, ‘কে এই অ্যালবার্টো ফ্যান্ট্রাউ?’
রোনাল্ডো ব’ললেন: ‘অ্যালবার্টো আর আমি এক যুব দলে একসাথে খেলতাম। লিসবনের স্পোর্টিং-এর কর্ম্মকর্ত্তারা আমাদের এই যুব দলের খেলা দেখতে এসেছিল, তারা আমাদের ব’লেছিল,-  যে স্ট্রাইকার সবচেয়ে বেশি গোল ক’রবে তাকে ওদের একাডেমিতে ভর্ত্তি ক’রবে।
সেদিন আমাদের দল ৩-০ গোলে জিতলো। প্রথম গোলটি ক’রেছিলাম আমি; তারপরে হেড দিয়ে দ্বিতীয় গোলটি ক’রেছিল অ্যালবার্টো। তারপরে সবাইকে মুগ্ধ ক’রলো তৃতীয় ও শেষ গোলটি।
অ্যালবার্টো মাঠের কিনারা দিয়ে বল নিয়ে ছুটে এসে গোলকিপারের মুখোমুখি হ’য়েছিল, গোলকিপারকে ড্রিবল ক’রে পাশ কাটিয়ে বলটি ফাঁকা গোলের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ইতিমধ্যে আমি অ্যালবার্টোর পাশে-পাশে দৌড়াচ্ছিলাম। অ্যালবার্টো ফাঁকা গোলে নিজে শট না ক’রে, বলটি আমাকে কাছে পাস দিয়েছিল এবং আমি গোল ক’রেছিলাম। সবচেয়ে বেশি গোল করার জন্যে আমার সুযোগ হ’লো স্পোর্টিং লিসবন একাডেমিতে।
খেলার পরে আমি অ্যালবার্টোকে জিগ্যেস ক’রেছিলাম, ‘তুমি গোলে শট না ক’রে আমাকে পাস ক’রলে কেন?’
উত্তরে অ্যালবার্টো ব’লেছিল, ‘কারণ আমি জানি, তুমি আমার চেয়ে ভাল খেলবে’।‘
 
রোনাল্ডোর বলা গল্পটির সত্যতা যাচাই করার জন্য, সাংবাদিকেরা অ্যালবার্টো ফ্যান্ট্রাউয়ের সাথে দেখা ক’রেছিল। অ্যালবার্টো ফ্যান্ট্রাউ জানিয়েছিলেন যে রোনাল্ডোর বলা গল্পটি সত্যি; আরও ব’লেছিলেন, ফুটবলার হিসাবে তাঁর কেরিয়ার এই ম্যাচের পরেই শেষ হ’য়ে যায়; এটিই ছিল ওঁর পেশাদার হওয়ার শেষ সুযোগ এবং সেই সময় থেকে তিনি বেকার রয়েছেন।
সাংবাদিকেরা অ্যালবার্টোর বিলাসবহুল প্রাসাদ আর মার্সেডিজ গাড়ী দেখে জিগ্যেস ক’রেছিল ‘বেকার হ’য়েও কীভাবে আপনি এমন একটি বাড়ি-গাড়ি রাখতে পারেন, এত বিলাসবহুলভাবে জীবন কাটাতে পারেন? আপনিতো বেশ আরামেই আছেন মনে হচ্ছে?
অ্যালবার্টোর জবাব ছিল: ‘সবই রোনাল্ডোর দেওয়া উপহার।‘
***
রোনাল্ডোর গল্প শুনে কিরীটি নিজেকে জিগ্যেস ক’রলো, ‘রোনাল্ডো বা অ্যালবার্টোর মতো কিছু কি ক’রেছি কখনও?’
‘ক’রিনি। বন্ধুদের সঙ্গে দল বেঁধে অনেক খেলেছি, বন্ধুকে গোল ক’রতে সাহায্য ক’রেছি, বন্ধুর সাহায্য নিয়ে গোলও ক’রেছি। কিন্তু সেখানে টিমের জেতাটাই বড় কথা; যার গোল করার সুযোগ ও দক্ষতা বেশী তার কাছে বল পাস ক’রেছি।‘
‘ভাইবোন, বন্ধু-আত্মীয়দের সাফল্যের জন্য গর্বিত হ’য়েছি; শুভেচ্ছা বা ছোট-খাটো উপহারও দিয়েছি, কিন্তু নিজের স্বার্থ ছেড়ে দিয়ে কারুর সাফল্য আনতে চাইনি।‘
‘মনে আছে, একবার মেজদি নিজের স্বার্থ ছেড়ে বড়দিকে সাহায্য ক’রেছিল। বড়দি, মেজদি দুজনে একই বছরে স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছিল, তাতে মেজদি সেকেণ্ড ডিভিসনে পাশ ক’রেছিল; বড়দি দুটি বিষয়ে ফেল ক’রেছিল। বড়দি এতে ভেঙে পড়েছিল যে বাড়ী থেকে পালিয়ে আত্মহত্যা ক’রতে চেয়েছিল। তখন মেজদি বড়দিকে ব’লেছিল- ও তখনই কলেজে ভর্ত্তি হবেনা, একবছর বড়দির জন্যে অপেক্ষা ক’রবে। বড়দিকে পড়তে সাহায্য ক’রেছিল। পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে বড়দি পাশ ক’রেছিল; দুজনেই কলেজে ভর্ত্তি হ’য়েছিল। বড়দি স্কুল ফাইনাল পাশ করার ব্যাপারে মেজদিকে রিয়েল হিরো ভেবেছিল।‘কিরীটির ইচ্ছে হ’লো, রোনাল্ডোকে জিগ্যেস করে, ‘অ্যালবার্টোকে শুধু বড়লোক ক’রে দিয়ে ও যে উপহার দিয়েছে, তার চাইতে কি অ্যালবার্টো অনেক বেশী খুশি হ’তো না খেলোয়াড় হ’তে পারলে? দেশবিদেশের মাঠে তীব্র গতিতে বল নিয়ে ছুটতে পারলে? ড্রিবল ক’রে পাশ কাটিয়ে গোলে শট ক’রতে পারলে? রোনাল্ডো কি কখনও চেষ্টা ক’রেছে অ্যালবার্টোকে দেশবিদেশের টিমে খেলাতে? রোনাল্ডোর সুপারিশ থাকলে হয়তো ক’লকাতার মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলও অ্যালবার্টোকে টিমে নিতে পারতো; তাতে অ্যালবার্টোর খেলোয়াড় হওয়ার আর নিজের চেষ্টায় বড়লোক হওয়ার সাধ মিটতো।
কিরীটি এবারে ব’সলো নিজের যত সাফল্যের কারণের হদিশ খুঁজতে। কিরীটি সাধারণ মানুষের আলাদা ১)ওর পড়াশোনায়, ২)ইঞ্জিনীয়ার হওয়ায়, ৩)ভারতবর্ষে এক কোম্পানীতে কম্পিউটিংএর শুরু ক’রায়, ৪)অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়ায়।

১) কিরীটির পড়াশোনায় সাফল্যের পিছনে আছে বাবা, দাদা আর তিন দিদি। একই বিছানায় ব’সে পড়াশোনা ক’রতো কিরীটি আর তিন দিদি, দিদিরা তিন ক্লাস উপরে। নিজের পড়া পড়ার পর, দিদিদের পড়া শুনতো কিরীটি – ক্লাস-টু-তেই শুনে ফেলতো ক্লাস-ফাইভে কী পড়তে হয়; স্কুলে বরাবর ফ্রী-স্টুডেন্টশিপ পেয়েছে কিরীটি- ক্লাসে বরাবর ফার্স্ট- ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজেও। এই সাফল্যের মূলে আছে ওর দিদিরা। দাদা মাঝে মাঝে ডিক্টেশন দিতো ভাইবোনেদের। বাবা যখন সকালে টিউশনি ক’রতে যাবার আগে দাড়ি কামাতেন, তখন উনি কিরীটির কাছে শুনতেন ওর অঙ্ক-কষা বা ট্র্যানশ্লেশন ঠিক হ’য়েছে কিনা।


২) কিরীটি নবম শ্রেণীতে ওঠার পরে, স্কুলের পাঠ্যক্রম পালটে গেল, একাদশ শ্রেণী সুরু হ’লো, অষ্টম শ্রেণী অবধি সব ছাত্রের জন্য সাধারণ শিক্ষার ব্যবস্থা; আর শেষ তিন বছর- নবম, দশম ও একাদশ শ্রেণীতে ছাত্রদের পছন্দ অনুযায়ী বিশেষ শিক্ষা কলা, বিজ্ঞান বা বাণিজ্যে; কিরীটি যে স্কুলে পড়তো সেখানে শুধু কলা বিভাগ ছিল আর তাই কিরীটি নবম শ্রেণীতে কলা বিভাগেই পড়ছিল; দাদা মে মাসে ছুটিতে বাড়ি এসে তা জানতে পারলো। তখন অনেক দেরী হ’য়ে গেছে, ক্লাসে পাঁচ মাস পড়া হ’য়ে গেছে, তাও দাদা চাইলো কিরীটিকে মিত্র ইনস্টিটিউশনের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করাতে। মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হওয়া সোজা ছিল না;  মিত্র ইনস্টিটিউশনের কোনো একজন শিক্ষকের প্রশংসাপত্র না দেখালে সেখানে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। দাদা এ রকম একজন শিক্ষককে জানতো;  তাঁর প্রশংসাপত্র যোগাড় ক’রে কিরীটিকে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি ক’রে দিলো। তাঁর ব্যবস্থাপনায় কিরীটির মিত্র ইনস্টিটিউশনে তিন মাসের জন্য মাইনে মকুব করা হ’লো; বলা হ’লো কিরীটি যদি পরের ষান্মাসিক পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট ক’রতে পারে তবে ফ্রী-স্টুডেন্টশিপের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হবে। দাদার চেষ্টায় বিজ্ঞান নিয়ে না পড়লে, কিরীটি ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ার সুযোগ পেতো না। 
বাবাকে অবসর নিতে হয়েছিল কিরীটির ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজ়ে ঢোকার আগেই। এই অবস্থায় দাদা একটা চিঠি পেলো- সে রাশিয়ায় পিএইচডি করার জন্য মনোনীত হ’য়েছে। যদি সে এই বৃত্তি নেয় তবে কিরীটি কলেজে ভর্তি হবার অনেক আগেই তাকে রাশিয়া চলে যেতে হবে। দাদা রাশিয়ান স্কলারশিপ ছেড়ে দিলো কিরীটির ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ার জন্যে।

৩) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনীয়ারিং গ্র্যাজুয়েট কিরীটি ছিল ইণ্ডিয়ান টিউব কোম্পানীর ফোরম্যান, স্টীল টিউবের কোল্ড-ড্রয়িং-এর বিশেষজ্ঞ। এখানেই ফাইন্যান্স ডিরেক্টর ওকে দিলো ইণ্ডিয়ান টিউব কোম্পানীকে কম্পিউটারাইজ করার দায়িত্ব। এর পর থেকেই দেশে কম্পিউটার-সচেতনতা গড়ে তোলার জন্যে উদ্যোগী হ’য়ে উঠলো কিরীটি, কম্পিউটারে পারদর্শিতার জন্যে অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হবার সুযোগ পেলো। অস্ট্রেলিয়াতে পার্ট-টাইম পড়াশোনা চালিয়ে কিরীটি মাস্টার অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, কম্পিউটিং সায়েন্সের মাস্টার এবং পি.এইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন ক’রলো। ইণ্ডিয়ান টিউব এই দায়িত্ব না দিলে কিরীটি কম্পিউটার-বিশেষজ্ঞ হ’য়ে উঠতো না।

৪) কম্পিউট্রনিক্সে বস্ সঞ্জয় কিরীটিকে একটা ভিজিটিং কার্ড দিয়েছিল,- ‘আজ লাঞ্চের সময় কুতুব হোটেলে অরুণের সঙ্গে দেখা করো। অরুণ এখানে আই.বি.এম.৩৭০ নির্মাণের প্রকল্প শুরু ক’রছে, কয়েকজন দক্ষ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সন্ধান ক’রছেন; তোমার নাম আমি তাকে দিয়েছি।‘ কিরীটি কাজ ক’রেছিল হিন্দুস্তান কম্পিউটার্স লিমিটেডে; তারপরে টি.সি.এস.-এ।
১৪ই মে, ১৯৮৪- অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাস থেকে চিঠি পেলো কিরীটি – অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকত্বের নিমন্ত্রণ।  

কিরীটির সমস্যা- প্রথমতঃ স্ত্রী সুভদ্রাকে অস্ট্রেলিয়া যেতে রাজী করানো, ওর বাবা-মায়ের সম্মতি নেওয়া. দ্বিতীয়তঃ নিজের এবং বৌ-মেয়ের জন্যে প্লেনের টিকিট কেনা। সঞ্জয় কিরীটিকে বোঝাল যে, কিরীটি অস্ট্রেলিয়াতে থাকার সময় আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী গিয়ে দেখাশোনা ক’রতে না পারলেও, তাদের প্রয়োজনের সময় কিরীটি টাকা পাঠিয়ে সাহায্য ক’রতে পারবে। সঞ্জয় আরও ব’লেছিল, কিরীটি কিছু সময়ের জন্য বেকার থাকলেও এমন কিছু আসে যায় না, কারণ বেকার ভাতা ওর এখানকার আয়ের চারগুণ হবে। সঞ্জয়ের পরামর্শ অনুসারে, সুভদ্রা নতুন দেশে কিরীটির সাথে আসতে না চাইলে, কিরীটি খুব সহজেই এদেশে সুভদ্রা ও মেয়ের জন্যে টাকা পাঠাতে পারবে।

সঞ্জয় কিরীটিকে ব’লেছিল যে, ভারতবর্ষে বিনা মাইনেতে, বা জাতীয় বৃত্তি পেয়ে কিরীটি যে পড়াশোনা ক’রেছে তার জন্যে ও দেশের কাছে ঋণী; তবে অস্ট্রেলিয়া থেকে ডলার পাঠালে ঋণ শোধ হ’য়ে যাবে।

সঞ্জয়ের মতে, প্লেনের টিকিট কেনার খরচের জন্যে প্রভিডেন্ট ফাণ্ডের টাকাই যথেষ্ট; কিন্তু টিকিট কিনতে হবে দেড়মাস আগে, তখন টি.সি.এস. ওই টাকা দেবেনা। কাজেই টাকা জোগাড় ক’রতে হবে, লাইফ ইনসিউরান্স পলিসি সারেণ্ডার ক’রে, মারুতি গাড়ী আর এম.আই.জি. ফ্ল্যাটের ডিপোজিট ফেরৎ দিয়ে…..।

সঞ্জয়ের উৎসাহ না পেলে কিরীটির অস্ট্রেলিয়া যাওয়া হ’তো না। ভারতবর্ষের গরীব ঘরে জন্মে অস্ট্রেলিয়ার এক শতাংশ সুশিক্ষিত ধনীদের একজন হ’তে পারা যদি সাফল্য হয়, তবে সেই সাফল্যের রিয়েল হিরো অনেকে- বাবা-মার জন্ম দিয়ে বড় ক’রেছে, দিদিরা লেখাপড়া শিখিয়েছে, দাদা ইঞ্জিনীয়ারিং পড়ার ব্যবস্থা ক’রেছে, ইণ্ডিয়ান-টিউব কম্পিউটারের কজ শিখিয়েছে, সঞ্জয় প্রফেসনাল উপদেশ দিয়েছে। এছাড়া স্কুল-কলেজের প্রতি শিক্ষক, সহপাঠীর কাছে, কর্ম্মক্ষেত্রের প্রতি বস, সহকর্ম্মীর কাছে কিছু-না-কিছু শিখেছে কিরীটি; এরা সকলেই কম-বেশী রিয়েল হিরো; এরা সকলেই ভারতীয়; রিয়েল হিরো কি ভারতবর্ষ?

অস্ট্রেলিয়ায় কিছুদিন পড়াশোনা আর কাজ করার পরে, ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত ও কর্ম্মনিপুণ ক’রে তোলার পরে কিরীটি দেখেছে এখানে সফল হবার সুযোগ আরও বেশী। কিরীটির সন্তানদের কাছে রিয়েল হিরো অস্ট্রেলিয়া। কিরীটি স্বপ্ন দেখেছে কী ক’রে এই পৃথিবীর প্রতিটি নাগরিককে আরও বেশী সুযোগ দেওয়া যায় – পৃথিবীর যে কোনো দেশে থেকে ভালভাবে বাঁচার, এবং কাজ করার জন্যে।  সাফল্যের রিয়েল হিরো হোক ভারতবর্ষ বা অস্ট্রেলিয়ার মত কোনো একটা দেশ নয়- পুরো পৃথিবী।

পৃথিবী, আমরা তোমার সন্তান,

না চাহিতে তুমি করিয়াছ দান –

আকাশ আলোক তনু মন প্রাণ,

সীমারেখাহীন দেশ, কাল, স্থান,

সাদর আমন্ত্রণ, অবাধ অভিযান।

ঘুচে যাক দেশ-বিদেশের সীমারেখা, ব্যবধান;

লুপ্ত হোক ভিসার আইন – তোমার অপমান।

কিরীটির চোখে রিয়েল হিরো – পৃথিবী- পৃথিবীর প্রকৃতি। প্রকৃতি অনেক কম শক্তি খরচ ক’রে অনায়াসে কাজ ক’রে চলেছে। প্রাকৃতিক অনাক্রম্যতা আনতে হবে পৃথিবীর মানুষের শরীরে; পোলিওর প্রতিরোধ হ’য়েছে, কোভিডেরও ক’রতে হবে ভ্যাক্সিন দিয়ে। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, কোয়ান্টাম কম্প্যুটিংএর মাধ্যমে আমাদের শিখতে হবে প্রকৃতির মতো কিভাবে সহজে কম শক্তি খরচ ক’রে উৎপাদন করা বা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব; এতে জীবাশ্ম জ্বালানির অপচয় কমবে, জনসংখ্যা-বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হবে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বজায় থাকবে।

কিরীটির জীবনদর্শনে - রিয়েল হিরো প্রকৃতি প্রত্যেকের প্রত্যাশা পূরণ ক’রবে, সকলকে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে সফল ক’রবে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধ’রে।

পর্যালোচনা


আপনার রেটিং

blank-star-rating

বামদিকের মেনু