শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী
শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী
লেখক :- শংকর হালদার শৈলবালা।
লেখার তারিখ :- 31 অগাষ্ট 2021
উত্তর প্রদেশের মথুরা নামক স্থানে,
কংসের কারাগারে বন্দী অবস্থায় ছিলেন।
শ্রীকৃষ্ণের মা-বাবা বসুদেব ও দৈবকী।
কারাগারের মধ্যে জন্ম নেয় শ্রীকৃষ্ণ,
ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
রাত তখন দুপুর-ঠিক বারটা,
আধুনিক বৈষ্ণবের ধারণা।
আন্তর্জাতিক সময়ের সঙ্গে,
তাল মিলিয়ে রাত বারোটা করা হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল,বর্তমান সময় থেকে-
পূর্বে, সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের ঊর্ধ্বে ।
বাবা বসুদেব কংসের ভয়ে আতঙ্কে আতঙ্কিত হয়ে, শিশুকে রক্ষা করার জন্য- চিন্তিত হয়ে পড়ে।
কারাগারের মধ্যে হঠাৎ দৈববাণী ভেসে আসে।
শিশুকে গোকুলে নন্দ রাজের বাড়িতে নিয়ে যাও। অলৌকিক ভাবে কারাগারের,
লোহার কপাট খুলতে শুরু করে।
বসুদেব মনের আনন্দে সদ্যোজাত শিশুকে, কাপড়ে জড়িয়ে কারাগার থেকে বাইরে আসে।
মথুরা নগর থেকে যমুনার দিকে চলতে চলতে,
পথের ধারে একটি সুন্দর ঝুড়ি দেখতে পাই।
শিশু কৃষ্ণকে ঝুড়ির ভিতরে রেখে,
বসুদেব মাথায় করে নিয়ে চলতে থাকে।
আবহাওয়া খারাপ থাকায়,
হালকা হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হতে থাকে।
শাস্ত্রের কথা অনুসারে শিশু কৃষ্ণকে,
বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করতে-
শেষ নাগ সহস্ত্র ফণা ধারণ করে,
বাবা বসুদেবের পিছনে পিছনে চলতে থাকে।
শেষ নাগ ফণায়-ছাতা তৈরি করে,
শিশু কৃষ্ণের সেবা করে।
বাবা বসুদেব যমুনা নদীর তীরে এসে,
চমকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে ভাবে মনে।
এই উত্তাল যমুনা পার হবো কি করে?
যমুনার ওপারে না যেতে পারলে,
এই শিশুকে বাঁচাতে পারবো না।
শিশু কৃষ্ণের মায়ায় বাবাকে পথ দেখাতে,
শিয়াল রূপে যমুনা নদীর জলের
মধ্যে দিয়ে হাঁটতে থাকে।
দৈববাণী হয় শিয়ালের,
পিছন পিছন চলতে থাকুন।
উত্তাল যমুনা শান্ত হয়ে, দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায়।
বাসুদেব যমুনার রাস্তা ভেবে চলতে শুরু করে।
যমুনা নদীর মাঝে যখন চলে আসে।
যমুনার উত্তাল ঢেউয়ে,
শিশু কৃষ্ণ জলের মধ্যে পড়ে যায়।
বসুদেব কান্না শুরু করে বলে-
হে নারায়ন তুমি রক্ষা করো।
কোমর জলের মধ্যে, শিশু কৃষ্ণকে খুঁজতে থাকে।
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর-
বাবা বসুদেবের কাছে ঝুড়ি ভেসে আসে।
ঝুড়ি মাথায় করে নিয়ে চলতে শুরু করে।
নন্দ রাজের বাড়িতে এসে,
কাউকে দেখতে না পেয়ে-
খোলা দরজা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বসুদেবের অন্তরঙ্গ বন্ধু আবার নন্দ রাজ।
দীর্ঘদিন ধরে বাড়িতে যাতায়াত আছে।
বসুদেবের বড় স্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য,
এই বন্ধুর বাড়িতে রাখা হয়েছে।
ঘরের মধ্যে ঢুকে সবাইকে,
ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।
ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।
সেই মুহূর্তে দৈববাণী ভেসে আসে।
বসুদেব তোমার শিশুকে রেখে দাও আর
যশোদার কন্যা কে নিয়ে যাও।
বসুদেব শিশু কৃষ্ণকে,
যশোদা মায়ের পাশে শুইয়ে দেয়।
যশোদা মায়ের কন্যাকে তুলে নিয়ে,
মথুরা নগরের দিকে চলতে শুরু করে।
যশোদা মায়ের যখন কন্যা জন্ম নেয়,
আলোর রশ্মির তেজে, সবাই অজ্ঞান হয়ে যায়।
দিনের আলোয় কৃষ্ণ কে দেখে,
যশোদা মা আদেশ করেন দাসীকে-
নন্দ রাজের খবর দাও,পুত্র সন্তান জন্ম হয়েছে। দীর্ঘদিন পরে নন্দরাজ পুত্রের সংবাদ পেয়ে, আনন্দিত মনে গ্রামবাসীকে ডাকতে শুরু করে।
বুড়ো কালে নন্দ রাজের ছেলে হয়েছে।
গ্রামবাসীরা নন্দের বাড়িতে ছুটে আসে।
নন্দ রাজ আনন্দিত হয়ে, গ্রামবাসীকে বিভিন্ন ধরনের জিনিস পত্র দান করতে থাকে।
এবং খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন চলতে থাকে।
দিনের আলোয় কংস কারাগারে আসে।
কংস বলে :- দৈবকী, এই অষ্টম গর্ভের সন্তান,
আমাকে বিনষ্ট করবে-ওকে মেরে ফেলবো।
দৈবকী বলে দাদা এবার তো কন্যা সন্তান হয়েছে। আঁচল পেতে কন্যার জীবন ভিক্ষা চাইছি।
কংস বলে নারী জাতি,ক্ষতি করতে পারবে না।
শকুনি মামা বলে ভাগ্নে তা হবে না।
ছেলে হোক আর মেয়ে হোক,
তোমাকে বধ করতে হবে।
দৈববাণী বলেছে অষ্টম গর্ভের সন্তান,
মথুরা রাজ কংস রাজা কে বধ করবে।
উল্লেখ করা নেই, ছেলে না মেয়ে।
শকুনি মামার কথা শুনে, কংসের বোন দৈবকীর কাছ থেকে জোর করে কন্যা কে কেড়ে নেয়।
পাথরের উপর গায়ের জোরে ছিঁড়ে মারে।
কন্যা সন্তান আকাশের দিকে উঠে গিয়ে, যোগমায়ার রূপ ধারণ করে বলে- কংস
তোমাকে যে বধিবে,
সে গোকুলে ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে ।
গোকুল বাসিন্দাদের উপর কংসের,
অনুচরেরা অমানবিক অত্যাচার শুরু করে।
কংসের সেনাবাহিনী, সদ্যোজাত শিশু থেকে
শুরু করে- অন্যান্য শিশুসহ,
কয়েক হাজার শিশু কে হত্যা করে।
শিশু কৃষ্ণ শিশুকালে করেছে, অনেক শত্রুকে বধ। কংসের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে।
নন্দরাজ অন্য স্থানে চলে আসে।
বর্তমানে নন্দগ্রাম নামে সবাই চেনে।
শ্রীমতি রাধারানীর বাবা বৃষভানু চলে আসেন। বর্তমান বর্ষানা নামক গ্রামেতে।
শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীমতি রাধারানী সাথে,
কিশোরকালে করেছে-নিষ্কাম ভালোবাসার লীলা।
উভয়ের শরীরের মধ্যে কামের উদয় হয়নি।
প্রাচীন প্রথা অনুসারে ব্রজবাসিরা,
মেয়েদেরকে ছয় থেকে সাত বছর
বয়সে বিয়ে দেওয়া হতো।
চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ বছরের উর্ধ্বে ছেলেদের সঙ্গে।
শ্রীমতি রাধারানীর আয়ান ঘোষের সাথে,
সেই বয়সে বিবাহ হয়েছিল।
স্বামীর বাড়ি যাবট গ্রামে।
শ্রীকৃষ্ণ বাৎসল্য লীলা শেষ করে।
পালিত পিতা নন্দরাজ ও মাতা যশোদা সহ
সখা-সখিদের, সকল ব্রজকুল কে কাঁদিয়ে-
মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে"কাল আসবো আবার ফিরে" বলে অক্রুরের সাথে চলে মথুরার দিকে।
জন্মদাতা পিতা-মাতাকে উদ্ধার করার উদ্দেশ্যে। মথুরা নগরের কংসের রাজদরবারে।
বলরাম কৃষ্ণের সাথে যুদ্ধ হয় কংসরাজের।
যুদ্ধে কংস রাজ পরাজিত হয়ে, মৃত্যুবরণ করে।
শ্রীকৃষ্ণ যৌবনে পদার্পণ করে মথুরাতে করে বাস। শিশুকালের-কিশোর কালের ভালোবাসার, মানুষগুলোর দিকে ফিরে চায়না।
শ্রীকৃষ্ণ মথুরার রাজা হয়ে ভুলে যাই,
ব্রজ গোপীদের বাল্য কালের ভালবাসা ।
মথুরা থেকে বৃন্দাবন 14 কিলোমিটার দূরত্বে।
শ্রীকৃষ্ণ আসার সময় পাইনি।
শোনা যায় সুবল সখার অভিশাপে,
রাধাকৃষ্ণের শত বছর থাকতে হয়েছে অদর্শনে।
শত বছর পরে শ্রীমতি রাধারানী সহ
ব্রজের গোপ-গোপিগণের সাথে,
শ্রীকৃষ্ণের- প্রভাস তীর্থ মিলন হয়েছিল।
প্রভাস তীর্থ শ্রীমতি রাধারানী সহ গোপীগণ,
এক কুন্ডে যোগবলে দেহকে সমর্পণ করেছিল।
সেই বিখ্যাত কুন্ডের নাম বর্তমানে গোপীকুন্ড।
কুন্ডের মাটি দিয়ে,বৈষ্ণবেরা করে তিলক ধারণ।
দ্বারকার রাজা হয়ে, করে দেশ শাসন।
আনুমানিক একশত ষাট বছর পরে,
দ্বারকা নগর ধ্বংস করে।
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে, গোকুলে করে গমন।
================================